ক্যানভাস ডেস্ক
বিশ্বব্যাপী ইসলাম ধর্মালম্বীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস মাহে রমজান। পবিত্র এই মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে জাগতিক সব আরাম-আয়েশ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখা এবং মনকে স্থির রাখার সংকল্প নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। পরে পবিত্র ঈদুল ফিতরের মাধ্যমে এই মাসের সমাপ্তি হয়।
বলা হয়ে থাকে রমজান মাসটি সহনশীলতার মাস, সংযমের মাস। সাওম পালন করলে মানুষ পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হন। এই মাসে সামাজিক বন্ধন বৃদ্ধি পায়। ধনী ও গরিবের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে মানুষ সবাই একই কাতারে চলে আসেন। অর্থবানরা নিম্ন আয়ের মানুষদের অনাহারে থাকার কষ্টটা অনুধাবন করতে পারেন। ফলে তারা তাদের পাশে দাঁড়াতে উৎসাহিত হন।
তাই সুবিধা বঞ্চিত মানুষের কথা ভেবে ও বৈষম্য দূর করতে কোকা-কোলা সারা দেশে প্রায় ১ লাখ মানুষকে ইফতার করানোর উদ্যোগ নিয়েছে। মাসজুড়ে তিনটি ভেন্যুতে এই কার্যক্রম চলমান থাকবে। আর এই কাজটিকে আরও সহজ হয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ-এর মাধ্যমে। তাদের সহযোগিতায় রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম ও রাজশাহী শহরের অসহায় মানুষদের নিয়ে রমজান মাসে ধাপে ধাপে এই ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে।
আর এই আয়োজনের উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষদের একসঙ্গে ইফতারের স্বাদ দেওয়া, আনন্দ দেওয়া। অসহায় মানুষদের একটু খুশি করা। তাদের একটু খুশি কোকা-কোলা’র জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।
সম্প্রতি তেমনি একটি আয়োজন করা হয়েছিল রাজধানীর রূপনগর ইলিয়াস মোল্লা ঈদগাঁ মাঠে। সেখানে ছিল বৈষম্যহীন ইফতারের বিশেষ আয়োজন। যেখানে ছিল না কোনো শ্রেণি বিভেদ। ছিল না আলাদা খাবার কিংবা সংরক্ষিত টেবিল। সুবিধাবঞ্চিত নিম্নআয়ের মানুষ থেকে শুরু করে অতিথিরা কিংবা সমাজের তারকাও বসেছিলেন এক কাতারে। ইফতার ভাগাভাগি দেখে মনে হয়েছে সমাজে বৈষম্য যেন হারিয়ে গেছে। পথশিশুরাও তারকাদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে ওঠে সেই আয়োজনে।
এই আয়োজনে গিয়ে দেখা গেছে, হাজারো রোজাদার মানুষ অপেক্ষা করছে। সেখানকার পরিবেশই বলে দিচ্ছিল অভাবি মানুষদের জন্য রাজসিক আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারণ তারাই এই আয়োজনের মূল অতিথি। সবাই শৃঙ্খলভাবে তৃপ্তি নিয়ে আহার করে ফিরেছেন। আর অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক নিরলস পরিশ্রম করে আয়োজনকে পরিপাটি করে তুলেছেন। হাজারো মানুষের আয়োজনের ব্যানারে লেখা ছিল ‘ইফতারে ভাঙি রোজা, ভাঙি বৈষম্য’।
ইফতারে অংশ নেওয়া বৃদ্ধা সুফিয়া বেগমের বলেন, দুইবেলা খাবার জোটাতে হিমশিম খেতে হয় তার। সেখানে ভালো ও দামি ইফতার তো দূরে কথা। পাড়াপড়শি ভালোমন্দ কেউ দিলে ইফতার করা হয়। নহলে ভাগ্যে যা ঘরে থাকে তা দিয়েই ইফতার করেন তিনি।
এই আয়োজনে অংশ নিয়েছিল মিরপুরের একটি বস্তিতে থাকা বৃদ্ধ জমির শেখ। দুই নাতিকে সঙ্গে নিয়ে ইফতারে অংশ নিয়েছেন তিনি। এমন আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে পেরে তিনি ভীষণ খুশি।
সুফিয়া বেগম ও জমির শেখের মতো এমন হাজারো সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য রমজান মাসে এই ক্যাম্পেইন চলছে। এই ক্যাম্পেইনে যৌথভাবে কাজ করছে কোকাকোলা বাংলাদেশ এবং বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।
আয়োজকেরা জানান, দান ও কৃতজ্ঞতার চেতনায় রমজান মাস উদযাপনে এক লাখ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সঙ্গে খাবার শেয়ার করাই এই ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য। ‘শেয়ার আ মিল টুগেদার’ নামক ক্যাম্পেইনটি চলবে ২৫ রমজান পর্যন্ত। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীজুড়ে প্রতিদিন চার হাজার মানুষের সঙ্গে খাবার শেয়ার করা হবে।
কোকাকোলা বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তা জি তুং বলেন, যখন প্রতিনিয়ত আমাদের হাজারো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে, এমন সময়ে সবাই একত্রিত হয়ে একে অন্যকে সাহায্য করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ‘শেয়ার আ মিল টুগেদার’ ক্যাম্পেইনটির পরিকল্পনা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে সমাজে বিশেষ করে রমজান মাসে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব হয়। চার হাজার মানুষের সঙ্গে খাবার শেয়ার করার পাশাপাশি এই ক্যাম্পেইনের আওতায় সারা মাসজুড়ে পাঁচ দিন বিশেষ ইফতারের আয়োজন করা হবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে অনুষ্ঠিতব্য এই ইফতার আয়োজনের উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সবাই মিলে বড় আয়োজনে একসঙ্গে ইফতার করা। এর মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মাঝে একতা সৃষ্টির কথা প্রচার করা।
বিদ্যানন্দের ভাইস চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ বলেন, পবিত্র রমজান মাসে কোকাকোলা ও বিদ্যানন্দ একটি অনুপ্রেরণামূলক ক্যাম্পেইন নিয়ে কাজ করছে। সবার মধ্যে সমতার প্রচার করাই এর লক্ষ্য।