skip to Main Content
klubhouse-may-into

ফিচার I বর্ষপরিক্রমা

বছর দুয়েক আগে মিলান ফ্যাশন উইকের একটা রিভিউ পড়ছিলাম নিউইয়র্ক টাইমসে। শিরোনাম ছিল, ‘ডাজ মিলান ম্যাটার?’ চমৎকার অম্লমধুর এক রিভিউ শেষ হয় ইতিবাচক মেজাজে। শেষের আগে এক লাইনে পর্যালোচকের মন্তব্য ছিল: কারও আবেগমুক্তির মুহূর্ত হিসেবে, এর বেশি আর কীই-বা চাওয়ার থাকতে পারে।
লেখার শুরুতে ওই রিভিউটা মনে পড়ে গেল। কারণ, ফ্যাশনে ফটোগ্রাফির যে ভূমিকা সেটা বাংলাদেশে কতটা কার্যকর, তা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রশ্নটা জাগে, ডাজ ফটোগ্রাফি ম্যাটার?
তবে ম্যাটার করে কি না সেই দোলাচল কাটে গেল বছর। আমাদের দেশের ফ্যাশন ফটোগ্রাফি দেখতে অভ্যস্ত দৃষ্টি বেশ একটা ঝাঁকি খায়। এই পরিবর্তন সূচিত করে একেবারে নতুন ফ্যাশন ব্র্যান্ড। ক্লাবহাউজ। মডেল নির্বাচন থেকে মেকআপ, স্টাইলিং থেকে প্রপসের ব্যবহার— বাংলাদেশের ফ্যাশন ফটোগ্রাফিকে অন্য মাত্রায় উন্নীত করে। তাদের প্রথম শুটটাই ছিল চমকজাগানো। ভোগের মেয়ে মডেল আর ফটোগ্রাফারের সঙ্গে দেশের তুলনায় এক অচেনা ছেলে-মুখ। এরপর দেশনির্ভরতায়ও (দেশের ফটোগ্রাফার ও মডেল) সেই ধারাবাহিকতা বজায় থেকে সমান সৃজননৈপুণ্য। মেকআপে অনুসরণ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক ট্রেন্ড।

ফলে ঈশ্বরপ্রদত্ত নিদাগ সতেজ ত্বক আর মুখমন্ডলের সহজাত সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে মেকআপের নৈপুণ্যে। কমপ্লেক্সনের ন্যাচারাল কালার অবিকল রেখেই করা হয়েছে মেকআপ। প্রতিবারেই পোশাকের মেজাজের সঙ্গে মিলিয়ে হেয়ারস্টাইল যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা। এর সঙ্গে আধুনিক স্টাইলিংয়ের মুনশিয়ানায় লুক হয়েছে পরিপূর্ণ। মূলত সহজাত নান্দনিকতা বলতে যেটা বোঝায় ক্লাবহাউজ সেটাকেই পরিস্ফুটিত করতে চেয়েছে। এবং সক্ষমও হয়েছে। বিভিন্ন থিমে প্রাণিত কালেকশনও আস্তে আস্তে ফ্যাশনিস্তাদের দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়েছে। ফলে ধীরে ধীরে ক্রেতাদের অভ্যস্ত চোখ সইয়ে নেওয়ার সময়টুকু পেরিয়ে তাদের পছন্দকে ছুঁতে পেরেছে। ফলে ১২ মাসে সন্দেহ নেই বেড়েছে অনুসরণকারীদের তো বটেই, বিশ্বস্ত ভোক্তার সংখ্যা। এটাই তো ছিল তাদের চাওয়া।
এবার কালেকশনে চোখ রাখলে আমরা দেখি, রেডি টু ওয়্যার যেমন প্রাধান্য পাচ্ছে তেমনি উৎসব আর উপলক্ষের জন্য ঐতিহ্যবাহী পোশাকও। তবে উৎসবের অথবা উপলক্ষের পোশাককে ছকে বাঁধা ক্লিশে ডিজাইন থেকে বের করে এনে চেষ্টা করা হয়েছে অন্যভাবে আন্তর্জাতিক রুচিমাফিক উপস্থাপনের। নবীন এই ফ্যাশন হাউজের ডিজাইনে বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে তাদের মিলিমালিস্টিক অ্যাপ্রোচ। এখানে সহজতায় সৌন্দর্য খোঁজার চেষ্টা স্পষ্ট। আবার উৎসব ও উপলক্ষের পোশাককে এমনভাবে করা হয়েছে, তা যেমন সেসব দিনে মানিয়ে যায়, তেমনি বছরজুড়ে পরাও যায়। সেখানে মনেই হয় না কোনো উৎসবের পোশাক এটা। বিশেষত তাদের একুশ আর ভ্যালেন্টাইনের কালেকশনের ওয়েস্টার্ন আউটফিটগুলো তেমনই। একুশ নিয়ে একটু বলাই যায়। দৃষ্টিনন্দন হোক বা না হোক বাংলাদেশের একুশবিষয়ক পোশাক নকশায় বর্ণমালার উপস্থিতি থাকবেই। প্রচলিত এই ধারা থেকে নিজেদের আলাদা করেছে ক্লাবহাউজ।
ট্র্যাডিশনাল পোশাকের বেলাতেও তাই। বাহুল্যবর্জিত। ডিজাইনে পরিমিতির স্পষ্ট উপস্থিতি। কাপড়ই প্রধান। বৈশাখের পোশাকে ঐতিহ্য আর শিকড়কে ধরার প্রয়াস লক্ষণীয়। আবার ফাল্গুনের রেডিমেড শাড়ি দুভাবে উৎসাহিত করে শাড়ি পরতে। জর্জেটের শাড়িগুলো দেখতেও বেশ। এখানেও আন্তর্জাতিক ট্রেন্ড লক্ষ করা যায়। কারণ, বেশ কয়েক বছর ধরে পশ্চিমের ডিজাইনাররা শাড়িকে প্রেরণা করে নানা নিরীক্ষা করে যাচ্ছেন। এমনকি পাশের দেশ ভারতের ডিজাইনার প্রবাল গুরুংও তার পোশাক নকশায় শাড়িকে প্রেরণা করেন গত বছর। বিশ্বজুড়ে শাড়ি ড্রেস বেশ জনপ্রিয়ও বটে। সেই ধারাকে সচল রাখার প্রয়াস পেয়েছে নতুন এই ব্র্যান্ড।
আবার ঈদের মতো ধর্মীয় উৎসবে ব্যবহৃত ফ্যাব্রিক আর প্রিন্টে আমাদের অনায়াসে করে তোলে ভুবনগ্রামের বাসিন্দা। বস্তুত গেল বছরটায় জয়জয়কার ছিল প্রিন্টের। ক্লাবহাউজের ঈদ কালেকশনে এই সমসাময়িকতা চোখে পড়ে। সামার আর পূজায়ও নিজেদের জায়গা থেকে সরেনি তারা; বরং অবস্থানকে দৃঢ়তর করেছে। নিজেদের ডিজাইন বৈশিষ্ট্যকে ভালোভাবে তুলে ধরেছে বর্ণবিন্যাস, কাপড়ের ব্যবহার, ট্রেন্ডের সঙ্গে ঐতিহ্যের মেলবন্ধনের প্রয়াসে।
বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় তাদের ওয়েডিং কালেকশনের কথা। একেবারেই আউট অব দ্য বক্স ভাবনা। বিয়েতে সাদা এখনো আমাদের দ্বিধান্বিত করে। অথচ ক্লাবহাউজ সেই ভাবনা থেকে বিবাহ-ইচ্ছুক ফ্যাশনপ্রিয়দের বের করে আনার চেষ্টা করেছে। কতটা সফল হয়েছে সেটা তারা বলতে পারবে। তবে ধাক্কা তো দেওয়া গেছে। তাই আমাদেরও দেখার সুযোগ হয়েছে হোয়াইট কালেকশন। বস্তুত এখানেও পশ্চিমকে মেলানোর প্রয়াস। আমাদের লোকাল ফ্যাশন হাউজগুলোর ওয়েডিং কালেকশনের ব্যাপারে অনাগ্রহ বেশ। যদিওবা কেউ করে সেটা মূলত বর আর কনের জন্য। তাতে একধরনের সীমাবদ্ধতা চোখে পড়ে। এই জায়গা থেকে ক্লাবহাউজ চেষ্টা করেছে নিজেদের মতো করে। কারণ, কেবল বরকনেই নয় বরং অন্যদের পোশাকও যে গুরুত্বপূর্ণ, সেটা তুলে ধরার চেষ্টা ছিল যথেষ্টই। সারা বছর বিভিন্ন কালেকশনে বিদেশি ফ্যাব্রিকের পাশাপাশি দেশি কাপড়ও ব্যবহৃত হয়েছে।
সব মিলিয়ে একটা আশা ছড়ানোর বছর পার করেছে ক্লাবহাউজ। ডিজাইন, স্টাইলিং, মেকআপ, হেয়ার, ফটোগ্রাফিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রকে সমান গুরুত্বে বিবেচনায় রেখেই এগোনোয় তাদের প্রচেষ্টা পূর্ণাঙ্গ রূপ পরিগ্রহ করেছে। পাশাপাশি গ্রিন বা পরিবেশবান্ধব ফ্যাক্টরিতে পোশাক তৈরির মধ্য দিয়ে পরিবেশ আর প্রতিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল থেকেছে এই ফ্যাশন ব্র্যান্ড।
এবার নতুন বছর শুরু করতে যাচ্ছে সেই ধারাকে অব্যাহত রেখে। তবে তাতে চমক থাকছে যথেষ্ট। নতুন বছর শুরু কালেকশনের প্রেরণা উইলিয়াম মরিস। আর এভাবেই তারা শ্রদ্ধা জানাচ্ছে বহুমুখী প্রতিভাধর ব্রিটিশ ব্যক্তিত্ব উইলিয়াম মরিসকে। একাধারে যিনি টেক্সটাইল ডিজাইনার, কবি, গল্পকার, অনুবাদক ও সামাজিক কর্মী।

ব্রিটেনের বয়ন ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবনে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। সেই উইলিয়াম মরিসের প্রিন্টকে ক্লাবহাউজ নিজস্ব ভঙ্গিমায় উপস্থাপন করেছে। আর ফটোগ্রাফি এমনভাবে করা হয়েছে যাতে মনে হয় প্রতিটি পোশাকই যেন একেকটি শিল্পকর্ম; সেগুলো বেরিয়ে আসছে ফটোফ্রেম থেকে। এই সময়ে আরও থাকছে ট্রাইবাল কালেকশন। এর বিশেষত্ব বিডওয়ার্কের সঙ্গে জিওম্যাট্রিক এমব্রয়ডারি। ক্রসস্টিচের উপস্থিতি চোখে পড়বে। প্যাস্টেল শেডে এই কাজ অনবদ্য। এই সংগ্রহ গ্রীষ্মদিনের দাবদাহে শরীরের আরাম নিশ্চিত করার পাশাপাশি গ্লোবাল ট্রেন্ডকেও তুলে ধরবে। একেবারে মৌলিক শিলুয়েটের এসব পোশাক দহনদিনে মানিয়ে যাবে বেশ।
আর এভাবেই নতুন আশায়, সৃজনের নতুন প্রতিশ্রুতিতে দ্বিতীয় বছর শুরু করতে যাচ্ছে ক্লাবহাউজ।

 শেখ সাইফুর রহমান
sksaifurrahman@gmail.com
ছবি: ক্লাবহাউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top