skip to Main Content

ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I প্রজন্ম পরিক্রমায়

পাল্টে গেছে বিয়ের বিশ্ববাজার। বিখ্যাত সব লাক্সারি ডিজাইনার ব্র্যান্ডের উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ—সবেতেই লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। কারণটা জানাচ্ছেন সারাহ্ রুশমিতা

১৯৯৫ সাল থেকে যাদের জন্মসাল, তাদের বিয়ের ফ্যাশন কেমন হবে, সে ভাবনা বেশ ভাবাচ্ছে বিয়ের পোশাক নিয়ে কাজ করা ফ্যাশন ডিজাইনারদের। কেন? কারণ, নতুন এই প্রজন্ম ইতিমধ্যে ফ্যাশনের ক্ষেত্রে তাদের নিজস্বতাবোধকে বেশ দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করেছে। মিলেনিয়াল এবং জেনজিদের মাঝে বাহুল্যকে পাশ কাটিয়ে প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিতে দেখা যাচ্ছে বেশি। তার ধারাবাহিকতা বিয়েতে কতটুকু থাকবে, সেটাই এখন ভাবনার বিষয়। ২০৩০ সালের মধ্যেই মিলেনিয়াল আর জেনজিদের বিয়ের আয়োজনে মুখর হবে উৎসব প্রাঙ্গণ। বিশ্বজুড়েই বিয়ের আয়োজনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নানা বাণিজ্য। নতুন প্রজন্মের চিন্তাধারার প্রভাবে এসব ব্যবসাও প্রভাবিত হবে, তা বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু প্রভাব হবে কতটা, আর তার ইতিবাচক দিকই-বা কেমন, সেটাই এখন ভাববার।
গেল বছরগুলোতে এই দুই প্রজন্মকে যতটুকু বোঝা গেছে, তাতে ধরে নেওয়া যায়, শুধু রীতি আর নীতির প্যাঁচে আটকে রেখে ছাদনাতলায় বসানো যাবে না তাদের। সঙ্গে কনসেপ্টকে গুরুত্ব দিয়েও কাজ করতে হবে। জানতে হবে, ভাবতে হবে; জানাতে হবে, ভাবাতে হবে।
‘মিলেনিয়াল অ্যান্ড জেনজি ব্রাইডস: দ্য ব্রাইডাল সেক্টর ইন ২০২০’ নামের একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় বছর দুয়েক আগে। আইইএসই প্রফেসর জস লুই নুয়েনো এটি প্রকাশ করেন। সেখান থেকে জানা যায়, পাঁচটির মাঝে চারটি বিয়েতে অন্য প্রজন্মগুলোর থেকেও বেশি খরচ করছে বর্তমানের বর ও কনে। বিয়ের বয়স হিসেবে তারা ব্যতিক্রমধর্মী কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না। দাদা-দাদি, নানা-নানি, বাবা-মায়ের যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়েই তারা বিয়ের বয়স নির্ধারণ করে। খরুচে স্বভাবের জন্য চাকরিজীবনের শুরু থেকে বিয়ে অবধি যা তাদের ব্যাংক ব্যালেন্স, তার সবটাই খরচ করে অনেকে। বিয়ের উৎসবকে কেন্দ্র করে ব্যাংক লোন, ব্যক্তিগত লোন নেওয়ারও নজির মিলছে অহরহ।
মিলেনিয়াল ও জেনজি—এই দুই দলের মাঝে মিল হচ্ছে, তারা প্রথাগত নকশার পোশাকের বদলে বেছে নিচ্ছে নিজেদের পছন্দসইগুলো। নিজস্ব চাহিদা এবং আরামদায়কতাকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি। এই দুই প্রজন্মের কনেদের চাহিদার শীর্ষে থাকে অনন্যতা, আধুনিকতা এবং সৃজনশীল নকশার চাহিদা। যা বুঝতে হলে কাছ থেকে জানতে হবে তাদেরকে। ব্যক্তিসত্তাকে আলাদা করে জেনে নেওয়ার চেষ্টা করলে সে অনুযায়ী নকশা করা সহজ হতে পারে। এরা যেহেতু প্রথা মেনে পোশাক নির্ধারণের দলে নেই, তাই কাস্টমাইজেশনকে বেশি প্রাধান্য দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে এদের মধ্যে। ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ তাই বাড়াতে হবে। ক্রেতাকে প্রাধান্য দিয়ে যদি ডিজাইনার আগে থেকেই জেনে নেন কেমন ছিল তাদের স্বপ্নের বিয়ের পোশাক, তাহলে নকশা করে ফুটিয়ে তোলা বেশ খানিকটা সহজ হবে। কারণ, বিয়ে নিয়ে কমবেশি সবারই স্বপ্ন থাকে; বিশেষ করে মেয়েরা বিয়ের দিনের পোশাক কেমন হবে, তা নিয়ে ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই চাহিদা বদল হয় অবশ্য।
এই গবেষণার মাধ্যমে মিলেনিয়াল আর জেনজিদের প্রযুক্তিগত দিকে আগ্রহের বিষয়টিও উঠে এসেছে। তুলনামূলকভাবে এই দুই প্রজন্ম অন্যদের তুলনায় প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়ে আছে। শপিংয়ের ক্ষেত্রেও অনলাইন শপিংয়ে তাদের আগ্রহ অন্যদের থেকে বেশি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিলে পোশাকের নকশা বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিছুটা হলেও সহজ হবে। এদের নিজস্ব অভিব্যক্তিকে গুরুত্ব দিতে হলে এসব বৈশিষ্ট্য এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। এই জেনারেশনের শপিং এক্সপেরিয়েন্সের জন্য ভিডিও ওয়ালস, ডিজিটাল সাইনেজ, স্মার্ট মিররসহ নানা ধরনের প্রযুক্তির সংযোজন ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করবে।
ব্রাইডাল মার্কেট অ্যানালিস্টদের মতে, নিকট ভবিষ্যতে বিয়ের বাজারে চীনকে কিছুটা পাশে হটিয়ে নিজের অবস্থান আরও শক্ত করার চেষ্টা করবে ইউরোপ। ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর নতুন ঠিকানা হিসেবে ইউরোপ পছন্দের তালিকার ওপরের দিকে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউরোপে ব্রাইডাল ওয়্যারের চাহিদার পাশাপাশি ব্রাইডসমেডদের পোশাক, জুয়েলারি ও অ্যাকসেসরিজের বাজারও বেশ পরিসর নিয়ে গড়ে উঠবে বলে আশা করছেন বিজনেস অ্যানালিস্টরা। ইউরোপের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র একটি ভালো বাজার পরিসর হতে পারে বলে তারা মত দিয়েছেন। বর্তমানে এখানকার বিয়ের বাজারের বিশেষ দিক হচ্ছে, এখানে উচ্চ মূল্যে বিয়ের পোশাক বিক্রি হয়। এই বাজার বেশ প্রতিযোগিতামূলক। এখানে ব্যবসা করতে এবং টিকে থাকতে হলে ব্যবসার আকার এবং ব্র্যান্ড ভ্যালুকে প্রাধান্য দেওয়া হয় সবার আগে। মূলধনের ক্ষেত্রেও থাকতে হবে শক্ত অবস্থান।
লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতেও রয়েছে বিয়ের পোশাকের চাহিদা। মেক্সিকোতে ক্রেতাচাহিদা সব থেকে বেশি। গালফ কান্ট্রি, অর্থাৎ, সৌদি আরব, কুয়েত ও কাতারে বিয়ের পোশাক এবং জুয়েলারির ব্যবসায়ীরা তুলনামূলক ইতিবাচক পরিবেশে ব্যবসা করতে পারবেন বলে মনে করছেন এ বিষয়ের বোদ্ধা ব্যক্তিরা। এখানে মিলেনিয়ালদের সংখ্যা বেশি এবং বেশ দীর্ঘ সময় ধরে চলবে এদের বিয়ের কার্যক্রম। বৈশ্বিক বিয়ের বাজারের দিকে তাকালে দেখা যায়, সব থেকে দ্রুত পণ্য প্রস্তুত ও বাজারজাত করার কৌশলে সিদ্ধহস্ত চীন। বছরে এই দেশ ১২ মিলিয়ন ইউনিট বিয়ের পোশাক উৎপাদন করে। তাদের উৎপাদনের ৭৫ শতাংশ পণ্য বিশ্বের অন্যান্য দেশে রপ্তানি হয়। এরপরেই অবস্থান ভিয়েতনামের।
এ বছর বিশ্বজুড়ে বিয়ের আয়োজন করা হচ্ছে অধিক গুরুত্বসহকারে। করোনাকালের পরে দিন যত গড়াচ্ছে, মানুষের মাঝে সচেতনতার সঙ্গে উৎসবে অংশ নেওয়ার উৎসাহ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। বিয়ে ও বিয়েসংক্রান্ত অনুষ্ঠান এসব উৎসবের অন্যতম। লন্ডনে ব্রাইডাল ওয়্যারের ট্রেড শো, বার্সেলোনায় ব্রাইডাল ফ্যাশন উইকের সফলতা তারই প্রমাণ। ব্রাইডাল ফ্যাশন ইভেন্ট মিলেনিয়াল ও জেনজি জেনারেশনদের আকর্ষণ করে। ইতিবাচক ভূমিকা রাখে ব্র্যান্ড পরিচিতি তৈরি করার ক্ষেত্রে।
ইয়ার রাউন্ড কালেকশনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পনা করতে পারেন ব্রাইডাল ডিজাইনাররা। শুধু একবার ব্যবহার উপযোগী এমন বিয়ের পোশাকের চেয়ে একাধিকবার ব্যবহার করা যায় এমন পোশাকের প্রতি জেনজি ও মিলেনিয়ালদের আগ্রহ বেশি থাকবে বলে মনে করছেন ফ্যাশনবোদ্ধারা। এমনকি পোশাকের ওজনের প্রতি সচেতন হচ্ছেন এখনকার কনেরা। ভারী এড়িয়ে বেছে নিচ্ছেন ইজি ব্রিজি ফ্যাব্রিকের হালকা ওজনের পোশাক।
রঙের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে পরিবর্তনের ঢেউ। বেশির ভাগ পরিবার এখনো তথাগত লালেই সই, বড়জোর গোলাপের আভা অর্থাৎ পিংক কিংবা বেবি পিংকে মাথা ওপর-নিচ করে, আর সেখানে মিলেনিয়াল-জেনজিদের দেখা যাচ্ছে প্যাস্টেল শেড বেছে নিয়ে বিয়ের আসরে উপস্থিত হতে। শুধু বর-কনেতেই আটকে নেই প্যাস্টেল প্যালেট। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে পরিবারের সবাই, অর্থাৎ বাবা-মা, ভাই-বোন, ভাবি-দুলাভাই রং মিলিয়ে প্যাস্টেলেই সেজেছেন। আবার, দারুণ দারুণ কুল শেডে মন হারাচ্ছেন ব্রাইডসমেডরাও!
এখন সিজন বুঝে বিয়ের পোশাকের রং বেছে নেওয়ায় আগ্রহী ভোক্তারা। তাই ঋতুর সঙ্গে মিল রেখে রং বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে ব্র্যান্ডগুলোও।
নতুন বর-কনেদের কাছে ইন্ডিয়ান ব্রাইডাল ওয়্যারের চাহিদা বাড়ছে। সেটি পাচ্ছেন বিশ্বের অন্য দেশের ব্যবসায়ীরাও। তাই তো বিশ্বজুড়ে দুয়ার খুলতে শুরু করেছে ভারতীয় ব্র্যান্ডগুলো। যেখানে মিলছে ইন্ডিয়ার বিখ্যাত ব্রাইডাল ওয়্যার ডিজাইনারদের তৈরি পোশাক।
সবকিছু মিলিয়ে বিয়ের উৎসবের উত্তেজনাময় একটি সময় পার করছে ফ্যাশন বিশ্ব। মিলেনিয়াল আর জেনজিদের বিয়ে বেশ হল্লা মাতিয়েছে ইতিমধ্যে। বৈশ্বিক বিয়ের বাজারে তাই লাইট ওয়েট পোশাক, প্যাস্টেল কালারের ব্যবহার, ফ্যামিলি অ্যাটেয়ার, ব্রাইডসমেড ওয়্যার, সেভারেল টাইমস ওয়্যার নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে। দেখা যাক উৎসবের ঢাক কত দূর শোনা যায়।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top