কুন্তলকাহন I ভালোবাসার ভাষা
সে বোঝে চুলও। প্রত্যুত্তর—উজাড় করা ভালোবাসা আর প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি। ঠিক ঠিক টের পাওয়া যায় পরিবর্তনে
লাভ ল্যাঙ্গুয়েজ। ভালোবাসা প্রকাশের নিখাদ এক উপায়। কখনো কাছের মানুষের জন্য, তো কখনো একদম নিজের খাতিরে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, চুলও বোঝে সেই প্রেমের আভাস। নিয়মিত প্রকাশে সৌন্দর্য ঠিকরে বেরোবে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। বিশ্বজুড়ে লাভ ল্যাঙ্গুয়েজ প্রধানত পাঁচ উপায়ে জাহিরের নমুনা মেলে। সেগুলোকে আদর্শ মেনে চুলের যত্নে অন্তর্ভুক্তির উপায় জানা থাকলে কেল্লা ফতে!
শরীরী স্পর্শে
লাভ কিংবা সেলফ লাভ—দুটোই শরীরের সঙ্গে ভীষণভাবে সম্পর্কিত। একটুখানি হাতের ছোঁয়া, জড়িয়ে ধরা কিংবা কাঁধে আলতো করে মাথা রাখাতে যেন উসকে ওঠে হ্যাশট্যাগ ‘গুড ভাইবস অনলি’র ইমোশন। বাড়ায় আত্মবিশ্বাস। চুলের যত্নে স্পর্শের ভেলকি দেখাবার উপায় কী? সবচেয়ে সহজ সমাধান—নিয়মিত ত্বকসহ পুরো মাথা মাসাজ। মামুলি মনে হলেও খুব কাজের। ক্লান্তি, শ্রান্তি দূরের দাওয়াই। স্ক্যাল্প সুস্থ রাখতে দারুণ। চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বলভাবে বেড়ে তোলার ক্ষেত্রেও।
প্রতিদিন মাত্র দুই মিনিট সময় দিলেই সম্ভব। স্ক্যাল্পসহ পুরো মাথা মাসাজ করে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে নারিশিং হেয়ার অয়েল ব্যবহার করা হয়। ইদানীং দারুণ জনপ্রিয় রাবার স্ক্যাল্প স্ক্রাবার। রিল্যাক্সিং স্পা ভাইব দেয়। মাথা মাসাজের সময় এর ব্যবহার বাড়ায় স্ক্যাল্পের রক্তচলাচল, কমায় টেনশন আবার এক্সফোলিয়েটও করে একই সময়।
মিঠে বুলি
‘আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ সামান্য তিনটি শব্দ। কিন্তু লুকানো দুনিয়াজোড়া ভালোবাসা। শুধু কি তাই? প্রিয়জনের প্রশংসায় মুখর থাকাও কিন্তু লাভ ল্যাঙ্গুয়েজের অংশ, প্রেম প্রকাশের প্রকরণ। এমন তারিফে মন ও আত্মমর্যাদা—দুয়ের পারদই উঠে যায় তুঙ্গে। চুলও কিন্তু স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে ভালো কথায় ভুলে! যেমন সকালবেলা উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যদি বলা যায়, ‘ব্যাড হেয়ার ডে বলে কোনো দিন নেই।’ আত্মবিশ্বাসের এই এমন কথাই পাল্টে দিতে পারে চুলের চেহারা। এ ছাড়া চিরুনি চালানোর সময় চুলের সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে। বাহ্! চুল কী সুন্দর দেখাচ্ছে, দিন দিন আরও মজবুত হয়ে উঠছে, চুল ধরেই আরাম লাগছে—এমন সব প্রশংসাসূচক কথা পজিটিভ অ্যাফারমেশনেরই আরেক রূপ। মনোভাব আর উপলব্ধিতে ইতিবাচকতা যোগে। তারই প্রতিফলন ঘটবে চুলে—এমনটাই মত হেয়ার এক্সপার্টদের।
সময়ের সুন্দরতা
কোয়ালিটি টাইম বলে যা বহুল প্রচলিত। চুলের জন্যও প্রয়োজন পড়বে বাড়তি সময় ব্যয়। সে যত্নের জন্যই হোক কিংবা স্টাইলিংয়ের ক্ষেত্রে। চুলচর্চায় এই কোয়ালিটি টাইম চুলের চেহারাই পাল্টে দিতে পারে। তাই একদম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যত্ন নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। এ পরিপূর্ণ হেয়ার কেয়ার রুটিনে ধোয়া, কন্ডিশনিং, হেয়ার মাস্ক ব্যবহার—সবই অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। তবে মূলমন্ত্র হচ্ছে, একদমই হুড়াহুড়ি করা যাবে না। পুরো প্রক্রিয়ার সময় কাটাতে হবে আস্তে-ধীরে, উপভোগ করে। চুলকে কেন্দ্র করে সাজানো পুরো সময়টাতে রিল্যাক্সে থাকা চাই। এতে করে মিলবে কার্যকর ফল। চুলের প্রতি এই অবিভক্ত মনোযোগ স্টাইলিংয়ের সময়ও প্রযোজ্য। যেমন কার্লিং আয়রন ব্যবহারে অনভ্যস্ত থাকলে প্রথমে কোল্ড আয়রন দিয়ে কার্ল করার প্র্যাকটিসটা সেরে নিতে হবে। পুরোপুরি প্রো হয়ে ওঠার আগপর্যন্ত স্টাইলিংয়ে এভাবেই সময় দিতে হবে। একইভাবে ব্লো ডাই কিংবা স্ট্রেইটনিং সারার আগেও বাড়তি সময় নিয়ে অনুশীলন জরুরি। প্রয়োজনে ইউটিউব ভিডিও দেখে নেওয়া যেতে পারে। হিট প্রোটেকশন ভুলে যাওয়া যাবে না কোনোভাবেই। হুড়াহুড়িতে যা সবচেয়ে বেশি ঘটার শঙ্কা তৈরি হয়। তাই ছবির মতো সুন্দর চুল চাইলে কোয়ালিটি টাইম মাস্ট।
কাজে কার্যসিদ্ধ
খালি কথায় নয়, কাজ দিয়ে প্রমাণ করা চাই ভালোবাসা। চুলের জন্যও ঠিক তাই। চুলচর্চায় বাড়তি প্রয়াসের ফল কিছুদিন পর চোখে পড়বেই। এ থেকে প্রতীয়মান হবে চুলের প্রতি ভালোবাসা। বোঝা যাবে, খুব যত্নে আছে চুল। কীভাবে করা যায়? সপ্তাহে একবার ডিপ কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্ট অথবা নিয়মিত ট্রিম করে নেওয়া হতে পারে উপায়। এই লাভ ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমেই প্রকাশিত হয় চুল কতটা প্রিয় আর কারও কাছে নিজের ভালো থাকার গুরুত্ব।
উপসংহারে উপহার
ভালোবাসা প্রকাশের অব্যর্থ উপায়। চুলের জন্য বিশেষ কোনো হেয়ারকেয়ার প্রোডাক্ট কিনে নেওয়া হতে পারে লাভ ল্যাঙ্গুয়েজের প্রকাশ। ব্যয়ের ব্যাপারটা এখানে মুখ্য নয় মোটেই; বরং চিন্তাশীলতা আর চুলের বাড়তি যত্ন নেওয়ার মনোভাবটাই মুখ্য। কী করে করা যায়? একটা হাই এন্ড শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার ট্রাই করে দেখা যেতে পারে অথবা স্যালনে গিয়ে চুল না হয় ধুয়েই নিয়ে আসা যায়। স্টাইলিংয়ে পরিবর্তন ছাড়াও কালারটা যদি বদলে ফেলা যায়, মন্দ হবে না! এমন উপহার যে কারও হেয়ারকেয়ার রুটিনকে তো বিশেষ করে তুলবেই; সঙ্গে মনে করিয়ে দেবে নিজের যত্ন নেওয়া কতটা জরুরি।
বিউটি ডেস্ক
মডেল: ফাবলিহা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল