প্রাপ্তবয়স্ক কোনো ব্যাক্তিকে চিকিৎসকেরা তাদের বয়স অনুযায়ী দৈনিক তিন থেকে চার লিটার পানি পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে সেই পরিমাণ কেমন? আজকাল যা গরম পড়েছে! তার ওপর শিশুদের দুষ্টুমি ও ছোটাছুটি বেশি।
প্রচণ্ড গরমে শিশুরা অল্পতেই ঘেমে যায়। ফলে ওদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি বেরিয়ে যায়। পানি বের হয়ে যাওয়ার পরিমাণ আধলিটার থেকে কখনো কখনো এক লিটার পর্যন্তও হতে পারে। শিশুদের এই পানিশূন্যতা পূরণ করা জরুরি।
আবার পানি পানের ক্ষেত্রে শিশুদের অনেক অনীহা রয়েছে। বেশির ভাগ স্কুলপড়ুয়া শিশুর বেলায় দেখা যায়, তারা স্কুলে যাওয়ার সময় ফ্লাস্কে যে পরিমাণ পানি নিয়ে গেছে, স্কুল থেকে ফেরার পর সেই পরিমাণ পানিই ফ্লাস্কে থাকে। অর্থাৎ ওরা পানি ছুঁয়েও দেখে না। শিশুরা হয়তো জুস বা কোমল পানীয় পান করে থাকে কিন্তু সেগুলো ওদের শরীরের পানিশূন্যতা পূরণ করার জন্য যথেষ্ট নয়।
একজন সাধারণ মানুষের শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশই পানি থাকে। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে ওদের দেহকোষের বাইরে এক্সট্রা সেলুলার থাকে, অর্থাৎ তরলের পরিমাণ বেশি থাকে।
একটি শিশুর শরীরে কী পরিমাণ পানি প্রয়োজন, সেটি নির্ভর করে শিশুর বয়সের ওপর। সাত থেকে বারো মাস বয়সী একটি শিশুর প্রতিদিন কমপক্ষে আধা লিটার থেকে পৌনে এক লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। এক থেকে তিন বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে সোয়া এক লিটার, চার থেকে আট বছরের শিশুর বেলায় তা দেড় থেকে দুই লিটার এবং নয় থেকে ষোলো বছরের শিশুর জন্য দৈনিক দুই থেকে আড়াই লিটার পানি প্রয়োজন। এই প্রয়োজন যে কেবল পানি দিয়েই মেটাতে হবে তা কিন্তু নয়। দুধ ও ফলমূলেও অনেক পরিমাণ পানি বিদ্যমান। তবে পানি পূরণের জন্য কোল্ড ড্রিংকস বা জুস পান না করানোই ভালো।
কিন্তু শিশুর শরীরের পানির স্বল্পতা বুঝবেন কীভাবে? প্রাথমি ভাবে শিশুর প্রস্রাবের রঙ দেখেই সেটি আঁচ করা যায়। তা ছাড়া শিশুর শরীরে পানিস্বল্পতা দেখা দিলে ও দৈনিক যে পরিমাণ প্রস্রাব করতো, প্রস্রাবের পরিমাণ তার চেয়ে কমে যাবে। এ ছাড়া অস্থিরতা, চোখ ভেতরে ঢুকে যাওয়া, জিভ শুকিয়ে যাওয়া, নাড়ির দ্রুত স্পন্দন- এসব দেখেও পানিস্বল্পতা আঁচ করা যায়।
শিশুকে পানি পানে প্রলুব্ধ করতে ওদের হাতে আকর্ষণীয় ও রঙিন মগ দিন। এ ছাড়া ওদের পানি পানের গুরুত্ব সম্পর্কে বেশি বেশি বোঝাতে থাকুন। দেখবেন একপর্যায়ে ও নিজে থেকেই পানি পানে উৎসাহ বোধ করবে।