৫ ফেব্রুয়ারি তেজগাঁওয়ে সরকারি শিশু পরিবার প্রাঙ্গণে আয়োজিত হয় অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত ৬ মেয়ের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। তবে বিয়ের আয়োজনে কোনো ঘাটতি ছিল না। তবু অন্য সাধারণ বিয়ের মতো নয় এটা। কারণ, বিয়ের ৬ কনে স্বপ্না, লিপি, সাবিনা, তানিয়া, মাজেদা, হাজেরা ছিলেন মাতা-পিতা, স্বজনহীন। নবদম্পতি স্বপ্না বেগম-মো. শাহজালাল, লিপি আক্তার-রবিউল তালুকদার, সাবিনা চৌধুরী-মো. সোহাগ, তানিয়া আক্তার-হারুন অর রশিদ, মাজেদা বেগম-কশির উদ্দিন, হাজেরা লাকি-সাইফুল ইসলাম শিশু পরিবারের এক মঞ্চে মালাবদলের মধ্য দিয়ে একে অপরকে কাছে টেনে নেন জীবনসঙ্গী হিসেবে। স্বপ্না, লিপিরা কখনো বাবা-মায়ের মুখ দেখেননি। যশোরের মেয়ে স্বপ্না জানতেন তার মা মিরপুরে এক পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। একদিন সেই কারখানায় আগুন লেগে স্বপ্নার মা মারা যান। তেজগাঁওয়ের বিজি প্রেস স্কুল থেকে এসএসসি পাস করা স্বপ্না বেগম ১৯৯৭ সালে ২৬ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসারের মাধ্যমে ঢাকায় আসেন। ভর্তির সময় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে স্বপ্নাকে দেয়া হয় ৪৯ হাজার ৮৮০ টাকা। সেই টাকার পরিমাণ এখন ১ লাখ ৭৬ হাজার। বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সেই টাকার চেক তুলে দেওয়া হয় স্বপ্নার হাতে। স্বপ্নার জীবনসঙ্গী মো. শাহজালালের গাজীপুরে মাওনা চৌরাস্তায় অটো পার্টসের দোকান আছে। অন্যদিকে লিপি ও রবিউলের বাড়ি ফরিদপুরে। মেকানিক পেশায় জড়িত রবিউল। তার জীবনসঙ্গী লিপি উচ্চমাধ্যমিকে অধ্যয়নরত। সেলাই, এম্ব্রয়ডারি, ব্লক, বাটিক ও বেকারির কাজে দক্ষ লিপি বিয়ের পরও লেখাপড়া চালিয়ে যাবার ইচ্ছা পোষণ করেন। তবে তানিয়া ও হারুন অর রশিদ যুগলের প্রেম গড়িয়েছে বিয়ে পর্যন্ত। হারুন অর রশিদ একটি স্টুডিওতে টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন। ছয়-সাত বছরে শিশু পরিবারে আসা এসএসসি পাস তানিয়ার ক্রিকেট আর অ্যাথলেটিকসে আগ্রহ বেশি। এমনকি শিশু পরিবারের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রতিবার অ্যাথলেট হিসেবে চ্যাম্পিয়নও হয়েছেন। উপতত্ত্বাবধায়ক ঝর্না জাহিনের মতে, শিশু পরিবারে বর্তমানে ১৫৮ জন মেয়ে রয়েছে। যাদের বয়স ৬ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত। এখান থেকে ১৮ বছর না হলে কোনো মেয়েকে বিয়ে দেয়া হয় না। ঝর্না জাহিন ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর ২০১২ সালে ২ জন, ২০১৪ সালে ৬ জনকে বিয়ে দেন। এবারও ৬ জনকে একসঙ্গে বিয়ে দিতে পেরে খুব আনন্দিত তিনি। ছয়জনের বিয়ের কেনাকাটার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। সহায়তা আসে অনেকের কাছ থেকে। কনেদের বিনা পয়সায় সাজিয়ে দিয়েছে পারসোনা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। তিনি নবদম্পতিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, যারা বঞ্চিত, মাতৃ-পিতৃহীন, তাদের সমাজে অন্তর্ভুক্ত করে এগিয়ে নিতে সহায়তা দেয়া প্রয়োজন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিয়ের আয়োজন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ঢাকা জেলার ডিসি মো. সালাহউদ্দীন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ নূরুল কবির, সমাজসেবা অফিসারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইকবাল হোসেন খান প্রমুখ।
Related Projects
বৈশাখ বরণে রঙ বাংলাদেশ
- April 3, 2024
আলপনা ও আগুনের নানান রূপ-বৈচিত্র্যের চমৎকার বিন্যাস ঘটানো হয়েছে এ সংকলনে
কেমন হতে পারে ভবিষ্যতের ল্যাপটপ?
- June 15, 2018
ল্যাপটপের কাজ আজকাল স্মার্টফোনেই হয়ে যাচ্ছে। ফলে ল্যাপটপের ভবিষ্যৎ খুব একটা ভালো নয় বলে ভাবছেন অনেকেই।

