ফিচার I পরার আগের প্রস্তুতি
নতুন কাপড়ের ক্ষেত্রে তা হওয়া চাই আরও জোরদার। ক্ষতিকর রাসায়নিকের অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন থেকে ত্বক রক্ষায়
নতুন পোশাক পরতে কার না ভালো লাগে! উজ্জ্বল রং, কাপড়ের নিপাট ভাঁজ আর নিখুঁত কাজের পোশাকগুলো দেখায় একদম পারফেক্ট। তাই কিনে আনার পর শুরুতেই এটি ধুয়ে নেওয়ার চিন্তা সাধারণত কারও মাথায় আসার কথা নয়।
স্বাভাবিকভাবেই পোশাক নতুন বলে ধরেই নেওয়া হয়, এগুলো পরিষ্কার। কিন্তু মনে রাখা জরুরি, এটি কোনো দোকান থেকে কেনা হলে সম্ভাবনা রয়েছে যে একাধিক মানুষ এটা আগে ট্রায়াল দিয়েছেন। দরজির কাছ থেকে জামা বানিয়ে আনলেও মাথায় রাখা চাই, এই পুরো প্রক্রিয়ায় দরজি এবং তার কারিগরেরা কোথায় এই কাপড় রেখেছেন কিংবা কতটুকু পরিষ্কার হাতে নিয়ে কাজ করেছিলেন, ব্যাপারটা কিন্তু অজানা। তাই নতুন পোশাক কিনে আনার পর তা পরার ব্যাপারে হওয়া চাই সচেতন। সে ক্ষেত্রে নতুন পোশাক পরার আগে প্রথমেই তা ধুয়ে নেওয়া উচিত। আরও কিছু কারণ রয়েছে।
বাড়তি রং অপসারণ
নতুন জামাকাপড় ধোয়ার মূল কারণ হলো, এতে থাকা অতিরিক্ত রঞ্জক পদার্থ কিংবা ডাই ধুয়ে ফেলা, যা খুব সহজেই ত্বকে বা অন্যান্য পোশাকে স্থানান্তরিত হতে পারে। পলিয়েস্টার বা অ্যাক্রিলিকের মতো সিনথেটিক ফাইবার থেকে তৈরি বেশির ভাগ কাপড়ই অ্যাজো-অ্যানিলিন ডাই দিয়ে রঙিন করা হয়। এগুলো মানুষের ত্বকে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের, যাদের এই ডাইগুলোতে অ্যালার্জি রয়েছে। এ ছাড়া এগুলো ত্বকে শুষ্ক, চুলকানিযুক্ত স্ফীত দাগ সৃষ্টি করতে পারে।
রাসায়নিক নিষ্কাশন
নতুন পোশাকে প্রায়ই দাগ নিরোধক, কালার ফাস্টেনার, অ্যান্টি-রিঙ্কেল এজেন্ট, কোমলতা বৃদ্ধিকারী এবং আরও নানা ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যা ত্বকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে। বেশির ভাগ টেক্সটাইল কোম্পানি বিভিন্ন কাপড়ের টেক্সচার বাড়াতে এবং পোশাকের কুঁচকে থাকা কমাতে ইউরিয়া-ফরমালডিহাইড ব্যবহার করে। এ ধরনের রাসায়নিক সংবেদনশীল ত্বকে প্রতিক্রিয়া ঘটানোর পাশাপাশি গুরুতর হলে র্যাশে রূপান্তরিত হতে পারে। নতুন কাপড় ধুয়ে না পরলে ডাইগুলো ত্বকে অ্যালার্জিক কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিসের সৃষ্টি করতে পারে, যা ত্বকে অ্যালার্জি কিংবা র্যাশের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যা এক-দুই সপ্তাহ অব্দি স্থায়ী হতে পারে। আইন অনুযায়ী পোশাক প্রস্তুতকারকেরা গ্রাহকদের কাছে পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত কোনো রাসায়নিক বা প্রক্রিয়ার খোলাসা করতে বাধ্য নন, এমনকি এই প্রক্রিয়া কিংবা উপকরণের ব্যবহার কতটা স্বাস্থ্যসম্মত, তা নিয়ে গবেষণাও নেই। তাই ঝুঁকি এড়াতে চাইলে শুরুতেই একবার পোশাক ধুয়ে পরলে ত্বক এ ধরনের রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া থেকে বাঁচবে।
জীবাণু ও ছত্রাক অপসারণ
সব রেডিমেড কাপড়ই ট্রায়াল করে কেনা হয়। ফলে এক পোশাক অনেকেরই পরা হয়। এ ছাড়া প্রতিদিন অসংখ্যবার ধরা হয় সে পোশাক। এতে খুব সহজেই যে কারও শরীরের খোসপাঁচড়া, জীবাণু, ছত্রাক এমনকি উকুনও কাপড়ের মাধ্যমে আরেকজনের শরীরে স্থানান্তরিত হতে পারে। ড্রেসিং রুমের এই ভাইরাস খুব সহজে শরীর কিংবা অন্যান্য পোশাককে তাদের প্রজননক্ষেত্র বানাতে পারে।
অধিকাংশ নতুন পোশাকে কেয়ার ট্যাগ থাকে এবং তাতে কাপড়ের ধরন ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কাপড় ধোয়ার এবং ব্যবহার করার নির্দেশনা থাকে। যেমন ‘পরার আগে আলাদাভাবে ধুয়ে ফেলুন’, ‘রঞ্জক স্থানান্তর থেকে সতর্ক থাকুন’, ‘ওয়াশিং মেশিনে ধোবেন না’ ইত্যাদি। তাই কেনার পর যেকোনো কাপড় ধোয়ার আগে এর কেয়ার ট্যাগ পড়ে নিতে হবে। কাপড় শুরুতেই ধুয়ে নিলে অতিরিক্ত ডাই সরিয়ে ফেলা যায় সহজে। প্রতিবার কাপড় ধোয়ার পর যতক্ষণ পানিতে রং দেখা যাবে, ততক্ষণ বারবার পানি পাল্টে ধোয়ার প্রক্রিয়া চালানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সব কাপড় আলাদা কিংবা একই রঙের কাপড় একসঙ্গে ধুয়ে নেওয়া যায়। কোভিডের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে কাপড় জীবাণুমুক্ত করার ব্যাপারে সচেতনতা বেড়েছে। পোশাকের ভেতরে ভাইরাস অনেক বেশি সময় ধরে বেঁচে থাকে। তাই জীবাণুমুক্ত করতে গরম পানি দিয়ে নতুন কাপড় ধুয়ে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রেও কাপড়ের কেয়ার ট্যাগ দেখা জরুরি; কারণ, অনেক কাপড় অতিরিক্ত গরম পানির সংস্পর্শে নষ্ট হয়ে যায় কিংবা আসল রং হারায়।
আরেকটি উপায়ে কাপড়গুলো জীবাণুমুক্ত করা যায়। ইউভি রশ্মি জীবাণুনাশক হিসেবে খুবই কার্যকর, আর এই রশ্মি সবচেয়ে বেশি রয়েছে সূর্যে। তাই নতুন কাপড়গুলো ধুয়ে খুব কড়া রোদে ঘণ্টাখানেক শুকিয়ে নিতে হবে। এভাবে বাড়তি ঝামেলা ছাড়াই কাপড় জীবাণুমুক্ত হয়ে যাবে। জামাকাপড়ের কেয়ার ট্যাগে ড্রাই ক্লিনিংয়ের পরামর্শ দেওয়া থাকলে পানিতে না ধুয়ে শুধু রোদে শুকালেও চলবে।
শুধু জামাকাপড় নয়, সতর্ক হতে হবে বিছানার নতুন চাদর কিংবা তোয়ালে ব্যবহারেও। কারণ, এগুলো সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে আসে। কাপড় তৈরির প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা রাসায়নিকগুলো সরিয়ে ফেলতে খুব ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে ব্যবহারের আগে। এতে কাপড়ের তন্তুর আলগা আবরণ সরে যাবে এবং এর শোষণক্ষমতা বাড়বে। পোশাকের রাসায়নিক কিছুটা হলেও এড়াতে জৈব প্রক্রিয়ায় তৈরি প্রাকৃতিক ফাইবার সমৃদ্ধ কাপড় বেছে নেওয়া যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রেও কাপড়ের কেয়ার লেবেলগুলো পড়া জরুরি। কারণ, সব সুতি কিংবা লিনেন কাপড় এক প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় না। নতুনের পাশাপাশি সেকেন্ড হ্যান্ড কাপড়ও ব্যবহারের আগে ভালো করে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করা দরকার। পুরো প্রক্রিয়া শেষে পছন্দের পারফিউম কাপড়ে স্প্রে করা যেতে পারে। এতে কাপড়টি খুব বেশি নতুন কিংবা খুব বেশি পুরোনো মনে হবে না।
i শিরীন অন্যা
মডেল: প্রমা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: আইকনিক
ছবি: হাদী উদ্দীন