ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I লন্ডন ডিজিটাল ফ্যাশন উইক ২০২০
প্যানডেমিকজনিত স্থবিরতার মধ্যেও ব্রিটিশ ফ্যাশন কাউন্সিল (বিএফএস) আয়োজন করল লন্ডন ফ্যাশন উইক ২০২০। ৪০ বছরের ইতিহাসে ১২ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত এই প্রথম অনুষ্ঠিত হয় জেন্ডার নিউট্রাল ডিজিটাল ফ্যাশন উইক। এটি নিয়ে আগ্রহ ও উত্তেজনার কমতি ছিল না। সবার মনেই প্রশ্ন, কেমন হবে রানওয়ে, ক্যাটওয়াক ছাড়া এই শো এবং ডিজাইনারদের কালেকশন? কী ট্রেন্ড আসছে এখনকার বা করোনা-উত্তর বিশ্বে? সব জল্পনাকল্পনার অবসান যেমন ঘটেছে, তেমনি এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে করোনাযুদ্ধে জয় হয়েছে ফ্যাশনের।
মহামারির এই সময়ে যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই তার বিরূপ প্রভাব পড়েছে ফ্যাশন বিশ্বে। এমন অবস্থায় যখন নামিদামি ব্র্যান্ড তাদের নিজস্ব শো বাতিল করছে, ঠিক সেই মুহূর্তে ব্রিটিশ ফ্যাশন কাউন্সিল সফলতার সঙ্গেই এই উইক আয়োজন করল।
লন্ডন ফ্যাশন উইক সব সময় উদীয়মান প্রতিভা উদযাপন করে এসেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এই মৌসুমে ব্র্যান্ডগুলোকে তাদের গল্প বলার জন্য নতুন উপায় খুঁজতে হয়েছে। এই ইভেন্টের জন্য কাউন্সিল একটি বিশেষ ওয়েবসাইট নির্মাণ করে, যাকে এককথায় বলা যেতে পারে ‘ফ্যাশন নেটফ্লিক্স’। তাদের ওয়েবসাইটে ভিডিও আর্ট (ফ্যাশন ফিল্ম) ভার্চ্যুয়াল গ্যালারির মতো কনটেন্টের মাধ্যমে নতুন কালেকশন তুলে ধরা হয়। সংগত কারণেই কালেকশনে পোশাকের পরিমাণ ছিল অনেক কম। এর মধ্যে ব্যতিক্রম ছিল ডিজাইনার স্টিফেন জোন্সের হ্যাটের সংগ্রহ।
তিনি তার নতুন কতুর কালেকশন প্রকাশের জন্য মডেল হিসেবে বেছে নিয়েছেন ডিজিটাল ইনফ্লুয়েন্সার নুনৌরিকে। স্কেচ এবং প্রিন্ট করে নিজের সংগ্রহের একটি চিত্র তুলে ধরেন তিনি। ডিজাইনার প্রিয়া আহলুওয়ালিয়া তার নানির স্মৃতি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ভার্চ্যুয়াল গ্যালারি ‘জালেবি’ প্রকাশ করেন, যেখানে উঠে এসেছে পশ্চিম লন্ডনের সাউথ হল এলাকায় অবস্থিত প্রথম পাঞ্জাবি কমিউনিটির কথা। মূলত এই ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে তিনি তুলে ধরেন বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য এবং অভিবাসন কীভাবে জীবনকে সমৃদ্ধ করে তোলে, তার ছবি।
আইরিশ মেনস ওয়্যার ডিজাইনার রবিন লিঞ্চ ব্রিটিশ সাইক্লিং ব্র্যান্ড রাফার সঙ্গে কোলাবরেশন করে নিয়ে আসেন একটি আধুনিক আপসাইকেল্ড কালেকশন। আরেক ভারতীয় ডিজাইনার কৌশিক ভেলেন্দ্রা ভিডিও তৈরি করেন, যেখানে দেখা যায় ছেলেদের নানা রকমের এসথেটিক বডি পিস, যা তিনি বানানো শুরু করেন সেন্ট্রাল সেন্ট মারটিনে এমএ পড়ার সময়। নজর কেড়েছে নাতাশা জিঙ্কোর রেডি টু ওয়্যার মেনস ও ওমেনস ওয়্যার। ছেলেদের কালেকশনে ছিল ৭০ দশক অনুপ্রাণিত প্যাচওয়ার্ক ফ্লেয়ারড প্যান্ট, র ডেনিম ফ্লেয়ারড প্যান্ট, লং কোট, বক্সি শোল্ডারের পিন স্ট্রাইপ স্যুট ও ফ্লানেল শার্ট। মেয়েদের জন্য ছিল পপি প্রিন্ট মিনি ড্রেস, প্যাচওয়ার্ক প্যান্ট, ক্রপ টপ।
সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে পাকিস্তানি-আফগান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ডিজাইনার ওসমান ইউসুফজাদার ফ্যাশন ফিল্ম ‘হার ড্রিমস আর বিগার’ নিয়ে। নতুন কালেকশনের প্রদর্শনী না করে যারা পোশাক তৈরি করে সেই সব বাংলাদেশি গার্মেন্টস কর্মীকে নিয়ে বানানো এমন অভিনব উদ্যোগ সবার মন ছুঁয়ে গেছে। শর্ট ফিল্মে বাংলাদেশি মহিলা পোশাককর্মীদের সাক্ষাৎকারে জানতে চাওয়া হয়, কাদের জন্য তারা পোশাক তৈরি করেন এবং তাদের স্বপ্নের কথা। বেশির ভাগ পোশাককর্মী জানে না এটি। তারা শুধু কল্পনায় ভাবেন যে সাদা চামড়ার লাল চুলের কোনো সুন্দর মহিলা তার তৈরি পোশাক পরে। ওসমান ইউসুফজাদা ফিল্মের মাধ্যমে তুলে ধরেন কীভাবে ফাস্ট ফ্যাশনের জাঁতাকলে পিষে যায় এদের জীবন।
এই উইকে আরও উঠে এসেছে সাম্প্রতিক সময়ের ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ মুভমেন্টের মতো বিষয়। একদম শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ডিজাইনার চার্লস জেফেরি তার লাইভস্ট্রিমিং শো ইউকে ব্ল্যাক প্রাইড কমিউনিটিকে সহায়তার জন্য তহবিল সংগ্রহের একটি প্ল্যাটফর্ম করে দেন। ইভেন্টটিতে পারফর্ম করেন মেধাবী কৃষাঙ্গ শিল্পীরা। অন্যদিকে ডিজাইনার ড্যানিয়েল ফ্লেচার তার স্টুডিওতে থাকা পুরোনো ফ্যাব্রিক দিয়ে একটি পোশাকের কালেকশন তৈরি করতে সক্ষম হন এবং ইতিমধ্যে ইকমারস সাইটে বিক্রি করার ব্যবস্থা করেন। এখান থেকে উঠে আসা অর্থের ১০ শতাংশ ব্যয় করা হবে ইউকে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার মুভমেন্টের সহায়তায়।
উইকে ফ্যাশন ফিল্ম আর ভার্চ্যুয়াল গ্যালারি ছাড়াও ছিল পডকাস্ট, ওয়েবিনার, ডিজাইনারদের লাইভ ইন্টারভিউ। বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ এই ইভেন্ট উপভোগ করতে পারবে। বোদ্ধাদের মতে, এটি ছিল ভবিষ্যতে ফ্যাশন উইক কেমন হতে পারে, তার একটি আভাস।
❙ ফাহমিদা শিকদার