ফিচার I অদেখা ভুবনের আয়োজনে…
হ্যালোউইনের সাজ অনেকটাই ইচ্ছাপূরণের। যদিও এতে প্রভাব বিস্তার করে রহস্যময় জগতের প্রতি আকর্ষণ। ফলে এর সাজ অদ্ভুত এবং পোশাক বিচিত্র। লিখেছেন সারাহ্ দীনা
হ্যালোউইন মূলত পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি। শুরু হয়েছিল সমাহাইন নামে পরিচিত কেলটিক উৎসব হিসেবে।
অশুভ আত্মার উপাসনার উদ্দেশ্যে বিশেষ পোশাক এবং মুখোশ পরা হতো। মূলত এদিনে সেই জগতের ভাবনায় মশগুল থাকত সবাই, যার সঙ্গে আদতে কোনো যোগাযোগের নিদর্শন নেই। এ নিয়ে হাজারো তর্ক-বিতর্ক। হ্যালোউইনে বছরের পর বছর ধরে শিশুরা নিজেদের মতো করে সেজে আসছে। কেউ সুপারহিরো, কেউ পরী, কেউবা দৈত্য-দানো, ডাইনি বুড়ি, কেউবা শুধুই একটি কুমড়ো।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের অর্ধেকের বেশি মানুষ হ্যালোউইনে অংশ নেয়। উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে গ্রীষ্মের ফসল তোলার পর, শীত শুরুর আগে! এই আয়োজনে অন্য জগতের সত্তার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ পায়। রহস্যময় জগৎ সম্পর্কে মানুষের যে কল্পনা, তারই প্রকাশ ঘটে হ্যালোউইনে। অন্ধকারের প্রতি আকর্ষণবশত এদিনের সাজসজ্জায় কালোর আধিক্য লক্ষণীয়। কালোই এখানে আলো।
তবে যতই আনন্দ হোক না কেন, এদিনে থাকতে হবে সতর্ক। এই উৎসব ঘিরে রয়েছে কঠোর নিয়ম। হলিউড ও ক্যালিফোর্নিয়ায় রয়েছে জরিমানার ব্যবস্থা, যাতে আবেগের আতিশয্যে কেউ ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠতে না পারে।
যেকোনো উৎসবের বাণিজ্যিকীকরণ আজকাল রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে হ্যালোউইন ব্যবসায়িক কর্মকান্ডের বড় একটি উপলক্ষ। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যে ৯ বিলিয়ন এবং ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আনুমানিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক লেনদেন হয়েছে। অনুমান করা হয়, অংশগ্রহণকারী প্রতিজন গড়ে ৮৬ ডলার এই উৎসবে ব্যয় করে থাকেন। উৎসব উদযাপন মানেই নিজেকে এবং প্রিয়জনকে সাজিয়ে নেওয়া। হ্যালোউইনকে কেন্দ্র করে তাই নতুন নতুন ড্রেস লাইনের সংযোজন ঘটে। ফ্যান্টাসি দুনিয়ার চরিত্রের মতো করে তৈরি হওয়ার ইচ্ছায় এদিনের পোশাক হয় সম্পূর্ণ আলাদা। দিনটি ইচ্ছাপূরণের ভালো সুযোগ এনে দেয়। ‘যেমন খুশি তেমন সাজা’র স্মৃতি কতটা মনজুড়ে আছে, হ্যালোউইনের আয়োজন তার প্রমাণ। এ উপলক্ষে শপিংয়ের হিড়িক পড়ে যায়। বছরের শুরুতে এবং শেষে। অতি উৎসাহীরা আগেই কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নিদেনপক্ষে উইন্ড শপিং। কে কখন কেনাকাটা করেন, তার উপরে হয়েছে সার্ভে। সেখান থেকে পাওয়া যায় বেশ কিছু তথ্য। ৬ শতাংশ ক্রেতা সেপ্টেম্বরের আগে শুরু করেছে হ্যালোউইন উদযাপনের কেনাকাটা। হোক তা ফ্যান্সি ড্রেস, গিফট, ঘর সাজার উপকরণ অথবা চকলেট। ২৮ শতাংশ উৎসব উদযাপনকারী ক্রেতা সেপ্টেম্বরে তাদের হ্যালোউইন কেনাকাটা করেন। ৪১ শতাংশ অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে শেষ করেন শপিং তালিকার কেনাকাটা। বাকি ২৫ শতাংশ তাদের ছুটির কেনাকাটাগুলো করতে অক্টোবরের শেষের দুটি সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকেন। হ্যালোউইনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় দীর্ঘতম বাণিজ্যিক ছুটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা সেরা শপিংয়ের মৌসুম তৈরি করে।
হ্যালোউইন উপলক্ষে বিভিন্ন খাতে খরচ করে থাকে উৎসাহীরা। একবারও কি ভেবেছেন, এত বড় সংখ্যার অর্থ ঠিক কিসে ব্যয় হয়? যেকোনো উদযাপনেই কেনাকাটার মূল অংশে থাকে পোশাক। হ্যালোউইনও এর ব্যতিক্রম নয়। এতে পোশাকের পেছনে ব্যয়ের পরিমাণ বিপুল। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন পুরুষেরা। তাদের ব্যয় থেকে নারীদের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি ধারণা করা হচ্ছে এ বছর হ্যালোউইন পোশাকে। ব্যয় হবে ৩.৪ বিলিয়ন ডলার। আগের বছর ক্যান্ডির বিক্রি কমে গিয়েছিল ২.৭ বিলিয়ন। উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা সাজতে পছন্দ করেন। এ জন্যই প্রতিবছর তাদের খরচ প্রায় ২.৭ বিলিয়ন ডলার। এখনো অনেকেই বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের জন্য হ্যালোউইন উদযাপন করার জন্য গ্রিটিং কার্ড কেনেন এবং এতে ব্যয় হয় ৪০০ মিলিয়ন ডলার।
ক্রেতারা তাদের হ্যালোউইন ইভেন্টের উপযুক্ত পোশাক ও সজ্জা চান প্রতিবছরই। এ ক্ষেত্রে অনলাইন ভূমিকা রাখে ৩২.৫ শতাংশ, খুচরা দোকান ৩০.৫, বন্ধু এবং পরিবার থেকে ২০.৪, ফেসবুক পোস্ট থেকে ১৮.২, পিনটারেস্টে ১৭.৯৯, পপ সংস্কৃতির উৎস থেকে ১৭.২, বিজ্ঞাপন এবং অন্যান্য মাধ্যম ১৪.২, ইউটিউব ভিডিও থেকে ১৪.২ ইনস্টাগ্রাম ১০.৪, চারপাশের বর্তমান ইভেন্টগুলো থেকে ৭.৫ শতাংশ। হ্যালোউইন ও অন্যান্য ছুটিতে অনলাইন বিক্রয় না বাড়লেও অনেক ক্রেতা পোশাক, পার্টি এবং সাজসজ্জার ধারণার জন্য অনুপ্রেরণা পেতে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের পরামর্শ নেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
হ্যালোউইনে বিক্রি হওয়া পোশাকগুলো মানুষের মনের মতোই বৈচিত্র্যপূর্ণ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুপার হিরো, রাজকুমারী, পশু, জাদুকর, ভূত, ভিলেন, পরী- এসব চরিত্রের পোশাক জনপ্রিয় ছিল। এ উপলক্ষে প্রাপ্তবয়স্কদের পোশাক প্রতিবছর ১.৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রি হয়ে থাকে। এরপরে আছে বাচ্চাদের পোশাক, সর্বোচ্চ ২.২ বিলিয়ন ডলার। পোষা প্রাণীর পোশাকে ব্যয় হয় সর্বনিম্ন ৪৪০ মিলিয়ন ডলার। ১৬ শতাংশ লোক তাদের পোষা প্রাণীর জন্য একটি পোশাক কেনেন।
ছবি: ইন্টারনেট