ঘরে বসে অফিসের কাজ করার সময় একটানা কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকা, নয়তো টিভিতে পছন্দের অনুষ্ঠান বা খবর আবার সঙ্গে রয়েছে মোবাইলের স্ট্যাটাস আপডেট চেক করার কাজও। দুইটি চোখের উপর দিতে কতকিছুই না যায়!
টানা ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা কম্পিউটারের সামনে বসে থেকে কাজ করা ও ফোনে সারাদিন কথা বলা। সব মিলিয়ে চোখের সমস্যা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তাই এখন বেশিরভাগ মানুষই চশমা ব্যবহার করেন।
করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনের আগেও এসব ছিলো কিন্তু এমন মাত্রায় নয়। যেমন, অফিসে মনিটরের সঙ্গে চোখের দূরত্ব থাকত মোটামুটি ঠিকঠাক। বর্তমানে ঘরে ল্যাপটপ, কম্পিউটারে কাজ আর অবসর সময়ে নজর রাখছেন টিভিতে। ফলে দিনের শেষে জবাব দিচ্ছে চোখ। চোখ জ্বালা, চোখ কড়কড় করা, চোখ লাল হওয়া, চোখে ভারী ভাব, ঝাপসা দেখা, কপাল-ঘাড়-পিঠ-মাথা জুড়ে ব্যথা হওয়া, সবই বসেছে জাঁকিয়ে।
চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ সুমিত চৌধুরীর মতে, সারাক্ষণ ডিজিটাল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে, চোখ পলক ফেলতে ভুলে যায়, আর তাতেই বিপদ হয়। এমনিতে মিনিটে যত বার শ্বাস চলে ততবার চোখের পলক পরার কথা। অর্থাৎ মিনিটে ১৮ বার। যাতে কিছু তৈলাক্ত ও জলীয় পদার্থ সমান ভাবে মণির উপর ছড়িয়ে পড়ে চোখকে সুস্থ ও সবল রাখতে পারে। একমনে ডিজিটাল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে ১৮ বারের বদলে ৫-৯ বার চোখের পলক পড়ে। চোখ শুকোতে থাকে। দেখা দেয় যাবতীয় উপসর্গ, যাকে বলে ‘ড্রাই আই সিনড্রোম’।
যত বেশি সময় ল্যাপটপ, টিভি, মোবাইল সঙ্গী হয়, তত বাড়ে বিপদ। যাদের চোখে খুব বেশি মাইনাস পাওয়ার আছে, তাদের বেশি সমস্যা হয়। চশমা না পরে কাজ করলে এই সমস্যা বাড়ে।
কম্পিউটার, টিভি ও মোবাইল প্রতিনিয়ত ব্যবহার করলে অবশ্যই চোখের যত্ন নিতে হবে। জেনে নিই কীভাবে চোখের যত্ন নেবেন-
. স্ক্রিন টাইম কমানো হল প্রথম কাজ। অফিসের কাজ কমানো যাবে না, কিন্তু মাঝে মাঝে বিরতি দিতে হবে। ৩০-৪৫ মিনিট টানা কাজ করার পর ৫-১০ মিনিটের বিরতি নিন। একটু পানি খান। সে সময় টিভি দেখা বা লম্বা টেক্সট করার দরকার নেই।
. অফিসে যেভাবে কম্পিউটার সেট করা আছে, ঘরেও সেভাবে করে নিন। সঠিক উচ্চতার চেয়ার-টেবিলে বসে মনিটর ২২ ইঞ্চি দূরে রেখে কাজ করুন। ঘরের আলোর উজ্জ্বলতা যেন মনিটর থেকে একটু কম থাকে।
. একটানা কাজ করবেন না। মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করে চোখকে বিশ্রামও দিন। এতে দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে।
. বই পড়া বা দূরে দেখার চশমা পরে কাজ করলে সমস্যা হতেই পারে। তবে কম্পিউটারে কাজ করার জন্য আলাদা চশমা লাগে। সেটা পরে কাজ করুন। এক-আধ ঘণ্টা বাদে বাদে টেবিলে দুই কনুই রেখে হাতের তালুতে চোখ দুটো চেপে ধরে রাখুন ২-৩ মিনিট।
কম্পিউটারে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় চশমা ব্যবহার করলে চোখ খারাপের ঝুঁকি কমে।
. প্রতি তিন থেকে চার সেকেন্ড পর পর চোখের পাতা ফেলা চোখের ছোটখাটো সমস্যার সমাধান করে। তাই ঘন ঘন চোখের পাতা ফেলুন।
. মাঝেমাঝে চোখে-মুখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিন। চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকুন খানিক ক্ষণ। বন্ধ চোখের পাতায় ঠাণ্ডা গোলাপ জলে ভেজানো তুলা রাখলে ক্লান্তি কমে যাবে।
. সারাক্ষণ বসে থাকবেন না। এদিক-ওদিক হেঁটে আসুন।
. প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি, বাদাম, কমলালেবু খেতে পারেন। এসব খাবার চোখের কর্নিয়া ভালো রাখে।
. দূরে দেখার চশমা থাকলে ওই চশমা পরে টিভি দেখুন। ঘরের আলো জ্বালিয়ে রাখবেন। বসে টিভি দেখাই সবচেয়ে ভালো। অন্তত মশারির মধ্যে শুয়ে দেখবেন না।
. ঘুমের সমস্যা থাকলে ঘুমোতে যাওয়ার অন্তত দু’ঘণ্টা আগে টিভি, ল্যাপটপ, মোবাইল বন্ধ করে দেবেন। কারণ স্ক্রিন থেকে যে নীল আলো বেরয়, তাতে ঘুমের ব্যাঘাত হয় বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তার বদলে বই পড়া শুরু করুন। চোখও বিশ্রাম পাবে, ঘুমেরও অসুবিধা হবে না।
. নিয়ম মানার পর সমস্যা না কমলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।