skip to Main Content

বিশেষ ফিচার I ফ্যাশন-পোশাক-আশাক : বাঙালিনীর বদলতি তসবির -যশোধরা রায়চৌধুরী

 

গত সংখ্যার পর…


বিজ্ঞাপনের নারী, পুরুষ সাপেক্ষে
“If women are differentiated only by superficial physical attributes, men appear more individual and irreplaceable than they really are.”― Shulamith Firestone, The Dialectic of Sex: The Case for Feminist Revolution

মেয়েদের জামাকাপড় পরা, তার নান্দনিক বোধ, নিজেকে কাম্য করে তোলা, আয়নার সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে প্রসাধন, যা যেকোনো পুরুষের রসিকতার বিষয়বস্তুও বটে, আসলে কার জন্য? এক কাল্পনিক মেলগেজ মেয়েদের তাড়া করে ফেরে নির্জন ঘরেও, এমনটাই কি? মেয়েরা সাজে আসলে পুরুষদের মনোরঞ্জনের জন্য, নাকি নিজের জন্যও?
আমার মতে সত্তর থেকে আশির দিকে যেতে যেতে পথে মেয়েদের এই কাল্পনিক গেজ বা দৃষ্টির, নিজের নারী সত্তার সঙ্গে একাত্মতা বোধ অথবা বিচ্ছিন্নতা বোধের, কিছু তফাত ঘটে গেছে। এই বদলটা যে ঘটেছে, তার প্রমাণ হিসেবে কী তথ্য খাড়া করতে পারব আমি? সহায়তা নেওয়া যাক আর এক মূল্যবান সময়-দলিলের, যার নাম বিজ্ঞাপন।
ষাটের দশকের শেষ দিকে, সত্তরের শুরু থেকে, প্রিন্ট বিজ্ঞাপনের ঘরানাকে যদি লক্ষ করি, দেখব কী অসম্ভব পুরুষ প্রাধান্য প্রায় প্রতিটি তথাকথিত ‘ফ্যাশনেবল’ বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে। শিশু-পরিপাকযন্ত্রের সুবিধার্থে গ্রাইপ ওয়াটার বা বেবিফুডের বিজ্ঞাপন, বা ললিতাজি-সমৃদ্ধ সার্ফ সাবান বাদ দিলে, প্রায় সব বিজ্ঞাপনের উদ্দিষ্ট ক্রেতামন্ডলী আসলে পুরুষ, দাড়ি কামাবার ব্লেড, স্যুটিং শার্টিং এবং সিগারেট, এই তিনটি ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি মনে পড়ার মতো বিজ্ঞাপনগুলো তৈরি হয়েছে, এবং সব ক্ষেত্রেই এক পুরুষের দীর্ঘ ছায়ার পেছনে বিরাজ করছেন একটি বা একাধিক নারী। বসে থাকা, শুয়ে থাকা, গিটার হাতে, চুল খোলা, স্লিভলেস ব্লাউজ পরা, জিনস টপ পরা, হাতে দেশলাই, হাতে ড্রিংকসের গেলাস। এই নারীর ভূমিকা সঙ্গদায়িনী, মস্তিসহচরী, দেশলাই এগিয়ে দেওয়া তাম্বুলকরংকবাহিনীর তো বটেই, অধিকাংশ সময়েই খোলাখুলিভাবে অঙ্কশায়িনীরও বটে। এভাবেই সিগারেট বিজ্ঞাপনগুলো, কি ওদেশে কি এদেশে, খোলাখুলিভাবেই পৌরুষ উদ্যাপন করে। এবং নারীর মূল্য সেখানে মহার্ঘ আসবাব, সিগারেট, ফ্যাশনেবল গাড়ির মতোই আর এক ভোগ্যপণ্য। এসব ক্ষেত্রে সচরাচর কপি বা ক্যাচলাইন জুড়ে কেবল এই পুরুষকেন্দ্রিক, অতি লিঙ্গবাদী একপেশেমির তুল্যমূল্য অনুভূতিই, প্রকাশ পেত। চার্মিনারের নিচের এই অ্যাডটির কপি যার নির্যাস বলা যেতে পারে।

Give me a bike
Give me a highway
Give me my Girl
And give me the taste of toasted tobacco

charminar

রিজেন্ট সিগারেটের অ্যাডে শায়িতা নারীর ওপরে ঝুঁকে পড়া পুরুষের হাতের সিগারেট, ক্যাচলাইন, ‘অ্যান এক্সক্লুসিভ অ্যাফেয়ার’, বলে দিচ্ছে, যৌনতার মসলা কীভাবে পরতে পরতে জড়িয়ে থাকত যেকোনো ভোগ্যপণ্য বিজ্ঞাপনকে। আর এই যৌনতা খুবই পুরুষকেন্দ্রিক, মেয়েদের প্রায় কোনো মূল্যই এখানে নেই।
আশির দশক থেকে এই ছবিটা পাল্টাতে শুরু করে। আশি দশকের বিজ্ঞাপনের সবচেয়ে হিটটি বোধ হয় প্রথম পুরুষ উদ্দিষ্ট অ্যাডের ঘরানা থেকে বেরিয়ে পড়ল নিজেরই অজান্তে। লিরিলের সেই মেয়েটিকে মনে করুন। ঝরনার জলে স্নানরতা সবুজ বিকিনি পরা সেই সুন্দরীর স্নানোচ্ছলতার ভেতরে এমন এক আত্ম-সুখ ছিল যার আবেদন পুরুষ নারীনির্বিশেষে ধরা গেছে। “Come alive with freshness” সরাসরি এই আবেদন কিন্তু যৌনতা বর্জিত বয়ান। আর, মেয়েটির সঙ্গে লক্ষণীয়ভাবেই কোনো পুরুষ ছিল না, সে একা একাই ঝরনায় স্নান করে চলেছে, বহুক্ষণ ধরে। লিরিল সাবান প্রথম দেখাল, মেয়েরা একলা একলাও ‘এনজয়’ করতে পারে। পরে ওই অ্যাড-এর নির্মাতার এক সাক্ষাৎকারে পড়েছিলাম, প্রতিটি মহিলাই আসলে নিজের বন্ধ স্নানঘরে মনে মনে এভাবেই ঝর্ণাস্নানের স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্নকল্পনাকে বিষয় করে এগিয়ে এত হিট আশি দশকের এই অ্যাড।
আশির বিজ্ঞাপনে মেয়েদের চুল, মেয়েদের ক্রিম, মেয়েদের পাউডারের রমরমা, বিজ্ঞাপনে কেবলি নারীর নিজ উদ্যাপন, তাকে আর পুরুষ সঙ্গিনী করে দেখানো হচ্ছে না। পরিবারের ভালোর জন্য চিন্তাকুলা বধূমাতা হিসেবেও নয়। অথবা জামাকাপড়ের বিজ্ঞাপনে দুই মহিলার ছবির সঙ্গে ক্যাচলাইন, ‘‘এ ওম্যান এক্সপ্রেসেস হারসেলফ ইন মেনি ল্যাংগুয়েজেস” যা সত্তরের ওই সুটিংয়ের বিজ্ঞাপনের মাচো পুরুষের (ক্যাচলাইনে ‘দ্য আলটিমেট ম্যান’ বা ‘দ্য ম্যান ইন দ্য পোদার স্যুট’) ছবির থেকে অনেক বড় এক সরে আসা। কিউটেক্স-এর নেইলপলিশ লাগানো হাতের মেয়েটির (যা কেবলই এক নারী-উদ্দিষ্ট প্রোডাক্ট) মতো গলা জড়িয়ে ধরার উপযোগী একটি পুরুষের প্রয়োজনীয়তা এসব বিজ্ঞাপনে আর নেই।
বাংলার বাজারে কী ঘটল? এর আগে অব্দি, নিছক মেয়েদের জন্য, মেয়েদের উদ্দিষ্ট ক্রেতা হিসেবে বিজ্ঞাপন, হয়তো ফেমিনার মতো এক-আধটি ইংরেজি কাগজের একচেটিয়া হলেও, বাংলায় মেয়েদের পণ্যের ভোক্তা হিসেবে তৈরি বিজ্ঞাপনের রমরমা সে অর্থে শুরু হলো আশির দশকেই। বলতেই পারেন কেউ, এ তো মূলত পুরুষতন্ত্রকে জীবিত রাখার তাগিদে, পুরুষের কাছে মেয়েদের কাম্য ও আরও বেশি ভোগ্য করে তোলা তার একটা অ্যাজেন্ডা। অবশ্যই। তবু, মেয়েদের দৃষ্টি মেয়েদের ওপরে পড়তে শুরু করেছে সে অর্থ, সানন্দা ধরনের বাংলা পত্রপত্রিকার দৌলতেই।
যেখানে যেখানেই আস্তে আস্তে পাল্টে গেছে গেজ বা দৃষ্টিকোণ, সেখানেই তীব্র হয়েছে বদলের রাজনীতি, নিজের অজান্তেই, কেবল পুরুষের ভোগ্য থেকে নারী হয়ে উঠেছেন নিজেই নিজের বাসনার বিষয়, যা অবশ্যই একটা মূলগত তফাত। শুলামিথ ফায়ারস্টোন বলবেন, ÔThus her whole identity hangs in the balance of her love life. She is allowed to love herself only if a man finds her worthyof love.Õ ঠিক এই জায়গা থেকেই আর এক নারীবাদী নেওমি উলফ, যিনি লিখেছিলেন দ্য বিউটি মিথ-এর মতো সাড়াজাগানো বই, বলেছিলেন, Women who love themselves are threatening.

যে বিজ্ঞাপনে দেখি নিজেকে ভালোবাসতে এই প্রথম শিখছে মেয়েরা, যে মুহূর্তে একজন পুরুষ, তার ভালোবাসা (পড়ুন কাম ও অধিকার) নিয়ে বিদায় নিচ্ছেন জীবন থেকে, সেই মুহূর্তে অসৌন্দর্যের গর্তে পড়ে যাচ্ছেন না মেয়েরা। বিধবা বা অবিবাহিতার ভালো সাজার, ভালো জামাকাপড় পরার অধিকার নেই, আয়নায় নিজের মুখ দেখাও অপ্রয়োজনীয়, এই অনুভূতি চলে গিয়ে আসছে আত্মপ্রেম আর আত্ম আবিষ্কারের প্রবণতা। যা অবশ্যই আসছে পণ্যায়নের হাত ধরে, কিন্তু মূলগত ভাবে বদলে দিচ্ছে কাঠামোটা।


২০০০-পরবর্তী কোলাহলে-কোহলে
“For I conclude that the enemy is not lipstick, but guilt itself; that we deserve lipstick, if we want it, AND free speech; we deserve to be sexual AND serious–or whatever we please.” (Naomi Wolf )

তাহলে সবকিছুই ভালোর দিকে। দু হাজারে এসে আমরা মেয়েরা তো খুঁজেই নিয়েছি নিজেদের এই আত্মপরিচয়, নিজেদের শরীরকে নিজেরাই ভালোবেসে কবে যেন জেনে গেছি, পুরুষের মনোরঞ্জন নয়, ব্যক্তিত্বময়ী, স্মার্ট, কর্মক্ষেত্রে জলচল হবার জন্যই আমাদের সাজ। নারীবাদীরা তাহলে খুশি তো?
এতটাই আত্মতৃপ্তির কি না জানি না, শেষ কথা বলতেও পারি না এই আশ্চর্য অনিশ্চিতিময় সমাজে দাঁড়িয়ে, রাজনীতির ক্ষেত্র, ক্ষমতার খেলার ক্ষেত্রটা যে আসলে বৃহৎ পুঁজির!
এক বন্ধু বলছিলেন একটা অভিজ্ঞতার কথা। বছর চার-পাঁচ দেশের বাইরে ছিলেন তিনি, সদ্য কলকাতায় ফিরেই প্রথম তার দুটো জিনিস চোখে পড়েছিল। এক, বাড়ির পাশেই নার্সারি স্কুলের বাচ্চাদের নিতে আসা, ঘরোয়া (অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাচ্চাকে নিতে মায়েরাই আসেন ও গোল হয়ে বসে উল বোনেন বা পরচর্চা করেন বেলা এগারোটা-বারোটায়, সুতরাং ধরে নেওয়া যায় এঁরা সকলেই গৃহবধূ) মায়েদের পোশাকের পরিবর্তন। জিনস আর শর্ট টপ বা কুর্তি এত দিন ২০-২৫ তরুণীদের পরিধেয় ছিল। ৩৫+ মহিলাদের খোদ দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর, যদুবাবুর বাজারের মতো প্রাচীন এলাকাগুলো দিয়ে চরে বেড়াতে দেখে, বাচ্চার হাত ধরে হেঁটে যেতে দেখে রীতিমতো বিস্মিত হয়েছিলেন এই পুরুষ বন্ধু। যার স্মৃতিতে রয়ে গেছে নিজের মা মাসি কাকিমা, তারপর বৌদিদের শাড়ি পরা মূর্তিগুলো, অথবা বান্ধবী, গিন্নি অথবা বয়সে ছোট মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ পরিহিত চেহারা।
দু হাজারের পরপরই বোধ হয়, কলকাতা বা শহরতলিগুলোতে দেখা দেয়, প্রচুর বুটিক আর গিফট শপ, বিউটি পার্লার আর টেইলারিংয়ের দোকানের পাশাপাশিই এক নতুন মহিলা গোষ্ঠী, যাদের বয়স বা সামাজিক অবস্থান তাদের বৌদি বা মাসিমা ডাকের যোগ্য করে তোলে, অথচ সাজের ভেতরে থাকে তরুণী নারীর সাবলীলতা, হরিণীসুলভ চঞ্চলতা। টানটান চপল চেহারা এঁদের, ছেলের হাত ধরে স্কুল থেকে ফেরার সময় এরা বুকে টেনে নেন না কামিজের চুন্নি। বরঞ্চ নিরাবরণ কুর্তির কাটাকাটা রেখায় এঁদের পেলবতা উধাও। আর মেদময় মধ্যপ্রদেশের সেই ট্র্যাডিশন কোথা উবে গেল? কোথায় গেলেন ভারিক্কি, যৌবনের অপরাহ্ণের হেলে আসা ছায়ায় ভরভরন্ত গোলগাল শাড়ি পরিহিতারা, অথবা সালোয়ার কামিজে কেজো, জাঁদরেল, খান্ডারনিরা, একদা যে চেহারাকে দিল্লি ওয়ালি, পঞ্জাবি মহিলাদের সঙ্গে আইডেন্টিফাই করা হতো?
দ্বিতীয় যে পরিবর্তনটা লক্ষ করেছিল আমার বন্ধু, সেটা হলো, প্রতি ছয়-সাত স্টপ অন্তরই কলকাতার ভূগোলে যোগ হয়েছে একেকটি নতুন নামের বাসস্টপ, নতুন পাড়া, নতুন এলাকা; একঝাঁক অ্যাপার্টমেন্ট অথবা এককথায় দেওয়ালঘেরা ‘সিটি’রা আকাশ ছুঁইয়ে প্রায় মাথা তুলেছে। সঙ্গে সঙ্গে প্রভূত রংঢং নিয়ে, এসির ঠান্ডা হাওয়া আর ফ্রেশনারের তাজা গন্ধ নিয়ে যেটি যোগ হয়েছে কলকাতার স্কাইলাইনে, ধ্যাবড়া ও বিশাল একেকটি বাড়ি, যার নাম শপিং মল বা সুপারমার্কেট। যারা প্রায় ঢেকে দিয়েছে আমাদের আগেকার ওই পাড়ার দোকান, কাটরা, দর্জি-ঘর, তথাকথিত রেডিমেড স্টোর আর কাপড়ের আড়তগুলোকে!
বলাই বাহুল্য, বন্ধুর এই দু-দুখানা পর্যবেক্ষণের ভেতর কোথাও একটা যোগসূত্রও পাব, একটু খুঁজলেই! সে যোগসূত্র হলো, এই তথ্যে, যে একদা যে কুর্তি ছিল ১৭-১৮ বছর বয়সীদের পরিধেয়, XL XXL ইত্যাদির কল্যাণে সে কুর্তি এখন অঙ্গে চড়াবার যোগ্য ৩৫ ঊর্ধ্ব মহিলাদেরও। আর আকাশছোঁয়া বাড়ির বড় বড় দেয়ালজোড়া বিজ্ঞাপনে এমনই আগ্রাসী এই নতুন ইন্দো ওয়েস্টার্ন ফ্যাশন-বিকল্প, ওপর থেকে ছুড়ে দেওয়া বোমার মতো নব নব সামার বা উইন্টার সেলের হাতছানি এতটাই প্রভাবশালী এক মোহবলয় সৃষ্টি করেছে মেয়েদের সব বয়সীদের ওপরে, যে সবাই পরে ফেলছেন ছাপছোপ দেওয়া, নিশ্চিতভাবেই নান্দনিক, আর, যেটা বলবার কথা, ‘কাজের খুব সুবিধে’ করে দেওয়া এসব পোশাক। বলাই বাহুল্য বৃহৎ পুঁজির কর্মকৌশল সবকিছুকে এক মাপে কাটার পাশাপাশিই, জামাকাপড়ের মাস প্রোডাকশনে এনে ফেলেছে একই ডিজাইনের পোশাক, নানা মাপে।
আর একটা ট্রেন্ড ফ্যাশনের বলয়ের ভেতরে টেনে এনেছে সব বয়সিনীদের, পুরুষদেরও। টিভি যদি বা ৭০ দশক থেকেই ছিল, নতুন ডিশ অ্যান্টেনা বিপ্লবের রমরমায় একঝাঁক হিন্দি সাঁস-বাহু সিরিয়াল, আর তার ক্লোন বাংলা সিরিয়াল, অবশ্যই জি টিভি ও স্টার টিভির মতো বাঘা চ্যানেলগোষ্ঠীর আর্থিক মদতে পুষ্ট হয়ে, তাদের সর্বাতিশায়ী ছায়া ফেলেছে আমাদের শোবার ঘর পর্যন্ত। জরি চুমকি পাথর বসানো শিফন বা ক্রেপের চিকিমিকি ছায়া। এই ছায়ার বলয়ে এখন অন্তর্ভুক্ত সমস্ত ভারতীয়। বাঙালির ফ্যাশন বলে আলাদা কিছুই থাকছে না আর। আর আছে প্রতিবছর পূজার হিড়িকে নতুন ফ্যাশন ট্রেন্ড তৈরিতে সিদ্ধহস্ত বিগ হাউজ ডিজাইনাররা। সব্যসাচী আদি নানা গুরুর ফ্যাশন মন্ত্রে আজ বাঙালি মেয়ে মুখ ধোয়া থেকে চন্ডীপাঠ- সব সারেন। সুতরাং ফ্যাশন এখন জলভাত। ফ্যাশন এখন রোজকার জীবনশৈলী। প্রতিটি অঙ্গের ফ্যাশন আলাদা আলাদা করে বিবেচ্য হয়েছে, শুধু পোশাক-আশাকের ব্যাপার নয় এটা আর। ভুরু থেকে নাভিমূল, কোমর থেকে পায়ের পাতা অব্দি বিস্তৃত এক বাণিজ্যক্ষেত্র এটা এখন। চুলের হাইলাইটিং, হেয়ার কালারের বহুস্তরীয় আক্রমণ, আর পার্ম করা বা স্ট্রেটেন করা চুলের আশ্চর্য টেকনোলজি এসেছে যেমন আজ, ছোট ছোট আংটায় ভরে গেছে কানের লতি, নাকের পাটা থেকে নাভির চামড়া অব্দি।
হয়তো আসছে কিম কি ডুকের ছবি টাইমের মতো ভয়াবহ এক দিন, যখন ক্রমাগত প্ল্যাস্টিক সার্জারি করে নিজের মুখ পাল্টে নিতেও অভ্যস্ত হয়ে যাবেন এসব ফ্যাশন-অনুগামিনী। সবার মুখ এক ছাঁদে, এক মাপে কাটা হয়ে উঠবে ক্রমশ, আর পালিশ করা চুলের, ইস্তিরি করা চুলের ছাঁটগুলো থেকে ক্রমশই আর চিনে ওঠা যাবে না কে শ্রীমতী এক্স বা শ্রীমতী ওয়াই-ই বা কে।
তবু, আশার কথা একটাই। এখনো একটা দৃশ্য মোটামুটি একই আছে আমাদের এই পোড়া ভারতের পোড়া বাংলায়। সকালবেলা বারাকপুর বসিরহাট বা ক্যানিং থেকে আসা বউ-ঝিয়েরা ট্রেন থেকে নেমে দলে দলে যখন অধিগ্রহণ করেন কলকাতা শহরের পথঘাট, তাঁদের চেহারায় নতুন করে ঝলসে উঠতে দেখি ফ্যাশনের শেষ কথা, সেপটিপিনে আটকানো ব্লাউজের ভেতরে গুঁজে রাখা টাকার ছোট পুঁটলি বা ব্যাগ আর ছাপার বা সস্তা সিন্থেটিক শাড়ির এলোমেলো ভাঁজে। সত্যিকারের ট্রেন্ড যদি আসে, তা আসবে ওইখানে। ওদের কত শতাংশ সালোয়ার কামিজের মতো ‘কার্যকর পোশাকে’ উত্তীর্ণ হয়েছেন? সেই পরিসংখ্যান নেবার সময় বোধ হয় এখনো আসেনি।

সমাপ্ত

লেখা: লেখকের ব্লগ থেকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top