কম্পিউটারে খেলছে আমার মেয়ে
নিধনের খেলায় এ মেরে ফেলছে ওকে
অথবা দৈত্য ফেলছে কাউকে খেয়ে
মগজে এখন শুধু ভাইরাস ঢোকে
– কবীর সুমন
শৈশব, কৈশোরের ফুটবল, কাবাডি-হাডুডু অথবা ক্রিকেট খেলার মাঠ আর সাঁতার কাটার পুকুর নাগরিক জীবন থেকে ক্রমে পুরোপুরি হারিয়ে যাচ্ছে। আর তাই শিশু-কিশোরদের মন বসছে ডেস্কটপ-ল্যাপটপ থেকে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের ভিডিও গেমস অ্যাপে। আর মস্তিষ্কে, মনের অবচেতনে বাসা বাঁধছে গভীর, গভীরতর অসুখ। কৈশোরের রঙিন দিনগুলো আসক্ত হয়ে পড়ছে ভিডিও গেমের ডিজিটাল বন্দুকযুদ্ধ কিংবা কার রেসিং কিংবা আধিভৌতিক নানা অ্যানিমেটেড ‘রণরক্তসফলতার’ কল্পবাস্তবতায়। তবে শুধু শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রেই নয়, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও দেখা দিচ্ছে ভিডিও গেমিং আসক্তি। যা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তির চেয়েও ক্ষতিকর।
তবে সোশ্যাল মিডিয়া অথবা ভিডিও গেমিং—এই দুই ক্ষেত্রেই তীব্র আসক্তিকে ‘ডিজিটাল কোকেন’ আসক্তি নামে চিহ্নিত করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ‘ডব্লিউএইচও’ ভিডিও গেমিংয়ের প্রতি তীব্র আসক্তিকে মানসিক অসুস্থতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই অসুস্থতার নাম দেওয়া হয়েছে ‘গেমিং ডিসঅর্ডার। বিভিন্ন ধরনের রোগের সমীক্ষার তথ্যভান্ডার ইন্টারন্যাশনাল ক্ল্যাসিফিকেশন অব ডিজিজেস বা ‘আইসিডি’র ১১তম সংস্করণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভিডিও গেমিংয়ের প্রতি আসক্তিকে বিশেষ একধরনের মানসিক রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, এই গেমিং ডিসঅর্ডারের ফলে দৈনন্দিন অন্য সব কাজের তুলনায় ভিডিও গেমকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হতে থাকে। এর ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, ডায়েটে সমস্যা দেখা যায় এবং শরীরের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো ভার্চ্যুয়াল মিডিয়ামে আসক্তির ফলে পরিবারগুলোর সদস্যদের মাধ্যমে স্বাভাবিক কথাবার্তা কমে আসে, শিশু-কিশোরেরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এক ডিজিটাল কল্পজগতে বাস করতে শুরু করে। ভিডিও গেমের প্রতি কম সময় ব্যয় করা বা সম্ভব হলে সম্পূর্ণভাবে এই গেমিং থেকে সরে এলে তবেই ‘গেমিং ডিসঅর্ডার’ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
‘আইসিডি’-এর নতুন সংস্করণে মোট ৫৫ হাজার রোগ, আঘাত ও মৃত্যুর কারণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ‘গেমিং ডিসঅর্ডার’! উল্লেখ্য, গোটা বিশ্বের বিভিন্ন চিকিৎসক চিকিৎসা ও রোগনির্ণয়ের ক্ষেত্রে এই ‘আইসিডি’র ওপর অনেকটা নির্ভর করেন।