ঢাকা মেকারসের ‘মেকারস মার্কেট ২’ ছিল চার দিনের আয়োজন। ১ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪। শুরু-শেষ স্বায়ম্বরে পূর্ণ। একই সঙ্গে কারিগর আর ক্রেতার মিলনমেলা। ‘ঢাকা লাইফ’-এর সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন ব্র্যান্ডগুলো সাজিয়ে ছিল পসরা। ক্লদিং আইটেমের বাহারি আয়োজন ছিল। দেশের গর্ব জামদানি থেকে শুরু করে বেসিক ক্যাজুয়াল আইটেম ‘টিশার্ট’, সব-ই ছিল সেখানে। ডিজাইনার লেবেল সেখানে দারুণভাবে প্রস্ফুটিত ছিল।
তরুণ তুর্কি তানহা সেখানে হাজির হয়েছিলেন নিজের লেবেল ‘তান’ নিয়ে। ডাক্কা ব্র্যান্ডের মোটাসোটা তুলতুলে টোট ছিল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। বৈশ্বিক সচেতনতার অংশও তারা গুরুত্বপূর্ণভাবে নিয়েছেন বলেই মনে হয়েছে। কারণ ব্র্যান্ডটির শো কেসিংয়ে ছিল ফিলিস্তিনের পতাকা ও নাম-সহ ক্যাপ।
কনটেম্পরারি কালেকশন নিয়ে হাজির ছিল বসফরাস। হ্যান্ডক্রাফটেড শাড়ি নিয়ে সরব ছিল পাতা। সিনেমার ডায়ালগ আর ফোক আর্ট নিয়ে অলক্ষ্মীর উপস্থাপন ছিল আকর্ষণীয়। ‘তাসা’র আয়োজনে বোহো শাড়ি আর পমপম গয়না ছিল। ভালো বউ হিসেবে খ্যাত ‘শাবানা’র নামে নাম ব্র্যান্ড ‘শাবানা’র। তারাও মেকারস মার্কেটে ছিল মিনিমালিস্টিক ডিজাইন নিয়ে।
ব্যাগের কলেবর ছিল বিশাল। হল্লা, নুজআর্ট, মেইড ইন বাংলাদেশ, পেইন্টিংক মোটামুটি সব ব্র্যান্ডই নিয়ে এসেছিল ব্যাগ। কারও কাছে টোট তো কারও কাছে ক্রসবডি, আবার ট্রাভেলিং ব্যাগেজও ছিল।
অলংকারের বাজার বসিয়েছিল বেশ কিছু জুয়েলারি লেবেল। নয়ার ক্লে, উড়ন্ত আড়শোলা দারুণ সৃজনশীলতা দেখিয়েছে তাদের কাজে। প্রকৃতি থেকে পাওয়া পোকামাকড়, ফুল ঘিরে তৈরি গয়না নিয়ে এসেছিল বারজাখ। লেবার এনেছিল হাতে বানানো সাবান। সুগন্ধহীন সাবানের পাশাপাশি রেগুলার যেমন ছিল, তেমনি ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে ভ্যালেন্টাইল কম্বোও ছিল। ইকিগাই নিয়ে এসেছিল কাঠের তৈরি রান্না ঘরের সামগ্রী। সেভেনডেইজ নোটসের স্টল জুড়ে ছিল নান্দনিক নোটবুক।
মার্কেট প্লাটফর্মের পাশাপাশি ওয়ার্কশপ আর প্রদর্শনীও ছিল আয়োজনে। ৩০টির বেশি কর্মশালা সম্পন্ন হয়েছেন পুরো ইভেন্টে। আর্টওয়ার্ক, প্রিয় পোষা প্রাণীর জুয়েলারি, ডেনিম টোট ব্যাগ, সালসা, হেরিটেইজ আর্ট, পটারি, সুর, সাসটেইনেবল জুয়েলারি, টেপা পুতল, জাদু, ক্লাসিক্যাল ড্যান্স, পাপেট, পপসিকল, লেদার ক্র্যাফট, মাসু আকের অ্যাক্রেলিক ক্র্যাফট– সবই ছিল সেখানে। প্রদর্শনীতে ৬৫ জন শিল্পীর কাজ ছিল একই ছাদের নিচে।
খোলা আকাশের নিচে ছিল ফুড কোর্ট। পুরান ঢাকার নেহারি-বাকরখানির ঐতিহ্যবাহী খাবার থেকে শুরু করে জাপানের সুশি– সবই ছিল। কফি, পপসিকল, সিংগারা, কর্ন ডগ, স্যান্ডউইচ– সবই এখন মিশে গেছে আমাদের হ্যাপেনিং ঢাকা লাইফে। তারই একটি চলমান ছবি দেখা গেল ঢাকা মেকারসের আয়োজনে।
স্টেজ পারফরমেন্স ছিল প্রথম দিন থেকেই। গান গেয়েছেন জলের গান, লাবিক কামাল গৌরব, তাশফী, স্মুচেজ, ইমরান আহমেদ ট্রায়ো-সহ আরও বেশ কয়েকজন শিল্পী।
চার দিন ধরেই নেমেছিল আগ্রহী জনতার ঢল। রাজধানীর তেজগাঁও লিংক রোডে অবস্থিত আলোকি যেন আলোয় ঝলমল করছিল। তরুণ দর্শণার্থীর সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। তাদের ভাবনা ও জীবন ধারার সঙ্গে মিল ছিল আয়োজনেও।
ঢাকাবাসী উৎসবকেন্দ্রিক এ আয়োজন বেশ পছন্দ করেছে বলে ধারণ করা যায়। স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপডেট তারই জানান দেয়।
- সারাহ্/ ক্যানভাস অনলাইন
ছবি: মিনহাজ ইসলাম