skip to Main Content

কভারস্টোরি I ডেস্ক টু ডায়াপারস

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম অবস্থানে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞে নিরলস শ্রম দিচ্ছেন এ দেশের নারীরা। বর্তমানে, এই খাতে মোট শ্রমিকের প্রায় ৫৫ শতাংশ নারী; যা শুধু শ্রম দেওয়ার ক্ষেত্রেই উপস্থিতি রয়েছে, বিষয়টি তা নয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখছেন। অনেকে আছেন নির্বাহী পদে। নীতিনির্ধারক আসনে আসীন যারা, তাদের মাতৃত্ব কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে কর্মপ্রতিষ্ঠানে, তা জানতেই সারাহ্ দীনার প্রয়াস। সঙ্গে এই ক্ষেত্রের দুই কর্ণধারের বক্তব্য

বাংলাদেশে আইন অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ের বয়স শুরু ১৮ বছরে। যাদের মাঝে অনেকে পড়াশোনা, বিয়ে আর সন্তান হওয়ার আগেই কর্মজীবন শুরু করেন। কাজ নিয়ে ব্যস্ত জীবনে হঠাৎ যখন আসে মাতৃত্বের পয়গাম, তখন থেকে ভাবনা শুরু হয় ভিন্নভাবে। ব্যস্ততার রুটিনে তখন আসে অতিব্যস্ততার সময়। মাতৃত্বকালীন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয়; যা বিবেচনায় নিয়ে উন্নত দেশগুলোতে মাতৃত্বের সময়টি কর্মজীবী মা কীভাবে কাজ করবেন এবং তার প্রতিষ্ঠান কীভাবে তাকে সহায়তা করতে পারে, সে বিষয়ে আইন রয়েছে। বাংলাদেশও নিজস্ব আইনের মাধ্যমে কর্মজীবী নারীদের মাতৃত্বকালীন অধিকার নিশ্চিত করে।
ছুটিপর্ব
বিদ্যমান শ্রম আইন বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন মো. কামাল হোসেন, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্যানেল আইনজীবী, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা, বাংলাদেশ। বাংলাদেশে প্রচলিত শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩), ধারা ৪৬, ৪৭ এবং বিধি ৩৮ অনুযায়ী যেকোনো নারী শ্রমিকের সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখের পূর্ববর্তী আট সপ্তাহ এবং সন্তান প্রসবের পরবর্তী আট সপ্তাহ অর্থাৎ মোট ষোলো সপ্তাহ পর্যন্ত পারিশ্রমিকসহ প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাওয়ার অধিকারী হবেন এবং নিয়োগকর্তা তাকে এই সুবিধা প্রদান করতে বাধ্য থাকবেন। তবে শর্ত থাকে যে, কোনো নারী শ্রমিক উক্ত সুবিধা পাবেন না যদি না তিনি তার নিয়োগকর্তার অধীনে তার সন্তান প্রসবের পূর্বে অন্যূন ছয় মাস কাজ করে থাকেন কিংবা যদি তার সন্তান প্রসবের সময় তার দুই বা ততোধিক সন্তান জীবিত থাকে, তবে এ ক্ষেত্রে তিনি অন্য কোনো ছুটি পাবার অধিকারী হইলে তা পাবেন। একটি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগকর্তা প্রসূতিকালীন সুবিধা দেন এবং এটি প্রতিষ্ঠানের সকল নারী শ্রমিকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ জন্য নিয়োগকর্তার কাছে একজন গর্ভবতী নারীকে তার শিশু জন্মদানের প্রত্যাশিত তারিখের আট সপ্তাহ পূর্বে প্রসবের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে লিখিত বা মৌখিকভাবে এই মর্মে নোটিশ দিবেন, উক্তরূপ কোনো নোটিশ না প্রদান করে থাকলে সন্তান প্রসবের সাত দিনের মধ্যে তিনি উক্তরূপ নোটিশ প্রদান করে তার সন্তান প্রসব সম্পর্কে নিয়োগকর্তাকে অবহিত করবেন। ৪৫ ধারার বিধান অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান মালিক সজ্ঞানে কোনো নারী শ্রমিককে তার সন্তান প্রসব তারিখের পরবর্তী আট সপ্তাহের মধ্যে কাজ করাতে পারবে না এবং কোনো নারী নিজেও সন্তান প্রসবের আট সপ্তাহের মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য নিয়োগ নিতে পারবে না। একই আইনের ৪৮ ধারার বিধান অনুযায়ী, একজন নারীর ষোলো সপ্তাহের প্রসবকালীন ছুটির মজুরি তার পূর্ববর্তী দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক মজুরির গড় হারে প্রাপ্য হবে। তবে এ বছরের এপ্রিল মাসে সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো সব প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ৬ মাস ছুটি দেওয়া এবং পূর্ণ বেতনসহ পিতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া, প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপনের সুপারিশ করেছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন।
আমাদের দেশের আইনে তৈরি পোশাকশিল্পের নারী কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা করে মাতৃত্বকালীন ছুটির উল্লেখ নেই। শ্রম আইন অনুযায়ী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো করে চার মাসের ছুটিই বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান মেনে চলে।
নতুন মায়ের জন্য
বাংলাদেশের মাত্র ২৩ শতাংশ গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি চাইল্ডকেয়ার ফ্যাসিলিটি দিয়ে থাকে। এই সুবিধা বেশির ভাগ জায়গায় শুধু শ্রমিকেরা পেয়ে থাকেন বলে জানা যায়। ৬ মাস থেকে ৬ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের জন্য এমন ব্যবস্থা রয়েছে। প্রশিক্ষিত কেয়ারগিভার সেখানে কর্মীদের সন্তানদের ভার নিয়ে থাকেন। ২০০৬ সালের শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো কারখানায় ৪০ জনের বেশি নারী শ্রমিক থাকলে সেখানে চাইল্ড কেয়ার রুমের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
বেশির ভাগ ফ্যাক্টরিতেই ডে কেয়ার সেন্টার শুধু কারখানার কর্মীদের ব্যবহারের জন্য; বিশেষ করে উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের উদ্দেশ্যেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নির্বাহীদের জন্য এমন ব্যবস্থা বেশির ভাগ কোম্পানিতে থাকে না। এর প্রধান কারণ দুটি বলে জানা যায়। প্রথম বিষয়টি হচ্ছে স্থানের অসংকুলান এবং অন্যটি বায়ারদের কাছ থেকে পাওয়া শ্রমিকের জন্য যথাযথ কর্মপরিবেশ তৈরির চাহিদা। নির্বাহী পদে যারা কাজ করেন, তারা সরাসরি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত নন। তাই তাদের বাচ্চার সুরক্ষা এবং যত্ন নিয়ে আলাদাভাবে ভাবতে হয় তাদের।
বিশ্বদরবার
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প রপ্তানিমুখী হওয়ায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। বাংলাদেশ ১৯৭২ সাল থেকে আইএলওর সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে ৩৬টি কনভেনশন ও একটি প্রটোকল অনুমোদন করেছে, যেগুলোর মধ্যে আটটি মৌলিক কনভেনশন অন্তর্ভুক্ত। বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশ কর্মসূচির মাধ্যমে এই আন্তর্জাতিক সংস্থা পোশাকশিল্পে শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করছে। ২০১৫ সাল থেকে এই কর্মসূচি প্রায় ৪৫০টি কারখানায় বাস্তবায়িত হচ্ছে, যেখানে প্রায় ১৩ লাখ শ্রমিকের মধ্যে ৫০ শতাংশ নারী শ্রমিক। এই কর্মসূচি কারখানা ও জাতীয় স্তরে সক্ষমতা বৃদ্ধি, সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধানে সহায়তা দিয়ে আসছে।
মায়ের মন
তৈরি পোশাকশিল্পের এক্সিকিউটিভদের সরাসরি উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকায় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে তারা সন্তান দেখাশোনার সুযোগ পান না। তখন তারা পরিবারের কারও সাহায্য নেন অথবা ন্যানির কাছেই এই সময়টাতে সন্তানের নিরাপত্তা খুঁজে থাকেন। শিশুর চাহিদা অনুযায়ী সবকিছু গুছিয়ে দিয়ে আসতে সচেষ্ট থাকেন বেশির ভাগ মা। তবু সন্তানকে দূরে রাখার প্রভাব পড়তে দেখা যায় অনেকের ওপরে। নিজেকে দোষারোপ করে থাকেন তারা। মায়ের মনের এই অবস্থাকে মম গিল্ট বলা হয়। এটি কর্মজীবী নারীদের জন্য একটি গভীর মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষত তারা যখন তাদের পেশাগত জীবন এবং মাতৃত্বের দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে চান। অনেক মা মনে করেন, তারা তাদের সন্তানদের প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দিচ্ছেন না বা যত্ন করছেন না। আবার অনেকের ধারণা, পেশাগত জীবনে অগ্রগতি বা পরিপূর্ণতা অর্জনে দায়িত্বের জন্য সন্তান ও পরিবারকে সময় দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
রেডিমেইড গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে যারা কাজ করেন, তাদেরসহ সকল কর্মজীবী নারীর মম গিল্ট অনুভূত হতে পারে; যা তাদের ব্যক্তিগত জীবন, শরীর ও মনকে আক্রান্ত করতে পারে। এই অনুভূতি দীর্ঘদিন থাকলে এটি অবসাদে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
সময় ব্যবস্থাপনা
অনেক মা তাদের কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবন সমানভাবে গুরুত্ব দিতে চান, কিন্তু সঠিকভাবে সময় ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে পড়ে। সন্তানের প্রতি প্রবল ভালোবাসা এবং কাজের জায়গার সঙ্গে প্রতিশ্রুতিশীলতার টানাপোড়েন অনেকের মধ্যে অতিরিক্ত উদ্বেগ ও ক্লান্তি তৈরি করতে পারে।
আত্মবিশ্বাস
অনেক কর্মজীবী নারী মনে করেন, তারা সফল কর্মী বা সফল মা হতে পারছেন না। এটি তাদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি এবং নিঃসঙ্গতার অনুভূতি তৈরি করতে পারে।
পারিবারিক সম্পর্ক
কর্মজীবী মায়েদের মধ্যে কখনো কখনো পারিবারিক সম্পর্কের চাপ তৈরি হতে পারে। কারণ, তারা সন্তানদের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর চেষ্টা করেন। একই সঙ্গে তাদের কর্মজীবনের ব্যাপারে মনোযোগী থাকতে হয়। এতে তারা পারিবারিক দায়িত্ব ও পেশাগত লক্ষ্যগুলোর মধ্যে টানাপোড়েন অনুভব করতে পারেন।
স্বাস্থ্য সমস্যা
বিভিন্ন রকম দায়িত্বের চাপ এবং অপর্যাপ্ত বিশ্রাম মায়েদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন অনিদ্রা, উদ্বেগ, বিষণ্নতা ইত্যাদি।
সমাজের চাহিদা
সমাজে বা পরিবারে নারীদের পেশাগত জীবনে সফলতা এবং তাদের মাতৃত্বের ভূমিকা একই সময় নিখুঁতভাবে পালন করার প্রত্যাশা থাকলে সেটিও মায়ের জন্য মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে।
স্নিগ্ধ সহানুভূতি
মা হওয়ার পরে কর্মস্থলে ফেরা মায়ের জন্য মোটেই সহজ সময় নয়। একই সঙ্গে তারা সন্তানের পাশে থাকার আকাঙ্ক্ষা এবং কাজে ফেরার চেষ্টাকে ভারসাম্য করেন। তাই এ সময়ে তাদের বেশ কিছু আবেগীয় পরিবর্তন আসে। সংবেদনশীলতা বাড়ে অনেকের ক্ষেত্রে। এমন সময়ে তাদের জন্য পরিবার ও সহকর্মীদের সমর্থন, কাজের পরিবেশের নমনীয়তা, প্রিয়জনের সঙ্গে দায়িত্বের ভাগাভাগি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইতিবাচকতা এবং সকলের হৃদ্যতা তাদেরকে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে সাহায্য করে।
কর্মসংস্থানের পাশাপাশি সমাজেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। সমাজের একক ইউনিট যেহেতু পরিবার, তাই এর কার্যকরী ভূমিকা পালন খুব জরুরি। মনে রাখা চাই, একজন ওয়ার্কিং মাদার একই সঙ্গে তার সন্তান, সংসার ও পেশাজীবন সামলে চলেন। কর্মজীবী মায়ের সহায়তায় পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কর্মক্ষেত্রে যেমন এগিয়ে গেছেন মেয়েরা, তেমনি পরিবার পরিচালনার ক্ষেত্রেও তাদের পাশে প্রয়োজন অন্য সদস্যদের।
দায়িত্ব বণ্টন
সন্তানের দেখাশোনা এবং দায়িত্বে সহযোগিতা করার মানসিকতা ওয়ার্কিং মাদারদের সাহায্য করতে পারে। পরিবারের অন্য সদস্যদের, বিশেষত স্বামী বাড়ির কাজ ভাগ করে নিলে কিছুটা চাপ কমে আসবে। সংসারের দৈনন্দিন কাজ; যেমন রান্না, কাপড় ধোয়া, বাজার করা ইত্যাদি ভাগ করে নিলে সহজে গুছিয়ে নেওয়া যাবে সব।
মানসিক সমর্থন
পরিবারের সদস্যরা মায়ের প্রতি সহানুভূতি ও ভালোবাসা দেখাতে পারেন। দিতে পারেন উৎসাহ। মা যখন নিজের কর্মজীবন এবং মাতৃত্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সংগ্রাম করছেন, তখন পরিবার যদি তার পাশে দাঁড়ায় এবং ভালো কাজের প্রশংসা করে, তাহলে তিনি মনোবল পাবেন। কর্মজীবী মায়ের মানসিক চাপ অনেক সময় বেড়ে গেলে পরিবারের সদস্যরা তার মনের কথা শোনার জন্য সময় ও সমর্থন দিলে তা মাকে অনেকটা আরাম দিতে পারে।
নিশ্চিত নিরাপত্তা
মা যখন কর্মজীবী, তখন পরিবারে অন্য সদস্যদের, বিশেষত শিশুদের দেখাশোনায় বাবার সহায়তা খুবই জরুরি। পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও বাবা শিশুর সঙ্গে সময় কাটালে মা মনোযোগ রেখে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
সুস্থতা ও সুখ
মা যদি তার কর্মব্যস্ত দিন শেষে কিছু সময় বিশ্রাম নিতে পারেন, তবে তার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। পরিবারকে মায়ের জন্য বিশ্রামের সময় বরাদ্দ করতে হবে। মাকে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে উৎসাহিত করা যেতে পারে। যেমন পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করার জন্য অনুপ্রাণিত করা ইত্যাদি।
সময় সামঞ্জস্য
পরিবার যদি মায়ের সময় ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করে, যেমন সপ্তাহের পরিকল্পনায় অংশ নেওয়া, ঘরের কাজ এবং সন্তানের দেখভালে সঙ্গ দেয়া, তাহলে মা তার সময় সঠিকভাবে ব্যবহারের সুযোগ পান। যেখানে কাজ, দায়িত্ব, সন্তানের প্রতি ভালোবাসা, স্বামীর সঙ্গে সময় কাটানো এবং বিশ্রাম—সবই জায়গা পাবে।
নেটওয়ার্ক তৈরি
কর্মজীবী মায়েরা কমিউনিটি তৈরি করতে পারেন, যেখানে তারা একে অপরের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে সক্ষম হবেন এবং অন্যের প্রয়োজনে সাহায্য করবেন।
শান্তি ও তৃপ্তি
পরিবার কর্মজীবী মায়ের মানসিক শান্তি এবং সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা যদি একে অপরকে সাহায্য এবং সমর্থন দেয়, তাহলে মায়েদের আরও সফলভাবে তাদের কর্মজীবন ও মাতৃত্বের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব।
মা মানেই সুপার উইমেন, একাই সামলে নিতে পারবেন সবটা—এই কথা আর ধোপে টিকছে না আজকাল। মায়েরাও যে মানুষ, তাদেরও যে ভর করে ক্লান্তি, সে বিষয়ে তৈরি হয়েছে সচেতনতা। প্রত্যাশার পারদের উচ্চ অবস্থান অনেক মাকেই বিষাদে ঢেকেছে। বাস্তবতা মেনে নিতে তাই বদ্ধপরিকর এখনকার বেশির ভাগ নারী। ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্সে বাড়ছে আগ্রহ। এমপ্লয়ি ওয়েলফেয়ারের বিষয়েও সচেতন পদক্ষেপ নিচ্ছে পরিচালনা পর্ষদ। দায়িত্বের চাপের পাহাড় সরিয়ে মায়েরা উপভোগ করবেন সম্পর্ক—এ-ই তো চাওয়া। মাতৃত্ব একটি সম্পর্কের আকর। আবার পেশাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই এই দুয়েই প্রয়োজন সন্ধি। যুদ্ধ মোটেই কাম্য নয়। তবেই মা আর সন্তান—দুই-ই থাকবে দুধে-ভাতে।

মন্নুজান নার্গিস
পরিচালক, রিভ টেক্স

আমার কর্মী দলের মধ্যে মেয়ের সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে অনেকে কাজে যোগ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়েই। এরপরে বিয়ে, সংসার আর সন্তান এসেছে জীবনে। চেষ্টা করেছি তাদের সব সময় আগলে রাখতে। দেশের প্রচলিত শ্রম আইন মেনেই মাতৃত্বকালীন সকল সুবিধা তারা পেয়ে থাকেন। ছুটি, বেতন—দুটি ক্ষেত্রেই তাদের অধিকার রক্ষা করা হয়। এর পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করতেও পাশে থাকার চেষ্টা থাকে সব সময়। মাতৃত্বকালীন ছুটির পরবর্তী সময়ে মা যেন নির্বিঘ্নে কাজে মনোনিবেশ করতে পারেন, সে জন্য দিবাকালীন যত্নের ব্যবস্থা আছে। ৬ মাস থেকে ৬ বছর বয়সী বাচ্চাদের সেখানে প্রশিক্ষিত কর্মীদের মাধ্যমে যত্ন করা হয়। মায়ের মনের অস্থিরতা দূর করার পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিষয়টি সাহায্য করে বলে আমি মনে করি। এতে মা যেমন চিন্তামুক্ত থাকতে পারেন, তেমনি শিশুও মাতৃদুগ্ধ এবং মায়ের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হয় না। ফলে আমার সহকর্মীরা মনোযোগের সঙ্গে কাজ করতে পারেন। আবার সন্তানের পুষ্টিহীনতা ও নিরাপত্তা নিয়েও দুশ্চিন্তা করেন না। আমাদের দেশের অনেক মেয়ে ক্যারিয়ারের একটি পর্যায়ে ব্রেক নিয়ে থাকেন। কখনো সে সিদ্ধান্ত বিয়ের কারণে হয়, আবার কখনো সন্তানের কারণে। পরিবারকে সময় দেওয়াকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত আমি ইতিবাচকভাবে দেখি। একই সঙ্গে মনে করি, ক্যারিয়ার ব্রেকের পরে একজন মানুষ আবার যদি কখনো কাজে ফিরতে চান, তাহলে তাকে সেই সুযোগ করে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকা দরকার। কর্মসংস্থানগুলো এ বিষয়ে বিশেষভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কারণ, দক্ষতা বয়সের বিচারে মাপার তুলনায় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে পরিমাপ করা বাস্তবসম্মত বলেই আমার ধারণা। ফিরে আসার সুযোগ থাকলে একজন নারী তার ক্যারিয়ারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহসী পদক্ষেপ নিতে পারেন। কারণ, একজন নারীর জীবনে সময়ের হিসাব করতে হয় খুব সচেতনতার সঙ্গে। প্রায়োরিটি সেট করার ক্ষেত্রে তাই খুব খেয়াল রাখতে হয়। পৃথিবীতে মানুষ জন্ম দিতে যেহেতু নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তাই তার জন্য আলাদা করে ভাবতে হবে। বাংলাদেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার পেছনে তরুণ প্রজন্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ, তারুণ্যই শক্তি। আর এই তরুণদের তৈরি করতে মায়েদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই মায়েদের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি সবার দায়িত্ব।

শরীফুন রেবা
পরিচালক, সারা লাইফস্টাইল লিমিটেড

সারা লাইফস্টাইলে বর্তমানে অনেক নারী কর্মী কাজ করছেন। আমাদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ অনুযায়ী নারী কর্মকর্তাদের জন্য মাতৃত্বকালীন সুবিধা দেয়। এর মধ্যে রয়েছে ১৬ সপ্তাহের (৮ সপ্তাহ প্রসবপূর্ব এবং ৮ সপ্তাহ প্রসবোত্তর) বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি। এই ছুটি নির্বাহী পদে কর্মরত নারীদের জন্যও প্রযোজ্য এবং আমরা নিশ্চিত করি তারা যেন এই সময়ে কোনো পেশাগত অসুবিধার সম্মুখীন না হন। ভবিষ্যতে আমরা নারী কর্মকর্তাদের জন্য আরও সুবিধা যুক্ত করার পরিকল্পনা করছি। এগুলোর মধ্যে থাকবে কাজের সময় নমনীয়, কারখানা প্রাঙ্গণে ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপন, প্রসবসংক্রান্ত চিকিৎসা সুবিধা এবং স্বাস্থ্য বিমার আওতায় অতিরিক্ত সুবিধা। সারা লাইফস্টাইলের উদ্দেশ্য নারী কর্মীদের জন্য এমন একটি কর্মপরিবেশ তৈরি করা, যেখানে তারা তাদের কর্মজীবন এবং পারিবারিক জীবনের মধ্যে সফলভাবে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেন। বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশিল্পে নারীদের অংশগ্রহণ কেবল শ্রমিক পর্যায়েই নয়, নির্বাহী ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও ক্রমশ বাড়ছে। সারা লাইফস্টাইল লিমিটেড স্নোটেক্স গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগে নারী কর্মীরা নির্বাহী পর্যায়ে সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। মাতৃত্বকালীন অধিকার সুরক্ষিত থাকায় তারা কাজে আরও বেশি আগ্রহী হচ্ছেন বলে আমি মনে করি।

মডেল: রাশনা আলী
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: ক্যানভাস
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top