আজ রথযাত্রা। বাংলাদেশের ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম রথযাত্রা। এই উৎসব সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের উৎসব হিসেবে পরিচিত হলেও বাংলায় প্রাচীন যুগ থেকেই এই উৎসব ধর্মবর্ণনিবির্শেষে সর্বজনীন। মূলত সাভার ও ধামরাই উপজেলায় ৩০০-৪০০ বছর আগে থেকে এই উৎসব প্রচলিত হলেও স্বামীবাগ এলাকার ইস্কনের রথযাত্রাও বেশ কিছু বছর ধরে জনপ্রিয়। স্বামীবাগ এলাকা থেকে রথযাত্রা শুরু হয়ে তা জয়কালী মন্দির, শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলা, বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাব, দোয়েল চত্বর, রমনা কালীমন্দির, জগন্নাথ হল, পলাশী মোড় হয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়।
রথযাত্রার মূল দেবতা জগন্নাথ সনাতন ধর্মের দেবতা হিসেবে পরিচিত হলেও আসলে এই দেবতা শবরদের। শবর জনগোষ্ঠী আর্যপরম্পরার উত্তর ভারতীয় হিন্দু ধর্মের অন্তর্গত নয়, বরং তারা পুরোপুরি অনার্য। ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের পুরীর জঙ্গলে অধিষ্ঠিত শবরদের দেবতা জগন্নাথের বিগ্রহকে প্রতিষ্ঠা করা হয় মন্দিরে। পুরীর মন্দিরও একসময় বৌদ্ধ মঠ ছিল বলে ইতিহাস ঘেঁটে খুঁজে পাওয়া যায়। পুরীর মন্দিরের রথযাত্রা ভারতীয় উপমহাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলেও বাংলার রথযাত্রা বহু প্রাচীন। ব্রাহ্মণ্যবাদ ও জাতপাতময় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে শ্রীচৈতন্যের ভাব আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে আছে উৎসব। শ্রীচৈতন্যের কারণেই পুরীর রথযাত্রাও আজ বিখ্যাত।
বাংলাদেশে ঢাকা মেট্রো সিটি, সাভার ও ধামরাই উপজেলার রথযাত্রা বাদেও সিলেটের রথযাত্রাও বিখ্যাত। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার মহেশের রথযাত্রাও প্রাচীন। ধামরাইয়ের রথ প্রায় সাড়ে তিন শ বছরের পুরোনো। প্রায় সাততলা উচ্চতার রথে চড়ে ভগবান জগন্নাথ, বলরাম ও দেবী সুভদ্রার মাসির বাড়ি ভ্রমণের মতো মজার মিথিক্যাল এই লোক-উৎসব ঘিরে ধামরাইয়ে মাসব্যাপী চলে রথের মেলা। উল্লেখ্য, ধামরাইয়ের প্রাচীন রথটি ছিল ৬০ ফুট উচ্চতার। তবে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সেই রথ পুড়িয়ে দেয়। পরে ২৫ ফুট উচ্চতার রথ চালু হয়। কিন্তু আরও পরে সরকারের তত্ত্বাবধানে ও ভারত সরকারের সহযোগিতায় ৪০ ফুট উচ্চতার একটি রথ নির্মাণ করা হয়। সেই রথেই ধামরাইয়ে প্রতিবছর মাসিবাড়ি ভ্রমণে যান জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। ক্যানভাস পত্রিকার তরফ থেকে সবাইকে রথযাত্রার শুভেচ্ছা।