skip to Main Content

পোর্টফোলিও I সংগ্রামের স্পন্দন

নারীর ইতিহাস লিখতে হবে নারীকেই- বলেছেন ফরাসি নারীবাদী হেলেন সিজঁ। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সমকালীন নারীর কথাসাহিত্য ও চিত্রকলায় রূপায়িত সেই গল্প উঠে এসেছে

মেকওভার: পারসোনা
ছবি: আকিব রায়হান
বিশেষ কৃতজ্ঞতা: বিপ্লব সাহা

মহাশ্বেতা দেবী
স্টাইলিশ বিনি ও তুলি

অবস্থাপন্ন ঘরের সন্তান ব্রতী চ্যাটার্জীরা কীভাবে তথাকথিত একটি উগ্রপন্থায় জড়িয়ে যায়, কাদের নির্দেশে তারা দাবার গুটির মতো ব্যবহৃত হতে থাকে এসব প্রশ্নই উঠে এসেছে মহাশ্বেতা দেবীর হাজার চুরাশির মা উপন্যাসে। এই উপন্যাসে ব্রতীর মা সুজাতা। বাবা দিব্যনাথ। ব্রতীর দুই বোন- তুলি এবং বিনি, এ দুটি চরিত্র আধুনিক কলকাতার মধ্যবিত্ত সমাজের সমকালীন ফ্যাশনকে প্রতিনিধিত্ব করে।
উপন্যাসে দেখা গেছে বিনির চুল ঘাড় অবধি ছাঁটা। পরনে নীল শাড়ির ওপর নীল নাইলনের কার্ডিগান। তুলির পোশাক নীল বেনারশি ও স্টোল। দুজনেই পরে এন্টিক জুয়েলারি।

মডেল: স্মৃতি ও অন্তরা
ওয়্যারড্রোব: মাহমুদা শাড়ী হাউজ

সেলিনা হোসেন
পদশব্দের সালমা

সেলিনা হোসেন পদশব্দ উপন্যাসে নারীর নিজস্ব সামাজিক প্রতিষ্ঠা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী চেতনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। এই কাহিনির কেন্দ্রীয় চরিত্র সালমা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বাড়ির লনে সবুজ প্রকৃতি, রঙিন ফুল আর পোষা খরগোশ সালমার অবসরের সঙ্গী। বাগান থেকে তার ঘরে উড়ে আসে প্রজাপতি।
সালমার পোশাকে প্রকাশ পেয়েছে আশির দশকের প্রায় উচ্চমধ্যবিত্ত, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বাঙালি মেয়েদের সমকালীন ট্রেন্ড। হালকা ও মিনিমালিস্টিক রঙের সালোয়ার-কামিজ। অলংকারের বাহুল্য নেই। হেয়ার স্টাইলেও আশির দশকের স্বাতন্ত্র্য দেখা গেছে।
মডেল: আদিবা
ওয়্যারড্রোব: বিশ্বরঙ বাই বিপ্লব সাহা

নাসরীন জাহান
প্রত্যয়ী নীনা

নাসরীন জাহানের প্রথম উপন্যাস উড়ুক্কু। নারীর জীবনের সংকট, গ্লানি ও সংগ্রাম এ উপন্যাসের উপজীব্য। নীনা নামের নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির এই নারী বিবাহবিচ্ছেদের পর অন্য এক পরিবারের সঙ্গে সাবলেট থাকে। আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাকে ঘুরতে হয় সামান্য একটা চাকরির জন্য।
নীনার পোশাকে দারিদ্র্যের ছাপ থাকলেও নিজেকে কতটা পরিপাটি করে তোলা যায়, সেটিই এই চরিত্রে ফুটে উঠেছে। আঁচলে সেফটিপিন আটকানো নেই। বেণী করা চুল। এই ফ্যাশন স্টেটমেন্টে নব্বইয়ের দশকের শুরুতে একজন নিম্নমধ্যবিত্ত নারীর নিজেকে প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি দৃশ্যমান।
মডেল: ওশিন
ওয়্যারড্রোব: ক্যানভাস ও বিশ্বরঙ বাই বিপ্লব সাহা

নাজলী লায়লা মনসুর
ইউজেবল পেইন্টিং

নাজলী লায়লা মনসুরের ক্যানভাসে নারীর দৈনন্দিন জীবনসংগ্রাম, শোষণ-বঞ্চনা এবং অধিকারের প্রশ্নটি বড় হয়ে উঠেছে। তার নারীরা তরুণী বা গার্হস্থ্য। তাদের পোশাক ও পরিপার্শ্বের আবহে সেসব কথাই দৃশ্যমান।
ছবির নাম ইউজেবল পেইন্টিং (অন বেড অ্যান্ড কার্টেন), ২০০৫ সালে আঁকা।
তিনি বলেন,এটা আমার সিরিজের একটা ছবি। সিরিজটার নাম ছিল ইউজেবল পেইন্টিং। ওই সময় মনে প্রশ্ন জাগল, আমি যে পেইন্টিংগুলো করছি, তা সমাজের কোনো কাজে লাগছে?

এগুলো যদি বিছানার চাদরে, সোফার কভারে, পার্টিশনে বা পর্দায় থাকত, তাতে তো কিছুই আসত যেত না। তাই আমি আমার আগের আঁকা ছবিগুলোকে ব্যবহারযোগ্য বস্তুর ওপর স্থাপন করেছি, যাতে রূপক অর্থে হলেও এগুলো অন্তত দৈনন্দিন কাজে লাগে।

মডেল: স্মৃতি
ওয়্যারড্রোব: বিশ্বরঙ বাই বিপ্লব সাহা

রোকেয়া সুলতানা
ভার্সাটাইল ম্যাডোনা

ম্যাডোনা সিরিজের ছবিতে রোকেয়া সুলতানা নারীর সংগ্রামী জীবনের কথা তুলে এনেছেন। অসমতা, বঞ্চনা, লিঙ্গীয় বৈষম্য, সামাজিক অবমূল্যায়ন সত্ত্বেও নারীর টিকে থাকার যে লড়াই, সেসবই তার ছবিতে গুরুত্ব পেয়েছে। এতে রয়েছে ‘একক মা’য়ের মুখচ্ছবিও। এসব নারী দরিদ্র, রূপহীন।

তারা দেবী নয়, কর্মজীবী। এবং সমাজের নানান প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে মানুষ হিসেবে জীবনের সজীবতাকে আঁকড়ে ধরে তারা বাঁচে।
শিল্পী রোকেয়া সুলতানা বলেন, ম্যাডোনা তিনি নিজেই। আবার তিনি তাকে উপস্থাপন করেছেন দেশ রূপে।

তিনি বলেন, ম্যাডোনা কখনো তার কন্যা, কখনো এই শহর। ম্যাডোনা একটি লড়াইয়ের পরিচয়। একটি স্বপ্ন। একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ। ম্যাডোনাকে তিনি সার্বিক অর্থে জীবনের রূপায়ণ বলে মনে করেন।
এই সিরিজে নারীর উজ্জ্বল রঙের পোশাক মূলত সব ধূসরতা কাটিয়ে জীবনের বিপুল সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়।
মডেল: নওশিন ও সোহা
ওয়্যারড্রোব: বিশ্বরঙ বাই বিপ্লব সাহা (নওশিন)
ও আর্ট (সোহা)

কনক চাঁপা চাক্‌মা
ম্রো নারীর আখ্যান

আমার চিত্রকলায় নারী প্রধান ভূমিকা পালন করে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের নারী এবং পৃথিবীর সকল সুবিধাবঞ্চিত নারীর না বলা কথার চিত্রাবলি আমার ক্যানভাসে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। নারীর ছন্দায়িত দেহবল্লরি, অপার সৌন্দর্য মহিমার আড়ালে তাদের অনেক চাওয়া-পাওয়ার ‘কথন’ আছে, যা কখনো পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র মূল্যায়ন করেনি।
আমার ছবিতে নারী দশভুজা বা দুর্গা। নারীর শারীরিকভাবে দশটি হাত দেখা যায় না, কিন্তু তাদের ভেতরে দুর্গার মতোই শক্তি। আদিবাসী নারী জুম পাহাড় এবং ঘরের সব ‘কোনা’তে তার সচল পদচারণা। সমস্ত দায়িত্বের ভার বহন করার ক্ষমতা সে যেন জন্মসূত্রেই পেয়ে থাকে।
আজ একজন ‘ম্রো’ নারীর চিত্র ক্যানভাসে ধরা দিয়েছে। আঁধারে-ছায়ায় ম্রো নারীর আবক্ষ পোর্ট্রেট। সুশোভিত ঐতিহ্যবাহী রুপোর অলংকার আর খোঁপায় ফুল তার সৌন্দর্যে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। নকশাওয়ালা নীল ব্লাউজ, পেছনে মিষ্টি হলুদের আবহ, মুখের সামনে ছড়ানো সাদা আলো। তার মুখ ছায়ায় ঢাকা। এই ছায়া বা আড়াল থেকে নারীকে বের হয়ে আসতে হবে। তাদের অনেক ইচ্ছে আছে, যা তারা বলতে পারে না। সময় এসেছে এই ক্যানভাসজুড়ে হলুদ রঙের মতো তাদের ‘ইচ্ছে পাখি’কে ডানা মেলে উড়িয়ে দেবার, পৃথিবীর সব নারীর জন্য শুভকামনা।
মডেল: বৃষ্টি
ওয়্যারড্রোব: বিশ্বরঙ বাই বিপ্লব সাহা
জুয়েলারি: বিশ্বরঙ ও তেনজিং চাকমা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top