ফিচার I রক্তের দাগ দূরে
ঈদুল আজহায় হাজারো কাজের মাঝে পুরোটা সময় একটু বাড়তি সাবধানে থাকতেই হয়। সাধের পোশাকে যেন রক্তের দাগ লেগে না যায়! কারণ, রক্তের সামান্য ছিটাও বরবাদ করে দিতে পারে পুরো সাজ।
রক্ত হচ্ছে প্রোটিন বেইসড স্টেইন। কিন্তু অন্য প্রোটিন স্টেইনের সঙ্গে পার্থক্য হচ্ছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন ঘটে এর। কারণ, রক্ত দেহ থেকে যখনই বেরিয়ে যায়, তখন থেকেই হিমোগ্লোবিনের অক্সিডেশন হতে থাকে। বদলায় দাগের রং। ফ্রেশ স্টেইন থেকে সেট ইন, রক্ত রং পাল্টে হয়ে যায় উজ্জ্বল লাল থেকে গাঢ় বাদামি।
ব্লাড স্টেইন রিমুভিংয়ের হাজারটা উপায় জানা যায় হাজার জনের কাছে। অ্যাসপিরিন গুঁড়া ছড়িয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে দুধে ভেজানো! ঈদের প্রিয় জামায় যখন রক্তের দাগ পড়ে, তখন কোন পদ্ধতি বেছে নেওয়া হবে, তা নিয়ে তৈরি হয় সংশয়। কোন কৌশল ব্যবহার করা হবে, সেই সিদ্ধান্তের জন্য দাগের ধরন খেয়াল করে দেখা চাই। দাগ নতুন নাকি সেট ইন, তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর সঙ্গে দাগের আকারও দেখতে হবে।
পানি-সাবান সবচেয়ে সহজ সমাধান। ফ্রেশ ব্লাড স্টেইনের জন্য এর কার্যকারিতার পারদ ওপরের দিকে। ঠান্ডা পানি দিয়ে প্রথমবারের মতো রক্তের দাগ ধুয়ে নিয়ে তার ওপরে সাবান মাখতে হবে। যেকোনো ধরনের সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। লিকুইড, বার—যেকোনো কিছু। একবারেই যে দাগ উঠে আসবে, ব্যাপারটা এমন মোটেই নয়। টানা কয়েকবার ধোয়ার পর পাওয়া যেতে পারে ফল। তারপরে রেগুলার ওয়াশ করে নিতে হবে।
সেট ইন স্টেইন তুলে নেওয়ার জন্য হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের সফলতার হার ভালো বলে জানা যায়। কিন্তু কাপড়ের কালার লস হয় কি না, সেটা টেস্ট করে নিতে হবে প্রথমেই। তারপরে ব্যবহার করতে চাইলে দাগের আকার ছোট হলে একটি হালকা রঙের কাপড়ে সল্যুশনটি নিয়ে দাগে স্পর্শ করাতে হবে। আকার বড় হলে স্প্রে বোতল ব্যবহার করা চাই। রক্তের ছিটা ছিটা দাগ হলে কটন সোয়াব ব্যবহার করা যেতে পারে। দাগ উঠে গেলে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিলেই চলবে।
কাপড়ের রং যদি শুধু সাদা হয়, তাহলে দাগ তোলার জন্য ব্যবহার করা যায় এনজাইম দিয়ে তৈরি স্টেইন ট্রিটমেন্ট প্রোডাক্ট। এ জন্য প্রথমে ঠান্ডা পানি দিয়ে দাগ ধুয়ে নিয়ে তার ওপরে অ্যাপ্লাই করতে হবে এনজাইমেটিক স্টেইন ট্রিটমেন্ট প্রোডাক্ট। তারপরে সম্পূর্ণ কাপড়টি ধুয়ে নিলে ভালো। আর শুকাতে দেওয়ার আগে দেখে নিতে হবে স্টেইন রিমুভ হয়েছে কি না। দাগ রয়ে গেলে কাপড় শুকাতে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। নয়তো হিট দাগটি সেট করে দেবে কাপড়ে।
ডিস্টিলড হোয়াইট ভিনেগারের ভূমিকা বেশ কার্যকর, বিশেষ করে নতুন দাগের ক্ষেত্রে। এক অংশ ভিনেগারের সঙ্গে দ্বিগুণ পরিমাণ পানি মিশিয়ে সল্যুশন তৈরি করে দাগে ব্যবহার করতে হয়। তারপরে ১০-২০ মিনিট সময় রেখে দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। কুঁচকানো যাবে না কোনোভাবেই।
লবণ ব্যবহার করা যেতে পারে কুইক রিমেডি হিসেবে। সে ক্ষেত্রে পানি আর লবণ মিশিয়ে তৈরি করতে হবে ঘন পেস্ট। তারপরে দাগে মেখে রেখে দিতে হবে ২০ মিনিট। সব শেষে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। এই পদ্ধতিতে দাগের আশপাশের কাপড়ের রং উঠে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। আবার কাপড়টিতে বোঁটকা গন্ধও তৈরি হতে পারে।
দাগ থেকে যদি ভালো কিছু হয়, তাহলে দাগই ভালো! কিন্তু কাপড়ে কোরবানির পশুর রক্তের দাগ থেকে সে সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই দ্রুত ব্যবস্থা নিলে কাপড়টি আবারও ব্যবহারের সুযোগ থাকবে। নয়তো পছন্দের পোশাকটি হারাবে উপযোগিতা।
ফ্যাশন ডেস্ক
ছবি: সংগ্রহ