বাংলাদেশে বাসাবাড়িতে এলপিজি সিলিন্ডারের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। তাই এলপিজি ব্যবহারে সতর্কতা এবং এ সংক্রান্ত সচেতনতা আগের তুলনায় অনেক বেশি জরুরি। পাশাপাশি সরকারেরও এ খাতের প্রতি নীতিসহায়তাসহ আরও দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
এলপি গ্যাস অপারেটর ওমেরা আয়োজিত ‘স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ওপর ক্লিন ফুয়েল হিসাবে এলপিজির প্রভাব’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবসে ওমেরার করপোরেট কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভার লক্ষ্য ছিল বিশ্বব্যাপী নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্মক্ষেত্রের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও সমর্থনের জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করা। ‘পরিবর্তনশীল জলবায়ুতে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা’ প্রতিপাদ্যে গোলটেবিল আলোচনায় উঠে আসে, বাংলাদেশের এলপিজি সেক্টরের বর্তমান প্রবৃদ্ধি ও এই সেক্টরের বিভিন্ন বিধিমালা। পাশাপাশি এলপিজির স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিভিন্ন প্রভাবও অন্বেষণ করা হয়।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান নুরুল আমিন গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন ওমেরা এলপিজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তানজিম চৌধুরী। এ ছাড়া বৈঠকে হেলাল উদ্দিন এনডিসি, বিইআরসি সদস্য (গ্যাস); মোহাম্মদ ফারুক হোসেন, প্রধান পরিদর্শক, বিস্ফোরক অধিদপ্তর; মোঃ কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া, বিএফএম, ডেপুটি ডিরেক্টর (অপারেশনস অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর; মেজর (ইঞ্জি.) শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (অব.), সদস্য (উন্নয়ন), রাজউক; লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট, রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব); ইমরান হাসান, মহাসচিব, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি; জহির খান, সভাপতি, শেফস ফেডারেশন অব বাংলাদেশ; এইচএম হাকিম আলী, সভাপতি, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশন এবং মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার, মহাসচিব, এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলওএবি) প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন।
বৈঠকে বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ওপর এলপিজির প্রভাব গভীর এবং ইতিবাচক। অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানী যেমন কয়লা এবং তেলের তুলনায়, এলপিজি উল্লেখযোগ্যভাবে কম দূষক নির্গত করে। কয়লার চেয়ে ৩৩ শতাংশ কম এবং তেলের তুলনায় ১২ শতাংশ কম কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন করে। পরিবেশ সংরক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে, মাত্র এক মেট্রিক টন এলপিজি ৪৭টি পূর্ণ বয়স্ক গাছের সমতুল্য পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারে, যা বন উজাড় কমাতে ভূমিকাকে রাখছে। এ ছাড়া, এলপি গ্যাসে রান্নার ফলে ধোঁয়া উৎপন্ন হয় না। এতে একদিকে যেমন ক্ষতিকারক দূষণের সংস্পর্শকে হ্রাস করে, তেমনি স্বাস্থ্যের জন্যও কম ঝুঁকিপূর্ণ। সামগ্রিকভাবে বলা যায়, এলপি গ্যাস পরিবেশ এবং মানুষ উভয়ের জন্যই একটি টেকসই এবং স্বাস্থ্যকর জ্বালানী।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের এলপিজি সেক্টরে ক্রস-ফিলিং, এলপিজি ব্যবহার সম্পর্কে অপর্যাপ্ত সচেতনতা, মিডিয়া যোগাযোগে ভুল তথ্য এবং এলপিজি সিস্টেমের অনুপযুক্ত নকশা ও ইনস্টলেশনের মতো কারণগুলোকে এ খাতের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, ‘একসময় গ্রামের মায়েরা রান্না করার সময় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যেতেন। কাঠ দিয়ে রান্না করার কারণে ধোঁয়ায় আমি আমার মায়ের চোখের পানি দেখেছি। এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডার আসার পর সেই ভোগান্তি থেকে গ্রামের গৃহিনীরা মুক্তি পেয়েছেন। আমরা চাই এলপিজির ব্যবহার আরও ব্যাপক হারে বাড়ুক।’
নুরুল আমিন বলেন, ‘আমি সরেজমিন পরিদর্শনে এলপিজির পরিবহন ও সংরক্ষণ পদ্ধতি নিরাপদ হিসেবে দেখতে পেয়েছি। প্রতি মাসের শুরুর সপ্তাহে এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা করে বিইআরসি। আমরা দেখেছি, বিইআরসির নির্ধারিত মূল্যে একমাত্র ওমেরা এলপিজি বিক্রি করে। এ জন্য ওমেরা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
বিইআরসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘এলপিজি ব্যবহার নিরাপদ করার জন্য আমরা বিধি এবং নির্দেশিকা প্রণয়ন করবো। যাতে এ বিষয়ে দায়বদ্ধতার পাশাপাশি সচেতনতা সৃষ্টি হয়। এ খাতের অবারিত সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এ খাতভিত্তিক পরিকল্পনা খুব জরুরি।’
প্রসঙ্গত, প্রতিবছর ২৮ এপ্রিল পালিত হয় জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে সুস্থ শ্রমিক, শোভন কর্মপরিবেশ, গড়ে তুলবে স্মার্ট বাংলাদেশ’। পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা দিবসটি পালন করে আসছে ।
- ক্যানভাস অনলাইন
ছবি: সংগ্রহ এবং ওমেরা-এর সৌজন্যে