ক্যানভাস ডেস্ক
মৈমনসিংহ গীতিকায় সংকলিত ‘কাজলরেখা’ কাহিনি অবলম্বনে, একই শিরোনামে আগামী ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ একটি নাটক মঞ্চস্থ করতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ। প্রথমবর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের থিয়েটার ল্যাব ৩-এ এই দুদিন সন্ধ্যা ৭টায় পরিবেশিত নাটকটি। ‘কাজলরেখা’ রচনা ও নির্দেশনায় রুবাইয়াৎ আহমেদ।
কাহিনিসূত্রে জানা যায়, ভাটিয়াল মুলুকের সওদাগর ধনেশ্বর জুয়া খেলে সর্বস্বান্ত হয়। দুই সন্তান রত্নেশ্বর এবং কাজলরেখার জীবনে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। আর্থিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য ধনেশ্বর শুকপাখির পরামর্শে আংটি বিক্রি করে বাণিজ্যে যায়। বাণিজ্যে গিয়ে আবার ধন-সম্পদ উপার্জন করে ধনেশ^র। এরপর সে তার মেয়ে কাজলরেখার বিয়ের জন্য শুকপাখির পরামর্শ চায়। মনসার শাপে জীবন্মৃত বনবাসী সুঁচরাজার সঙ্গে মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পরামর্শ দেয় শুকপাখি। এই পরামর্শকে ভাগ্যের লিখন ভেবে মেয়েকে বনবাসে দিয়ে আসে ধনেশ্বর। শরীরে সুঁচবিদ্ধ অভিশপ্ত অর্ধমৃত এক রাজকুমারকে বাঁচাতে বনবাসে দিন কাটে সওদাগরকন্যা কাজলরেখার। নিয়তি নির্ধারিত এই সুঁচরাজাই স্বামী ছিল তার। দীর্ঘদিন বহু কষ্ট সহ্য করে স্বামীকে সারিয়ে তোলে সে। তবে সুস্থ হয়ে রাজা নিজ স্ত্রীকেই মনে করে দাসী। স্বামীর প্রাসাদে ফিরে দাসী হয়েই থাকে সে, কেননা শুকপাখি ছাড়া নিজে পরিচয় প্রকাশ করলে মারা যাবে সূঁচরাজা। এ কারণে অশেষ কষ্ট ভোগ করেও গোপন রাখে নিজের পরিচয়। এরপর বহু আবর্তে ঘুরপাক খেয়ে পুনরায় পিতৃগৃহে আসে কাজলরেখা। সেখানে শুকপাখি তার পরিচয় জনসম্মুখে প্রকাশ করে। অবশেষে সূঁচরাজার সঙ্গে বিয়ে হয় কাজলরেখার।
“কাজলরেখা’ নাটক প্রসঙ্গে নাট্যকার ও নির্দেশক রুবাইয়াৎ আহমেদ বলেন, ‘ধৈর্য্য আর সহনশীলতার অতুলনীয় দৃষ্টান্ত কাজলরেখা। দীনেশচন্দ্র সেন কর্তৃক মৈমনসিংহ গীতিকায় সংকলিত এই আখ্যানে মানুষের অপরাজেয় মানসিকতার খোঁজ মেলে। মূলত নেত্রকোণা-কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত অঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে ‘কাজলরেখা’। মানুষ, প্রাণী, প্রকৃতি, প্রবৃত্তি, ধর্ম, দৈব– সব একাকার হয়ে মিশে গিয়েছে এই অনুপম কাব্যে। সহজ-সরল ভাষায় কাহিনি এগিয়েছে মানুষের কল্পনাকে নিশানা করে।”
“প্রথমবর্ষে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নাট্য পরিবেশনারীতি শীর্ষক কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষার অংশ হিসেবে এবার ‘কাজলরেখা’ নির্বাচন করা হয়েছে। তবে পরীক্ষা প্রযোজনা বিধায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বিবেচনায় প্রায়োগিক ক্ষেত্রে কাজলরেখাকে পুনর্লিখন করতে হয়েছে। সেই যাত্রায় অবগাহন করতে করতে একসময় দেখা গেল সংকলিত কাজলরেখার কাহিনি ছাড়া আর কিছু তাতে অবশিষ্ট নাই। অর্থাৎ এটি গ্রহণ করেছে নতুন নাটকের রূপ। তবে তা ঐতিহ্যআশ্রিত এবং অতি অবশ্যই বর্ণনাত্মক নাট্য আঙ্গিককে মান্য করে সৃজিত। নব্য কাজলরেখায় সূঁচরাজার জন্ম এবং তার জীবন্মৃত অবস্থার নেপথ্য অনুঘটক হিসেবে আমাদেরই ঐতিহ্যসিক্ত মনসাকে যুক্ত করে নেয়া হয়। মনসার কাহিনি এই নাট্যে নবতর ব্যাখ্যারূপে অধিষ্ঠিত হওয়া প্রয়াসী,” যোগ করেন তিনি।
রুবাইয়াৎ আহমেদ আরও বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী পরিবেশনাগুলো সচরাচর নিরাভরণ মঞ্চে গীতের প্রাধান্যে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। এই নাট্যও তার ব্যতিক্রম নয়। শূন্যমঞ্চতলে একে একে নির্মিত হয় দৃশ্যসম্ভার। মূলত বর্ণনা-গীত, ন্যূনতম চরিত্রাভিনয় আর দর্শকের সৃজনকল্পনাকে আশ্রয় করে দৃশ্যমান হয়েছে ঘটনা পরম্পরা। কোর্সের অংশ বিধায় ঐতিহ্যবাহী বাংলানাট্যের পরিবেশনা ও তার অভিযোজন ক্ষমতা শিক্ষার্থীদের অনুধাবন করানোই ছিল মূল লক্ষ্য। প্রায় ত্রিশদিনের নিবিড় শ্রমের ফসল এই নাট্য। আমার কাছে এই ভ্রমণ ছিলো ভীষণ আনন্দের। এর মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীদের ভেতর যদি শুভকর্মের তিয়াসা জন্মে, যদি মানবিক উপলব্ধি প্রোথিত হয়, যদি পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সাম্য, শৃঙ্খলার অনুগামী হয়, যদি নাট্যের প্রতি তাদের প্রেম জাগ্রত হয় সামান্য পরিমাণে হলেও, তবেই স্বার্থক সবকিছু।’
‘কাজলরেখা’য় অভিনয় করবেন ইন্দ্রানী, কুমু, লগ্ন, মনিকা, তানিয়া, উজমা, রাখি, আনিকা, সেলিম, আমিন, সাদমান, আবুযর, স্নেহাশীষ, সুপ্তি, আকাশ, অদিতি, ফারিয়া, শীলা, উর্মি, শ্রাবণী, জয়, নেওয়াজ, হিমা, নিলয়, ধ্রুব, মিশর, উজ্জ্বল প্রমুখ। রচনা ও নির্দেশনার পাশাপাশি মঞ্চ ও সুর-সংগীতের দায়িত্বও সামলাবেন রুবাইয়াৎ আহমেদ। অভিনয় প্রশিক্ষণে রয়েছেন ফাহিম মালেক ইভান, পোশাক পরিকল্পনায় খায়েরুজ্জামান মিতু, কোরিওগ্রাফিতে ইন্দ্রানী দেবনাথ ও মামিন্তি হাসান কুমু, সেট-প্রপসে আকাশ সরকার এবং আলোক পরিকল্পনায় রাসেল ইসলাম।