সঙ্গানুষঙ্গ I মিশ্র প্রতিক্রিয়া
ম্যাচি-ম্যাচি নয়, বরং একেবারেই মেলে না, এটাই এবার ট্রেন্ড। সে আবার হয় নাকি!
গোল্ড জুয়েলারির সঙ্গে সিলভার জুয়েলারি মিলিয়ে পরা যায় না—প্রচলিত অসংখ্য স্টাইলিং মিথের মধ্যে এটি একটি। আর এসব প্রথা পেছনে ফেলে এ বছর মিক্সড মেটাল জুয়েলারি হয়ে উঠছে ট্রেন্ডি। জুয়েলারি খুবই ব্যক্তিগত একটা ব্যাপার। পছন্দ কিংবা পরার স্টাইলে ভিন্নতা দেখা যায় ব্যক্তিভেদে। এ ক্ষেত্রে কোনো গৎবাঁধা নিয়ম মেনে চলাটা একটু কঠিন। তাই জুয়েলারি স্টাইল যা-ই হোক না কেন, একে কখনো ভুল বলা চলে না। চাইলে ভিন্ন ধরনের মেটালে তৈরি জুয়েলারি একসঙ্গে পরা যায়, এমনকি একই জুয়েলারিতেও করা যায় ভিন্ন মেটালের মিশেল।
সম্প্রতি বোটেগা ভেনেটা এবং জিল স্যান্ডারের মতো ডিজাইনাররা তাদের রানওয়েতে মডেলদের মিক্সড মেটালের জুয়েলারি পরিয়ে হাঁটিয়েছেন। কেউ ভিন্ন ভিন্ন লেয়ারে গোল্ড আর সিলভারের চেইন পরেছেন, আবার কাউকে দেখা গেছে এক কানে গোল্ডেন, আরেক কানে সিলভার দুল পরতে। একই সময়ে বেন-আমুন, স্টেফানি গটলিব কিংবা কার্বন অ্যান্ড হাইডের মতো গয়না প্রস্তুতকারকেরাও মিক্সড মেটাল জুয়েলারি নিয়ে কাজ করছেন। তারকারাও গা ভাসাচ্ছেন এই ট্রেন্ডে। দুয়া লিপা এবং রোজি হান্টিংটনের মতো তারকারা অহরহ শামিল হচ্ছেন জুয়েলারির এই মিক্সড অ্যান্ড ম্যাচ ট্রেন্ডে। তবে এই স্টাইলিংয়ের সময় কিছু জিনিস মাথায় রাখা প্রয়োজন। যেকোনো আউটফিটের সঙ্গে মানিয়ে যাওয়ার জন্য।
যথাস্থানে
গয়না পরিধানের চারটি প্রধান অঙ্গ হলো গলা, কবজি, কান ও আঙুল। প্রথমবার মিক্সড মেটাল জুয়েলারি ট্রেন্ড ট্রাই করার জন্য যেকোনো একটি অঙ্গ নির্ধারণ করে নেওয়া যায়। এতে স্টাইলিংয়ের কাজটা সহজ হবে। জুয়েলারির সুষম বিন্যাস হবে এবং বোঝা যাবে যে এই মিক্সড অ্যান্ড ম্যাচটি ইচ্ছাকৃত। তবে এর মানে এই নয়, এক জায়গায় মিক্সড মেটাল জুয়েলারি পরলে অন্য জায়গায় এটা পরা যাবে না। তবে খুব ভারী লেয়ারিং করলে সেটা এক জায়গায় সীমাবদ্ধ করাই শ্রেয়। ধরা যাক, যদি বেশ কয়েকটি ভিন্ন টোনের নেকলেস একসঙ্গে পরা হয়, তাহলে সঙ্গে একটা ব্রেসলেট আর একটা আংটি পরা যায়, যেটা নেকলেসগুলোর যেকোনো একটা শেডের সঙ্গে মানানসই হবে।
মূলমন্ত্র
কোন মেটালের সঙ্গে কোনটা মানানসই, কিংবা কোন জুয়েলারি পিসের সঙ্গে অন্য কোন জুয়েলারিটা ভালো দেখাবে—এসব নিয়ে নিজে মাথা না ঘামিয়ে এই ভারটা জুয়েলারদের ওপর ছেড়ে দেওয়া যায়। বর্তমানে অনেক ব্র্যান্ডের জুয়েলারি প্রস্তুতকারক কাজ করছেন মিক্সড মেটাল জুয়েলারি নিয়ে, যেগুলো সুনিপুণভাবে দুটি মেটালের মিশ্রণে তৈরি করা হয়। এসব কালেকশন থেকে এমন জুয়েলারি বেছে নেওয়া যেতে পারে, যা স্টাইল স্টেটমেন্টের সঙ্গে যায় কিংবা পোশাকের সঙ্গে মানানসই। যেমন একটি নেকলেস, যার সঙ্গে থাকা পেন্ডেন্টটি এর চেইনের রঙের বিপরীত। অথবা এমন একটি আংটি, যা ইন্টারটুইন কিংবা কয়েক শেডের চেইন একত্র করে তৈরি একটি ব্রেসলেট। শুধু শুধু কেনই-বা দুটি চেইন গলায় পরতে হবে, যদি একই চেইনে গোল্ড আর সিলভারের সংমিশ্রণ থাকে। বেন-আমুনের টু-টোনড গোল্ড প্লেটেড চেইন নেকলেস এমনই একটি জুয়েলারির উদাহরণ। শিকলের মতো এই চেইনের অর্ধেকটা গোল্ডেন আর অর্ধেকটা সিলভার। এলিগিয়েরির লা কলিসন নেকলেসও মিক্সড মেটাল জুয়েলারির দারুণ নিদর্শন। এতে সিলভার চেইনের সঙ্গে একটি বড় গোল সিলভার পেন্ডেন্ট আর একটি ছোট গোল্ড পেন্ডেন্ট রয়েছে। বেন-আমুনের মতোই ভিন্ন ডিজাইনের ডাবল টোনড নেকলেস তৈরি করছে বোটেগা ভেনেটা আর মিসোমার মতো বড় জুয়েলারি ব্র্যান্ডগুলো। স্পিনেলি কিলকোলিনের ইন্টারলকড মিনিমালিস্ট থ্রি লিংকড ব্যান্ড হতে পারে ফ্যাশনিস্তাদের আঙুলের জন্য যথার্থ। একইভাবে মিশেলের আইকনিক এবং বিল্ট টু লাস্ট টু-টোনড ঘড়িটি মানিয়ে যাবে যেকোনো জুয়েলারি পিসের সঙ্গে।
সাজানোর সময়
কয়েক স্তরে সাজিয়ে এবং একটার সঙ্গে আরেকটা জুয়েলারি মিলিয়ে পরাটাও শিল্পকর্মের শামিল। একাধিক টেক্সচার আর উপকরণ মানানসইভাবে মেলানোই এর মূল চাবিকাঠি। একই সঙ্গে খুব বেশি ভারী, চকচকে কিংবা দামি জুয়েলারি পরে ফেললে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই বেছে নিতে হবে নিপুণভাবে। যেমন হোয়াইট গোল্ডের সঙ্গে ইয়েলো গোল্ড অথবা রোজগোল্ড মিলিয়ে পরা যায়। যদি তিনটি শেডই একসঙ্গে পরা হয়, তখন অতিরিক্ত মনে হতে পারে। নেকলেসের ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া যায় চিকন কিন্তু ডিটেইলড জুয়েলারি। উদাহরণস্বরূপ এমন তিনটি চেইন একসঙ্গে পরা যায়, যার একটিতে রয়েছে একটা বড় পেনডেন্ট, অন্যটিতে ছোট ছোট কিছু স্টোন বা ডায়মন্ড, আর আরেকটি প্লেইন চেইন। কোনটা কোন দৈর্ঘ্যে ভালো দেখায়, সেটা কয়েকবার এদিক-সেদিক করে পরে দেখা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে আউটফিটের নেকলাইন কেমন, তা অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। কানে পরা যেতে পারে একটা করে ছোট গোল্ডেন আর সিলভার হুপ, কানে ফুটো একটাই থাকলে পরা যেতে পারে ইয়ারকাফ।
ব্যাকরণ মেনে
মিক্সড মেটাল জুয়েলারি পরার আরেকটি উপায় হলো একই স্থানে টু-টোনড জুয়েলারি না পরে সব জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া। অর্থাৎ একটা প্লেইন সাদা কিংবা কালো আউটফিটের সঙ্গে কানে পরা যায় একই ডিজাইনের দুটি ভিন্ন মেটালের দুল। হতে পারে ডান কানে গোল্ড আর বাম কানে সিলভার। এর সঙ্গে মিলিয়ে ডান হাতে পরা যায় মোটা গোল্ড চুড়ি বা ব্রেসলেট। একই ডিজাইনে সিলভার জুয়েলারি থাকতে পারে বাম হাতে। এ মৌসুমের ফ্যাশন উইকগুলোর রানওয়েতে এ ধরনের মিক্সড অ্যান্ড ম্যাচ দেখা গেছে অনেক।
যোগ্যসঙ্গত
গোল্ড, সিলভার কিংবা ইয়েলো গোল্ড, হোয়াইট গোল্ড, রোজগোল্ড—স্তর করে পরা ছাড়াও এগুলোর সঙ্গে রঙিন সব জুয়েলারি মিলিয়ে পরা যায়। ঝকঝকে ডায়মন্ড কিংবা নিয়ন ও চকচকে এনামেল বিডস—মনোযোগ আকর্ষণে এগুলো খুবই কার্যকর। লুক তৈরিতে বেছে নেওয়া যায় এমন সব জুয়েলারি, যাতে মেটালের উপস্থিতি খুব বেশি বোঝা যায় না। হতে পারে অ্যানগেজমেন্টের আংটি, টেনিস ব্রেসলেট কিংবা একটি সলিটেয়ার ডায়মন্ড পিস। বেয়া বনগিয়াস্কার মতো জুয়েলারি ডিজাইনাররা এখন রঙিন টেনড্রিল রিং নিয়ে কাজ করছেন। এ ছাড়া হোয়াইট গোল্ড আর লুরেক্স মাল্টি স্টোনের মিশেলে তৈরি ব্রেসলেটও হয়ে উঠছে জনপ্রিয়।
মিক্সড মেটাল জুয়েলারি আর নিজের পছন্দ ও ব্যক্তিত্বের মধ্যে খাপ খাওয়ানো খুব সহজ কাজ নয়। তবে একটু সময় নিয়ে নিরীক্ষা করলেই মিলবে নিজস্ব জুয়েলারি স্টেটমেন্ট।
i শিরীন অন্যা
মডেল: বৃষ্টি
মেকওভার: পারসোনা
জুয়েলারি: রঙবতী
ছবি: হাদী উদ্দীন