তনুরাগ I দুজনে নিরজনে
ডেট নাইট। তবে আউটডোরে নয়। অন্দরের অন্তরালে। মায়াময় মুহূর্তগুলোকে আরও বিশেষ করার কৌশল জানা থাকলে মন্দ হয় না
ভালোবাসা দিবস কিংবা স্পেশাল কোনো অকেশনে ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে চাই একটা পারফেক্ট ডেট নাইট। রেস্টুরেন্ট কিংবা শহরের বাইরে দূরে যাওয়া নিয়ে দ্বিধায় পড়েন অনেকে। জ্যাম ঠেলে ঘোরাফেরাটাও যেন বড্ড যন্ত্রণার। তবে সমাধান হতে পারে ইনডোরেই। কোজি একটা স্পা নাইট হতে পারে এই ভালোবাসা দিবসে প্রিয় মানুষের জন্য দারুণ উপহার। স্পা সেন্টার কিংবা স্যালনে নয়, বাসায় বসেই আয়োজন করে নেওয়া সম্ভব।
শুরুটা হোক কোলাহল থেকে নিজেদের পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে। মোবাইলটা না হয় সুইচ অফ কিংবা সাইলেন্ট থাক। মাইন্ডফুলনেস প্র্যাকটিস করার মাধ্যমে মুহূর্তগুলোকে অনুভব করার চেষ্টা করা যায়। দুজন দুজনের চোখে হারিয়ে ফিরিয়ে আনা যায় মানসিক শান্তি। অস্থিরতা কিংবা অস্বস্তি ঝেড়ে। মুহূর্তটাকে উপভোগ করার মাধ্যমে। বাইরের পুরো পৃথিবীকে অগ্রাহ্য করে আপনার ভুলে।
এই পুরো মুহূর্তকে আরও রোমান্টিক করতে পারে সেন্টেড ক্যান্ডেল, পছন্দের এয়ার ফ্রেশনার কিংবা সুগন্ধিযুক্ত ডিফিউজার। ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে ল্যাভেন্ডার কিংবা রোজ ফ্লেভারের সুগন্ধি বেছে নেওয়া যেতে পারে। রোমান্টিক মুড সেট করার পাশাপাশি সুগন্ধিগুলো মনকেও প্রাণোজ্জ্বলতায় ভরিয়ে দিতে পারে।
ক্লান্তি দূর করতে একটা রিল্যাক্সিং মাসাজ থেকে রিফ্রেশিং আর কী হতে পারে? আর তা যদি হয় ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে, তবে তো কথাই নেই। স্পা ডেট নাইটের মাসাজ সেশন মানেই স্পেশাল কিছু। সুগন্ধি মোমবাতি, মাসাজ অয়েল, পছন্দের ফুল, রঙিন তোয়ালে, প্রিয় চকলেট—সবকিছু নিয়ে পুরো আবহ গড়ে নিলে মন্দ হবে না। আড়ষ্টতা ভুলে মনোনিবেশ করা যাবে একান্ত সময়টাতে। প্রাধান্য পাবে প্রেমানুভূতি।
আড়াআড়ি কিংবা লম্বা লম্বা স্ট্রোকে মাসাজ শুরু করা চাই। ধীরে ধীরে মাংসপেশিগুলো শিথিল হলে ওপর-নিচ স্ট্রোকে মাসলে প্রেশার দিয়ে মাসাজ করলে রিল্যাক্সিং একটা অনুভূতি দেওয়া যাবে প্রিয়জনকে।
দক্ষতা নয়, বরং ভালোবাসার মানুষ স্পর্শে কতটা ভালো অনুভব করছে, তা-ই এখানে মুখ্য বিষয়। গল্পের ফাঁকে সময় জেনে নেওয়াই যাবে, প্রিয়জনের অনুভূতি। আর মুড সেট করতে আলো-আঁধারের খেলাটা ভুলে গেলে চলবে না একদম।
বিশেষ এই ডেটে মাসাজ-পরবর্তী স্নান যেন রুটিন নয়, বরং আরেকটা রোমান্টিক সেশন। গোসলের আগে সম্ভব হলে একই সঙ্গে সেরে নেওয়া যেতে পারে একটা স্টিমিং সেশন। এতে লোমকূপের বাড়তি ময়লা দূর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বক হবে পুনরুজ্জীবিত। স্ট্রেস দূর হয়ে মনে নেমে আসবে কোমল ও সজীব ভাব। এ ক্ষেত্রে বেদিং সেশন শুধু শারীরিক নয়, বাড়িয়ে দিতে সক্ষম মানসিক অন্তরঙ্গতাও। পেশিতে জমে থাকা টেনশন দূরীভূত হয়ে মিলবে প্রশান্তি। সম্পর্কে বিশ্বাস অটুট করে আরও আত্মবিশ্বাসী হতে চাইলে সঙ্গীকে নিয়ে এই রিচুয়াল অব্যর্থ।
স্নান যখন সারাই গেল, তবে এবার ভালোবাসার মানুষকে একটু প্যাম্পার করে নিলেও মন্দ হয় না। শুরুটা করা যেতে পারে কোনো একটা ফেস প্যাক কিংবা বডি প্যাক অ্যাপ্লাই করার মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া যায় সঙ্গীর ত্বকে মানানসই কোনো ফেস প্যাক, হতে পারে চন্দন, অরেঞ্জ কিংবা উপটান। তারপর পালা মাস্কের। ত্বকের ধরন অনুযায়ী কিংবা ডেট নাইটের থিমকে প্রাধান্য দিয়ে। ডালিম, শসা, অ্যাভোকাডো—যেকোনো ফ্লেভারের মাস্কই দারুণ উপযোগী। মাস্কের পর আসে টোনার। রেগুলার ব্যবহারযোগ্য টোনার এবং একইভাবে ময়শ্চারাইজার বেছে নিলেই চলবে। হাতে-পায়ে লোশন মাসাজ করতে ভোলা যাবে না।
স্যাভরি ছাড়া কি ডেট নাইট সম্পূর্ণ হয়? চকলেট তো নিত্যনৈমিত্তিকের ভেতরেই পড়ে। এমনকি পার্টনারের হেলদি ডায়েটেও যোগ করা যেতে পারে সুস্বাদু কিন্তু হেলদি স্যাভরি। অ্যাভোকাডো হতে পারে মজাদার অপশন। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর হেলদি ফ্যাটে ভরপুর এই ফ্রুট দিয়ে তৈরি করে নেওয়া যায় এগ এন্ড অ্যাভোকাডো স্যান্ডউইচ, সঙ্গে হেলদি কোনো একটা জুসের সঙ্গত। ব্যস! এ ছাড়া ফ্রুট স্যালাদ হতে পারে আরও হেলদি অপশন। পছন্দমতো রঙিন ফ্রুট কিউব করে কেটে নিয়ে, তাতে বাদাম, গ্রিক ইয়োগার্টের যোগ। স্পেশাল নাইটে একটু স্পেশাল ডায়েটারি না থাকলে কি চলে?
তবে এমন একটা স্পেশাল ডেট নাইট কি শুধুই স্পেশাল দিনগুলোর জন্য? অবশ্যই না, প্রিয় মানুষের খেয়াল রাখতে কোনো স্পেশাল দিনের প্রয়োজন নেই। শুধু পার্টনারের কমফোর্টের কথা মাথায় রেখে যেকোনো সময়ই প্ল্যান করা যেতে পারে এ রকম একটা ডেট নাইট। শুধু যে হাইজিন কেয়ার হবে তা কিন্তু নয়; বরং এমন নিঃসংকোচের মুহূর্তগুলো সৃষ্টি করবে অন্তরঙ্গতা, বাড়িয়ে দেবে ভালোবাসা।
বিদিশা শরাফ
মডেল: সজিব ও ষড়ঋতু
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: রাইজ
ছবি: কৌশিক ইকবাল