পোর্টফোলিও I গয়না গড়ার গুণিন
‘যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে’র মতো করেই এখন নারীরা গয়না পরেন; আবার গড়েনও। হীরা, জহরত, মণি, মুক্তার মতোই উজ্জ্বল তাদের কারিগরি। ফাস্ট ফ্যাশনের সম্পূর্ণ বিপরীত। সৃজনশীলতার মনোযোগী ধ্যানে আবিষ্ট। আমাদের দেশও পিছিয়ে নেই এই গল্পে। সেখানে প্রবল প্রতাপে রাজত্ব করছেন নারীরা
মডেল: বুশরা, লিন্ডা, মৃদুলা ও মাইশা
মেকওভার : পারসোনা
স্টাইলিং: নুজহাত খান
ফেসিলিটেটর: নুসরাত শ্রাবণী
ছবি: সালেক বিন তাহের
নাঈমা তাহসিন আর ফাহমিনা ইব্রাহিম, রঙবতী
চোখের বালি উপন্যাসে বড্ড রংহীন বিনোদিনী। সে বিদুষী, সে অপরূপা অথচ স্বামী হারিয়ে সকল সুন্দরতাকে সরিয়ে রেখেছে দূরে। এ চরিত্রকেই গয়নায় সাজাতে চান মনের মতো করে। তার মাথাজুড়ে থাকবে টায়রা আর হাতে থাকবে বাজু। জীবন যদি কাটাতেই হয় একটি গয়নায়, তাহলে সেটা হবে জেমস্টোন বসানো একটি আংটি। এবারের ট্রেন্ডে ফিউশন দাপিয়ে বেড়াবে বলে মনে করেন। পুরোনোর সঙ্গে নতুনের ঐকতানে রচিত হবে অলংকার অধ্যায়। নিজের কাজকে তিন শব্দে বেছে নিলেন। সূক্ষ্ম, হাতে তৈরি আর আনকোরা। প্রাচীন রোম আর এট্রুস্কান সভ্যতার গয়না ফিরিয়ে আনতে চান সুযোগ পেলে।
তন্বী কবির, ক্যানভাস
সুন্দরবনের বনবিবি দারুণ পছন্দ। তার জন্য গড়তে চান মুকুট। সূর্য, ম্যানগ্রোভ, বাঘ-হরিণ, নদীর ঢেউ আর নৌকায় বনের স্নেহ আর আশ্রয় বিকশিত হবে সেখানে। পুরো জীবন যদি কাটাতে হয় একটিমাত্র গয়নায়, তবে শুধু বিয়ের আংটিই সঙ্গী। এ বছর পৃথিবী প্রকৃতিপ্রাণিত গয়নার প্রেমে বুঁদ থাকবে বলে মনে করেন। ব্রাস আর বাকি সব টেকসই ধাতু হতে পারে জনপ্রিয়। এর বাইরে বডি জুয়েলারি থাকবে স্টেটমেন্ট পিস হয়ে। বডি চেইন, আর্ম পিসে মন বসবে বেশ। ঐতিহ্যবাহী, টেকসই আর ফিউশন—এই তিনে নিজের কাজকে খুঁজে পান। ফেলে আসা দিন থেকে ফেরত আনতে চান নাকঠাসা।
মেহনাজ আহমেদ, গ্লুড টুগেদার
প্রিয় ফিকশনাল ক্যারেক্টার ব্যাটম্যান। এর জন্য গয়না বানানোর সুযোগ পেলে দারুণ এক বর্ম বানাতে চান। যেখানে অলংকরণে দেখা যাবে নন্দনতত্ত্ব। বাকি জীবন শুধু একটি গয়না পরে কাটানোর সুযোগ পেলে বেছে নিতে চান আংটি। বার্থস্টোন অ্যামিথিস্ট থাকবে সেখানে। বছরজুড়ে নিত্যদিনের গয়নায় মিনিমাল নকশা আর বিশেষ উপলক্ষে ফিউশন মাতাবে বলে মনে করেন। যেখানে থাকতে পারে মোগল সাম্রাজ্যের নকশা আর আনকাট জেমসের উপস্থিতি। তিনটি শব্দে নিজের কাজকে প্রকাশ করলে বেছে নেবেন টাইমলেস, কালেক্টেবেল আর ভার্সাটাইল। পুরোনো দিনের গয়নার সিন্দুক থেকে ফিরিয়ে আনতে চান বাংলার সনাতন নকশায় গড়ানো অলংকারগুলো।
মাধুরী সঞ্চিতা স্মৃতি, ঋ
কেট মিডলটনের ফ্যান। সবার কাছে ব্রিটিশ রাজবধূ হলেও সঞ্চিতার কাছে স্বপ্নের নায়িকা। তার জন্য একটা কালো বা বার্নসিয়েনা রঙের বীজের পেন্ডেন্ট ও ছোট্ট ইয়ার রিং নকশা করতে চান তিনি। জীবনের বাকি সময় শুধু একটি জুয়েলারিতে কাটাতে হলে ‘স্মৃতি’ নামের পেন্ডেন্টই সই। ফ্যাশন ব্র্যান্ড যাত্রার জন্য গোল্ড ও ছোট্ট একটা রুদ্রাক্ষ দিয়ে এটির নকশা করেছিলেন তিনি। এ বছর সমকালীনের সঙ্গে ঐতিহ্য মিশে যাবে বলে ধারণা করেন। কানের দুলে আনইভেন নকশা আর নেকলেসগুলো লেয়ার যুক্ত হতে পারে বলে জানান। তিন শব্দে নিজের কাজকে বর্ণনা করলে বেছে নেবেন সিম্পল, ইমোশনাল আর ন্যাচারাল। অতীত থেকে ফিরিয়ে আনতে চান ঠোকাই আর তারের কাজ।
তাহমিনা শৈলী, শৈলী
গল্পের নয়, বাস্তবের চরিত্র গয়নায় সাজাতে চান। কখনো ইচ্ছা করে প্রিয় কারও জন্য গড়ে দিতে। একদম আনকোরা কিছুতে সাজিয়ে তুলতে। কখনো ইচ্ছা কফি শপে একলা বসে থাকা মেয়েটার জন্য গয়না তৈরির। যে ভীষণ মিনিমালিস্টিক। অলংকারের বালাই নেই বললেই চলে—তেমন কারও জন্য গয়না বানাতে। সারা জীবন যদি একটিমাত্র গয়না পরেই কাটাতে হয়, তবে চোকারই হবে প্রথম পছন্দ। মিক্সড মেটাল এবার ইন ট্রেন্ডে থাকবে বলে মনে করেন। তিনটি শব্দে নিজের এই সৃষ্টিশীলতাকে প্রকাশ করলে সেখানে থাকবে ফাংশনাল, স্টাইলিশ আর আরবান। পুরোনো দিন থেকে জুয়েলারি ট্রেন্ড ফিরিয়ে আনা গেলে আদিকালের মুসলিম বিয়ের ভারী গয়না নিয়ে আসবেন।
লোরা খান, সিক্স ইয়ার্ড স্টোরি
মহাভারতের অনিন্দ্যসুন্দরী দ্রৌপদী। যার গয়নার জৌলুশ শিল্পীর কল্পনায় এসেছে বারবার, সুযোগ পেলে তাকে সাজাতে চান পদ্ম ফুলের রাজকীয় গয়নায়। আর ব্যক্তিগত জীবনে ‘যদিদং হৃদয়ং মম’ মন্ত্রে বিশ্বাস রেখে পুরোটা জীবন কাটাতে চান বিয়ের আংটি পরে। এ বছরের ট্রেন্ডে চাংকি জুয়েলারি জেল্লা দেখাবে বলে তার ধারণা। লহরে লহরে দেখা যেতে পারে চেইন। সঙ্গে নানান রকম পাথরের জৌলুশ। ট্র্যাডিশনাল, ক্ল্যাসিক আর নস্টালজিক—এই তিন শব্দে নিজের শত কাজকে খুঁজে পান। সুযোগ পেলে অতীত থেকে খুঁজে আনতে চান রাজমহলের গয়নার বাক্সের পুরোটা। রাজা-রানি-রাজকন্যার মতো করে হীরা, জহরতে সাজাতে চান সবাইকে।