ইভেন্ট I ঢাকা সামার রানওয়ে ২০১৯
গ্রীষ্মবান্ধব পোশাক নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ফ্যাশন শো। নয়জন ডিজাইনারের নকশায়
ব্যক্তির শৈলীগত স্বাচ্ছন্দ্য প্রকাশের পরিচিত মাধ্যম ফ্যাশন। পোশাক এর কেন্দ্রে। সঙ্গে থাকে জুতা, টুপি, বেল্টসহ আরও অনেক পরিধেয়। ঋতুর আবর্তন প্রভাব ফেলে পোশাকের ধরনে।
গরম, ঠান্ডা কিংবা বৃষ্টিতে বদলে যায় পোশাকের কাট-প্যাটার্ন। দেশ-বিদেশের ফ্যাশন ডিজাইনাররা তা মাথায় রেখেই কাপড়ে কাঁচি চালান। সেলাই বোনেন কাপড়ের খন্ডে খন্ডে। শুধু তা-ই নয়, ফ্যাশন এখন প্রতিবাদের ভাষাও।
কাপড়ের রঙ-নকশা বলে দেয়— গাছ কেটো না, সমুদ্র দূষিত কোরো না, মাদককে না বলো— এমন আরও অনেক কথা। নিজেদের সৃষ্টিশীলতা বিশ্ববাসীর সামনে হাজির করতে ডিজাইনাররা আয়োজন করেন ফ্যাশন শোর। ঋতুভিত্তিক ফ্যাশন শো চোখে পড়ে হরহামেশাই। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। এই যেমন ১৮ জুলাই নগরীতে অনুষ্ঠিত হলো একটি জমকালো ফ্যাশন শো।
‘ঢাকা সামার রানওয়ে ২০১৯’ নামের এই ইভেন্টের আয়োজন করে ফ্যাশন ব্র্যান্ড পানাশ। লা মেরিডিয়ানের লেভেল ১৬-তে। ৯ জন ফ্যাশন ডিজাইনারের পোশাক প্রদর্শন করা হয় শোতে। তারা হচ্ছেন শাহরুখ আমীন, রুখসানা ইশরার রুনি, আফসানা ফেরদৌসী, জাহানারা রহমান, রিমা নাজ, জুবাইদা আহবাব, রত্না গুলজার, তাসনুভা রশিদ ও মেহজাবিন মুস্তাফিজ সিমিলি।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন পানাশের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী সাবেরা আনোয়ার। তিনি এই ফ্যাশন শোর মূল উদ্যোক্তা। মডেলরা র্যাম্পে প্রথমে আসেন আফসানা ফেরদৌসীর কাপড় পরে। স্লোগানমুখর নকশাই ছিল আফসানার ডিজাইনের মূল বৈশিষ্ট্য। বিশ্ব উষ্ণায়ন, ধর্ষণ প্রতিরোধ, মাতৃভাষার কদর, বাঘ সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয় ফুটে উঠেছিল সাদার উপর নকশা করা জামাগুলোতে। প্রিমা নাজিয়া আন্দালিব ছিলেন আফসানার শো-স্টপার। এরপর আসে ফ্যাশন ডিজাইনার রুখসানা রুনির পালা।
ব্রাইডালওয়্যারে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। সিল্ক, মসলিন ও টিস্যু কাপড়ে করা নকশাগুলো দর্শকদের চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছে। তার কাপড়ের নকশায় ফ্রিল ও পার্লওয়ার্ক প্রাধান্য পেয়েছে। রঙ ছিল প্যাস্টেল। শাড়ি, কামিজ, স্কার্ট ও লং জ্যাকেট পরিহিত মডেলরা র্যাম্প মাতিয়ে দিয়েছেন। কিউ শেষে রুখসানার শো-স্টপার হিসেবে র্যাম্পে ওঠেন কণ্ঠশিল্পী শাকিলা জাফর।
ফ্লোরাল থিমের কাজ করেন রিমা নাজ। এবার সেই বলয় থেকে কিছুটা বেরিয়ে এসেছেন এই নকশাকার। কালার ফর সামার নিয়ে কাজ করেছেন। সাদা ও কালোর ওপর কালার ব্লক করা ডিজাইনে ছিল শিমার ও সিকুইনের কাজ। পরবর্তী কিউয়ে চমক নিয়ে আসেন শাহরুখ আমীন। এক্সপেরিমেন্টাল পোশাকে। তার ডিজাইন করা মেনজওয়্যারগুলো ছিল চেক প্যাটার্নের। ফরমাল ড্রেসের পাশাপাশি ছিল পাঞ্জাবি। সামার ফ্রেন্ডলি প্যাস্টেল কালার ও ফেব্রিক নিয়ে হাজির হয়েছিলেন জাহানারা রহমান। আভিজাত্যের সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন এমব্রয়ডারি, জারদৌসি, ফ্লোয়ি লং ড্রেস, লং জ্যাকেট ও স্কার্ট। শো-স্টপার হিসেবে র্যাম্পে তার সঙ্গী হন পারসোনার ম্যানেজিং ডিরেক্টর কানিজ আলমাস খান। এরপর শেডস অব রেইন থিমের পোশাক পরে র্যাম্পে এসেছেন রত্না গুলজারের মডেলরা। ফ্রিলড শাড়ি, লং ড্রেস ইত্যাদির ওপর এমব্রয়ডারি, পার্ল, লেইস ও ক্রোশের কাজ ছিল তার ডিজাইনের নজরকাড়া দিক। শো-স্টপার ছিলেন সংগীতা আহমেদ।
মেহজাবিন মুস্তাফিজ সিমিলির জেড অ্যান্ড জেডের পোশাক ছিল প্যাস্টেল-ঘেঁষা। তাতে পিংক ও গ্রিনের নজরকাড়া সব শেডের আধিক্য। ব্রোকেড, সিল্ক ও শিফনের ওপর ছিল জারদৌসি ও ফ্রিলের কাজ। এ ছাড়া ফ্রিলড বটমের কাজও দেখা গেছে। সেমি ফরমাল মডেস্ট কালেকশন উপস্থাপন করেন জুবাইদা আহবাব। নকশা করা পোশাকে এমব্রয়ডারি ও স্টোনের ব্যবহার করেছেন তিনি। তার শো-স্টপার ছিলেন করপোরেট ব্যক্তিত্ব মাহজাবিন ফেরদৌস স্বর্ণা। সামার বুকে থিমের পোশাক নকশা করেছেন ফ্যাশন ডিজাইনার তাসনুভা রশিদ। প্রেরণা নিয়েছেন স্থাপত্য ও প্রকৃতি থেকে। কাপড়গুলো ছিল ফ্লোয়িং, ব্রিজি। পিংক, ল্যাভেন্ডার ও সাদার শেডকে বেছে নিয়েছেন কাপড়ের রঙে। সিকুইন ওয়ার্কও দেখা গেছে। তার শো-স্টপার ছিলেন অভিনেত্রী সাদিয়া ইসলাম মৌ।
এই ইভেন্ট সম্পর্কে সাবেরা আনোয়ার বলেন, ‘পানাশ নিয়ে কাজ করছি ২০১৬ সাল থেকে। এর উদ্দেশ্য, বাংলাদেশে যারা অনলাইন বেজড অন্ট্রাপ্রেনর ডিজাইনার আছেন, তাদের জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। এ ভাবনা থেকেই আমরা বিভিন্ন ফ্যাশন এক্সিবিশন করেছি। করতে করতে আমার মনে হলো, যারা ভালো করছেন তাদের জন্য একটা বড় প্ল্যাটফর্ম দরকার। যাতে এক দিনের মধ্যেই আমি সবাইকে সবার সামনে নিয়ে আসতে পারি। সব সময়ই আমার ইচ্ছা ছিল যে আমি এটা করব। ফাইনালি আমি এটা করেছি। সামার রানওয়ে করার আরেকটা বড় কারণ হচ্ছে, আমাদের দেশে দীর্ঘ সময় ধরে গরমকাল চলে। দেশের জন্য ভালো সামার ড্রেস দরকার। এ চিন্তা থেকেই সামার রানওয়ে করা। প্রতিবছরই আমরা এটা করব।’
এই ফ্যাশন শোর মূল থিম ছিল ‘ওয়্যার দেশি, বি দেশি’। রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে ৯টি কিউর মাধ্যমে শো শেষ হয় রাত ১০টায়। কোরিওগ্রাফার ছিলেন শাহরুখ আমীন ও আসাদ খান। এ সময় ফ্যাশন অঙ্গনের গুণীজন ছাড়াও বিভিন্ন পেশার গণ্যমান্যরা উপস্থিত ছিলেন। আয়োজনের মেকআপ পার্টনার ছিল পারসোনা। মিডিয়া পার্টনার ক্যানভাস, দ্য ডেইলি স্টার, এনটিভি অনলাইন, একাত্তর টিভি এবং কালার্স এফএম। উপস্থাপনা করেন নেহরিন মুস্তাফা।
শিবলী আহমেদ
ছবি: ক্যানভাস