ফিচার I বাহারি মাছের আহার
যেনতেন খাদ্যে প্রাণ হারাতে পারে শখের মাছটি। সে ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে এর পছন্দ-অপছন্দের ওপর। অ্যাকুরিয়ামের পানির গুণ যেন নষ্ট না হয়, মাছের খাবার নির্বাচনে সেদিকে খেয়াল রাখা চাই। লিখেছেন সিফাত বিনতে ওয়াহিদ
শখের বিষয় অ্যাকুরিয়াম। অনেকের বাড়িতেই আছে। তবে এর পরিচর্যায় খাটুনি রয়েছে। অবশ্য সঠিক উপায়ে মাছের খাদ্য নির্বাচনে ব্যর্থ হওয়ায় বেশির ভাগ মানুষই প্রাণীটি বাঁচাতে পারে না। সে জন্য মাছের সঠিক খাবার নির্ণয় করা খুবই জরুরি। মাছ কী কী খাবার খায়? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেয়ে অনেক সহজ কাজ হচ্ছে, মাছ কী কী খায় না। প্রাণীটি সাধারণত বিষাক্ত ছাড়া সব খাবারই খায়।
মাছ প্রকৃতিগতভাবে সহজেই ক্ষতিকর খাদ্য চিহ্নিত করতে পারে। সব ধরনের মাছের খাবারের আলোচনা অনেক সময়সাপেক্ষ। এখানে বরং আলাপ করা যাক শুধু অ্যাকুরিয়ামের মাছেদের খাবার বিষয়ে।
অ্যাকুরিয়ামের মাছকে খাওয়াতে গিয়ে শৌখিন মানুষেরা সবচেয়ে বেশি যে সমস্যায় পড়েন তা হলো—পানি ঘোলা হয়ে যাওয়া। এটি মাছের মৃত্যুর একটি বড় কারণ। যারা অনেক দিন ধরে মাছ পুষছেন, তাদের কেউ কেউ বলেন অ্যাকুরিয়ামে জ্যান্ত খাবার দিতে। আবার কেউ বলেন ড্রাই ফুড দিতে। এতে অ্যাকুরিয়ামের পানি ঘোলা হয় কম। দোকানগুলোতে জ্যান্ত ও শুকনা—দুই ধরনের খাবারই মেলে।
বাজারে ভালো ভালো কোম্পানির তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাবার কিনতে পাওয়া যায়। কিছু ড্রাই ফুড আছে, যেগুলো পানিতে ভাসে। কিছু আবার ধীরে ধীরে ডুবে যায়। কোন ধরনের খাবার দিতে হবে, তা বাছাই করতে অ্যাকুরিয়ামের মধ্যে কী জাতের মাছ রয়েছে, সেটি খেয়াল করা জরুরি। মাছগুলো পানিতে ভেসে থাকা খাবার পছন্দ করে, নাকি ডুবে যাওয়াগুলো?
অ্যাকুরিয়ামের মাছেদের জন্য যেসব শুকনা খাবার পাওয়া যায়, সেগুলো ফ্রিজড ড্রাই ফুড। এই ধরনের খাবারগুলো কোনো না কোনো জ্যান্ত প্রাণীকে একটি বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে শুকনা করার মাধ্যমে তৈরি করা হয়। যেমন—কেঁচো, ব্লাড ওয়ার্ম, ব্ল্যাক ওয়ার্ম, ডাফনিয়া, আর্টিমিয়া, মশার লার্ভা, চিংড়ি প্রভৃতি। তা ছাড়া মেলে ফ্লেক ফুড। এ ধরনের খাবারগুলো দেখতে অনেকটা পাতলা পাপড়ের টুকরার মতো। আছে প্যালেট ফুড। এই খাবারগুলো গোল দানার মতো। বিভিন্ন আকারের হয়। খুব মিহিদানা থেকে কড়াইশুঁটির আকৃতিরও হতে পারে। খাওয়ানোর ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, মাছগুলো পানির কোন স্তরের খাবার বেশি পছন্দ করে—পানিতে ভাসা খাবার? নাকি অ্যাকুরিয়ামের তলা থেকে খুঁটে খায়? নাকি পানির মাঝামাঝি থেকে খায়?
মাছ যেখান থেকে খেতে বেশি পছন্দ করে, ঠিক তেমন ধরনের খাবারই দিতে হয়। ফ্লোটিং টাইপ খাদ্য অনেকক্ষণ পর্যন্ত পানিতে ভেসে থাকে। সিঙ্কিং টাইপগুলো ডুবে যায় নিমেষেই। ফ্লেক ফুড পানিতে বেশিক্ষণ ভাসে না, আবার খুব তাড়াতাড়ি ডোবেও না; বরং পানিতে ফেলার পরে খুব ধীরে ধীরে ডুবতে থাকে।
যে ধরনের খাবারই দেওয়া হোক, তা এমন পরিমাণে দিতে হবে যেন মাছগুলো ২ থেকে ৩ মিনিটের মধ্যেই সাবাড় করতে পারে। খাবার যদি ৩ মিনিটের বেশি পানিতে থাকে, তাহলে অ্যাকুরিয়ামের পানি ঘোলা হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। এ জন্য ছোট আকারের মাছেদের বড় দানার খাবার না দেওয়াই ভালো। এতে খাবার খেয়ে শেষ করতে সময় লাগতে পারে বেশি।
আরও কিছু বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন। অ্যাকুরিয়ামের মাছের খাবারে আরও দুটি ভাগ রয়েছে: ভেজিটেটিভ ও ননভেজ। ফ্রিজ ড্রাই খাবারগুলো সাধারণত ননভেজ। মাছের খাবারে প্রোটিনের তারতম্যও রয়েছে। খাবারভেদে এর পরিমাণ ২০ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত থাকে। মাছের খাদ্যে প্রোটিনের পরিমাণ যত কম থাকবে, অ্যাকুরিয়ামের পানি তত কম ঘোলা হবে। তবে কম প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়ালে মাছের বৃদ্ধি কম হবে। ফলে খাওয়ানোর ক্ষেত্রে ব্যালেন্স করতে হয়। অন্যথায় আমিষের ঘাটতিতে শখের মাছ প্রথমে দুর্বল হবে, শেষে মারাও যেতে পারে।
জ্যান্ত খাবার খাওয়াতে চাইলে অ্যাকুরিয়ামের মাছেদের মিল্ক ওয়ার্ম, আরশোলা, মশা, ফড়িং, ঝিঁঝি পোকা ইত্যাদি খাওয়ানো যেতে পারে। এ ছাড়া পিঁপড়ার ডিম প্রায় সব মাছের খুব প্রিয়। অ্যাকুরিয়ামের মাছকে আরও যেসব খাবার খাওয়ানো যেতে পারে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্যান্ত গাছ, শাকের পাতা, সেদ্ধ করা কড়াইশুঁটির দানা, সেদ্ধ ভাত, আলু সেদ্ধ, সেদ্ধ ডিমের কুসুম, কাঁচা মাংস বা সেদ্ধ মাংসের টুকরা, কাঁচা মেটে বা সেদ্ধ করা মেটে, শসার টুকরা, তরমুজের টুকরা প্রভৃতি।
তাই শখের মাছের খাবারে একটু সচেতনতা অবলম্বন জরুরি। প্রাণোচ্ছল থাকুক অ্যাকুরিয়ামের মৎস্যকুল।
ছবি: ইন্টারনেট