লাগোস ফ্যাশন উইক বর্তমানে ফ্যাশন এক্সিবিশনের ক্ষেত্রে একটি আলোচিত নাম। ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করা এই ফ্যাশন উইক অল্প সময়েই বিশ্বব্যাপী ব্যাপক খ্যাতি কুড়িয়ে নিয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে খ্যাতির শীর্ষে থাকা প্যারিস, মিলান, লন্ডন ও নিউইয়র্কের ফ্যাশন উইকগুলোর সঙ্গে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এই লাগোস ফ্যাশন উইকের ২০১৮-এর দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব। যা গত ২৪ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় নাইজেরিয়ার সর্ববৃহৎ শহর লাগোসে। এই ফ্যাশন উইকের এবারের স্পন্সর ছিল ‘হেইনেকেন’।
খ্যাতনামা ফ্যাশন বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি ‘স্টাইল হাউজ ফাইলস’-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ‘ওমোয়েমি আকিরেলে’র হাত ধরে শুরু হয় এই ফ্যাশন উইক। যা মূলত নাইজেরিয়া এবং বৃহৎ পরিসরে আফ্রিকার ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির এক বড় সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণবৈষম্যের শিকার আফ্রিকানদের ঘুরে দাঁড়ানোর এবং বিশ্বের মানুষকে নিজেদের যোগ্যতা জাহির করার এক অভূতপূর্ব মাধ্যম এই লাগোস ফ্যাশন উইক। এখানে অংশগ্রহণকারী বেশির ভাগ মডেল, ডিজাইনার সবাই নাইজেরিয়া এবং বৃহত্তর আফ্রিকার নাগরিক। বিগত বছরগুলোর প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে অনেক ডিজাইনার আলোচিত হন এবং অনেক মডেল খ্যাতি লাভ করেন।
৪ দিনব্যাপী এই ফ্যাশন উইক বিভিন্ন পর্বের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল রানওয়ে শো, প্রডাক্ট এক্সিবিশন, ট্যালেন্ট হান্ট, ফ্যাশন বিজনেস আলোচনা, ইকো ফ্যাশন, আফটার পার্টি ইত্যাদি। প্রদর্শনীর প্রথম দিন থেকেই লক্ষ করা যায়, আফ্রিকান ও নাইজেরিয়ান বিভিন্ন খ্যাতনামা ডিজাইনার ও বিখ্যাত কিছু ব্র্যান্ডের মেনস ও ওমেনস অ্যাটায়ার কালেকশন। কেনিয়ার ডিজাইনার আন ইয়াঙ্গো এম্পিঙ্গার কালেকশনে ছিল মডার্ন ও সেপিয়া টোনড পোশাকের আভিজাত্য। তিনি তাঁর ডিজাইনের মাধ্যমে মানুষের স্বাধীনতাকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। যা তার ‘ফ্রি অ্যাজ হিউম্যান’ ক্যাম্পেইনকে সমর্থন করে। যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজ থেকে শিশুশ্রম ও আদম পাচার নির্মূল করা। তার কালেকশনের সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত আউটফিট ছিল মিড লেন্থ শার্টলেস ফ্রক।
আফ্রিকান ব্র্যান্ড ‘ফ্রুশে’-এর ডিজাইনে লক্ষ করা যায় মেট্রোপলিটন ও পরিপাটি ধরনের পোশাক। যেখানে প্রাধান্য পেয়েছে প্রাকৃতিক বিভিন্ন রঙের ব্যবহার। এই রংগুলো ব্যবহৃত হয় মেয়েদের স্কার্ট, লেগ বেয়ারিং স্লিট ইত্যাদি পোশাকের জন্য। ব্র্যান্ডের হেড ডিজাইনার ও ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর ফ্র্যাঙ্ক আগুনোর মতে, তিনি বস্তুত আফ্রিকান বিনি কালচারকে তার ডিজাইনের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন। তাই তার ডিজাইনে পানি, পাখির পালক ইত্যাদি উপস্থাপনের জন্য ব্যবহার করেছেন পাউডার ব্লু, বারগ্যান্ডি রং।
আরেকটি খ্যাতনামা কেনিয়ান ব্র্যান্ড ‘কিকো রোমিও’ হাজির হয় তাদের মেনস কালেকশন নিয়ে। যার মূল থিম ছিল আফ্রিকান ক্ল্যাসিক ও ট্র্যাডিশনাল ড্রেস এবং তার মধ্যে একটু ভিন্নতা। তাদের নকশা করা ‘বয়লার স্যুট’ ও ‘হ্যান্ড ডাইড ব্রেথটেকিং মোটিফ’ প্রদর্শনীজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
উল্লেখিত ব্র্যান্ডগুলো ছাড়াও মুফা, মাকি ওহ, অ্যাডামা প্যারিসের মতো খ্যাতনামা ব্র্যান্ড এবং বিখ্যাত সেলিব্রিটি উরিয়েল অপুতা, কেলেচি আমাদিদের উপস্থিতিতে মুখরিত ছিল এই লাগোস ফ্যাশন উইক।
লেখা : সাকিব শাহমাত