রুবি গজনবী বাংলাদেশে প্রাকৃতিক রংয়ের ব্যবহার পুনরুজ্জীবিত করেন। প্রাকৃতিক রং নিয়ে আগাগোড়া গবেষণা করে এর ব্যবহারকে জনপ্রিয় করতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘অরণ্য’। নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে তিনি প্রায় ৩০টি ভেষজ রং পাকা করেন, যা থেকে পরবর্তীতে আরও বহু রংয়ের বিন্যাস তৈরি হয়। ব্লক প্রিন্ট ও হস্তশিল্পের নানা কৌশল সংযোজন করে তা দিয়ে প্রস্তুত করেন দৃষ্টিনন্দন বোনানো ও তৈরি-কাপড়।
বয়নশিল্পীদের প্রাকৃতিক রং ব্যবহারে উৎসাহিত করা সহজ কাজ ছিলো না। তবে রুবি মোটেই হাল ছাড়েন নি। অরণ্যর মাধ্যমে তিনি একাধারে দেশে বিদেশে প্রাকৃতিক রং ব্যবহারের প্রশিক্ষণ চালিয়ে যান। কারিকা (বাংলাদেশ হস্তশিল্প সমবায় ফেডারেশন) ও বাংলাদেশ কারুশিল্প পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ওয়ার্ল্ড ক্রাফটস কাউন্সিলের সম্মানসূচক সদস্য রুবি গজনবী অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন বাংলাদেশের কারুশিল্পীদের সারা বিশ্বে পরিচিত করাতে। জামদানির হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে ২০১৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জামদানি উৎসবের তিনি অন্যতম উদ্যোক্তা।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে নারীরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। অনেকে সাথে রুবিও এগিয়ে আসেন তাঁদের কাঁথার কাজ শিখিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলায়। তাঁকে প্রশ্ন করা হয় যে বিপণন-বাজারজাতের দিকে ঝুঁকে পড়লে চিরাচরিত হাতের কাজের অবমূল্যায়ন হবে কি না। রুবি গজনবী উত্তর দেন যে, নারীদের স্বাবলম্বী করে তুললে তাঁরা তাঁদের অর্জিত টাকা শিশু ও গবাদিপশুর দেখাশোনা এবং ঘর দুয়ার ও পরিবেশ রক্ষায় ব্যায় করেন। তার ফলে জীবনের মানোন্নয়ন হয়। এ-মুহুর্তে শুদ্ধতা নিয়ে ভাবার চেয়ে বেঁচে থাকাটা বেশি জরুরি।
গত ১৪ জানুয়ারি রুবি গজনবীর প্রয়াণের মধ্য দিয়ে বয়নশিল্পের জগতে আমরা একজন পুরোধা ব্যক্তি ও প্রবক্তাকে হারিয়েছি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭।
বেঙ্গল শিল্পালয়ে রুবি গজনবী স্মরণে আলোচনা অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে । চলবে ১১ মার্চ পর্যন্ত। রুবি গজনবী প্রণীত প্রাকৃতিক রং ও নকশার কিছু নিদর্শন সংবলিত ‘নৈবেদ্য’ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. পারভিন হাসান। বক্তব্য রাখেন জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের সভাপতি চন্দ্রশেখর সাহা, অরণ্য ক্রাফটসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নওশিন খায়ের এবং তাঁর সহকর্মীবৃন্দ। সূচনা সংগীতে ছিল নিলয় হালদার এর সারেঙ্গি বাদন ও লাইসা আহমেদ লিসার পরিবেশনা।
প্রাকৃতিক রঙের কাপড়, ব্লক, পেইন্টিংস, বই, আর্টওয়ার্ক, ইন্সটলেশনস ও বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে পরম সুহৃদ রুবি গজনবীর প্রতি বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ, অরণ্য ক্র্যাফটস ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের এই সম্মিলিত আয়োজন।