একই দিনে হলিউডের দুটি আলোচিত ছবি মুক্তি পাচ্ছে স্টার সিনেপ্লেক্সে। রেসিডেন্ট এভিল সিরিজের নতুন ছবি ‘রেসিডেন্ট এভিল: ওয়েলকাম টু রেক্কুন সিটি’ এবং ডিজনির অ্যানিমেশন ছবি ‘এনচান্টো’-এই ছবিগুলো একসঙ্গে মুক্তি পাবে ২৬ নভেম্বর। গেমভিত্তিক ছবির সিরিজ রেসিডেন্ট এভিল-এর নতুন এই ছবি নিয়ে দর্শকদের যেমন কৌতুহল রয়েছে তেমনি বিপুল উৎসাহ দেখা গেছে অ্যানিমেশন ছবি ভক্তদের কাঙ্খিত ডিজনির ছবি ‘এনচান্টো’ নিয়ে। দুটি ছবিই যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পেয়েছে ২৪ নভেম্বর।
রেসিডেন্ট এভিল: ওয়েলকাম টু রেক্কুন সিটি
গেম সিরিজ নিয়ে নির্মিত মুভি সিরিজের মধ্যে সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিরিজ ‘রেসিডেন্ট এভিল’। এই সিরিজের মোট ছয়টি ছবি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৫০ মিলিয়ন ডলার। আয় হয়েছে এ পর্যন্ত ৯১৫ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। ২০১৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘রেসিডেন্ট এভিল’ সিরিজের সবশেষ ছবি ‘রেসিডেন্ট এভিল: দ্য ফাইনাল চ্যাপ্টার’। জাপানি ভিডিও গেম প্রোডাকশন হাউস ক্যাপকমের জনপ্রিয় ভিডিও গেম সিরিজ ‘রেসিডেন্ট এভিল’ অবলম্বনে ১৫ বছর আগে এই সিরিজ শুরু হয় হলিউডে। ২০০২ সালে মুক্তি পায় সিরিজের প্রথম ছবি। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই সিরিজের একে একে ছয়টি ছবি ব্যবসাসফল হয়েছে। মানব সম্প্রদায়কে রক্ষার এক কঠিন মিশনে অ্যালিস চরিত্রে অভিনয় করা মিলা জোভোভিচের একক সংগ্রামই ছবির মূল গল্প। সিরিজের প্রতিটি ছবিতে অ্যালিস চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিলা জোভোভিচ। সবশেষ ছবিতে দেখা যায়, অ্যাপোক্যালিপসদের মধ্যে বেঁচে থাকা শেষ কয়েকজনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দিয়েছে আমব্রেলা করপোরেশন। মৃত কিন্তু জীবিত আত্মার দৌরাত্ম্যে মানবতা টিকিয়ে রাখার শেষ আশা অ্যালিস। তাই সে বন্ধুদের নিয়ে ফিরে যায় রেক্কুন সিটিতে। যেখান থেকে শুরু হয়ে ছিল এই মরণখেলা। এদিকে আমব্রেলা করপোরেশন এলিসের সুপার হিউম্যান পাওয়ার শেষ করে দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত হয়। তারা কিছুটা সফলও হয় বটে। যার ফলে অ্যালিসের জন্য মিশনটি বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
এবারের ছবির কাহিনী রেক্কুন সিটিকে ঘিরেই। রেক্কুন সিটি এমন একটি জায়গা যেখানে মৃতদেহ প্রতিটি কোণে ঘুরে বেড়ায়। তবে সবথেকে বড় হুমকি প্রাক্তন বিজ্ঞানী উইলিয়াম বারকিনের কাছ থেকে উদ্ভূত হয়, যিনি ক্রমবর্ধমানভাবে একটি অদম্য দানব হয়ে উঠছেন। পুলিশ অফিসার লিওন এবং ক্লেয়ার নিখোঁজ হলে ভাই ক্রিস তাদের সন্ধান করেন। সর্বনাশ থেকে বেঁচে থাকা এবং নিজেকে জীবিত মৃতদের শহর থেকে বের করে আনার আগে তারাও জম্বিতে পরিণত হন। পরিচালক জোহানেস রবার্টস নিজে গেম খেলেছেন এবং একজন যুবক হিসেবে এটিকে ভালবাসতে শিখেছেন তা মোটামুটি দুই মিনিটের পূর্বাভাস দেখার পর অস্বীকার করা যায় না। ভিডিও গেমের সমান্তরালগুলো যেমন চিহ্নিত করা যায় তেমনি বিশদে তার স্পষ্ট মনোযোগ। পুরো ব্যাপারটি প্রায় এই ধারণা দেয় যে ৪৫৫ বছর বয়সী আমাদের পুরনো প্লেস্টেশন কনসোল এবং সংশ্লিষ্ট টিউব টিভি বেসমেন্ট থেকে বের করে আনতে চাইবে। ধুলো উড়িয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসে উড়িয়ে দেবে এবং নব্বই দশকে ফিরে আসবে। ২৬ নভেম্বর যখন সিনেমা হলগুলোতে ‘রেসিডেন্ট এভিল: ওয়েলকাম টু রেক্কুন সিটি’ শুরু হবে, তখন গেমার এবং চলচ্চিত্র দর্শকদের দুই ঘণ্টার জন্য চরিত্রগুলোর ভাগ্য জোহানেস রবার্টসের কাছে হস্তান্তর করতে বলা হবে, যিনি নেভিগেট করেন ভয়াবহ দৃশ্যের মাধ্যমে।
এনচান্টো
অ্যানিমেশন ছবির দুনিয়ায় অনন্য এক নাম ওয়াল্ট ডিজনি পিকচার্স। তাই অ্যানিমেশন ছবির ভক্তরা বরাবরই ডিজনির ছবির জন্য অপেক্ষায় থাকে। এ পর্যন্ত বহুসংখ্যক সফল ছবি উপহার দিয়েছে ডিজনি, যার মধ্যে স্নো হোয়াইট অ্যান্ড দ্য সেভেন ডোয়ার্ফস, ফ্যান্টাসিয়া, ১০১ ডালমেশিয়ানস, দ্য লায়ন কিং, দ্য লিটল মারমেইড, আলাদিন, মুলান, ট্যাঙ্গেলড, ফ্রোজেন ছবিগুলো রীতিমত বিখ্যাত। বিখ্যাত শর্ট ফিল্মের মধ্যে রয়েছে ‘মিকি মাউস’ সিরিজ, পেপারম্যান, ট্যাঙ্গেলড এভার আফটার, সুপার রাইনো, গেট আ হর্স। ওয়াল্ট ডিজনি স্টুডিওর ছবিগুলো নানা কারণেই বিখ্যাত। তবে এ সাফল্যের মূলমন্ত্রটা লুকিয়ে আছে ছবিগুলোর অসাধারণ মানবীয় গল্পে, ছবি দেখতে দেখতে একসময় নিজেকে মনে হবে চরিত্রগুলোরই একজন। ছবিগুলো দেখার আসল মজাটা এখানেই। যেমন ধরা যাক গত বছর মুক্তি পাওয়া মুলানের কথা। চীনের ছোট্ট একটা গ্রামের কিশোরী মেয়ে মুলান, বাবাকে যুদ্ধ থেকে বাঁচানোর জন্য যে কিনা নিজে ছেলে সেজে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় বাবার বদলে যুদ্ধে যোগ দিতে। শেষে নানা চড়াই-উতরাই পার হয়ে চীনের সম্রাটের দেখা পায়, যিনি তাকে দেশের সেরা সৈনিকের সম্মান দেন। আবার বামবি ছবিটার কথাও বলা যায়। ছোট্ট হরিণছানা বামবি সারাক্ষণ মায়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়াত আর খেলত। একদিন বামবিকে বাঁচাতে গিয়ে তার মা মারা পড়ে শিকারিদের হাতে। ছোট্ট বামবিকে বুকে তুলে নেয় তার বাবা হরিণরাজা। বামবির মিষ্টি হাসি আর দুষ্টুমিতে গম্ভীর বাবাও হাসতে শেখে। ছবির শেষে বামবিকে দেখা যায় হরিণদের রাজা হিসেবে, ঠিক যেমনটি ছিল তার বাবা। বলা যায় ওয়াল্ট ডিজনি স্টুডিওর হালের ছবি ফ্রোজেন-এর কথা। সারাক্ষণ একই সঙ্গে থাকা দুই বোন অ্যানা আর এলসা ছোটবেলায় আলাদা হয়ে যায়। নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার পর কি অ্যানা আর এলসার দেখা হবে? জানতে হলে দেখতে হবে ছবিটি! ওয়াল্ট ডিজনির ছবির আরেকটি মজার দিক হলো এর গান। নানা স্বাদের, অনন্যসাধারণ গানের জন্যও এই ছবিগুলো অনেক জনপ্রিয়, গানগুলোও জনপ্রিয়। সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে নতুন ছবি ‘এনচান্টো’-তেও।
পাহাড়ে বসবাসরত এক পরিবারের গল্প দেখানো হয়েছে। একটি শিশু ছাড়া প্রত্যেক শিশুরই কোনো না কোনো বিশেষ ক্ষমতা আছে। মিরাবেল নামের সেই বিশেষ ক্ষমতাহীন শিশুটিই এক বিপদ থেকে রক্ষা করে পুরো পরিবারকে। শত্রুদের হাত থেকে রেহাই পেতে পালানোর সময়, আলমা আবুয়েলা মাদ্রিগাল তার স্বামী পেদ্রোকে হারান। তবে তার তিন সন্তান জুলিয়েটা, পেপা এবং ব্রুনোকে উদ্ধার করতে সক্ষম। একটি অলৌকিক ঘটনার কারণে, আবুয়েলার হাতে থাকা মোমবাতি বিশেষ ক্ষমতা পায় এবং পাহাড়ের পাদদেশের ছোট্ট গ্রামটিকে রক্ষা করে। নতুন বাড়িতে ওঠে আবুয়েলা। এরপর থেকে বদলে যেতে থাকে তার পরিবার। তার ছেলে ব্রুনো ভবিষ্যত দেখার বিশেষ ক্ষমতা পায় আর অ্যান্টোনিও প্রাণীদের সাথে কথা বলার ক্ষমতা পায়। এই পরিবারকে ঘিরেই সিনেমাটির কাহিনি আবর্তিত হয়। এরই মধ্যে ছবিটি নিয়ে বিপুল উৎসাহ দেখে গেছে ভক্তদের মাঝে। অনেকেই মোয়ানা’র সঙ্গে তুলনা করছেন একে। সাফল্যের দিক থেকে এটি মোয়ানা’র সাথে পাল্লা দিবে বলে আলোচনা চলছে।