মনোজাল I রাতেও রোদচশমা
রাতের বেলা সানগ্লাস পরেছেন, তবু টিপ্পনীর শিকার হননি—এমন মানুষ বিরল। অথচ সানগ্লাস রাতে ব্যবহারও জরুরি, বিশ্বাস করুন!
শুরু করা যাক ব্রিটিশ সংগীতশিল্পী অ্যালিসন গোল্ডফ্র্যাপের চমৎকার একটি মন্তব্য দিয়ে। তিনি বলেছেন, সানগ্লাস এমন একটি ফ্যাশন অনুষঙ্গ, যা সব সময় সঙ্গে রাখা জরুরি। মেকআপ এড়ানো, লুকানো, একেবারেই না করা কিংবা চেহারার বিরক্তি, রাগ, দুঃখ—এই সবকিছু এড়ানোর জন্য এটি দুর্দান্ত। সেলিব্রিটিদের সানগ্লাসপ্রীতি অবশ্য নতুন কিছু নয়। বরং সেলিব্রিটি হয়েও সানগ্লাস ব্যবহার করেন না এমন উদাহরণ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সাধারণ মানুষের কাছে সেটি প্রিয় মূলত রোদ এড়াতে, কখনো-সখনো স্টাইলের অংশ হিসেবে। তবে রাতে সানগ্লাস ব্যবহারের প্রচলন খুব একটা নেই।
ইদানীং ফ্যাশন জগতের বিজ্ঞ মানুষেরা বলছেন, আপনি সূর্যের নিচে থাকুন কিংবা সন্ধ্যার আলো উপভোগ করুন—সানগ্লাস সঙ্গে রাখা চাই। এটি আপনার শৈলী ধরে রাখে এবং আশপাশে রহস্যের একটি আবহ তৈরি করে দেয়। আপনি যদি অলক্ষ্যে থেকে যেতে এবং ভিড়ে থেকেও ভিড় এড়াতে অথবা নিজের আবেগকে আড়াল করতে চান, তাহলে সানগ্লাস ছাড়া উপায় নেই! যদিও আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে চিন্তা করলে সব সময় সানগ্লাস পরে থাকা, বিশেষ করে রাতে, উদ্ভট লাগা স্বাভাবিক; পাগল মনে করার শঙ্কাকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাতে কি? আপনার প্রয়োজনটাই আসল। অন্যের দৃষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই করার এবং রাতে উজ্জ্বল আলো থেকে চোখ সুরক্ষার জন্য এ এক দারুণ অস্ত্র। অবশ্য কটূক্তি শুনতে হবে না, এমন নিশ্চয়তা কিন্তু নেই! আপনার সঙ্গীরাই হয়তো প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করবে আপনাকে; যেমন ‘আরে, সূর্য কোথায়?’ কিংবা ‘সান ছাড়াই সানগ্লাস—এ আবার কোথা থেকে উঠে এসেছে’ ইত্যাদি। তাদেরকে উপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা চাই। কারণ, রাতে রোদচশমা পরার পেছনে কঠিন সব যুক্তি দেখিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আপনি নিজে জানলেই তো অন্যদের জবাব দিতে পারবেন। তাই না? কারণগুলো হলো:
প্রথমত, রাতে এটি সেলফোন কিংবা ডিজিটাল স্ক্রিনের আলো থেকে চোখকে সুরক্ষা দেয়। নাম অনুসারে, এই আলংকারিক আইপিসগুলো দিনের ব্যবহারের জন্য বোঝানো হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, সানগ্লাস রাত্রিকালীন ব্যবহারের জন্যও দারুণ উপকারী। শুনতে হাস্যকর মনে হলেও আপনি যদি রাতে সেলফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করার সময় সানগ্লাস পরেন, তাহলে ডিজিটাল স্ক্রিনের আলোর ক্ষতিকর প্রভাবগুলো থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন। এই ফ্যাশন অনুষঙ্গকে চোখের যত্নে অপরিহার্য করে তুলতে পারলে রাতে আপনার আনন্দদায়ক মোবাইল স্ক্রলিং বা স্ক্রিন টাইম উপভোগ করার জন্য চোখ কোনো ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে না।
দ্বিতীয়ত, চোখের সংক্রমণ বা সম্পর্কিত রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। এ ধরনের রোগগুলো তো আর দিন-রাত দেখে আসে না! ছুটিতে, সিনেমায়, মার্কেটে—যেখানেই যান না কেন, চোখের সংক্রমণ বা রোগ হতে পারে যেকোনো সময়। এই কষ্টকর সমস্যা থেকে নিজের চোখকে আরাম দিতে এবং সংক্রমণ এড়াতে সানগ্লাস দারুণ উপকারী। এটি আপনাকে উজ্জ্বল আলো, বিরক্তিকর চোখের অস্বস্তি এবং দৃষ্টি সমস্যা এড়াতে সাহায্য করবে। তা ছাড়া বাতাসের ধুলো-ময়লা পরবর্তী স্তরে চোখের প্রদাহকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। যদি মনে করেন সানগ্লাস শুধু সূর্যের রশ্মি এড়াতেই ব্যবহার করা উচিত, তাহলে আপনার ধারণা ভুল। এই আরাধ্য চশমা চোখের অস্বস্তি দূর করে বায়ু-কণা থেকে চোখকে রক্ষা করতে যথেষ্ট সক্ষম। তাই চোখ সুরক্ষিত রাখতে চাইলে রাস্তায় ভ্রমণ করছেন বা গাড়ি চালাচ্ছেন, সেটি দিনে-রাতে যখনই হোক না কেন, সঙ্গে রাখুন সানগ্লাস।
তৃতীয়ত, উজ্জ্বলতা সামঞ্জস্য করার জন্যও সানগ্লাস চাই। মোবাইল বা ল্যাপটপের স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা সামঞ্জস্য করা আপনার হাতে; কিন্তু আপনি যখন থিয়েটারে থাকেন, তখন কী হবে? আপনি কি সত্যিই মনে করেন, শুধু কয়েক ঘণ্টা বিনোদন উপভোগ করার জন্য চোখের আরামের সঙ্গে আপস করতে হবে? মোটেই না। অন্ধকারে টিভি কিংবা থিয়েটারে সিনেমা দেখার সময়ও প্রিয় সানগ্লাসটি পরে থাকুন। তাতে আপনার চোখ অন্ধকার সত্ত্বেও একটি দুর্দান্ত বিলাসবহুল সিনেমা শো উপভোগ করার জন্য প্রস্তুত থাকবে।
চতুর্থত, পার্টিতে বা কোনো অনুষ্ঠানে কারও সঙ্গে ধাক্কা খেলে মুখের অভিব্যক্তি লুকানোর জন্য এটি বেশ প্রয়োজনীয় অস্ত্র। মাঝে মাঝে এমন হয় না কোনো অনুষ্ঠানে বা রেস্টুরেন্টে গিয়ে এমন একজনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছেন, যাকে আপনি সত্যিই ঘৃণা করেন বা কোনো কারণে এড়াতে চান? অথচ মুখোমুখি পড়ে গেলে এ ধরনের পরিস্থিতিতে অভিব্যক্তি ধরে রাখা সত্যিই কঠিন এবং বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে? সেটি খুব সহজ হয়ে যায় যদি আপনি মনের আয়না, অর্থাৎ চোখ ঢেকে রাখতে পারেন। তাই শুধু অনুভূতিগুলোকে আলাদা রাখতে গ্রীষ্মকালীন মধ্যাহ্নভোজ পার্টি হোক বা নৈশভোজ—সানগ্লাস রাখুন চোখে। তাতে কুল-মান—দুটোই রক্ষা পাবে!
পঞ্চমত, বর্তমান ট্রেন্ড অনুযায়ী সানগ্লাস খুব জনপ্রিয় একটি ফ্যাশন ফ্যাড। ফ্যাশন বিশেষজ্ঞদের মতে, বহিরাঙ্গন পার্টি থেকে নাইট ক্লাব পর্যন্ত যেকোনো জায়গাতেই একটি প্রাণময় সানগ্লাসের সাহায্যে আপনি সবার দৃষ্টি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারেন। সম্ভবত এ কারণেই অ্যাম্বার রোজ, লেডি গাগা বা অন্য সেলিব্রিটিদের প্রায় সব সময় সানগ্লাস পরে থাকতে দেখা যায়। বিশেষ করে রাতের ইভেন্টগুলোতে সানগ্লাস যেন থাকতেই হবে তাদের চোখে। কয়েক দশক ধরে সানগ্লাস নিজ জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। নিজেকে স্টাইলিশ করে তোলার জন্য পোশাকের পাশাপাশি এর আবেদন অনেক বলেই আপনার সামগ্রিক শৈলী উন্নত করতে মানানসই একটি সানগ্লাস তাই আপনিও সঙ্গে রাখুন।
ষষ্ঠত, ফটোফোবিক অবস্থার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য সানগ্লাস একটি দুর্দান্ত অনুষঙ্গ। আলোর সংবেদনশীলতা থেকে সৃষ্ট সমস্যা থেকে শুষ্ক চোখ, মাইগ্রেন এবং অন্যান্য বিভিন্ন দূরদর্শী জটিলতা দেখা দিচ্ছে ইদানীং। রাতের বেলা উজ্জ্বল ট্রাফিক, রাস্তার আলো বা অন্যান্য কৃত্রিম আলোর উৎসগুলো আপনার ফটোফোবিক অবস্থাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। তখন রক্ষাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে সানগ্লাস। আলোকসজ্জা, উজ্জ্বলতা এবং অন্যান্য ক্ষতিকর রশ্মি ফিল্টার করে আপনার চোখকে আরাম দিতে এটি অনেক সাহায্য করতে পারে। তাই রাতে সানগ্লাস পরতে লজ্জা পাবেন না; নিজের জন্য না হলেও আপনার চোখের ভালোর জন্য এটি দরকার।
সুযুক্তি অনেক দেওয়া হলো। মনে ধরলে ভালো একটি সানগ্লাস কিনে ফেলুন আজই; যা আপনার স্টাইলে অনবদ্যভাবে রহস্যের আবহ তৈরিতে সহায়তা করবে। ভিড় থেকে দৃষ্টি এড়াতে কিংবা ভিড়ের মাঝে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে যেভাবেই আপনি নিজেকে উপস্থাপন করতে চান না কেন! সম্পূর্ণ নতুন ডিজাইনের সানগ্লাস পরে কোথাও গিয়ে দেখুন না আশপাশের মানুষ কী রকম কৌতূহলী হয়ে ওঠে আপনাকে নিয়ে। আর সময়টি যদি রাত হয়, তাহলে তো কথাই নেই। দৃষ্টিবাণে জর্জরিত হবেন মুহূর্তেই, তবে সেই অযাচিত চোখের দৃষ্টিগুলো থেকেও যা আপনাকে আড়াল করে রাখবে, তার নাম সানগ্লাস।
রত্না রহিমা
মডেল: তৃণা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল