ফিচার I শেপওয়্যারে সমাধান
৩৬-২৪-৩৬। মাপজোখে নিখুঁত দেহাবয়ব পাওয়া এখন সম্ভব সেকেন্ডেই। শুধু জাদুকরি সেই অনুষঙ্গ ব্যবহারের দেরি
বিজ্ঞাপনের বুলি মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই! কিন্তু শুনেই মনটা নেচে উঠল তো? চোখের সামনে ভেসে উঠল টিভির পর্দায় বা সিনেমায় দেখা তন্বী, ছিপছিপে গ্ল্যামারাস নারীশরীর। মনে পড়ে গেল আলমারির কোণে পড়ে থাকা অনেক শখ করে কেনা কোনো বডি হাগিং ড্রেসের কথা। সেটাই তো স্বাভাবিক। কারণ, নিজেকে সুন্দর দেখাতে চাই আমরা সবাই। সে জন্য চাই নির্মেদ, ছিপছিপে দেহ। যাতে কষ্ট ছাড়াই টুপ করে গলিয়ে নেওয়া যায় যেকোনো ধরনের পোশাক। কিন্তু ধন্যবাদ আমাদের আধুনিক জীবনধারা এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত স্ট্রেস, কাজের চাপ, জাঙ্ক ফুড, সেডেন্টারি লাইফস্টাইল, কম ঘুম—ইত্যাদিকে; কেননা এসব মিলিয়ে বেশির ভাগ সময়েই ওজন চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ওয়েট মাপার যন্ত্রের উঠতি কাঁটার সঙ্গে ইতিউতি উঁকি দিতে শুরু করে শরীরের মেদ। এগুলোকে বাগে আনা তো মহা হ্যাপার ব্যাপার। নিয়ম মেনে ডায়েট, নিয়মিত এক্সারসাইজ, লাইফস্টাইলের পরিবর্তন—প্রতিটাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ব্যাপার। কিন্তু শুরুতে সে সেকেন্ডের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলো? পুরোটাই মিথ্যা? মোটেই না। সম্ভব। বডি শেপওয়্যারের ব্যবহারের মাধ্যমেই। দেহের আকার, অবয়ব আর বাঁক বুঝে জাদুকরি এই অনুষঙ্গ গলিয়ে নিতে হবে শরীরে। তার ওপর পোশাক পরে নেওয়ার পালা। এর পরপরই দেখবেন—একদম ছুমন্তরে ছিপছিপে হয়ে উঠেছে শরীর। পুরোটাই শেপওয়্যারের কেরামতি। কারণ, কথায় আছে তো, ফেক ইট টিল ইউ মেক ইট।
শেপওয়্যার মূলত ফাউন্ডেশন গার্মেন্টস। আরও সহজে বোঝাতে গেলে আন্ডারওয়্যার, লঞ্জারে বা অন্তর্বাস শ্রেণির। কিন্তু বিশেষভাবে তৈরি এবং এর কার্যকারিতাও ভিন্ন। মূলত দেহাবয়বকে নিখুঁত আকার দিতে সাহায্য করে শেপওয়্যার। সংশোধনের মাধ্যমে দৃষ্টিগোচর ত্রুটিগুলো ঢেকে বাড়িয়ে তোলে দেহের সৌন্দর্য। তৈরি করে পারফেক্ট ফিগারের ইলিউশন।
নানা ধরনের শেপওয়্যার মিলবে বাজারে। কোনোটা শরীরের আলাদা অংশের জন্য তৈরি, তো কোনোটায় এক পিসেই পুরো শরীরের শেপিং সেরে নেওয়া যায়। এর মধ্যে এমন কিছু শেপওয়্যার আছে, যা প্রত্যেকের ওয়্যারড্রোবে থাকা চাই—
কন্ট্রোল প্যান্ট বা ব্রিফ
‘দ্য গডফাদার অব অল শেপওয়্যার’ হিসেবে জনপ্রিয়তা আছে এগুলোর। ভাঁজহীন, মসৃণ এবং সাধারণত হাইওয়েস্টেড এ শেপওয়্যারগুলো পেট, কোমর ও নিতম্বের বাড়তি মেদ আড়াল করতে সাহায্য করে। দেয় সরু কোমর, চাপানো পেট এবং সুডৌল নিতম্বের ইলিউশন। যারা শুধু তলপেটের মেদ সামাল দিতে চান, তাদের জন্য রয়েছে নাভি অব্দি লম্বা ব্রিফ। ডেনিম থেকে ড্রেস—যেকোনো পোশাকের নিচে অনায়াসেই পরে নেওয়া যায়। আওয়ার গ্লাস এবং অ্যাপল শেপড বডির জন্য শেপওয়্যারের সেরা অপশন ব্রিফ।
ক্যামিসোল
ট্যাঙ্ক টপ হিসেবেও পরিচিত। এর কাজ মূলত পেট, পিঠ ও বুকের অংশকে আঁকড়ে ধরে সুন্দর শেপ দেওয়া। শরীরের এসব অংশের বাড়তি মেদ ঢেকে যেকোনো পোশাকে সুন্দরভাবে এঁটে যেতে সাহায্য করে ক্যামিসোল। আওয়ার গ্লাস শেপের বডির জন্য এই শেপওয়্যার বেছে নেওয়া যায় চোখ বন্ধ করে।
ওপেন বাস্ট শেপার
এই শেপওয়্যারে বুকের অংশ খোলা থাকে। কিন্তু আবৃত থাকে পেট ও পিঠের অংশ। ঊরুতে হাইরাইজ কাট থাকায় পরতে আরামদায়ক। এটি পরিহিত অবস্থায় কোমর, পেট ও পিঠ দেখায় সুগঠিত ও দৃষ্টিনন্দন। দেয় আওয়ার গ্লাস বডির ইফেক্ট। বডি হাগিং পোশাকের নিচে পরার জন্য দারুণ অপশন এই শেপওয়্যার। অ্যাপল আর স্ট্রবেরি শেপের বডিকে আরও সুগঠিত দেখাতে দারুণ কার্যকর এগুলো।
টামি টাকার
পেটের মেদ নিয়ে চিন্তিত? শুধু তা ঢাকারও উপায় আছে শেপওয়্যার দিয়ে। টামি টাকার হিসেবে এটি পরিচিত। যা বুকের নিচ থেকে শুরু হয়ে পেটের পুরোটা ঢেকে রাখে। আড়াল করে দেয় বাড়তি মেদ আর চর্বি। ফলাফল, ফ্ল্যাব টু ফ্যাব।
বডি স্যুট
‘অ্যান ওভারঅল শেপার’ বলা হয় একে। স্কিন টাইট এ শেপওয়্যার কাঁধ থেকে কটি অব্দি পুরোটাকেই নিখুঁত আকার দেয়। ফলে বুক, পেট, পিঠ আর নিতম্ব দেখায় সুডৌল ও সুন্দর। প্রতিদিনই ব্যবহারের উপযোগী বডিস্যুট। মজার ব্যাপার হচ্ছে, পোশাকের নিচে তো বটেই, এগুলো পরে নেওয়া যায় পুরো পোশাকের অংশ হিসেবেও। সব ধরনের বডি শেপেই সুন্দর মানিয়ে যায় বডি স্যুট।
থাই শেপার
এটি পেট, কোমর আর নিতম্বের সঙ্গে ঊরুর চর্বি লুকিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। পেটের দিকে হাইওয়েস্টেড হয়ে ঊরু অব্দি নেমে যাওয়া এ শেপওয়্যার দীর্ঘ সময় ধরে শরীরের অবয়ব সুন্দর রাখে। অস্বস্তিও তৈরি করে না একদমই। স্কিনি ডেনিম, ফরমাল প্যান্ট কিংবা স্কার্টের নিচে অনায়াসেই পরে নেওয়া যায় এগুলো। দেয় পারফেক্ট শেপ। রেক্টেঙ্গুলার, পিয়ার আর আওয়ার গ্লাস বডি শেপের জন্য থাই শেপার দারুণ অপশন।
কেনার আগে
কালো তো বটেই, অন্তত কয়েকটা ন্যুড শেডের শেপওয়্যার থাকা চাই সংগ্রহে। ত্বকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে। যা সব রঙের পোশাকের নিচে পরে নেওয়া যাবে
শেপওয়্যারের সাইজ বাছাইয়ের সময় সাবধান। শুধু লেবেল দেখে নিয়ে নিলেই বিপদ। বরং ট্রায়াল করে দেখে বেছে নেওয়া উচিত
ট্রায়াল দেওয়ার সময় লক্ষ রাখা উচিত, কোমর বেয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে কি না শেপওয়্যার। কিংবা হাতের নিচে ফেঁসে যাচ্ছে কি না। অনেক সময় পায়ের ফিটিংটাও ঠিকঠাক হয় না। সব ভালো করে দেখে নেওয়া উচিত
শরীরের প্রয়োজন বুঝে সঠিক অংশের জন্য বেছে নেওয়া চাই। কারণ, আলাদা অংশের জন্য আলাদা শেপওয়্যার কিন্তু মিলেই যায়
জাহেরা শিরীন
ছবি: ইন্টারনেট