লাতিন আমেরিকা মানেই সাম্য, মৈত্রী আর সমানাধিকারের বয়ান। লাতিন বিশ্ব মানেই চে গুয়েভারা, ফিদেল কাস্ত্রো। লাতিন আমেরিকা মানেই, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার আর্জেন্টিনার ১০ নম্বর জার্সির ম্যারাডোনার ফুটবলের জিহাদ! লাতিন আমেরিকা মানেই সক্রেটিসের হেয়ার ব্যান্ডে লেখা ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক’। লাতিন আমেরিকার ফুটবল শুধুই ফুটবল নয়, বরং ফুটবলের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদ, নিপীড়ন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে এক ফালি প্রতিরোধ!
এহেন লাতিন ঐতিহ্য বিপন্ন হতে বসেছিল ইসরায়েল-আর্জেন্টিনার ফুটবল ম্যাচকে কেন্দ্র করে। কিন্তু শেষমেশ সংগ্রামরত ফিলিস্তিনি জনতার আবেদনে সাড়া দিয়ে ঘাতক রাষ্ট্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ বাতিল করল আর্জেন্টিনা। আগামী ৯ জুন জেরুজালেমের টেডি স্টেডিয়ামে হতে চলা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রীতি ম্যাচটি থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন।
আর্জেন্টিনার ক্রীড়া সংস্থার ওয়েবসাইট মিনুতুনোতে জানানো হয়, জেরুজালেমে আগামী শনিবারের নির্ধারিত ম্যাচটি বাতিল করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ইসরায়েলের সঙ্গে আর্জেন্টিনার প্রস্তাবিত ফুটবলের কথা শুনেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন ফিলিস্তিনি জনতা। এই ম্যাচ থেকে আর্জেন্টিনার অধিনায়ক মেসিকে সরে দাঁড়ানোর দাবি করেন তাঁরা।
১৯৪৮ সালে একটি ফিলিস্তিনি গ্রাম ধ্বংস করে সেই জায়গায় টেডি স্টেডিয়াম বানানো হয়েছিল। লাগাতার ফিলিস্তিনি জনতার ওপর নিপীড়ন, সন্ত্রাস ও গণহত্যা চালিয়ে যাওয়া ইসরায়েলের সঙ্গে আর্জেন্টিনা ফুটবল ম্যাচে অংশ নিলে ম্যারাডোনার উত্তরসূরি মেসির ১০ নম্বর জার্সি ও আর্জেন্টিনার পতাকা পুড়িয়ে ফিলিস্তিনের মেসি ভক্তরা প্রতিবাদ জানাবেন- এমনটাই জানিয়ে দেন ফিলিস্তিন ফুটবল ফেডারেশনের কর্তা জিব্রিল রাজোব। বার্সেলোনায় আর্জেন্টিনা ফুটবল টিমের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের সামনেও মঙ্গলবার রক্তমাখা পোশাক পরে প্রতিবাদ জানান মেসি ভক্তরা। তাঁরা আরো কয়েকটি জায়গায় প্রতিবাদে শামিল হন । লাতিন আমেরিকার সংগ্রামী ও মানবতবাদী ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে ফিলিস্তিনের রাস্তায় রাস্তায় পোস্টারে ছেয়ে যায়। এরপরেই ম্যাচটি বাতিল করার কথা জানিয়ে দেয় আর্জেন্টিনা। এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই বিষয়ে আর্জেন্টিনার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। আর্জেন্টিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, কোনো অবস্থাতেই ইসরায়েলের সঙ্গে ফুটবল ম্যাচে অংশগ্রহণ করবে না আর্জেন্টিনা। শোনা যাচ্ছে, স্বয়ং মেসিও জানিয়ে দিয়েছেন, এই ম্যাচে অংশ নেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়।