সম্পাদকীয়
ক্যালেন্ডারে একই রকম হলেও পৃথিবীর আর সব দেশের তুলনায় বাংলাদেশের ফেব্রুয়ারিটা মাস হিসেবে ভিন্ন। ত্যাগ ও অর্জন, শোক ও আনন্দ, প্রেম ও উৎসব এই কটা দিন আমাদের অনুভবে এবং উদ্যাপনে মিলেমিশে থাকে। বারবার মনে করিয়ে দেয় বাঙালির সংগ্রাম ও গৌরবের ইতিহাস। রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র শিল্প-সংস্কৃতির কতো যে আয়োজন- দেখে, শুনে ও জেনে অবাক হতে হয়। ভাষাশহীদের স্মারক অমর একুশে গ্রন্থমেলা চলে মাসজুড়ে। এরই ফাঁকে বেশ ক’বছর ধরে উদ্যাপিত হচ্ছে ভ্যালেন্টাইনস ডে। আমরা নিজেদের মতো করে এর নাম দিয়েছি ভালোবাসা দিবস। বৈশ্বিক সংস্কৃতির এই উপাদান আমরা এমনভাবে নিয়েছি, যাতে প্রেম ধারণ করে সবকিছু। আমরা বিশ্বাস করি, বিশুদ্ধ প্রেমে কল্যাণকর সবই সম্ভব। বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন গভীর প্রেম ও মানবিক আত্মনিবেদনের ফসল।
বাঙালির এই কৃতিত্বের প্রতি সম্মান জানিয়ে ক্যানভাসের বর্তমান সংখ্যার মূল প্রতিপাদ্য ভাষা নিয়েই। এ ক্ষেত্রে সমকালীন বিষয়-আশয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যেমন এবারের কভারস্টোরি ‘বিজ্ঞাপনের ভাষা’। পরিপূরক একটি সাইডস্টোরিও আছে এ নিয়ে। তা ছাড়া পাক-ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন ভাষার অধিকার আদায়ের আন্দোলন নিয়ে বেশ কৌতূহলোদ্দীপক ও বিশ্বস্ত একটি নিবন্ধ রয়েছে এ সংখ্যায়। অন্যান্য নিয়মিত ও বিশেষ আয়োজন তো থাকছেই।
ক্যানভাসের গত সংখ্যা ও বর্তমান সংখ্যা প্রকাশসময়ের মধ্যে বেশ কজন বিশিষ্ট গুণীজনকে আমরা হারিয়েছি। এঁরা হলেন কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেন, কথাসাহিত্যিক অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরস্রষ্টা, গীতিকার ও মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। নিজ নিজ ক্ষেত্রে এঁদের অবদান বাঙালির সাংস্কৃতিক বিকাশে সাহায্য করেছে, জাতিকে ঋণী করে রেখেছে। গভীর শ্রদ্ধা জানাই এই কৃতীজনদের প্রতি।
ভাষাশহীদদের সালাম আর সবার প্রতি ভালোবাসা রইল।