কথায় কথায় বিদেশ ভ্রমণে ছুটে যান অথচ বাংলাদেশকেই ভালো করে চেনেন না। এমন মানুষের সংখ্যা প্রচুর। আবার এমন মানুষও কম নয়, যাঁরা ঢাকায় বসবাস করেন অথচ ঢাকার দর্শনীয় জায়গাগুলো সেভাবে ঘুরে দেখেননি। ঢাকায় বাস করে ঢাকার অনেক কিছুই না ঘুরে দেখার একটা বড় কারণ অবশ্য শহরের যানজট। তবে যানজটহীন মোগল আমলের প্রাচীন শহরের পুরোনো অলিগলি ঘুরে দেখার জন্য ঈদের ছুটির তুলনা নেই। ঈদে যাঁরা ঢাকার বাইরে যাবেন না, তাঁরা একদিন ঘোড়ায় টানা টমটম গাড়িতে চড়ে ছুটির সকালে বেরিয়ে পড়তে পারেন পল্টন, মতিঝিল, গুলিস্তান, সদরঘাট, তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজারে… পুরান ঢাকার পুরোনো বাড়িঘর, দালানকোঠা থেকে আহসান মঞ্জিলের দিকে, বড় কাটরা আর ছোট কাটরায়, লালবাগে, কিংবা হোসেনি দালানে বুড়িগঙ্গাকে পাশে রেখে ছুটতে পারেন তারা মসজিদ কিংবা সাতগম্বুজ মসজিদের দিকে ছুটির হাওয়ায় হাওয়ায়।
জি, যানজটে ঘেমেনেয়ে অনেক তো বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, সেমিনার কক্ষ থেকে বাসার দিকে অনেক তো ঘোড়দৌড় করেছেন, তাই একবার ঈদের ছুটিতে চেনা শহরকে অন্যভাবে ঘুরে দেখুন। ঈদের ছুটিতে সুনসান ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। আর এই নিজের শহরকে অন্যভাবে উপভোগ করতে ঐতিহ্যবাহী টমটম গাড়ির জুড়ি মেলা ভার। টমটমে চড়ে নিজের শহরকে নতুনভাবে উপভোগ করতে করতে আপনি হয়তো এই অতি-মেট্রো শহরের ইট-কংক্রিট-ইস্পাতের ভেতর থেকেই শুনতে পাবেন ইতিহাসের ফিসফিস স্বর!
আর্মেনীয় ও ব্রিটিশদের হাত ধরে এই টমটম গাড়িই ছিল ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ যানবাহন। পাকিস্তান আমলেও টমটম গাড়ির সংখ্যা ছিল প্রচুর। কিন্তু এখন প্রায় হেরিটেজ এই ঐতিহ্যশালী পরিবহনব্যবস্থা। তবে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত এখনো সাধারণ মানুষের জন্য টমটম গাড়ি চলাচল করে। বিশ থেকে ত্রিশ টাকার বিনিময়ে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত যে কেউ টমটমে চড়ে যাতায়াত করতে পারেন। যদিও রাজশাহী, দিনাজপুর, নওগাঁ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, যশোর অঞ্চলের শহর ও গ্রামে এখনো মাঝেমধ্যে ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে মালামাল ও যাত্রী পরিবহন করা হয়।
আর যদি কেউ টমটমে করে গোটা শহর ঘুরে দেখতে চান, তারও ব্যবস্থা রয়েছে। গুলিস্তান, পল্টন, ওয়ারী, সদরঘাট কিংবা সংসদ ভবন এলাকায় ঘোড়ায় টানা যেসব টমটম গাড়ি দেখতে পাওয়া যায়, এসব এলাকা থেকে ঘন্টায় দেড় থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে টমটম গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়। গঠনবৈচিত্র্যে নানা ধরনের টমটম গাড়ি আছে। সাধারণত পেছনে ৪ আসনসহ ২টি ঘোড়ায় টানা এই গাড়ির চারপাশ খোলা থাকে। তবে পুরোনো আমলের মতো পেছনের আসন চার দিক থেকে রঙিন জানালাসহ ঘিরে রাখারও ব্যবস্থা থাকে। কলকাতাতেও এই গাড়ি দেখতে পাওয়া যায়।
জানা যায়, আর্মেনীয়রা আঠারো শতকের শেষের দিকে ও উনিশ শতকের গোড়ায় শাঁখারীবাজারে সিরকো অ্যান্ড সন্স নামে একটি দোকান তৈরি করে। ওই দোকানে বিভিন্ন ইউরোপীয় দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি হতো। এই সিরকো প্রথম ঘোড়ায় টানা গাড়ি তৈরি করে। তখন ঢাকায় এই গাড়ির নাম ছিল ‘ঠিকা গাড়ি’। পরে ব্রিটিশরা এই যানবাহনকেই শহরের মুখ্য যানবাহনে পরিণত করে।
ছুটির হাওয়ায় আপনি টমটমে করে ঘুরতে পারেন টিকাটুলীতে, সদরঘাটে, তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার থেকে শাহবাগ, টিএসসি, রবীন্দ্রসরোবর, এমনকি ঘোড়া ছুটিয়ে দিতে পারেন বিজয় সরণি হয়ে ক্যান্টনমেন্টের দিকেও…