skip to Main Content

কভারস্টোরি I বাঙালির ট্রেন্ডি ঈদ

বাঙালির ঈদ কেবল ধর্মীয় আচারসর্বস্ব কোনো উপলক্ষ নয়, বরং জীবনের উৎসব। নতুন পোশাকে আর অনুষঙ্গে, প্রতিফলিত হয় এই উদ্যাপন। এবারেও তার ব্যত্যয় হচ্ছে না। বরং আরও ট্রেন্ডি, দৃষ্টিনন্দন ও আন্তর্জাতিক হয়ে উঠছে। এর অগ্রপশ্চাৎ অনুসন্ধান করেছেন শেখ সাইফুর রহমান ও আফসানা ফেরদৌসী

আবহাওয়ায় প্যাটার্ন আমাদের দেশে এ সময়ে এমনই। বৃষ্টি আর কাঠফাটা রোদ গলাগলি করে চলে। ফলে গরমের সঙ্গে ঊর্ধ্বগামী আর্দ্রতায় নাভিশ্বাস ওঠে মানুষের। ঈদও পড়ছে এই সময়ে। ফলে আমাদের এবারের ঈদপোশাকে মান্য হচ্ছে সময়ের প্রকৃতি। স্পষ্ট থাকছে ঋতুর মেলবন্ধন। একদিকে উৎসব, অন্যদিকে আবহাওয়া— উভয়কে মর্মে রেখেই দেশের ফ্যাশন হাউজগুলো ঈদের কালেকশন সাজিয়েছে। ডিজাইনাররাও তাদের সৃজনশীলতায় এসব বিষয়কে বিশেষ গুরুত্বে বিবেচনা করেছেন।
সারা বছর ঈদের নতুন পোশাকের যে অপেক্ষা, শুধু তার অবসান হচ্ছে না, অধিকন্তু এই কালেকশনের পোশাকে নারী-পুরুষনির্বিশেষে নতুন ডিজাইন, ভ্যালু এডিশনের সৌন্দর্যের সাক্ষাৎও পাচ্ছেন। পাশাপাশি মিলছে ষোলো আনা আরাম। আরও বলা যেতে পারে, প্রত্যেকে সাধ্যের মধ্যে পছন্দের পোশাক কিনতে পারবেন।

অঞ্জন’স

এবারের ঈদে, ফ্যাশনে নিয়ত পরিবর্তনশীল ধারার বিষয়টি ডিজাইনাররা বিবেচনায় রেখেছেন। ফলে নতুন ট্রেন্ডও লক্ষ করা যাবে এবারের ঈদ কালেকশনে। এই উৎসব আসে বছরে একবারই। তাই ঈদের নিজের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে যোটক হবে হালের ট্রেন্ড, রঙ, প্যাটার্ন, কাট, শিলুয়েট মায় ফ্যাশনের প্রয়োজনীয় প্রতিটি বিষয়।
পোশাক-নকশার সব উপাদান ডিজাইনাররা ঈদপোশাকে সংযোজনের চেষ্ট করেছেন। পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি নজরে রেখেছেন আবহাওয়া। ফলে আরাম আর স্বস্তি পেয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। বিভিন্ন হাউজের ঈদ কালেকশনে ব্যবহৃত কাপড় স্পর্শ করলে সেটা বেশ মালুম হয়। তবে উৎসবের উচ্ছলতা আর আড়ম্বরকে সঠিকভাবে প্রতীয়মান করার প্রয়াসও এ ক্ষেত্রে লক্ষ করা গেছে।

কে ক্রাফট

আমরা বেশ কয়েক বছর ধরেই আবহাওয়াকে খুব গুরুত্ব দিতে বাধ্য হচ্ছি। অবশ্য এটা করতেই হয়, ঈদ বছরের যে সময়েই হোক না কেন। তবে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন স্বস্তি আর আরাম। এ জন্যই সুতি, খাদি, লিনেন, এন্ডি কটনের প্রাধান্য লক্ষণীয়। দিনের পোশাকে এ ধরনের কাপড় অনেক বেশি উপযুক্ত। আবার রাতের পার্টি, দাওয়াত, অনুষ্ঠান ইত্যাদির জন্যও তো পোশাক চাই। তাই সিল্ক, এন্ডি সিল্ক, মসলিন, শিফন, জর্জেটের উপস্থিতিও রয়েছে। এসব কাপড়ে বয়নসৌন্দর্যও ক্রেতাদের নজর এড়াবে না। কারণ, বুননে দারুণ সব নকশা এবার দেখা যাচ্ছে। বস্তুত টেক্সটাইল ডিজাইনে নজর দিয়েছেন অনেকেই। নকশা ছাড়া প্লেইন কাপড় যেমন রয়েছে, তেমনি নানা ডিজাইনের জ্যাকার্ডও দেখা যাচ্ছে। সঙ্গে আছে নানা ধরনের প্রিন্টের উপস্থিতি। আর বেশ বড় অংশজুড়েই থাকবে ফ্লোরাল প্রিন্ট।
ঘুরেফিরে আবহাওয়ার কথা এসেই পড়ে। কারণ, অন্য সব সময়ের চেয়ে এই সময়টা আলাদা। তা প্রকৃতিজনিত মিশ্র অনুভবের জন্যই। এই সময়ে চোখের শান্তিও সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ফলে রঙ নির্বাচনে ডিজাইনাররা বেশ সচেতন। বর্ণবিন্যাসে উৎসবের উচ্ছ্বাস আর স্নিগ্ধতার মেলবন্ধন লক্ষ করা যাবে। কালার প্যালেট যে বর্ণাঢ্য হবে, সে বিষয়ে কোনো তর্কের অবকাশ নেই। তবে এই সময়ে প্রকৃতির বিপ্রতীপ বৈশিষ্ট্যের মতো রঙেও তার প্রভাব লক্ষ করা যাবে। মিলবে কন্ট্রাস্ট।
বাংলাদেশের উৎসবের কিন্তু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এখানে উৎসবের রঙ বলতেই মৌলিক রঙ। অর্থাৎ সেই ‘বে-নি-আ-স-হ-ক-লা’র উপস্থিতি। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটছে না। মানে, রঙের এই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতি থাকবে। তবে অন্তর্জালের কারণে অনেক কিছুই সহজলভ্য হওয়ায় আন্তর্জাতিক কালার ট্রেন্ডও আমাদের জানা। ফলে ডিজাইনাররা বিশ্বমনস্ক ভোক্তার চাহিদাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ জন্য মৌলিক রঙের পাশাপাশি হালকা শেড, প্যাস্টেল শেডও চোখে পড়বে।
আবার জমিন অলংকরণে হ্যান্ড ও মেশিন এমব্রয়ডারি, স্ক্রিন ও ব্লক প্রিন্ট, টাইডাইয়ের মতো ট্র্যাডিশনাল মাধ্যমগুলোর উপস্থিতি উপেক্ষা করা যাবে না। তবে এসব মাধ্যম ব্যবহারে অভিনবত্ব যোগ করবে বাড়তি মাত্রা। অবশ্য বর্তমানে টাইডাই যথেষ্ট দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে আবার শিবোরির প্রতি ভোক্তাদের আকর্ষণ কম না।

রঙ বাংলাদেশ

শাড়িতে এবার থাকছে অভাবনীয় বৈচিত্র্য। গরমের দিনে সুতি শাড়ি মানেই আরাম। দিনের বেলায় যেমন সুতি শাড়ি দেখা যাবে, তেমনি রাতের পার্টিতে দেখা মিলবে সিল্ক, জর্জেটের বাহারি উপস্থিতি।
ফ্লোরাল ও জ্যামিতিক লে-আউটের দৃষ্টিনন্দন জমিনের শাড়ি বেশ চোখে পড়ছে। এ ছাড়া নতুন করে চাহিদা বাড়ছে হ্যান্ড পেইন্টেড শাড়ির। সেটাও এবারের ঈদে থাকছে বিশেষভাবে। সুতির শাড়ির সঙ্গে নানা প্যাটার্ন আর কাটের ব্লাউজ যোগ করবে অন্য মাত্রা। লং কাট ব্যাক থেকে শুরু করে ফ্রিল দেওয়া ব্লাউজও দেখা যাচ্ছে। আবার শাড়িকে সিম্পল রেখে গর্জাস ব্লাউজে পরিপূর্ণ লুক দেওয়ার চেষ্টা নজর কাড়ছে। এ ক্ষেত্রে ব্লাউজকে আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে অ্যাপ্লিকে করা ফ্লোরাল প্যাটার্নের পাশাপাশি হ্যান্ড ও মেশিন এমব্রয়ডারিতে। এবার স্লিভলেস ব্লাউজের উপস্থিতিও থাকছে। আবার ফ্রিল যেমন থাকবে, তেমনি থাকবে বেল কাট। ব্লাউজে থাকবে লং ও শর্ট কাটের ব্যবহার। গরম আবহাওয়া সত্ত্বেও জ্যাকেট দেখা যাবে এবার শাড়ির সঙ্গে। তবে সেটি হালকা ওজনের কাপড় দিয়ে তৈরি।

রাইজ

রাতের শাড়িতে হাতের কাজ করা মসলিন শাড়ি এবারও বড়সড় জায়গা নেবে। প্লিট, নকল পালক, কাটওয়ার্ক কিংবা পুঁতির জরির কাজ বা অ্যাপ্লিকে করা পাড় ও আঁচলে শাড়িকে আকর্ষণীয় করার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। হ্যান্ডপেইন্টেড মসলিন শাড়িও থাকছে সুতি ও সিল্কের পাশাপাশি। সিল্কের শাড়িতে ম্যানুয়াল এবং মেশিনের সূচিকর্মের উপস্থিতি যথেষ্ট। শাড়িতে কনট্রাস্ট ফ্যাব্রিক ট্রেন্ড নতুন নয়; তবে এবারেও থাকবে। জর্জেটের শাড়িতে ফ্লোরাল প্রিন্ট, এর মধ্যে হালকা এমবেলিশমেন্ট দেখা যাবে। এবার নতুন একটি সংযোগ থাকবে শাড়িতে, সেটি হলো বেল্টের ব্যবহার। লেস, মেটাল ও কাপড়ের বেল্ট। সঙ্গে বিভিন্ন রকমের বাকলস। প্লেইন মেটালের পাশাপাশি পাথরের কারুকাজ করা বাকলস যেমন থাকবে।
কিছু কিছু ব্র্যান্ড কাজ করেছে রেডিমেড শাড়ি নিয়ে। যা পরার সময় কুঁচি নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। স্কার্টের মতো জলদি পরে ফেলা যাবে; অথচ দেখলে মনে হবে শাড়ি পরে আছে।

লা রিভ

বাঙালির ঈদে সালোয়ার-কামিজ অবশ্যম্ভাবী। আরামদায়ক আর দৃষ্টিনন্দনও। নানা ধরন আর কাটের কামিজ রয়েছে সিঙ্গল, টু বা থ্রিপিসের। আছে লং আর সেমি লং। তবে দ্বিতীয়ের উপস্থিতিই বেশি। স্লিম ফিট, স্ট্রেইট শেপ এবার ইন ট্রেন্ড। কামিজের হাতায়ও বৈচিত্র্য রয়েছে। নানা শেপের— ফ্রিল দেওয়া, বেল কাট আবার স্লিভলেসও।
লেয়ারিং ও বিভিন্নভাবে ঘের দেওয়া ফ্রকও ফ্যাশনের ইন ট্রেন্ড হিসেবে থাকছে। কামিজের সঙ্গে কুঁচি দেওয়া ফ্রকের ডিজাইনও বেশ দেখা যাচ্ছে।
কামিজে সুতি, লিনেন, এন্ডি সিল্ক, সিল্ক, মসলিন ব্যবহৃত হয়েছে। পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যাটেরিয়ালও আছে। এসব কাপড় ও প্রিন্ট যথেষ্ট আকর্ষণীয়। সাধারণভাবে আমাদের দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলো ট্র্যাডিশনাল ভ্যালু অ্যাডেড মিডিয়া ব্যবহার করে থাকে। এবারও সেটাই করা হচ্ছে। কিছু হাউজ অবশ্য কাপড়ের বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রেখে কাট আর প্যাটার্নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।
জমিনজুড়ে ভরাট কাজের কামিজ যেমন আছে, তেমনি হালকা কাজের কামিজও। এতেও বেল্টের ব্যবহার আছে। এবারও থাকছে লেসের ব্যবহার। কামিজের নেক একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর ডিজাইন পোশাকটিকে আকর্ষক করে তোলে। অবশ্য এবার রাউন্ড নেক, বোট নেক, ভি নেক থাকছে বেশি।

টুয়েলভ

বিভিন্ন রকম কাটের সালোয়ারও আছে। তবে স্ট্রেইট কাটই বেশি। এই পোশাকেও যোগ হয়েছে এমবেলিশমেন্ট। পার্ল, স্টোন বোতামের ব্যবহার থাকছে নিচের দিকে। এমব্রয়ডারি এবং বিভিন্ন লেসেরও ব্যবহার আছে। প্যান্ট ডিজাইনের প্রাধান্য বেশি থাকলেও সালোয়ার, পালাজো, লং স্কার্ট— এসবও থাকছে কামিজের সঙ্গে। চুড়িদার হচ্ছে সব সময়ের অনুষঙ্গ। অভিজাত। এবার তা থাকবে। অনেক বছর আগে নিচের দিকে চুড়ির অংশে প্রিন্ট করা চুড়িদার এবং পুরোটাই প্রিন্ট করা চুড়িদারের ট্রেন্ড ঢাকায় চালু করেছিলেন ডিজাইনার আনিলা হক। সেই ট্রেন্ড বহমান। এবারও থাকছে।
সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে ওড়নার একটা সম্পর্ক আছে। এর নানা সাইজ দেখা যায় এবং যাচ্ছে। আছে কামিজের কাজের সঙ্গে মিলিয়ে হালকা ও ভারী কাজের ওড়না বা দোপাট্টা। তবে ওড়নার ব্যবহার কমে আসছে।
ঈদের আগের ও পরের দিনের অনুষ্ঠান এবং ঘুরতে গেলে মেয়েরা টপস পরতে চায়। এবারও তাই আছে নতুন প্যাটার্নের সুতি, লিনেন আর অন্যান্য ফ্যাব্রিকের টপস। লং অথবা শর্ট। বুকে হালকা কাজ, নিচের দিকে কাজ অথবা শুধু পেছনে। দেখা মিলছে ফ্লোরাল ও জ্যামিতিক মোটিফ আর এ লাইন কাট, ফ্লেয়ার কাট, প্লিটেড, অ্যাসিমেট্রিক হেমলাইনের টিউনিক। ফ্লোরটাচ কামিজ বা গাউনেরও থাকছে এবার। তবে সেটা এই গরমে পরার উপযোগী করেই তৈরি করছেন ডিজাইনাররা।
মেয়েদের টি-শার্ট, পোলো শার্ট, ক্যাজুয়াল এবারের ঈদে বেশ জায়গা করে নিয়েছে। নানা ধরনের প্রিন্ট, চেক বা ডিজাইনের এসব পোশাক বেশ মানাবে।
এবার আসা যাক ছেলেদের কথায়। ঈদের দিন তারাও চায় তাদের সেরা পোশাকটি পরতে। এখন ছেলেদের পোশাকের কাট এবং রঙ নিয়ে কাজ করেছেন ডিজাইনাররা।
ঈদ আর পাঞ্জাবি যেন দুজন দুজনার। ঐতিহ্য ধারণ করে পাঞ্জাবি। নানা প্যাটার্ন আর কাটের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ভ্যালু অ্যাড করা পাঞ্জাবি এবার থাকবে। এখানেও ডিজাইনারদের নিরীক্ষা উল্লেখ করার মতো। সুতি, লিনেন, কটন ও এন্ডি সিল্ক, সিল্কের যেমন আছে, তেমনি আকর্ষণীয় সব ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফ্যাব্রিকের পাঞ্জাবিও এবারের ঈদে মিলবে। পাঞ্জাবি এখন আর হালকা রঙের নয়, তবে আপন বৈশিষ্ট্যে সাদা আজও উজ্জ্বল। সেটা আছেই; পাশাপাশি নানা রঙে, প্রিন্টের চেকের পাঞ্জাবিও আছে। এখন বেশি কাজের পাঞ্জাবির চাহিদা কমেছে। বরং কাট আর প্যাটার্নেই ঝুঁকছেন তরুণেরা। তবে ব্লক আর স্ক্রিন প্রিন্টও দেখা যাবে। থাকবে হ্যান্ড মেশিন এমব্রয়ডারি। বুকপকেট, প্ল্যাকেট, ইয়ক ও হাতে কনট্রাস্ট ট্যাপ ভ্যালু অ্যাড করবে। সেমি লং পাঞ্জাবির চাহিদাই বেশি থাকবে। অ্যাসিমেট্রিক প্যাটার্নও আছে পাঞ্জাবিতে, মিডল প্ল্যাকেট থেকে সরে সাইড প্ল্যাকেট এসেছে ট্রেন্ডে।
স্ট্রেইট পাজামা ইন ট্রেন্ড। তবে সাদা পাজামার বিভিন্ন কাপড় ও রঙের পাজামা এবার দেখা যাবে। আর প্যান্টের সঙ্গে পাঞ্জাবির যে ট্রেন্ড বাঙালি চালু করেছে, তা তো থাকবেই।
কটিও এখন ইন ট্রেন্ড। দিনে না হলেও রাতের অনুষ্ঠানে কটি থাকবে। মুজিব কোট, ল্যাপেল দেওয়া স্লিভলেস কটি। থাকবে প্রিন্টেড, চেক আর প্লেন কটিও।
পাঞ্জাবি ছাড়াও ছেলেদের দ্বিতীয় পছন্দ শার্ট। ফরমাল ও ক্যাজুয়াল উভয়ই। ফতুয়া এখন আর ফ্যাশনে নেই। তবে শার্টের ভেরিয়েশন রয়েছে প্রচুর; বিশেষত ক্যাজুয়াল শার্টে প্রিন্ট এখন জাঁকিয়ে রয়েছে। সব ফ্যাব্রিক দারুণ আকর্ষক আর আরামদায়ক।
শার্টের কলার থাকবে বেসিক, তার মধ্যে ল্যাপেল কলারও থাকবে। পকেটের বড় সাইজ লক্ষণীয়। প্যান্ট ক্যাজুয়াল আর ফরমাল। এই সময়ে দুটোই কেনা বা বানানো হয়। জিনসের চাহিদা দিন দিনে বেড়েই চলেছে। আর রেডিমেড প্যান্টের কদর তরুণদের কাছে বেশি। টুইল লিনেন প্যান্টও ট্রেন্ডি।
তবে যেটা ছাড়া এখন তরুণদের চলে না, সেটা জিনস আর টি-শার্ট। পাশাপাশি পোলো শার্টও। এ দুটোর বৈচিত্র্য লক্ষযোগ্য।
এবারের ঈদে ডিজিটাল প্রিন্ট অবশ্য ইন টেন্ড। ছেলেমেয়ে সবার পোশাকেই সেটা দেখা যাবে। এমনকি শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট— সবেতেই।
ছোটদের ঈদের আনন্দ বড়দের থেকে অনেক বেশি। এর অনেকটা জুড়েই থাকে নতুন কাপড়। শিশুদের জন্য দেশি পোশাকের পাশাপাশি রয়েছে ওয়েস্টার্ন ডিজাইনের পোশাক। ঈদের আউটফিটে এবার বৈচিত্র্য দেখা যাবে অনেক বেশি। মেয়েদের কামিজ, ফ্রক এবং স্কার্টের সঙ্গে ঘাঘরা-চোলি আছে। নকশাবৈচিত্র্য, ভ্যালু অ্যাডিশন— সব মিলিয়ে ছোটদের পোশাক এখন অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ছেলেদের পোশাকে পাঞ্জাবি থাকবে সুতির। বাবার সঙ্গে মিলিয়ে পাঞ্জাবিও থাকবে। হালকা কাজ থাকবে বুকে। উল্লেখ্য, ব্র্যান্ডগুলো বাচ্চাদের পোশাকে কাট ও নকশায় নান্দনিকতার প্রকাশ ঘটিয়েছে।
মেয়েদের মতো ছোট ছেলেদের পোশাকও আগের চেয়ে অনেক বৈচিত্র্যময়। নানা ধরনের পাঞ্জাবি, ক্যাজুয়াল শার্ট, টি ও পোলো শার্টের সমাহার যে কাউকে মুগ্ধ করতে বাধ্য।
শুধু পোশাক দিয়ে তো আর ঈদ হয় না, সঙ্গে লাগে জুতা, গয়না, ব্যাগ। নারী-পুরুষ শিশু— সবারই পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে কিনতে হবে এসব অনুষঙ্গ।
ফ্যাশনের প্রধান অনুষঙ্গ জুতা। ঈদে তো বটেই। আর জুতা কিনতে হয় পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে। এ ক্ষেত্রে ট্রেন্ড অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সবার আগে আসে আরাম। না হলে যে ষোলো আনাই মিছে। এখানে আবহাওয়াকে মাথায় রাখতে হয়।
ছেলে-মেয়েদের জুতার সম্ভার দেশি ও বিদেশি মিলিয়ে যথেষ্টই। বৈচিত্র্যে, নকশায়, ডিজাইনে আকর্ষণীয় সব ব্র্যান্ড তাদের পসরা সাজিয়েছে। ক্যাজুয়াল ও ফরমাল শু, স্নিকার্স, স্যান্ডেল, স্যান্ডেল শু, মোকাসিনো বা লোফার— কী নেই। শুধু দেখে কেনা। মেয়েদেরও ক্যাজুয়াল আর ফরমাল শু আছে নানা ধরনের। চামড়ার জুতা যেমন আছে, তেমনি আর্টিফিশিয়াল লেদারও আছে বাজারে। এ ছাড়া বিভিন্ন ভালু অ্যাডেড জুতাও এবার ঈদে দেখা যাচ্ছে।
কেবল বড়দের নয়, বাচ্চা, বুড়ো— সবার জন্যই রয়েছে সব ধরনের জুতা। বৈচিত্র্যের অভাব নেই। এখন কেবল দেখেশুনে কেনার পালা।
পরিশেষে বলতেই হয়, সময়ের সঙ্গে আমাদের ফ্যাশন-রুচির পরিবর্তন হয়েছে। আন্তর্জাতিক ট্রেন্ড আপডেট নিয়মিত হওয়ায় পোশাকের ব্যাপারে সচেতনতা অনেক বেড়েছে। আর এই পরিবর্তনে অবশ্যই তরুণদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সব সময় সব যুগে তরুণেরাই পরিবর্তনের সারথী। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রমের কারণ নেই। তাদের কারণে পরোক্ষে আমাদের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিও পরিণত হচ্ছে। পাশাপাশি আরও একটা বিষয়কে স্বীকৃতি দিতেই হবে। সেটা হলো আমাদের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে তৈরি পোশাকশিল্পের উপস্থিতি। কেবল লেফটওভার কালেকশন নয়, বরং বর্তমানে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে লোকাল ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে আলাদা ব্র্যান্ড নিয়ে তাদের উপস্থিতি জানান দিয়েছে। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন বাজার সম্পর্কে তাদের ধারণায় কালার, ট্রেন্ড, ম্যাটেরিয়াল ইত্যাদির আপডেট থাকাটা তাই স্বাভাবিক। এ জন্য তাদের উপস্থিতি আমাদের দেশীয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে প্রভাবিত করেছে। পরিবর্তনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
এরই মধ্যে অবশ্য বিদেশি পোশাকও হাজির হচ্ছে। বিশেষত ভারতীয় ও পাকিস্তানি। এর মধ্যে ভারতীয় পোশাকের উপস্থিতি ভৌগোলিক কারণে অনেক বেশি। এই পোশাকও আমাদের ফ্যাশনকে প্রভাবিত করছে।
ক্রেতাদের রুচি পরিবর্তনের ফলে ডিজাইনাররাও তাদের সৃজনে পরিবর্তন আনছেন। আগের মতো জবরজং ডিজাইনের ধারা থেকে বেরিয়ে এসে তারা মিলিমালিস্টিক অ্যাপ্রোচের অনুগামী হচ্ছেন।
অবস্থাদৃষ্টে বলতেই হয়, আরেকবার আমাদের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি একটা ইতিবাচক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেই পরিবর্তনের বৃত্তে থেকেই আমরা এবারের ঈদে উদ্যাপন করতে চলেছি পোশাক উৎসব। নতুন মাত্রায়, আঙ্গিকের বৈচিত্র্যে।

মডেল: অভিনেতা সিয়াম আহমেদ ও অভিনেত্রী তানজিন তিশা
ওয়্যারড্রোব: টুয়েলভ
মেকওভার: পারসোনা
লোকেশন: লুমিয়ার বাই সাতোরি
ছবি: সৈয়দ অয়ন ও সংগ্রহ

This Post Has One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top