কভারস্টোরি I বর্ষামঙ্গল
যত্নের জন্য যে জিনিসটির ওপর নির্ভর করছেন, সেটিরও যত্ন দরকার। লিখেছেন রুম্পা সৈয়দা ফারজানা জামান
নতুন প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ শুরু করেছেন সাবরীন খান। একেবারে নিজের মতো করে নিজের দপ্তর। কিন্তু শুধু দপ্তর নিয়ে সন্তুষ্ট হলে চলে না। আছে কত ধরনের মিটিং, প্রেজেন্টেশন, স্পিচ আর প্রয়োজনীয় ছোটাছুটি। এসব কিছুতে দরকার যথার্থ পোশাক! এখন চাই একটা লং কামিজ। আবার তখন পরতে হবে ঢিলেঢালা একটা শার্ট। জুতাটা ফ্লাটই ভালো, সারা দিন এদিক-সেদিক যাবার জন্য। কিন্তু ডিনার কাম মিটিংয়ে একটু হিল না হলে কি চলে?
কাজের এই সাগরে ঝাঁপ দেওয়ার আগে তাকে ঝাঁপ দিতে হলো আলমারি আর ক্লজেটের ওপর। সারা দিন কাটিয়ে দিল এই ভেবে, কী করে তার কাপড় আর অ্যাকসেসরিজের যত্ন নেওয়া যায়। তার আগে কী করে যত্নের যত্ন নেওয়া যায়। এর আবার অর্থ কী? অর্থ খুবই সাধারণ! ধরা যাক, কাপড় যত্নে রাখা হয় আলমিরাতে— আলমিরার যত্ন করে কে?
এ ছাড়া আছে আরও কত বিষয়! আসুন, একঝলকে পড়ে আসি, যতনকে যত্ন করার নানা গল্প!
আলমিরা বা ক্লজেট
এমন কোনো বাসা নেই, যেখানে আলমিরা নেই। কারণ, আলমিরা হলো ঘরের মধ্যে সেই ঘর, যা দেয় দুই পাল্লায় বাঁধা এক জগৎ। একটা তাকে থাকে শাড়ি! ঝোলানো অবস্থায় পাঞ্জাবি বা সুট। একটা ড্রয়ারে অন্তর্বাস কিংবা প্রয়োজনীয় চাবির গোছাটাই। মোদ্দা কথা, আলমিরার তাকে তাকে একটা মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে খুঁজে পাওয়া যায়। তাই আলমিরার যত্নটা করা চাই যত্নের সঙ্গে। যদি আলমিরা হয় কাঠের, তাহলে দেখে নিতে হবে সেটি কোন কাঠ। সে অনুযায়ী মাঝে মাঝে সব নামিয়ে খোলা হাওয়া লাগিয়ে নিতে পারলে বেশ ভালো হয়। কোনোভাবেই যেন কাঠ ভিজে না যায়। তাহলে ড্যাম্প হয়ে আলমিরা বা ক্লজেট বা ওয়ারড্রোব যা-ই হোক না কেন, কাপড়ের ক্ষতি হতে পারে। পারলে রোদে দেওয়া উত্তম। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করলে নানা রকমের পোকামাকড় হতে পারে। সে জন্য নিমপাতা শুকনো করে আলমিরাতে রেখে দেওয়া যেতে পারে। লালমরিচের গুঁড়াও রাখা যেতে পারে পুঁটলি করে। স্টিলের আসবাবে মরিচার বিষয়টা লক্ষ রাখতে হবে! মরিচা পড়লে তা ঘষে তোলার ব্যবস্থা করতে হবে।
আলমিরার ভেতরে কাপড় সুন্দর করে গুছিয়ে রাখার জন্য এখন বড় বড় প্লাস্টিকের কনটেইনার পাওয়া যায়। সেগুলো নিয়মিত বিরতিতে সাফ করে নিলে ভালো। প্লাস্টিকের গন্ধ যেন না হয়, এ জন্য নানা রকমের আর্টিফিশিয়াল ফ্লাওয়ার ফ্র্যাগরেন্স আছে। সেটা ব্যবহার করা যেতে পারে। কাপড় যেখানেই ভাঁজ করে রাখা হোক না কেন, ঝুড়ি বা আলমিরা, মাঝে মাঝে রোদে দেওয়া খুবই জরুরি।
আয়রন
কুঁচকে থাকা কাপড় দেখে সামনের মানুষটির ভ্রু কুঁচকাবেই। তা সে যতই আপনার উপস্থাপনায় মুগ্ধ হোন না কেন! তাই কাপড়ের যত্নে আয়রনের যেমন প্রয়োজন, তেমনই আয়রনের যত্নে দরকার আপনার ভালোবাসা। নিয়মিত তার ও বিদ্যুতের কানেকশন ঠিকমতো পাচ্ছে কি না, তা দেখা খুবই দরকার। আয়রনে সব ধরনের কাপড়ের জন্য আলাদা অপশন আছে। হিট করার সময় ঠিক ওই অপশনটাই তাক করুন, আপনার দরকার। কাজ শেষে অবশ্যই ঠান্ডা করে এমন জায়গায় আয়রন রাখতে হবে, যা শিশুর হাতের নাগালের বাইরে। কোনোভাবেই আয়রনে পানি ছিটিয়ে ঠান্ডা করা উচিত নয়। আর নিয়মিত শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে পরিষ্কার করতে হবে।
ওয়াশিং মেশিন
আধুনিক জীবনের স্বস্তি এবং গৃহকর্মীদের সঙ্গে অযথা কথা না বলা থেকে মুক্তি দেয় ওয়াশিং মেশিন। এক ক্লিকেই কাপড় পরিষ্কার। কিন্তু যত্ন নিতে হবে তারও। কয়টা কাপড় দিতে হবে, কতটুকু পানি লাগবে— সব বুঝে নিতে হবে মেশিন চালু করার আগেই। ম্যানুয়ালে সব লেখা থাকে। সেটা পড়ে নেওয়া জরুরি। ওয়াশিং মেশিনেও কাপড় অনুযায়ী অপশন আছে। তাই সেটাই হোক নির্দেশনা। সপ্তাহে অন্তত এক দিন টিউব ক্লিন করার অপশনটা ব্যবহার করা ভালো। মাঝে মাঝে দেখা যায়, লাইনের পানি নোংরা হয়, সে ক্ষেত্রে ওয়াশিং মেশিনে যেন ময়লা না জমে যায়, লক্ষ রাখতে হবে। প্রয়োজনে লিকুইড সাবান ব্যবহার করতে হবে।
এ তো গেল মোটা দাগে কাপড়ের যতনের যতন। কিন্তু আরও তো আছে অ্যাকসেসরিজের যত্ন। বিভিন্ন ম্যাটেরিয়ালে তৈরি গয়নার নানা রকম যত্ন। সে ক্ষেত্রে একেকটা আলাদা করে ঢাকনাযুক্ত বক্স নিয়ে তা মুছে টিস্যু দিয়ে পেঁচিয়ে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। অযাচিত গন্ধ বা ফাঙ্গাস দূর করার জন্য রোদ আর প্রাকৃতিক বাতাসে বাতাসে কিছুক্ষণ রেখে দেয়া ভালো।
গয়নার বাক্সগুলোও তাই। বিভিন্ন ডিজাইনের হয় এগুলো। খাঁজকাটা বা কাপড়ে তৈরি। তাই কোনোভাবেই তাতে ধুলো জমতে দেওয়া যাবে না। এগুলো যেহেতু চট করে ধুয়ে ফেলা যায় না, তাই সবার আগে ধুলোই ঝাড়তে হবে। তুলায় পরিষ্কারক নিয়ে ধীরে ধীরে ডিজাইন বরাবর মুছতে হবে। এবং সঙ্গে সঙ্গে শুকিয়ে ফেলতে হবে। না শুকিয়ে আলমারিবন্দি করা চলবে না।
জুতার ক্ষেত্রেও তেমনি। জুতা ধুয়ে রোদে শুকিয়ে রাখতে হবে র্যাকে। কিন্তু র্যাকেরও যত্নটা জরুরি। পাল্লা দেওয়া র্যাকের ভেতর গন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই কিছুদিন পরপর সব নামিয়ে ঝেড়েঝুড়ে আবার রাখা দরকার। প্রয়োজনে নিমপাতা, শুকনা ফুল দিয়ে রাখা যেতে পারে। মোজা কখনোই তুলে রাখা ঠিক নয় ধোয়া ছাড়া। তাহলে অস্বস্তিকর গন্ধটা বেশি হতে পারে।
কোনোভাবেই ভুলে গেলে চলবে না, প্রিয় জিনিসগুলো রাখছেন, তার কতটুকু যত্ন করতে পারছেন! কারণ, যত্নেই যত্ন বাড়ে! ঝকঝকে হয় রত্ন।
মডেল: ওশিন
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: শাড়ি ক্লাব
ছবি: সৈয়দ অয়ন ও ইন্টারনেট