চুল শক্ত করে বেঁধেছেন। ভাবছেন, সকালে উঠে চুল খুললেই দেখতে পাবেন হাফ ইঞ্চি বেড়েছে। ভাবনাটা ঠিক নয়। প্রাকৃতিকভাবেই চুল বাড়ে। তবে এর জন্য সঠিক যত্ন দরকার। এইসব কারণে চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়-
রাসায়নিক উপাদান
রাসায়নিক পদার্থে তৈরি বিভিন্ন প্রডাক্ট প্রতিনিয়ত চুলে ব্যবহৃত হলে চুল বাড়তে পারে না। বরং সৃষ্টি হয় বিভিন্ন সমস্যা। চুলের কালার, প্যাক, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার ও হেয়ার প্লান্টেশনে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। এগুলো চুলের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। অন্যদিকে, বিভিন্ন ওষুধ সেবনের কারণে চুল লম্বা হতে পারে না।
শক্ত করে বাঁধা
টাইট করে চুল বেঁধে রাখার কারণে চুলের গোড়া দুর্বল ও উন্মুক্ত হয়ে যায়। বেড়ে ওঠা দূরের কথা, চুল পড়তে শুরু করে। কপাল বড় হয়ে যায়। টাইট করে চিকন-চিকন বেণি করা আফ্রিকান ও আমেরিকান মেয়েদের বেশ পরিচিত হেয়ার স্টাইল। আর এ কারণেই চুল পড়া ও গোড়া আলগা হওয়ার মতো সমস্যা তারাই বেশি ভোগেন।
তাপ
চুলসজ্জায় তাপের ব্যবহার বেড়েছে। আয়রন, ড্রায়ার, ইলেকট্রিক ব্রাশ বা চিরুণির মাধ্যমে। এতে চুলের খুব ক্ষতি হয়। রোদের তাপও চুলের জন্য ক্ষতিকর। স্বাভাবিক বৃদ্ধি না হওয়ার একটি কারণ হচ্ছে তাপ বা গরম। শুধু তা-ই নয়, এটি চুল পড়া, ফাটা, লালচে হওয়া, রুক্ষ্মতা, খুশকি ইত্যাদির জন্যও দায়ী।
হেয়ার এক্সটেনশন, কার্ল ও স্ট্রেটনিং
এসবের কারণে চুলে বেশি চাপ পড়ে। সঙ্গে রাসায়নিক উপাদানে তৈরি প্রডাক্ট তো আছেই। মাত্রাতিরিক্ত টানাটানির ফলে চুলের গোড়া নরম হয়ে গেলে চুল পড়া শুরু হয়ে যায়। প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিকভাবে চুল বাড়তে পারে না। এক্সটেনশন, কার্ল ও স্ট্রেট চুলে যতো সৌন্দর্য থাকুক, তাতে যে ক্ষতি, সেটি পূরণ করা এক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।
জন্মগত
চুল লম্বা না-হওয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে বংশগত। অন্যদিকে চুলের গ্রোথ, ধরন, রঙ ইত্যাদি জন্মসূত্রে নির্ধারিত হয়ে যায়। যাদের জন্মের সময় চুল পাতলা ও ছোট ছিল, বড় হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে সেভাবে বাড়েনি, তাদের এই সমস্যা হয়ে থাকে।
চুল ঝাড়া
গোসলের পর টাওয়েল বা গামছা দিয়ে ভেজা চুল ঝাড়ার অভ্যাস চুলের জন্য ক্ষতিকর। এতে বৃদ্ধি তো বটেই, চুল পড়ার, ফাটার ও গোড়া নরম বা আলগা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া বিভিন্ন হেয়ার স্টাইল, তেল, চুলে ব্রাশ করার পদ্ধতি, ডায়েট, নিউট্রেশন, অসুস্থতা, বয়স ও চুলের সঠিক যত্ন না নেয়া ইত্যাদি চুলের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা দেয়।
প্রাকৃতিক উপায়ে চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি
চুলে প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহারে মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে, ¯œায়ু সক্রিয় হয়। চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে।
গ্রিন টি
চুল দ্রুত বড় করার জন্য গ্রিন টি চমৎকার প্রাকৃতিক ওষুধ। এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীর ও চুলের জন্য উপকারী। অ্যান্টি অক্সিডেন্টে তৈরি শ্যাম্পু, লোশন, কন্ডিশনার বা অন্যান্য হেয়ার কেয়ার প্রডাক্ট ব্যবহারে চুলের ফলিকল শক্ত ও টেকসই হয়।
গ্রেপসিড অয়েল
গ্রেপসিড অয়েল এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান, যা চুল দ্রুত বাড়তে সাহায্য করে। স্ক্যালপে ভালোভাবে গ্রেপসিড অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করুন সপ্তাহে ২/৩ দিন। তারপর ভালো করে ধুয়ে নিন। চুলের জন্য এই তেল খুবই ভালো।
আলু
আলুর রস বা আলুসেদ্ধর পানি চুলের বৃদ্ধির একটি প্রাকৃতিক দাওয়াই। ম্যাসাজ করে চুলে লাগান। ১৫ মিনিট রেখে তারপর ধুয়ে নিন। এরপর শ্যাম্পু করুন। সপ্তাহে ২/৩ দিন করতে পারেন। দেখবেন, চুল দ্রুত বাড়ছে।
ডিমের মাস্ক
চুলের বৃদ্ধিতে ডিম কার্যকর। সঙ্গে অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে চুলে লাগালে দ্রুত চুল বাড়বে। ১টি ডিমে ৫০ গ্রাম অলিভ অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে চুলে লাগান। এরপর টাওয়েল পেঁচিয়ে রাখুন। ১ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ১ দিন এই প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। চুল দ্রুত দীঘ হবে।
পরামর্শ
❙ চুল দীর্ঘ করতে প্রতিদিন ৮ থেকে ৯ গ্লাস পানি নিয়মিত পান করুন
❙ পুষ্টিকর ও ভিটামিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করুন
❙ তাপ এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে হিট প্রটেক্টর ব্যবহার করুন
❙ প্রতিদিন চুলের যত্ন নিন। পরিষ্কার রাখুন। ভালো ব্র্যান্ডের প্রডাক্ট ব্যবহার করুন
❙ টাইট করে চুল বাঁধবেন না। ঝাড়ার অভ্যাস বাদ দিন। স্টাইলিংয়ে নির্বিচার এক্সপেরিমেন্ট যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন
❙ প্রতিরাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ম্যাসাজ করে তেল লাগান
❙ রাসায়নিক উপাদানে তৈরি প্রডাক্ট ব্যবহার কমিয়ে ফেলুন
❙ বিভিন্ন হেয়ার ট্রিটমেন্ট করতে পারেন
❙ সঠিক উপায়ে ব্রাশ করুন
❙ বাইরে বের হওয়ার সময় স্কার্ফ বা ছাতা ব্যবহার করুন