ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I কোস্টাল কাউগার্ল
ক্ল্যাসিক কাউবয় অ্যাসথেটিকে লেগেছে বেলাভূমির বাতাস। হ্যাপাহীন ভাইরাল ট্রেন্ড। সালট্রি স্টাইলিশ লুকের জন্য
আজকাল কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই টিকটকে চলে আসে একেকটি নতুন ট্রেন্ড। আবার একইভাবে উধাও হয়ে যায় নিমেষেই। চোখের পলকে ফ্যাশনিস্তাদের মস্তিষ্ক ও মানিব্যাগ চলে যায় সেটির দখলে। কিন্তু সম্প্রতি এমন এক ট্রেন্ড চলছে, যেটির টিকে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কথা হচ্ছে কোস্টাল কাউগার্ল অ্যাসথেটিক নিয়ে। ধারণা করা হচ্ছে, আসছে বসন্তজুড়ে থাকবে এ ফ্যাশনের দাপট। কারণ, এর ভার্সাটাইলিটি বা বহুমুখী স্টাইল সেন্স। সিম্পলি ক্লোজেটে বা আলমারিতে এই মুহূর্তে যা যা আছে, সেই সব পোশাক দিয়েই চলতি এই ট্রেন্ডে শামিল হতে পারেন যে কেউ! আরাম, স্বাচ্ছন্দ্য ও স্টাইলের সমন্বয় এই ট্রেন্ড।
ধরা যাক, সমুদ্রপাড়ে বেড়াতে গেলে কোন ধরনের কাপড় ব্যাগে তোলা হবে, কী কী অনুষঙ্গ সঙ্গে মানাবে এবং কীভাবে স্টাইলিং করা হবে নিজেকে, মোটাদাগে সেটিই কোস্টাল কাউগার্ল অ্যাসথেটিক। হালকা রঙের, ঢিলেঢালা, নরম পোশাক, মোটা বেল্ট, ডেনিম প্যান্ট, বুট জুতা কিংবা ফ্লিপফ্লপ এবং অবশ্যই সঙ্গে বড় হ্যাট। গ্রীষ্মের উত্তপ্ত দুপুরে এ ধরনের পোশাক নিঃসন্দেহে আরাম দেবে, সঙ্গে ট্রেন্ডসেটার হয়ে ওঠা যাবে নিমিষেই। প্রতিটি ট্রেন্ডের সঙ্গে নিজেকে দ্রুত খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য রয়েছে বেশ কিছু ট্রিকস ও টিপস। যেমন ধরা যাক পোশাক। আরাম, তাপমাত্রা, সহজলভ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা, মূল্য, বিভিন্ন স্টাইলের সঙ্গে ব্যবহারের বিকল্প ও রিসাইকেলনেস মাথায় রাখলে সেই পোশাক সম্পদের মতো হয়ে উঠতে পারে। যেমন ক্লোজেটের হালকা রঙের ডেনিম প্যান্টটি। যেকোনো ধরনের টপসের সঙ্গে চোখ বন্ধ করে পরে বেরিয়ে পড়া যায়। অফিস কিংবা ভ্রমণ, সমুদ্র কিংবা পাহাড়—ডেনিমের জুড়ি নেই। এ জন্য কোস্টাল কাউগার্ল স্টাইলেও নিঃসন্দেহে থাকছে ডেনিমের উপস্থিতি।
আবার ধরা যাক সাদা টি-শার্ট। প্যালেটে যে রংই বেছে নেওয়া হোক না কেন, সবকিছুর সঙ্গে মানানসই। এ জন্য বাড়তি কোনো চিন্তা করতে হবে না; দরকার পড়বে না ফ্যাশন রিসার্চেরও। জিজি হাদিদ কিংবা দীপিকা পাড়ুকোন—তারকারা দৈনন্দিন পোশাক নির্বাচনে সবার আগে গুরুত্ব দেন কমফোর্টকে। এ জন্য তাদের গো টু লুকই হচ্ছে কোস্টাল কাউগার্ল অ্যাসথেটিক। এয়ারপোর্ট লুক টু গ্রোসারি, ওশেন টু হিলস—সবখানেই একদম পারফেক্ট এই লুক। উদাহরণস্বরূপ, সমুদ্রে একটি ফ্লোরাল বা স্ট্রাইপ ফ্রক, সঙ্গে ফ্লিপফ্লপ আর মাথায় রাউন্ড হ্যাট পরে নিলে তাতেই সি লুকটি কমপ্লিট হয়ে যাচ্ছে। আবার পিকনিক কিংবা ছুটির দিনে সেই একই ফ্লোরাল ফ্রক পরে, ওপরে জাস্ট চাপিয়ে নেওয়া যেতে পারে কোনো জ্যাকেট। আর ফ্লিপফ্লপের জায়গায় বুট। ব্যস! লুক তৈরি! নতুন করে শপিং সারতে হবে না। তবে অবশ্যই এই প্রচণ্ড গরমে বাইরে বের হবার আগে ত্বক অনুযায়ী সানস্ক্রিন মাখতে ভুলে গেলে বিপদ। আবার, পাহাড়ে যাওয়ার সময় ডেনিমের সঙ্গে টি-শার্ট নেওয়া যায়। আর ক্লোজেটে থাকা লেদার কিংবা পিইউ জ্যাকেট হালকা ঠান্ডায় চাপিয়ে নেওয়া যায় গায়ে। অর্থাৎ হাতের কাছের অনুষঙ্গই হবে স্টাইলিংয়ের উপকরণ।
বিভিন্ন রকমের স্ট্র হ্যাট এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। গ্রীষ্মের উত্তপ্ত রোদ থেকে যেমন সুরক্ষা দেবে, তেমনি হয়ে ওঠা যাবে সবার চেয়ে আলাদা, স্টাইল আইকন। সঙ্গে থাকতে পারে জেন বারকিন ব্যাগ। কোস্টাল কাউগার্ল স্টাইলে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে আমেরিকান বিখ্যাত এই তারকাকে। সব জায়গায় তার সঙ্গে দেখা যেত পরিবেশবান্ধব স্ট্র ব্যাগ। নব্বইয়ে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই জেন বারকিন স্ট্র ব্যাগ। দেশীয় ব্র্যান্ডের মধ্যে বেণি-বুনন এবং আড়ংয়ে পাওয়া যাবে এ ধরনের ব্যাগ। বিশেষ করে বেণি-বুননের বেশ কিছু পরিবেশবান্ধব ব্যাগের নতুন ডিজাইনগুলো ইতিমধ্যে সাড়া ফেলেছে ফ্যাশন-সচেতনদের মাঝে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সমন্বয়ে দেশীয় ফ্যাশন হাব স্প্ল্যাশেও পাওয়া যাবে এমন অনেক ব্যাগ।
ট্রেন্ডি রোদচশমা সঙ্গে রাখতে ভোলা যাবে না! ব্র্যান্ডের চেয়ে কমফোর্ট বেশি জরুরি, তাই নিঃসংকোচে ব্যবহার করা যাবে আরামদায়ক, স্টাইলিশ গগলস। জুতায় ভিন্নতা আনা যেতে পারে নানাভাবে! কখনো ফ্লিপফ্লপ, কখনো বুট তো কখনো স্নিকার! মানানসই যেকোনো কিছুই চলবে এই অ্যাসথেটিকের সঙ্গে।
কোস্টাল কাউগার্ল স্টাইলে নিজেকে তৈরি করে নিতে তেমন বিশেষ অলংকারের প্রয়োজন নেই। তবে হ্যাঁ, ফ্রেন্ডশিপ ব্রেসলেট, আর্দি ইয়াররিংস, অ্যাংকলেট ইত্যাদি এ লুকের সঙ্গে বেশ মানানসই। লাইট কালারের নেইলপলিশ খুব মানিয়ে যায় এই স্টাইলে। চুল সাজানোর ক্ষেত্রেও কোনো যন্ত্রণা নেই; যেকোনো স্টাইলের পনিটেইল বা খোলা চুলও মানিয়ে যাবে। বোহো বা নোমাডিক প্যাটার্ন সমুদ্রের সঙ্গে বিশেষভাবে মানানসই। চাইলে ছুটির দিনগুলোতে নিজেকে সাজিয়ে নেওয়া যায় বোহিমিয়ান স্টাইলে। হয়ে ওঠা যায় কোস্টাল কাউগার্ল!
তাই দেরি না করে আলমারিতে তুলে কিংবা আউট অব স্টাইল ভেবে ফেলে রাখা পোশাকটিকে রোদের মুখ দেখানোর এখনই সময়। তবে অনেক দিন তুলে রাখা কাপড়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই একটু সাবধানতা জরুরি। কখনো কখনো দীর্ঘদিন একই ভাঁজে থাকলে কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। ভাঁজে দাগ পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে পরার আগে চেক করে নেওয়া চাই। কাপড়ে ছত্রাক আক্রমণও হতে পারে। তাই আলমারি থেকে বের করে খানিকক্ষণ রোদে দিতে হবে।
নাঈমা তাসনিম
ছবি: ইন্টারনেট