ফিচার I অনুভূতি প্রকাশের ফ্যাশন
মানুষের অনুভূতি পোশাকেও প্রকাশ পেতে পারে। এই সম্ভাবনা সামনে রেখে প্রণীত হয় ডিজাইন, এমনকি বিপণন-প্রক্রিয়াও
মানুষের সৃষ্টিশীল অনুভূতি প্রকাশিত হয় তার বিচিত্রমুখী শিল্পকর্মে। পোশাকও এর বাহন হতে পারে। মানুষের আবেগের সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক রয়েছে। ঋতুবদলের ছবি পোশাকে দেখা ও দেখানোর মধ্যে অনেকেই আনন্দ পান। তাই কেউ কেউ তা নিজের চিত্রকর্মে বা অন্য শিল্পের মাধ্যমে বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। কেউ কেউ নিজের পোশাককে ক্যানভাস হিসেবে দেখতে পছন্দ করেন। তাতেই ফুটিয়ে তোলেন নিজের অনুভূতি। উন্নত বিশ্বে এই ধারা বিকশিত হয়েছে অনেক আগেই। আমাদের এখানেও তা শুরু হয়েছে। তাই বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ঋতুভেদে দেখা যায় ডিজাইনের ভিন্নতা। শীত এলেই ব্যস্ত নগরীর বিলবোর্ডে শোভা পায় জ্যাকেট-সোয়েটার পরা ভারী পোশাকের মডেলদের ছবি। আবার বসন্তে রঙিন ও টিপিক্যাল পোশাকে হাস্যোজ্জ্বল মুখ। গরমে পাতলা পোশাকের কুল লুক।
প্যাশন ইন ফ্যাশন
আর্থিক সচ্ছলতার পাশাপাশি প্যাশন বাড়ছে। গ্রাফিক ডিজাইন যার নেশা, ভালো একটি গ্রাফিকের কাজ সে তার পোশাকে দেখতেই চাইবে। কারণ, তার জীবনধারায় শখের চেয়ে বেশি মূল্য পায় তার ডিজাইনিং প্যাশন। অন্যান্য প্যাশনের মানুষও ফ্যাশনে তেমনটারই প্রাধান্য দেবে। এই প্রবণতা সামনে রেখে ফ্যাশন মার্কেটে সেট হয় নতুন ট্রেন্ড। আনা হয় নতুন ডিজাইন ও সৃজনশীলতা। যেমন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে ‘আই অ্যাম অ্যান আপকামিং ইঞ্জিনিয়ার’ লেখা টি-শার্ট। কিংবা মাঝবয়সী কোনো স্মার্ট লোকের জন্য পলিশ ব্লু জিনস।
ফ্যাশন মার্কেটিংয়ে সৃজনশীলতার বড় অংশ ফটোগ্রাফি। অনলাইনের যুগে এর বিকল্প এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তাই কোন ডিজাইন কেমন ব্যক্তিত্বের জন্য করা হয়েছে, তা বোঝার সহজ উপায় ছবি। মডেলের এক্সপ্রেশন, আশপাশের পরিবেশ, পোশাকের ধরন- এসব মিলিয়ে যে ছবি ধারণ করা হবে, তা হওয়া চাই পূর্ণাঙ্গ এবং গ্রহণযোগ্য। কারণ, এই মুড বলে দেবে পোশাকটি কাদের জন্য এবং কেমনভাবে উপস্থাপনার জন্য। ক্রেতা যখন দেখবে তার মুডের সঙ্গে ফটোগ্রাফির মুড মিলে গেছে, তখন সে কিনতে ইচ্ছুক হবে। যেমন পলিশড স্যুট-প্যান্ট পরা মার্জিত একটি ছবি দেখে একজন চাকরিজীবী তার অফিশিয়াল পোশাক কেনে বা বানিয়ে নেয়। আজকাল অবশ্য ফটোগ্রাফির পাশাপাশি ভিডিওগ্রাফিও গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে।
ভার্চ্যুয়াল ফিলিংস
এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জীবনধারার বড় অংশ। মানুষ ফেসবুকে বিভিন্ন ফানি পেজ অনুসরণ করতে পছন্দ করে। ইনস্টাগ্রামে আপডেটেড থাকে। আর ভার্চ্যুয়াল এই জগতের বিশাল প্রভাব পড়ে মানুষের পোশাক নির্বাচনে। এমনকি কোনো ফানি পেজের নাম বা ভার্চ্যুয়ালি জনপ্রিয় কোনো ফানি ডায়ালগের ওপর ভিত্তি করে হতে পারে ডিজাইন। ‘বাংলার গঞ্জি’ নামের অনলাইন শপের বিজনেস পলিসি এর বড় উদাহরণ।
মানুষের শখের কথা মাথায় রেখে পোশাকের ডিজাইন ও বিপণন নতুন নয়। যেমন বিয়েতে শখের শাড়ি হওয়া চাই জমকালো। এতে ডিজাইনের আভিজাত্যই আসল কথা। অভিজাত পোশাকের দামও অভিজাত। শখের পোশাকের আরও উদাহরণ হতে পারে ভ্যালেন্টাইনের কাপল পোশাক। কিংবা প্রিয় তারকার জার্সি বা টপস বা প্রিয় ব্যান্ডের নাম। তবে উৎসবের ব্যাপার একটু ভিন্ন। বাংলাদেশে এখনো উৎসব বাদে পোশাক কেনেন না এমন মানুষ অসংখ্য। কারণ ঈদ, পূজা, পয়লা বৈশাখ ইত্যাদির মতো উৎসবে মানুষের মনে যেই আনন্দ জাগে, তার উৎস নতুন পোশাকও।
এসবের বাইরেও মানুষের অনেক অনুভূতি পোশাকে প্রকাশ পায়। তা কখনো কখনো রঙেই প্রতিফলিত হয়। বিশেষ কোনো ব্র্যান্ড মনে ধরে গেলে সেই ব্র্যান্ডের যেকোনো ডিজাইনই পছন্দ হয়। এবং এর মধ্য দিয়ে নিজের ভালো লাগার অনুভূতি প্রকাশ পায়। অ্যাডিডাস, নাইকির লোগোওয়ালা পোশাক যেমন সারা বিশ্বে জনপ্রিয়।
আব্দুল্লাহ আল কেমী
ছবি: ক্যানভাস আর্কাইভ