skip to Main Content

কভারস্টোরি I এক্সট্রিম ইন অ্যাকশন

ফ্যাশন ফিলোসফির পট পরিবর্তন। আনন্দ উপভোগের বার্তা। যা ইচ্ছা, তা-ই করার স্বাধীনতা। রাজত্ব ফিরে পাওয়া বহু বছর পর। আনন্দে-রঙে প্রফুল্লতার বিচ্ছুরণ। আধিক্যের আশকারা নিয়ে লিখেছেন সারাহ্ দীনা

মিনিমালিস্টিক ফ্যাশন ধরণিকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে; টেকসই তত্ত্বে নিজেকে সাজিয়ে তোলার টেকনিকও। পোশাকে স্বস্তি, শান্তি, আরামকে প্রাধান্য দেওয়ার পাঠ। মিনিমালিস্টিক ফ্যাশন কোর জমজমাট করে রেখেছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে। ধীরে ধীরে সেখানে এসেছে পরিবর্তন। কোয়াইট লাক্সারির জনপ্রিয়তার রেশ থাকতে থাকতেই শোনা যাচ্ছে ম্যাক্সিমালিজমের ঝংকার। শুভস্য শীঘ্রম। তাই সরাসরি প্রশ্ন-উত্তরের পর্ব।
ম্যাক্সিমালিজম কী—এক লাইনের উত্তরে বলতে হয়, ‘মোর ইজ মোর’। অর্থাৎ অতিরঞ্জন। কখনো কখনো অতিরঞ্জনের বাড়াবাড়ি। ম্যাক্সিমালিজম আর্টিস্টিক ফ্যাশন মুভমেন্ট। উজ্জ্বল রং আর বড়সড় মোটিফ, প্যাটার্নের যুগপৎ সন্ধি। মিনিমালিজমের কাউন্টার মুভমেন্ট। ভিড়ের ভেতর নিজেকে আলাদা করে চেনানোর তাগিদ। মিনিমালিজমের সরলের পরে একটুখানি গরল বলা যেতে পারে।
রানওয়ে বাজিমাত
স্প্রিং-সামার ২০২৪ রানওয়েতে মনোযোগ রাখলে দেখা যায়, বিশ্বের বাঘা বাঘা ফ্যাশন লেবেল ম্যাক্সিমালিজমের গ্রামার মেনেছে মনোযোগের সঙ্গে। প্যারিসের ব্র্যান্ড ডুরান ল্যানটিংকের ইনফ্ল্যাটেবল ডেনিম, প্রাডা খ্যাত ডিজাইনার ফ্রান্সিসকো রিসেসার পুষ্পসংবলিত হলুদ ফ্রক; যা নিকি মিনাজ পরেছিলেন মেট গালার এ বছরের লালগালিচায়। ব্রিটিশ ডিজাইনার ক্রিশ্চিয়ান কেয়নের জায়ান্ট ফার বল, ইতালিয়ান ফ্যাশন ডিজাইনার স্ক্যাপেরেল্লির সুপারসাইজ লবস্টার, প্যারিসের রিক ওয়েনের প্রোনাউন্সড শোল্ডার আর স্কাই হাই কেইপ—সবই ম্যাক্সিমালিজম ধারার নকশা। সাসটেইনেবল গার্মেন্টস ডিজাইনার কেভিন জারমানিয়ারার এবং নিউইয়র্কের ব্র্যান্ড বাকেরা প্রদর্শিত সংগ্রহেও দেখা যায় বিশালাকার পোশাক। সেগুলো এতই বড় ছিল যে র‌্যাম্প থেকে অতিথিদের সারি পর্যন্ত ছুঁয়ে যায়। সাম্প্রতিক কানের লালগালিচায় বহুল আলোচিত বলিউড তারকা ঐশ্বরিয়া রাইয়ের সাজপোশাকেও দেখা যায় প্রকটতার প্রবল প্রভাব। ভারতীয় ফ্যাশন ডিজাইনার ফাল্গুনী ও শেন পিককের কালো, সাদা আর সোনালি রঙের গাউনে প্রথম দিন হাজির হয়েছিলেন তিনি। পোশাকের আপাদমস্তকজুড়ে ম্যাক্সিমালিজমের দাপট। জ্যামিতিক নকশা পোশাকের মূল অংশজুড়ে। আর ট্রেইনে সোনালি ফয়েলের একঝাঁক ফুল। অলংকারেও বেশ বড় সাইজের সোনালি হুপ ইয়ার রিং।
২০২০ সাল থেকে ধীর পায়ে পুনরায় জায়গা করে নিতে থাকে ম্যাক্সিমালিজম। করোনাকালে দীর্ঘ সময়ের অবসাদ মানুষকে ফ্যাশন নিয়ে ভাবিয়েছে নতুন করে। এ বিষয়ে এফআইটি মিউজিয়ামের এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের কিউরেটর ও গবেষক ভ্যালেরি স্টিলের মন্তব্য পাওয়া যায় অন্তর্জালে। ২০২০ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘ফ্যাশনের পরিবর্তন একটি পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়া। ম্যাক্সিমালিজমের উত্থানের পেছনে প্রধান কারণ ছিল, করোনাকালীন একটি বড়সংখ্যক মানুষের মধ্যে ঘরের বাইরে যাওয়ার জন্য পোশাক পরে তৈরি হওয়া, সাজসজ্জার অভাব অনুভূত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে নিজেকে নিজের মতো সাজিয়ে তোলাকে অনেকের কাছে স্বাধীনতাতুল্য মনে হয়েছে; যা ম্যাক্সিমালিজমের প্রত্যাবর্তনের অন্যতম কারণ হতে পারে।’
মহামারির প্রস্থানের পরের পর্ব নিউ নরমাল। সেখানে বাধ্যবাধকতার নিয়মকানুন ছিল। এখন সেসব পুরোনো দিনের গল্প। সেই খরাকালের পৃষ্ঠা উল্টে নতুন করে উৎসবে বুঁদ সবাই। কিন্তু মনের অন্তরালে বন্দিজীবনের বিষণ্ন দিনের স্মৃতি এখনো দগদগে। তাই মিনিমালিজম কনসেপ্টের হিসাব-কিতাবের বাইরে জীবনযাপনের আকাক্সক্ষা প্রবল হয়ে উঠেছে। ফলাফল ম্যাক্সিমালিজম। এই কনসেপ্টের রঙের খেলা, মোটিফের প্রাণবন্ত উপস্থিতি, প্যাটার্নের কারসাজি—সবেতেই মন মজেছে ফ্যাশনিস্তাদের। মিনিমালিজমের মতো কোনো দার্শনিক কিংবা গুড কজ কনসেপ্ট ম্যাক্সিমালিজম ধারণ করে না; বরং এই সূত্রে পোশাক, সাজ, অনুষঙ্গ—সবকিছুতেই আনন্দ খোঁজার বাহানা। ম্যাক্সিমালিস্ট হতে পারবেন যে কেউ। এখানে রাজনীতি, পরিবেশবাদ কিংবা দর্শনের বেড়াজাল নেই। শুধু বোল্ড হতে হবে। কারণ, ম্যাক্সিমালিজম শিকল ভাঙার গান। বাঁধ ভাঙার গল্প। সেখানে সাহসের প্রয়োজন। বলা যায়, সেলফ প্রমোশন।
সূত্র শক্তি
ম্যাক্সিমালিজম ট্রেন্ড ২০২৪ এর মুকুটে আছে বেশ কয়েকটি পালক। সব কটি মাথায় পরে থাকতেই হবে এমন নয়। আবার রাখতে পারলে ভালো।
কালার কারেকশন
ম্যাক্সিমালিজম কালারফুল। রং রঞ্জনের স্বাধীন সুযোগ। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রং এই দর্শনে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই কালার প্যালেট শক্তি আর উজ্জ্বলতা নির্দেশ করে। উজ্জ্বল রানি গোলাপি, সবুজ, হলুদ—এই তিন রং প্রাধান্য পেয়ে থাকে। এর বাইরেও যেকোনো রং বেছে নেওয়া যেতে পারে। আবার দুই রঙের সঙ্গেও হতে পারে সন্ধি।
জুয়েলারি লেয়ারিং
গয়না ম্যাক্সিমালিজম ফ্যাশনে অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। জুয়েলারি পিসের সংযমী ব্যবহার এখানে দরকার নেই; বরং অতিরঞ্জনই সঠিক সিদ্ধান্ত। নেকলেসের লেয়ারিং, হাতে একাধিক ব্রেসলেট, আঙুলে একটির পর আরেকটি আংটি, কানের পিয়ারসিং—সবকিছুই এখন সই। প্রয়োজনের একটু বেশি হলেও সমস্যা নেই। কারণ, ম্যাক্সিমালিজমে বাড়াবাড়িই স্বাভাবিক! এখানে দ্বিধার কিছু নেই।
লাউড লেগ
ফ্যাশনে টপে রং নিয়ে যত রং-তামাশা হয়, সে তুলনায় বটম মনোযোগ পায় না বলেই মনে হয়েছে দীর্ঘ সময়। এই আধিক্য-বাহুল্যের সুরতালে বটমে স্টাইলিং জোর পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নব্বইয়ের দশকের আঁটসাঁট টাইটস এ সময়ে রংচং, প্রিন্টে দারুণ সুন্দর করে ফুটে থাকবে। টপে সলিড কালার রেখে বটমে কালারফুল টাইটস থাকতে পারে এভরিডে আউটফিটের ওয়্যারড্রোবে। লেগিংস বহু পুরোনো ফ্যাশন আইটেম বটে। তবে এবারে প্যাটার্নে এসেছে নতুনত্ব। প্যাটার্নড এবং এলাবোরেটলি কাট এখন ইন ট্রেন্ড। এ ছাড়া প্যান্ট, স্কার্ট, শর্টস কিংবা হালের জর্ট—সবই থাকতে পারে।
আর্টিস্টিক শু
ম্যাক্সিমালিজমের ঢেউ ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি ছুঁয়ে যাবে, তা বেশ বোঝা যাচ্ছে। জুতা শুধু হাঁটার জন্যই এমন ধারণার যুগ কিন্তু আর নেই। অবশ্যই জুতার প্রধান কাজ পদযুগলকে সুস্থ রাখা, তবে ফ্যাশনের অংশ হিসেবেও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কালার প্যালেটে হাজার রং থাকলেও জুতায় দেখা যায় হাতে গোনা কিছু শেড। এবার সেখানে ড্রামাটিক প্যাটার্ন, ভিন্ন রকম মোটিফ আর রঙের নতুনত্ব দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্যাটার্ন মিক্সিং
ম্যাক্সিমালিজমে সব সম্ভব। সম্ভব প্যাটার্ন মিক্সিংও। ড্রেসের প্যাটার্নে একটু মজা, একটু সাহস আর একটু অভিযান। যেন একটি খোলা ক্যানভাসে আঁকিবুঁকির স্বাধীনতা। তাই বলে অবশ্যই হোয়াইট বোর্ড আর কালারফুল পেন নিয়ে খামখেয়ালি নয়। নিজের ব্যক্তিত্ব কিংবা আবহাওয়ার সঙ্গে মিল রেখে প্যাটার্ন মিক্স করলে বেশ ভালো লাগে বলেই জানা যায়। কেননা, ম্যাক্সিমালিজম মানে আত্মবিশ্বাস বহিঃপ্রকাশের সুযোগ।
লেয়ার লেয়ার লেয়ার
একটি পোশাকের ওপরে অন্যটি পরে নেওয়ার পরামর্শ নতুন নয়। বাতাসে শীতের গন্ধ পেলেই এমন স্টাইলিং টিপস পাওয়া যায়। কিন্তু ম্যাক্সিমালিজম মোটেই বলছে না হিমশীতল দিনের জন্য অপেক্ষা করতে; বরং নিজের মতো করে পোশাক লেয়ারিংয়ে দারুণ স্টাইলিং সম্ভব—এই পরামর্শই পাওয়া যাচ্ছে ফ্যাশনিস্তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, লেয়ারিং কি ম্যাক্সিমালিস্ট ফ্যাশনের সহজ সমাধান? না, মোটেই তা নয়। তবে লেয়ারিংয়ের কারণে নতুনত্বকে বরণ করা সহজ হয়। নিজের যা আছে, তা ব্যবহারেই তৈরি হওয়া যায়। মিক্স অ্যান্ড ম্যাচে পাওয়া যায় সমাধান। রোজ রোজ নতুন কাপড় কেনার জন্য হাজার টাকা বাজেটের প্রয়োজন পড়ে না। যা আছে, তা নিয়েই নতুন ট্রেন্ডকে বরণের যুদ্ধে নেমে পড়া যায়।
বোল্ড বিগ জ্যাকেট
মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, ম্যাক্সিমালিজম কি সামার থট? শীত এলে দৌড়ে পালাবে? নাহ্! এমন কোনো আশঙ্কা নেই; বরং এবারের ফিরে আসায় হয়তো প্রমাণিত হবে, ফ্যাশনের জন্য ঠান্ডা কোনো বাধা নয়। উইন্টার ফ্যাশন হতে পারে নজরকাড়া। এবার বড় সাইজের জ্যাকেট অনেকের পছন্দ করে কেনার সম্ভাবনা রয়েছে। জ্যাকেটের একটি লুকানো গুণ রয়েছে। উইন্টার আউটারওয়্যার হিসেবে ওভারসাইজড জ্যাকেট যেমন পরিপূর্ণ পোশাক হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, তেমনি এই পোশাক নিজের মতো করে স্টাইলিং করা সম্ভব। আবার ব্যবহারও সহজ।
গ্রাফিক ব্যাগ
স্টাইলিংয়ের জন্য ব্যাগ অতি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই সঙ্গানুষঙ্গ বদলে দিতে পারে টোটাল লুক। ম্যাক্সিমালিজম তত্ত্বের ক্ষেত্রে ব্যাগ বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। গ্রাফিক ব্যাগ যেহেতু রঙিন, তাই ম্যাক্সিমালিজম অ্যাসথেটিকের সঙ্গে মিলেমিশে যেতে পারে। একই সঙ্গে বাস্তবসম্মত এবং সুপার ফান লুক তৈরি করতে এই ব্যাগ ব্যবহার করা সম্ভব। আকার নিয়ে নিরীক্ষা চলতে পারে। নকশা হতে পারে দৃষ্টিনন্দন।
টেক্সচার পার্টি
ফ্যাব্রিক টেক্সচার নিয়েও কাজ হয় এই ট্রেন্ডে। পোশাকে শুধু একটি নয়, ব্যবহৃত হতে পারে ভিন্ন রকমের একাধিক ফ্যাব্রিক। ফ্লাফি, মেশ, লেইস, পমপম, টাসেল, স্যাটিনসহ যেকোনো কিছু ব্যবহারেই পোশাকের টেক্সচারে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
হেড অ্যান্ড হেয়ার
ফ্যাশনে আবার মাথার কাজ কী—এমন প্রশ্ন মাথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে নাকি? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে জেনে রাখা ভালো, ফ্যাশনে মাথা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু উদ্ভাবনী নয়, নান্দনিক সুন্দরতায় সাজিয়ে নেওয়ারও সুযোগ আছে। ব্যবহার করা যেতে পারে হ্যাট, হেয়ার ব্যান্ড, স্ক্রাঞ্চি, হেয়ার র‌্যাপ, বিড, পাখির পালক—এ সবকিছুই ম্যাক্সিমালিজমের সুযোগে। হেলায় না হারিয়ে বরং নিজের মনকে প্রশ্ন করার সময়। ঠিক কীভাবে মাথা ও চুল সাজাবেন, সে অনুযায়ী সবকিছু জোগাড়যন্ত্র দ্রুত হলেই ভালো। চুলসজ্জাকে অবমূল্যায়ন নয়, যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে এ ট্রেন্ডে।
শিশুতোষ
টিনএজের মনটাকে জাগিয়ে তোলার সময় এখন। সেই যে কিশোরী বয়সের প্রথম দিককার মন কেমন অনুভূতি, যখন নিজেকে সাজাতে ইচ্ছা করত নিজের মতো করে, যখন বারণ, শাসন—সব লুকিয়েও নিজেকে ভালোবাসার প্রচণ্ড আকাক্সক্ষা ছিল মনজুড়ে, সে সময়ের মানুষটাকে ফিরিয়ে এনে মনমতো সাজার সময় এসেছে।
সাসটেইনেবল ম্যাক্সিমালিজম
টেকসই তত্ত্বের জোর যোগাযোগের খোঁজ পাওয়া যায় মিনিমালিস্টিক ফ্যাশনের সঙ্গে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে ম্যাক্সিমালিজম সাসটেইনেবল ফ্যাশনের প্রতিপক্ষ। টেকসই তত্ত্ব মেনেও ধারণ করা যেতে পারে ম্যাক্সিমালিজম। মিনিমালিস্ট আর ম্যাক্সিমালিস্ট ফ্যাশনিস্তাদের মাঝে টেকসই তত্ত্ব নিয়ে কোনো কলহ নেই। তাদের পার্থক্য স্বস্তি, আরাম—এসবে। সচেতন ম্যাক্সিমালিস্ট খুঁজে পাওয়া দুরূহ নয়; অন্তত এ যুগে। কারণ, বিশ্বজুড়ে ফ্যাশন আইটেমের ক্রেতার তালিকা এখন প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত—মিলেনিয়াল ও জেনারেশন জেড। এই দুই প্রজন্মই টেকসই ফ্যাশনের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছে। রিসাইক্লিং, থ্রিফটিং, প্রি-লাভড থিওরি জনপ্রিয় হয়েছে তাদের হাত ধরেই। মিনিমালিজমের টেকসই তত্ত্বের সঙ্গে সন্ধিতে ম্যাক্সিমালিজম রাজত্ব করে যেতে পারে অনায়াসে। কেননা, নতুন তত্ত্বে সাজতে সম্পূর্ণ নতুন পোশাক পরতে হবে এমন প্রতিজ্ঞা প্রয়োজন নেই। পোশাক অদলবদল, কাস্টমাইজেশনসহ আধুনিক ধারণা ব্যবহার করা যেতে পারে। রেন্টিং ক্লথ, অর্থাৎ প্রয়োজনীয় পোশাক ভাড়ায় নেওয়াকে এই ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ বলা হচ্ছে আগে থেকে। কেনাকাটার ক্ষেত্রে বাজেট প্ল্যান থাকলে ভালো। তাহলে প্রয়োজন বুঝে কেনার আগ্রহ থাকে। ফ্যাশন বর্জ্য কম তৈরি হয়। খরচের অতিরঞ্জনে লাগাম টানাই শ্রেয়; কারণ, অর্থ অপচয় ফ্যাশন সেন্স এলিভেট করতে ভূমিকা রাখে না। যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণে অল্প খরচে স্টাইলিশ লুক তৈরি করা সম্ভব। ডিক্লাটার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ, এতে আলমিরা খালি হবে, আবার অন্যের জন্য কেনার সুযোগ তৈরি হবে। এ ছাড়া কার্যকরী পদক্ষেপেও সমাধান খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।
কনশাস বায়িং, কনশাস সেলিং
 ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো নিয়মিত সিএসআর, অর্থাৎ করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি পালন করতে পারে। এতে তাদের কাছে যেমন পোশাকের বাড়তি সংগ্রহ বোঝা হয়ে দাঁড়াবে না; তেমনি ফ্যাশন যে শুধু সমাজের উচ্চবিত্তদের জন্য নয়, বরং সবার জন্য তা বোঝানো সহজ হবে। ম্যাক্সিমালিজমের দর্শনের সঙ্গে মিলও খুঁজে পাওয়া যায় এখানে। সব মানুষ স্বাধীনভাবে ফ্যাশনের ব্যাপকতা উপভোগের সুযোগ পাবে।
 পোশাকের মান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সচেতনতার সঙ্গে। যাতে পোশাক দীর্ঘদিন টিকে থাকে। দ্রুত সেলাই ছুটে যাওয়া কিংবা রং নষ্ট হলে পোশাকের লাইফ স্প্যান কমে যায়; যা ক্রেতাকে পুনরায় কিনতে বাধ্য করে। এতে ব্র্যান্ড লয়ালিটি হুমকির মুখে পড়ে। আবার প্রচুর ফ্যাশন বর্জ্যও তৈরি হয়; যা পরিবেশে ক্ষতির অন্যতম কারণ।
 পোশাকে নিজস্বতা ফুটিয়ে তুলতে কিছু কাজ নিজে করা যেতে পারে। তাতে পোশাকের পুনর্ব্যবহারকে বোঝা মনে হবে না; বরং শখ হিসেবে গ্রহণ করে সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটানো সম্ভব হবে।
 সচেতন ক্রেতা হিসেবে ট্রেন্ডে ভেসে যাওয়ার জো নেই। কারণ, সেখানে থাকে যুক্তি-অযুক্তির অযুত-নিযুত হিসাব। ম্যাক্সিমালিজমের ট্রেন্ডে কনশাস বায়িংয়ের জন্য প্রথম টিপ হচ্ছে, ইমপালস বায়িংয়ে বিগ নো। একই সঙ্গে ওয়ান টাইম ওয়্যারেও মানা। কারণ, প্রয়োজনের অতিরিক্ত কেনাকাটা কোনো ট্রেন্ডের জন্যই আবশ্যক নয়। অল্প কেনাকাটা করেও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা সম্ভব।
 আবার, ব্র্যান্ড নিউ প্রোডাক্ট কিনতেই হবে, এমনও নয়। সেকেন্ড হ্যান্ড কাপড়ে ফ্যাশন সম্ভব অনায়াসেই।
 নতুন পোশাক কেনার আগে রং, ফ্যাব্রিক, নকশা দেখার সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি বিষয় নিয়েও ভাবা যেতে পারে। তা হচ্ছে ফ্যাশন পিসটি সংগ্রহ করা ঠিক কতটা যুক্তিযুক্ত। না, নিক্তি নিয়ে মাপতে বলা হচ্ছে না। মনে মনে ভেবে নেওয়া যেতেই পারে। ওয়্যারড্রোবে নতুন পোশাক এলে তাতে যেন সংগ্রহের মান বাড়ে। ভিনটেজ হান্টে বেরিয়ে কম দামে পেয়ে গেলেই নিয়ে নেওয়ার আগে নিজেকে প্রশ্ন করা যেতে পারে কী কারণে এগুলো বিল কাউন্টারে এলো। যদি কারণ হয় দামে সাশ্রয়, তাহলে বারবার এর প্রয়োজন ভেবে দেখা যেতে পারে। আর যদি পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে দেরি না করে স্টাইলিং নিয়ে ভাবতে বসে গেলেই ভালো।
ম্যাক্সিমালিস্ট স্টাইলিং টিপস
ইচ্ছেমতো কেনাকাটা
ম্যাক্সিমালিজমের লাক্সারি উপভোগের জন্য আক্ষরিক অর্থে সব ইন ট্রেন্ড পিস কিনে নেওয়া আবশ্যক নয়। বোল্ড পিসের সংখ্যা একের পর এক বাড়ানো আবশ্যক নয়; বরং সুস্পষ্ট কোনো একটি ক্লদিং আইটেম অথবা জুয়েলারি পিসকে গুরুত্ব দিয়ে ম্যাক্সিমালিস্ট লুক তৈরি করা যেতে পারে।
অতিরিক্তে লাগাম
একটির সঙ্গে অন্যটির যোগাযোগ এক্সট্রিম ফ্যাশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আউটারওয়্যারে প্যাটার্নকে প্রাধান্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন যেন না হয়ে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখা শ্রেয়। পোশাকের পুরোটাজুড়ে প্যাটার্ন না রেখে সলিড আর প্যাটার্নের সন্ধি হলে দেখতে ভালো লাগবে। এ ক্ষেত্রে রংকে প্রাধান্য দেওয়ার অংশটিতে নিউট্রাল কালার বেছে নেওয়া যেতে পারে। অথবা প্যাটার্নের কালার প্যালেটে মনোযোগ দিয়ে সেখান থেকে উজ্জ্বলতম রংটিও থাকতে পারে পছন্দের তালিকায়।
অনুষঙ্গ আবশ্যক
ম্যাক্সিমালিজমের দুনিয়ায় শুধু পোশাক নিয়ে ভাবলে চলবে না; মনে রাখা চাই, এখানে অনুষঙ্গের সঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ। পোশাককে সরল নকশায় বেঁধে রেখেও তাকে অ্যাকসেসরিজের যথাযথ ব্যবহারে ম্যাক্সিমালিজমের সূত্রে নিয়ে আসা সম্ভব। তাই জানতে হবে পা থেকে মাথা অবধি কী কী অনুষঙ্গ ব্যবহার করা সম্ভব। হেড ব্যান্ড, ক্ল ক্লিপ, স্কার্ফ, ইয়ার রিং, নেকপিস, ব্রেসলেট, আংটি, জুতা, ব্যাগ—সবেতেই ম্যাক্সিমালিস্টের তকমা তৈরি করে দেওয়া যাবে।
ম্যাক্সিমালিস্ট মাস্ট হ্যাভ
২০২৪ সালের ট্রেন্ড হিসেবে ম্যাক্সিমালিজম জেঁকে বসবে বলে ধারণা ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি সংশ্লিষ্টদের। আর সেখানে কয়েকটি কি-পিস মাস্ট হ্যাভ হিসেবে থাকতে পারে।
স্যাটিন ব্লেজার
ম্যাক্সিমালিস্ট লুকের সঙ্গে ফ্যাব্রিকের রিচনেসের সন্ধি গুরুত্বপূর্ণ, তা ইতিমধ্যে বুঝে গেছেন নিশ্চয়ই। তাই লেয়ারিংয়ের জন্য স্যাটিন ব্লেজার বেছে নেওয়া যেতে পারে। স্যাটিনের আভিজাত্য এখানে গুরুত্বপূর্ণ। নিউট্রাল কালার প্যালেট থেকে বেছে নিলে যেকোনো কিছুর সঙ্গে পেয়ার আপ করা যাবে সহজে। ট্রেন্ডের উদ্দেশ্য যেহেতু আনন্দ উদ্‌যাপন, তাই ম্যাট শেড বরং এবার তোলা থাকুক। উজ্জ্বলে হোক উল্লাস।
ফ্যান্সি প্যান্ট
বটমে প্যান্ট সলিড কালারে আছে দীর্ঘদিন। এবারে ফিরে যাওয়া যেতে পারে ওয়াইটুকে এর গর্জাস ডিজাইনে। প্যান্টের পুরোটা জুড়ে হতে পারে নকশা। নি লেন্থ পর্যন্তও ভিন্ন অলংকরণ থাকতে পারে; এমনকি হেমলাইনের আঁকিবুঁকিতেও। পুরো প্যান্ট সিম্পল রেখে পকেটে আনা যেতে পারে ভিন্নতা। আবার এক প্যান্টের এক পা সলিড রেখে বাকি পায়ের পুরোটা জুড়ে নকশাতেও মানাবে।
জুয়েল টোনড ড্রেস
রুবি, স্যাফায়ার, এমারেল্ডের রংগুলোকে পোশাকে নিয়ে আসা যেতে পারে। সলিড কালারে ম্যাক্সিমালিস্ট হতে চাইলে নি লেন্থ টপই সই। স্লিভ হতে পারে কনুই অব্দি। ম্যাক্সিমালিজমের ইশারায় বেল্ট এবার দারুণ হিট। সেই হিট আইটেমেই হোক স্টাইলিং। মনমতো জম্পেশ একটি ওয়েস্ট বেল্ট লুকে অ্যাড করে নিলেই লুক তৈরি।
ম্যাক্সিমালিজম জীবনযাপনের এমন একটি ধারা, যেখানে সবকিছুই অতিরিক্ত। এমন অনেক কিছুর সম্মিলন, যেগুলো না হলেও চলে। অপরিহার্য নয়। খানিকটা আবদারের। খানিকটা অধিকারের। যেন নিজেকে নিজের মনমতো সাজিয়ে নেওয়ার সুযোগ। যেমন করে ছোটবেলায় পুতুল সাজানোর দিনগুলো। যেমন খুশি তেমন সাজোর আয়োজন। যেন একটি সাদা ক্যানভাস ইচ্ছেমতো রাঙানোর স্বাধীনতা। স্বীয় সত্তাকে প্রকাশ করার সুযোগ। নিজের মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা স্টাইলিশ মানুষটিকে বের করে আনার সুযোগ।

মডেল: তাসনিয়া ফারিণ
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: বেলওয়ারি বাই ব্লুচিজ
আইডিয়েশন ও স্টাইলিং: নুজহাত খান
শুট ফ্যাসিলিটেটর: নুসরাত শ্রাবণী
কৃতজ্ঞতা: এস কে ডেকর বাই সাইমুল করিম
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top