মনভোলানো হাসি। বেশ মায়া মাখানো মুখ। সাথে অভিনয়ের মেধা। এই আমাদের আফসানা মিমি। দীর্ঘ সময় ধরে নিজের মেধা দিয়ে দেশের বিনোদন জগত আলোকিত করেছেন তিনি। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া আলোচিত শর্টফিল্ম ‘চক্রাকার’ এ দারুণ অভিনয় করেছেন আফসানা মিমি। পরিচালক রনি ভৌমিক পুরো শর্টফিল্মটি ধারণ করেছেন ভিভো এক্স৮০ ফাইভজি স্মার্টফোন দিয়ে। এই অভিজ্ঞতা নিয়েই ক্যানভাসের সাথে কথা হলো তাঁর।
ক্যানভাস: দেশের অভিনয় শিল্পে নিঃসন্দেহে আপনি একজন কিংবদন্তী…
আফসানা মিমি: এ কথাটা না বল না। এতে কিংবদন্তীদের অসম্মান করা হবে আর আমাদেরকে আননেসেসারি পজিশনিং করা হবে।
ক্যানভাস: এটা আপনার নিশ্চয় বিনয়।
আফসানা মিমি: না এটা বিনয় না , এটা একদম বিনয় না। কেন বলছি … নিজের অবস্থানকে একটা মানুষকে পরিষ্কার করে বোঝা উচিত। আমরা এখনো কিংবদন্তী হওয়ার মতো জায়গায় পৌঁছাইনি। এ দেশে যদি আলী যাকের, ফেরদৌসী মজুমদাররা কিংবদন্তী হয়ে থাকেন তবে আমরা আসলে ওই জায়গায় পৌঁছাইনি। তবে আমাদেরকে তোমরা বলতে পারো যে আমাদেরকে তোমরা শ্রদ্ধার জায়গা দিতে পারো, আমাদেরকে তোমরা বলতে পারো আমরা খানিকটা খ্যাত হয়েছি, বলতে পারো আমরা যত্ন নিয়ে কাজ করি, সেটুকু বলতে পারো , আমাদেরকে তোমরা সাধুবাদ দিতে পারো।
ক্যানভাস: সম্প্রতি ‘চক্রাকার’ নামে একটি শর্টফিল্মে অভিনয় করেছেন। ভিভো এক্স৮০ ফাইভজি স্মার্টফোন দিয়ে সম্পূর্ন ফিল্মটি শ্যুট হয়। কেমন ছিল অভিজ্ঞতা?
আফসানা মিমি: এ বছর শুরুতে আমি কাজ করেছি ওয়েবসিরিজ নিখোঁজ এ । পাপ-পুণ্য অনেক আগের সিনেমা, ২০১৯ এর ছবি; কিন্তু করোনার জন্য দু বছর পর রিলিজ হয়েছে। আর পাপ-পুণ্যের পরপরই আমি ভিভোর জন্য কাজটা করলাম । এখন ভিভোর জন্য কাজটা করার জন্য রনি ভৌমিক যখন আমাকে প্রথমে ফোন করল , রনির সাথে আমার পরিচয় ছিলো না কিন্তু আমি রনির কাজ এবং কাজসংক্রান্ত ওর যে সুনাম সেটা আমার জানা ছিল। রনি আমাকে বলেছে যে , আমি একটা শর্টফিল্ম করব, এরকম একটা ক্যারেক্টার আমি চাই আপনি করেন এবং পরে আমাকে বলেছে যে প্রযুক্তিগত জায়গা থেকে ভিভোতে শ্যুট করব। আমি বলছি সেটা তো ডিরেক্টর হিসেবে তোমার কল, আমি আমার পার্টটুকু করে যাব মন দিয়ে। আমার খুব ভালো লেগেছে সুন্দর একটা গল্প এবং সুন্দর একটা চরিত্র পাওয়াতে কারণ আমি আবার একটু একটু করে অভিনয়ে ফিরছি।
ক্যানভাস: মা চরিত্রে ‘চক্রাকার’ এ আপনার অভিনয় মন ছুঁয়ে গেছে। গল্পটা বেছে নেওয়ার কোনো কারণ আছে?
আফসানা মিমি: আমি সেই গল্পটাই বেছে নেব যেখানে আমার অভিনয় করার সুযোগ থাকবে। অভিনয় করার জন্য কিন্তু তোমার অনেক বড় ডিউরেশন জুড়ে পর্দায় থাকার প্রয়োজন হয় না। অভিনয় করলেই যে তুমি সিনেমাতে তিনঘণ্টা জুড়ে থাকবে সেটা অবশ্যই মজার ব্যাপার হতে পারে কিন্তু ডিউরেশনের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রটা গল্পের সাপেক্ষে কতটা সিগনিফিকেন্ট, কতটা তাৎপর্যপূর্ণ মানে আমি যে চরিত্রটাতে অভিনয় সেটা কি গল্পের সাপেক্ষে একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বা তাৎপর্যপূর্ণ একটা চরিত্র বা সেইটা আমার কাছে সব সময় বিবেচনার বিষয় থাকে আর তার পরবর্তীতে যে বিষয় থাকে তা ওই চরিত্র কতটা ইন্টারেস্টিং, যেমন ধরো পাপ-পূণ্যে আমি যে চরিত্র অভিনয় করেছি একদমই গ্রামের একজন মা।
ক্যানভাস: এই সময়ে তরুণ পরিচালকদের সাথে কাজ করে কেমন লাগছে?
আফসানা মিমি: এখন আর টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে আমি খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। কিন্তু নতুন যেসব ছেলেমেয়েরা নতুন সিনেমা নিয়ে কাজ করছে এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্ম সিনেমার দুই অর্থে শর্টফিল্ম বলো আর ফুল লেনথ বলো দুইটাতে কাজ করে খুব আনন্দ পাচ্ছি। এই সেক্টরগুলো এখনো ডিমান্ডিং। মানে এই সেক্টরগুলোতে মানুষ এখনো ভালো গল্প, ভালো অভিনয় , ভালো টিমওয়ার্ক, কাজের উৎকর্ষ মান নিয়ে ভাবছে এবং খুঁজছে এবং কাজ করছে। কিন্তু টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ এখন আর কাজের উৎকর্ষ নিয়ে মাথা ঘামায় না। কোনো ভালো কাজ খোঁজে না। তাহলে অনেক বছর ধরেই স্লট কীভাবে ধরে রাখা যায় এই করতে করতে মৃতপ্রায় ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হয়েছে।
ক্যানভাস: স্মার্টফোন দিয়ে ফিল্মের শ্যুট হয়ে গেল। কীভাবে দেখছেন বিষয়টি?
আফসানা মিমি: তুমি তো আসলে কাজ করছ ইন্ডাস্ট্রিতে, তুমি জানো প্রফেশনালিজম বলতে অর্থাৎ প্রফেশনালিজমের মানে কিন্তু শুধু আর্থিক বিনিময়ে না বা অর্থের বিনিময়ে না প্রফেশনালিজম অনেক বড় একটা জায়গা যেখানে মানুষ কি চায়, যেমন আমি চাই একটা ভালো টিম, যেমন আমি বলব এই ভিভোর যে কাজটা করলাম এখানে রনি যে কাজটা করল এখানে প্রডিউসার ছিল নোভা। নোভা একটা সময় আমার সাথে অনেক কাজ করেছে, যখন অভিনেত্রী হিসেবে কাজ করেছে, আমি প্রডিউসার ছিলাম বা ডিরেক্টর ছিলাম কিন্তু আমি যখন অ্যাক্টর আর নোভা যখন প্রডিউসার এত ইনজয় করেছি। এত সুন্দর ভাবে ও প্রডিউসিংয়ের জবটা করেছে আর এত সুন্দরভাবে কস্টিউমটা করেছে আমার জন্য এটা অন্যরকম আনন্দ ছিলো। আমি ওকে শুভেচ্ছা জানিয়েছি অনেক এবং অ্যাপ্রিশিয়েট করেছি। বলেছি নোভা একটা সময় আমি প্রডিউসার , ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করতাম, খুব বেশি মেয়েদের আমি দেখিনি এই কাজ করতে। তুই যে এত সিরিয়াসলি কাজ করছিস আই রিয়েলি ফিল প্রাউড।
ক্যানভাস: এখনকার গল্পের ধরণ নিয়ে কিছু বলুন।
আফসানা মিমি: এখন সারা পৃথিবীতে কিন্তু গল্পের আদল কিন্তু বদলে গেছে। দেখবে যে, কেবলমাত্র নায়ক নায়িকা নির্ভর গল্প কিন্তু বা গল্পের দিনটা এই মুহূর্তে এখন আর নাই। সেটা আর কখনো ফিরে আসবে কি না জানি না। এখন কিন্তু চরিত্র নির্ভর। সে চরিত্র নায়িকা হতে পারে, ভিলেনও হতে পারে , মা ও হতে পারে, বাবাও হতে পারে একই চরিত্র শিক্ষক হতে পারেন , সমাজের যেকোন স্তরের যেকোন মানুষ হতে পারেন। এখন বিষয় হচ্ছে পুরো পৃথিবীতে কিন্তু মানুষের দেখার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে, গল্প নির্বাচনের দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে গেছে এবং পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে।
ক্যানভাস: অনেকদিন পর আপনার বেশ কয়েকটা কাজ উপহার পেলাম আমরা। সামনে অভিনয় নাকি পরিচালনা- কোন দিকে এগোবেন?
আফসানা মিমি: আমার ফোকাসটা অভিনয়ে বেশি, কারণ আমি আসলে অনেকগুলো বছর প্রডিউসিং আর ডিরেকশনে জব করে আই গট টায়ার্ড। আমার এখন আর অত খাটতে ইচ্ছা করে না। অভিনয়ও অনেক খাটনির কাজ কিন্তু এটা করতে ইচ্ছা হয়। এখনকার টার্গেট একমুখী পরিশ্রম করা। সেজন্য অভিনয়টা বেছে নিয়েছি আবার।