সঙ্গানুষঙ্গ I গয়নার দেখভাল
নিয়ম মেনে যত্ন নিলে অলংকার থাকে ঝকমকে। যত পুরোনো হোক, দেখায় নতুন। কীভাবে? জানিয়েছেন তাসমিন আহমেদ
যত্নের অভাবে গয়না উজ্জ্বলতা হারাতে পারে। কেনার অনেক দিন পরও তা নতুনের মতো রাখতে চাইলে সেগুলোর পরিচর্যা দরকার। সঠিক নিয়মে পরিষ্কার করলে ও যত্ন নিলে মূল্যবান গয়নার সৌন্দর্য এবং চাকচিক্য পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও অটুট থাকবে। কেননা এমন কিছু অলংকার রয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে আবেগ, স্মৃতি, পারিবারিক ঐতিহ্য জড়িত। অনেক সময় বয়োজ্যেষ্ঠরা চান উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া গয়না পরবর্তী প্রজন্মের কাছে যেন যত্নে থাকে। তবে সব অলংকারের যত্ন এক রকম নয়। সোনা, রুপা, বিভিন্ন পাথর, মুক্তা- রকমফেরে গয়নার যত্নের ধরনও ভিন্ন হয়।
উজ্জ্বলতা ঠিক রাখতে নরম কাপড় দিয়ে গয়না আলতো করে মুছতে হয়। সোনা, রুপা, মুক্তা, পাথর বা রত্নের অলংকার আলাদা করে নেওয়া দরকার, যাতে সেগুলো পরিষ্কার করার ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়। সব গয়না একেবারে আলাদা করে রাখতে হবে, যেন একটির সঙ্গে আরেকটির ঘষা না লাগে। বিশেষ করে মুক্তার অলংকার আলাদা ব্যাগ বা বক্সে রাখা জরুরি। বক্স যাতে একেবারে শুষ্ক বা এয়ারটাইট না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। নইলে মুক্তা ড্যামেজ হতে পারে।
জিপড বা ড্রস্ট্রিং পার্সে গয়না সংরক্ষণ করা যায়। পার্স হতে হবে চিন্টজ, ভেলভেট বা সুতির মতো নরম কাপড়ের। এড়িয়ে যাওয়া দরকার লিনেন, নেট, জর্জেট এবং জার্সির মতো ফ্যাব্রিক। বাইরের ক্ষতিকর উপাদান থেকে অলংকার রক্ষার এটি সেরা উপায়। এ ছাড়া দেয়াল ফোম দিয়ে ঢাকা এবং নরম সুতির উল বিছানো কাঠের বক্সেও এগুলো রাখা যেতে পারে।
পরিচিত কারিগরকে দিয়ে মাঝে মাঝে গয়না পরীক্ষা করিয়ে দেখতে হয়, ড্যামেজ হয়েছে কি না। অলংকারের যাতে বেশি ক্ষতি না হয়, সে জন্য সুচালো বা শার্প গয়না একসঙ্গে রাখা যাবে না।
সিলভার অর্নামেন্ট পরিষ্কার করার জন্য সিলভার ‘ডিপ’ টাইপ ক্লিনার ব্যবহার করতে হবে। গয়নার চাকচিক্য ধরে রাখার এটি নিরাপদ এবং সবচেয়ে কার্যকর উপায়। তবে কয়েক সেকেন্ডের বেশি সময় এতে ডুবিয়ে রাখা যাবে না। পরিষ্কার করার পর সেগুলো ভালোভাবে শুকিয়ে নেওয়া চাই।
প্ল্যাটিনাম এবং রুপার গয়না নিয়মিত পোলিশ করতে হবে, যাতে এতে দাগ না পড়ে। সপ্তাহে একবার বা প্রয়োজন অনুযায়ী মাসে একবার পোলিশ করা দরকার। খাবার সোডা ও লবণ মিশ্রিত পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া যেতে পারে। এই মিশ্রণে রুপার গয়না দুই মিনিট ভিজিয়ে রাখার পর নরম সুতি কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে। তেঁতুলের পানি বা ভিনেগারেও কাজটি করে নেওয়া যায়।
রত্নপাথরের গয়নাগুলোর বাড়তি যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন হয়। একটি নরম ব্রাশ এবং কোনো মাইল্ড সাবানপানি দিয়ে পরিষ্কার করা যেতে পারে। হীরের মতো পাথরও শুধু পানি ও একটি নরম, লিন্ট-মুক্ত কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে ভালো রাখা যেতে পারে বছরের পর বছর। এ ছাড়া কোনো পেশাদারের পরামর্শ অনুযায়ী অলংকারগুলো জুয়েলারি ক্লিনিং সলিউশন ব্যবহারেও তা করা যায়। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মিতে যেমন ত্বকের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তেমনি আলো এবং তাপ কোনো রঙিন রত্নপাথরের স্থায়িত্ব ও রঙে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এ ছাড়া অ্যামেথিস্ট, কুঞ্জাইট, পোখরাজ এবং শেল ক্যামোসের মতো কিছু রত্নপাথর সময়ের সঙ্গে এবং অনেক পুরোনো হয়ে গেলে বিবর্ণ বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পার্ল ও আইভরির মতো দামি উপকরণ অতিরিক্ত আলো ও তাপে ব্লিচ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অন্যান্য রত্ন বিশেষ করে অ্যাম্বার অতিরিক্ত আলোর সংস্পর্শে বেশি সময় থাকলে মলিন হয়ে যেতে পারে।
তাপ সহজেই প্রাকৃতিক আর্দ্রতা দূর করে, যা অনেক মূল্যবান পাথরের সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন। যেমন মুক্তা আর্দ্রতার অভাবে বিবর্ণ ও শুষ্ক হয়ে ফেটে যায়। ওপাল সাদা বা বাদামি হয়ে যেতে পারে, ছোট ছোট ফাটল তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং সেগুলোর রং হারানোর সম্ভাবনা দেখা দেয়।
রাসায়নিক যুক্ত প্রসাধনী অথবা সরাসরি সূর্যের আলোর সংস্পর্শে গয়নার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভিনেগার, লেবু এবং যেকোনো অ্যাসিডিক খাবার থেকেও অলংকার দূরে রাখতে হবে।
বিডেড বা থ্রেডেড মুক্তার গয়না স্যাঁতসেঁতে জায়গা এড়িয়ে রাখা জরুরি। নইলে সেগুলো উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলতে পারে।
ক্লোরিনযুক্ত সুইমিংপুলে নামতে হলে বা হাউসহোল্ড ক্লিনার ব্যবহারের আগে গয়না খুলে রাখা দরকার। এই ক্লিনারগুলোর কোনোটির মধ্যে অ্যামোনিয়া থাকে, যা রত্ন বা ভিনটেজ জুয়েলারির পক্ষে ক্ষতিকর। ক্লোরিন ব্লিচ, পরিবারের হাউসহোল্ড ক্লিনার, পিট বা সোনার খাদ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
প্রসাধনী বা সুগন্ধির সংস্পর্শে এলে একটি নরম স্যাঁতসেঁতে কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে। এড়িয়ে যাওয়া দরকার অ্যাবরেসিভ ক্লিনার। কারণ, এগুলো বেশ শক্ত হয় বলে তা জুয়েলারিতে আঁচড়ের মতো দাগ কেটে ফেলতে পারে।
সোনার গয়নায় সিলভার ডিপ ক্লিনার ব্যবহার করা যাবে না। সেগুলোর জন্য জুতসই ক্লিনার দিয়েই তা পরিষ্কার করে নিতে হবে। অথবা মাইল্ড সোপের সাহায্যে নরম ব্রিসলের ব্রাশ দিয়ে ধুয়ে নেওয়া যেতে পারে।
সঠিকভাবে গয়না সংরক্ষণের বিষয়টি প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়। এসব কখনোই ড্রয়ারে বা পোশাকের ওপর ফেলে রাখা উচিত নয়। এতে জুয়েলারিতে স্ক্র্যাচ পড়ে যায়। অলংকার কেনার সময় যে বক্স বা পাউচে করে দেওয়া হয়, সেটাতেই এগুলো রাখার উপযুক্ত জায়গা। মুক্তা ও ওপাল বাতাস থেকে আর্দ্রতা টেনে নেয়। তাই এগুলো শুষ্ক স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে। তা হতে পারে কোনো সেফ ডিপোজিট বক্স। তবে সোনা ও রুপার গয়না একসঙ্গে রাখা ঠিক নয়।
মডেল: রাব্বি
মেকওভার: পারসোনা
জুয়েলারি: ক্যানভাস
ছবি: জিয়া উদ্দিন