‘সোলাস্ট্যালজিয়া: ফ্র্যাগমেন্টস অব আ ফেডিং হরাইজন’। অথবা, ‘সোলাস্ট্যালজিয়া: বিবর্ণ দিগন্তের টুকরোগুলো’। প্রতিশ্রুতিশীল চিত্রশিল্পী অন্তরা মেহরুখ আজাদের একক শিল্পকর্মের প্রদর্শনী। আয়োজনে প্ল্যাটফর্মস। চলছে রাজধানীর বারিধারার প্রগতি সরণির প্ল্যাটফর্মস গ্যালারিতে। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। পর্দা নামবে ১৬ নভেম্বর ২০২৪।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিসূত্রে জানা যায়, শনিবার (১৯ অক্টোবর ২০২৪) শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী পরিবেশগত পরিবর্তনের ব্যক্তিগত ও সার্বজনীন অভিজ্ঞতার সন্ধান করে, যেমনটি অন্তরা মেহরুখ আজাদের চোখের মাধ্যমে দেখা যায়, বাংলাদেশের নদী ও ল্যান্ডস্কেপের সঙ্গে গভীর সংযোগ যার কাজের প্রতিনিধিত্ব ঘটায়।
জলবায়ু-প্ররোচিত বন্যার প্রভাব এবং গ্রামীণ ও শহুরে পরিবেশের মধ্যে উত্তেজনাকে অন্বেষণ করে এই প্রদর্শনীর শিল্পকর্মগুলো। সুন্দরবন থেকে ঢাকার ঘন শহুরে ফ্যাব্রিক পর্যন্ত, অন্তরার কাজগুলো এই জগতের সংমিশ্রণকে প্রতিফলিত করে, মানুষের কার্যকলাপ ও পরিবেশগত সংকটের মাধ্যমে পুনর্নির্মাণ করা একটি ল্যান্ডস্কেপের বাহ্যিক পর্যবেক্ষণের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ আবেগের মিশ্রণ ঘটায়।
যখন গভীরভাবে আবেগপূর্ণ কিছু অন্তরাকে নাড়া দেয়, তার সৃজনশীল আবেগ সীমাবদ্ধ থাকে না। বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ শহর ঢাকায় বেড়ে ওঠা এই চিত্রশিল্পী এ ভূখণ্ডের ল্যান্ডস্কেপ ও জলের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্কের সাক্ষী হয়েছেন। দেখেছেন, নদী ও বর্ষায় গড়া বাংলাদেশের ভূগোল জীবন ও ধ্বংসের উৎস। আর এ সবই ছাপ ফেলেছে তার সৃজনশীলতায়।
অন্তরা মেহরুখ আজাদ বলেন, ‘২০১৮ সালে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এসেছিল, যখন আমি পাকুরিয়ায় বন্যা-আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করেছি। আমার কাজের নিয়ন গোলাপি জল এই সংকটের অস্বাভাবিক মনুষ্যসৃষ্ট উপাদানগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেড়েছে।’
প্রদর্শনীর কিউরেটর এবং ইশো ও প্ল্যাটফর্মসের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রায়ানা হোসেন বলেন, ‘নিয়ন জল ও ভাসমান দ্বীপের চিত্রের মাধ্যমে অন্তরা খণ্ডিত অথচ আন্তঃসংযুক্ত গল্পগুলোকে ধারণ করেন, যা পরিবেশগত বিপর্যয়ের প্রান্তে থাকা ব্যক্তিদের সম্মিলিত অভিজ্ঞতার প্রতিফলিত ঘটায়।’
এই রূপান্তরের স্থানান্তরিত স্কেলগুলো প্রদর্শনের জন্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটি বন্যা-আক্রান্ত সম্প্রদায়ের অন্তরঙ্গ চিত্র থেকে বিস্তৃত, আরও বিমূর্ত ল্যান্ডস্কেপে স্থানান্তরিত হয়ে, স্থানচ্যুতি ও পরিবেশগত অবক্ষয়ের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক যাত্রাকে প্রকট করে তোলে। প্রতিটি পেইন্টিং ফ্রেমের বাইরে প্রসারিত, সংকটের তীব্রতার প্রতীক।
বলে রাখা ভালো, অন্তরা মেহরুখ আজাদ একজন ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট, যার কাজ প্রকৃতি ও শহুরে জীবনের মধ্যে বিকশিত সম্পর্ক অন্বেষণ করে। অতিরঞ্জিত ও কৃত্রিম রঙের প্যালেটের মাধ্যমে তার চিত্রগুলো প্রাকৃতিক বিশ্বের ওপর নগরায়নের ধীরে ধীরে আধিপত্যের ওপর জোর দেয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে অঙ্কন ও চিত্রকলায় এমএফএ এবং বিএফএ অর্জন করেন।
২০২৩ ঢাকা আর্ট সামিট, ইন্দোনেশিয়ার ২০১৯ যোগকর্তা ইন্টারন্যাশনাল আর্ট ফেস্টিভ্যাল এবং থাইল্যান্ডের মায়েং চিয়াং রাই আর্টিস্ট গ্রুপের গ্লোবাল উইমেন, উইমেনস আর্ট এক্সিবিশন ২০১৯-সহ বিশ্বব্যাপী মর্যাদাপূর্ণ গ্রুপ প্রদর্শনী ও আর্ট ক্যাম্পে তার কাজ প্রদর্শিত হয়েছে। তিনি ২০১৮ সালে ১৮তম এশিয়ান আর্ট দ্বিবার্ষিক বাংলাদেশ, ২০১৭ সালে, ২২তম জাতীয় শিল্প প্রদর্শনী, ইন্দোনেশিয়ায় একক আন্তর্জাতিক আর্ট ক্যাম্প ২ এবং ২০১৮ সালে ঢাকার অবিন্তা গ্যালারি অফ ফাইন আর্টসে বিশ্বজিৎ গোস্বামীর কিউরেট করা একটি শিল্প প্রকল্প ইমেনসিটিতেও অংশ নিয়েছিলেন।
সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন (২০২৩), বাংলাদেশ: ক্রিয়েটিভ ডেনসিটি–কনটেম্পরারি আর্ট অব দ্য গোল্ডেন বেঙ্গল, এবং ইমাগো মুন্ডি: লুসিয়ানো বেনেটন কালেকশন (২০১৬)-সহ তার কাজগুলো বিশিষ্ট ব্যক্তিগত এবং বেশ কয়েকটি করপোরেট সংগ্রহে রয়েছে।
প্ল্যাটফর্মসের উদ্যোগে, ২৯ ও ৩০ নভেম্বর ২০২৪-এ অনুষ্ঠিতব্য টোকিও আন্তর্জাতিক আর্ট ফেয়ারে তিন বাংলাদেশি শিল্পী অন্তরা মেহরুখ আজাদ, ফখরুল ইসলাম মজুমদার শাকিল এবং তরিকুল ইসলাম হীরকের বেশ কয়েকটি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হবে।
- ক্যানভাস অনলাইন
ছবি: প্ল্যাটফর্মসের সৌজন্যে