skip to Main Content

সঙ্গানুষঙ্গ I রেইনড্রপ টু রানওয়ে

স্টেটমেন্ট থেকে স্ট্রিট লুকে ছাতা হয়ে উঠছে কুল অ্যাকসেসরিজ। যা আবহাওয়ার প্রতিরক্ষায় সীমাবদ্ধ নয়; ব্যক্তিত্বের প্রকাশও বটে

আউটফিট অব দ্য ডেতে আমব্রেলা হ্যাশট্যাগ নতুন কিছু নয়। বৃষ্টি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মূল্যহীন হয়ে যাওয়া ছাতা এখন পরিণত হয়েছে ফ্যাশন স্টেটমেন্টে। একসময় শুধু রোদ আর বৃষ্টি থেকে নিজেকে বাঁচাতে ব্যবহৃত হতো; যা কালো মোটা কাপড়ে তৈরি। এরপরে আসে পরিবর্তন। রঙিন ছাতাতে মন ভেজে। বাহারি প্রিন্টের কাপড়ও স্থান করে নেয় ধীরে ধীরে। তখন পর্যন্ত শুধু প্রয়োজনেই ব্যবহৃত হতো। পরিবর্তনের পূর্ণ রূপ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে বর্তমান সময়ে। কিন্তু ইতিহাসে পাওয়া যায় একটি মজার তথ্য। পুরোনো দিনেও ছাতা হয়ে উঠেছিল ফ্যাশন পিস। সে কেমন? মিসরের অভিজাত পরিবারের নারীরা ছাতা ব্যবহার করতেন। উদ্দেশ্য শুধু রোদ থেকে সুরক্ষা ছিল না; তখনো তাদের সাজপোশাকের অংশ হয়ে উঠেছিল এটি।
রানওয়ে রাশ
বর্তমান বিশ্বে সবকিছুই ব্যবহৃত হতে পারে ফ্যাশন টুল হিসেবে। কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। এবারের ফ্যাশনবিষয়ক আয়োজনেও দেখা গেছে ছাতার ব্যবহার। লন্ডন ফ্যাশন উইকে ব্রিটিশ বিলাসবহুল ব্র্যান্ড বারবেরি এনেছিল ছাতা। তাদের থিম ছিল ব্রিটিশ কান্ট্রিসাইড। যোগ করার কারণ হিসেবে জানা যায়, ইংরেজ এলিগ্যান্সে ছাতা গুরুত্বপূর্ণ। তাই বারবেরি তাদের সিগনেচার ট্রেঞ্চ কোটের সঙ্গে মিলিয়ে চেক প্রিন্টেড ছাতা এনেছে। সাংহাই স্প্রিং শোতে স্প্যানিশ ফ্যাশন ব্র্যান্ড ব্যালেন্সিয়াগা ব্যবহার করেছে ছাতা। থিম ছিল পোস্ট-অ্যাপোক্যালেপটিক রেইন। অর্থাৎ পৃথিবী ধ্বংসের পরবর্তী বৃষ্টি পর্ব। এই থিমের সঙ্গে মিল রেখে কালো আর ট্রান্সপারেন্ট ছাতা হাতে ক্যাটওয়াক করেছেন মডেলরা। এই ছাতাগুলো ছিল মিনিমালিস্ট কিন্তু ড্রামাটিক। পুরো শো যেন এক চলমান আর্ট ইনস্টলেশন। ইতালিয়ান লাক্সারি ব্র্যান্ড মসকিনো এই শোতে ক্যান্ডি কালারড ওভারসাইজড ছাতা ব্যবহার করেছে। সেখানে তৈরি করা হয়েছিল কল্পনার এক জগৎ। এর বহু আগে কিংবদন্তি ফ্যাশন ডিজাইনার কার্ল লেগারফেল্ডও কাজ করেছেন প্রিন্টেডও ট্রান্সপারেন্ট ছাতা নিয়ে। বিশেষত বৃষ্টি ও বাগানকে তিনি থিম হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। কোনো ছাতায় ছিল লেস; কোনোটায় এমব্রয়ডারির ছোঁয়া। ছাতা এখানে ছিল বিলাসিতা ও নারীত্বের প্রতীক। ড্রামাটিক লুক আনতে ব্যবহার করা হয়েছিল এই অনুষঙ্গ, এমনটাই জানা যায়।
ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি বিভিন্ন সময় চাহিদা অনুযায়ী নানা অনুষঙ্গ ব্যবহার করে। এ বছর সেখানে স্থান পেয়েছে ছাতা। জানা যায় ভিজ্যুয়াল ইমপ্যাক্ট সৃষ্টি অন্যতম প্রধান কারণ। ছাতা তার আকৃতি ও অবস্থানের কারণে সহজে অন্যের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম। রং, প্রিন্ট ও ফর্ম দিয়ে এটি ক্যাটওয়াকে এক দৃশ্যমান নাটকীয়তা আনে, যা ডিজাইনারদের জন্য স্টাইলিং হাইলাইট হিসেবে কাজ করে। অনেক সময় ছাতা একটি থিমকে পূর্ণাঙ্গ করে তোলে। যেমন রেইন, ব্রিটিশ হেরিটেজ বা রেট্রো গার্ডেন থিমে ছাতা অপরিহার্য।
ইন ট্রেন্ড
বর্তমান সময়ের ফ্যাশনে পরিবর্তন এসেছে বিভিন্নভাবে। প্রযুক্তি, যুগের পরিবর্তন, প্রজন্মের চাহিদাসহ নানান কিছু এখানে কাজ করেছে। বাস্তবসম্মত ফ্যাশনের দিকে ঝুঁকেছে মানুষ; যাকে ইন্ডাস্ট্রির ভাষায় বলা যেতে পারে প্র্যাকটিক্যাল ফ্যাশন। ছাতা এই নতুনেরই অংশ হিসেবে যোগ হয়েছে। কারণ, এটি একই সঙ্গে বৃষ্টি ও রোদ থেকে সুরক্ষা দেয়, আবার ফ্যাশনেও যোগ হতে পারে। অর্থাৎ স্টাইলিশও বটে। আবার এখানে ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সারদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তারা ছাতাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন। কদর বেড়েছে এতেও। ফটোশুট, ভ্লগ ইত্যাদিতে দেখা গেছে সৃজনশীল উপস্থাপনা।
ছাতার ডিজাইনে এখন নানা ধরনের নিরীক্ষা হচ্ছে। ফ্যাব্রিকে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ধারার প্রিন্ট, ট্রান্সপারেন্ট ম্যাটেরিয়াল। যোগ করা হচ্ছে ফ্রিল, ভেলভেট, কাঠের হ্যান্ডেল। ডিজাইনারদের কাছে ছাতা এখন নিজস্ব ক্যানভাসে পরিণত। তাই শুধু বৃষ্টির সময় প্রয়োজন মেটানোর বস্তু নয়; হয়ে উঠেছে ‘চলমান ক্যানভাস’। আর সেখানে চিত্রকর্ম তৈরি করে ফ্যাশন ডিজাইনাররা স্টাইল, বার্তা ও সৃজনশীলতা প্রকাশ করছেন। তাই আজকের ফ্যাশনে ছাতা হচ্ছে একই সঙ্গে প্র্যাকটিক্যাল ও ফ্যাশনেবল স্টেটমেন্ট।
ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশনে ছাতা পেয়ার আপ করতে দেখা যায় ট্রেঞ্চ কোট, লেয়ারড লুকসের সঙ্গে। রেইনি ডে অ্যাসথেটিক হিসেবে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা এই ছাতা দেশেও ট্রেন্ড হয়ে আসবে, সে তো বলাই বাহুল্য। এই দেশের ফ্যাশন বাজারে বর্ষাকে কেন্দ্র করে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, ওয়াইড লেগ প্যান্ট-টপসের মতো পোশাক তৈরি করে থাকেন ডিজাইনাররা। এসবের সঙ্গে সন্ধি হতে পারে ছাতার। রং মিলান্তি আবশ্যক নয়। কালার প্যালেট থেকে বিপরীত রংও বেছে নেওয়া যেতে পারে। স্বচ্ছ ফ্যাব্রিকের ছাতা নব্বইয়ের শেষ দিকে দারুণ জনপ্রিয় ছিল। এবারও ফিরতে পারে। বেল শেপ কিংবা ডেকোরেটিভ ছাতা যোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মসকিনো, শ্যানেল, ভ্যালেন্তিনো ব্র্যান্ডগুলো এবার কাজ করেছে সেগুলো নিয়ে। এই প্রভাব ফ্যাশন বিশ্বে পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

 ফ্যাশন ডেস্ক
মডেল: তানিয়া
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ইভান সরদার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top