মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোগবিলাস ও নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যাপারে উপমহাদেশের মানুষেরা কত কী না ভেবে থাকেন! অথচ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জীবনে এখন সংকট ঘনীভূত। কনজিউমারিস্ট সোসাইটি বা ভোগবাদী সমাজের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা, অনিশ্চয়তায় পরিপূর্ণ জীবন, সম্পর্কের টানাপোড়েন, এমনকি বেকারত্ব, চাকরি চলে যাওয়া- এসব থেকে তৈরি হওয়া গণবিষণ্নতা বা মাস ডিপ্রেশনের কবলে মার্কিন সমাজ। আর তাই যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নানা বয়সের মানুষের মধ্যে বেড়ে চলেছে আত্মহত্যার প্রবণতা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানাচ্ছে, ১৯৯৯ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ব্যাপক হারে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে গোটা যুক্তরাষ্ট্রে। সব বয়সের মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়লেও, মধ্যবয়স্ক থেকে শুরু করে প্রবীণ মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।
সিডিসির মুখ্য উপ-অধিকর্তা অ্যানে স্খুচ্যাত জানাচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অধীন অর্ধেকের বেশি প্রদেশে ১৯৯৯ সাল থেকে ৩০ শতাংশের বেশি হারে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত মানুষের পাশাপাশি মেডিকেলি সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষের মধ্যেও আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। জীবনের নানা অমীমাংসিত সমস্যা, সম্পর্কজনিত সংকট, বিচ্ছেদসহ নানাবিধ কারণে আত্মহত্যায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
১৯৯৯-২০১৬ সাল অবধি সিডিসির নানা ডেটা পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার পাশাপাশি ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ২৭টি প্রদেশের মধ্যে ওই একই প্রতিষ্ঠানের ন্যাশনাল ভায়োলেন্ট ডেথ রিপোর্টিং সমীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে, ২০ হাজার মানুষের মধ্যে ১০-২৪ বছর বয়সের প্রায় ৩ হাজার জন সুইসাইডের পথ বেছে নিয়েছেন। ২৫-৪৪ বছর বয়সের মধ্যে সুইসাইড করা মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। ৪৫-৫৪ বছর বয়সের মধ্যে আত্মঘাতী মানুষের সংখ্যা ৭ হাজার ৭০০। আর ৬৫ বছর বয়সী বা তার বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে আত্মঘাতী মানুষের সংখ্যা ৩ হাজার ৩০০।
এই গবেষণায় উঠে এসেছে, ১৯৯৯-২০১৬ সালের কালপর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডাকোটা প্রদেশে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বে বেড়েছে, প্রায় ৫৭ শতাংশ। অন্যদিকে ডেলাওয়্যার প্রদেশে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধির হার সবচেয়ে কম, ৬ শতাংশ। তবে নেভাডা প্রদেশে আত্মহত্যার প্রবণতা সামান্য কমেছে, যার হার ১ শতাংশ। তবে সিডিসি আত্মহত্যা কমানোর লক্ষ্যে নানা ধরনের কাজ করে চলেছে। তাদের লক্ষ্য, ২০২৫ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আত্মহত্যার হার কমপক্ষে ২০ শতাংশ নিচে নামিয়ে আনা।