আকিজ বশির গ্রুপের সৌজন্যে আয়োজিত এসডিজি ব্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ডসের দ্বিতীয় সংস্করণে ৩৯টি টেকসই উদ্যোগকে সম্মানিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪) রাজধানীর লো মেরিডিয়েন হোটেলে ইনটেলিয়ারের সহযোগিতায় এক জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১৬টি বিজয়ী এবং ২৩টি অনারেবল মেনশন প্রাপ্ত ব্র্যান্ডকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের উদ্যোগে আয়োজিত এই সম্মাননার মূল লক্ষ্য টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বীকৃতি প্রদান করা। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘এই সম্মাননাগুলো কেবল অর্জনের স্বীকৃতি নয়, বরং সহযোগিতা ও প্রতিশ্রুতির বাস্তব উদাহরণ। এসডিজি অর্জনে আমাদের সবাইকে আরও সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’
২য় সংস্করণের ঘোষনার পর হতেই এসডিজি ব্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ডস ২০২৪ ব্যাপক সাড়া পায়। এ বছর ৪৫০ জনেরও অধিক অতিথির উপস্থিতিতে এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।
চলতি বছর নয়টি ক্যাটাগরিতে সম্মাননাটি প্রদান করা হয়। ১২ মে থেকে ১৩ জুন ২০২৪ পর্যন্ত চলমান রেজিস্ট্রেশন সময়কালে ৩৫৭টি মনোনয়ন জমা পড়ে, যেখান থেকে কঠোর মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিজয়ীদের নির্বাচন করা হয়। ৯ থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত ৮টি গ্র্যান্ড জুরি প্যানেলে ৩৭ জন ক্যাটাগরি বিশেষজ্ঞ একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিজয়ী ব্র্যান্ডগুলোকে বাছাই করেন।
জুরি সেশনে উল্লেখযোগ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ছিলেন মো. রুবাইয়াত সারোয়ার (ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইনোভেশন কনসালটিং প্রাইভেট লিমিটেড); তৌফিকুজ্জামান চৌধুরী (পিএমপি, জেনারেল ম্যানেজার, সাসটেইনেবিলিটি, রবি আজিয়াটা লিমিটেড); নাজরা সাবেত (সিনিয়র ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও, ফ্রেন্ডশিপ এনজিও); ড. রুবিনা হুসাইন (প্রেসিডেন্ট, সিড ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ); ইঞ্জিনিয়ার নাজনীন আক্তার (ডিরেক্টর, সোলারিক গ্রুপ); দিলরুবা এস খান (গ্রুপ হিউম্যান রিসোর্সেস ডিরেক্টর, আকিজ বশির গ্রুপ); আসিফ ইকবাল (গ্রুপ চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার, হামিদ গ্রুপ); সাইফ ময়নুল ইসলাম (সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা– আইএলও) এবং আরও অনেকে।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশের উত্থানে ব্র্যান্ডগুলোর টেকসইত্ব চর্চার গুরুত্ব বর্তমানে অপরিসীম। ব্র্যান্ডগুলোর ক্ষমতা রয়েছে সমাজ ও পরিবেশের বৃহত্তর স্বার্থে মানুষের আচরণ প্রভাবিত করার, উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করার এবং শিল্প খাতগুলো রূপান্তর করার। তাদের মূল কার্যকলাপে টেকসইত্ব অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল একটি স্থিতিশীল অর্থনীতি গড়ে তুলছে না, বরং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি আরও ন্যায়সঙ্গত, সমতাপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করছে।’
এই গালা অনুষ্ঠানের পূর্বে প্রথমবারের মতো আকিজ বশির গ্রুপের সৌজন্যে এবং ইনটেলিয়ার ও দ্য ডেইলি স্টারের সহযোগিতায় আয়োজিত হয় সাসটেইনাবিলিটি সামিট ২০২৪। সামিটের আলোচনায় ছিল একটি কী-নোট সেশন, দুটি প্যানেল ডিসকাশন, তিনটি ইনসাইট সেশন এবং একটি কেস স্টাডি। এতে অংশ নেন বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা, যারা ব্যবসার টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা ও ভাবনা শেয়ার করেছেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে আমাদের সম্মিলিতভাবে চর্চা করা ইতিবাচক পরিবর্তনের ওপর। টেকসইত্ব এখন আর শুধু একটি ধারণা নয়, এটি প্রতিটি ব্র্যান্ড ও প্রতিষ্ঠানের ডিএনএর অংশ হওয়া উচিত। আমরা এখন পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের আজকের সিদ্ধান্তই পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমাদের ভূমিকাকে সুদৃঢ় করবে।’
সম্মেলনটি শুরু হয় ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি জাভেদ আখতারের কী-নোট সেশনের মাধ্যমে। তিনি বাংলাদেশের ব্যবসায় টেকসইত্ব এবং এর অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে অভিমত পরিবেশন করেন।
এরপর আকিজ বশির গ্রুপের চেয়ারম্যান বশিরউদ্দিন আহমেদ প্রতিষ্ঠানটির টেকসই চর্চা নিয়ে একটি কেস স্টাডি উপস্থাপন করেন।
আয়োজনটির প্রথম প্যানেল আলোচনার শিরোনাম ছিল, ‘ভবিষ্যতের পৃথিবীর জন্য কেন বাংলাদেশি ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলোকে টেকসই হতে হবে,’ যা পরিচালনা করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং এশিয়া মার্কেটিং ফেডারেশনের সভাপতি ও বিবিএফ একাডেমির চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ ফেরহাত আনোয়ার। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ড. এ. কে. এনামুল হক (প্রফেসর, ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনোমিকস এবং ডিন, ফ্যাকাল্টি অব বিজনেজ অ্যান্ড ইকোনোমিকস, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি; প্রেসিডেন্ট, মার্কেটিং সোসাইটি অব বাংলাদেশ); সেলিম আর এফ হুসেইন (সিইও অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি); ড. মেলিটা মেহজাবিন (প্রফেসর, ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়); মো. সবুর খান (চেয়ারম্যান, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি) এবং সায়েফ নাসির (ম্যানেজিং ডিরেক্টর, সোশ্যাল মার্কেটিং এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড)।
এ ছাড়াও তিনটি ইনসাইট সেশনে আলোচিত হয় আধুনিক ও টেকসই অর্থায়ন, ব্যবসায়িক খাতে নবয়ানযোগ্য জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক নীতিমালা নিয়ে। সেশনগুলো যথাক্রমে পরিচালনা করেন লোপা রহমান (ইএসজি অফিসার, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন); শেহজাদ মুনিম (অ্যাডভাইজর অ্যান্ড ফরমার প্রেসিডেন্ট, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি; মেন্টর, লিডারশিপ একাডেমি) এবং সাইফ ইসলাম (সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার, ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন)।
সম্মেলনের দ্বিতীয় প্যানেল আলোচনা বা সিইও প্যানেলে নেতৃত্বের ভূমিকা এবং টেকসই উন্নয়নকে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য স্থাপন করার বিষয় উঠে আসে। আলোচনাটি পরিচালনা করেন পরিবর্তনকামী ব্যবসায়িক নেতা আসিফ ইকবাল। এ ছাড়াও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সাব্বির হাসান নাসির (ম্যানেজিং ডিরেক্টর, এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেড– স্বপ্ন); রূপালী চৌধুরী (ম্যানেজিং ডিরেক্টর, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড); আহসান খান চৌধুরী (চেয়ারম্যান অ্যান্ড সিইও, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ); কে এ এম মাজেদুর রহমান (গ্রুপ সিইও, এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড); রুবায়েত সারওয়ার (ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইনোভেশন কনসাল্টিং প্রাইভেট লিমিটেড) এবং সৈয়দ মাহবুবুর রহমান (ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি)।
সাসটেইনাবিলিটি সামিটের প্রথম আসরটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নের জন্য হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা এবং এসডিজি সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্নের উত্তর প্রদান করে। সম্মেলনে পারস্পরিক সহযোগিতার সুযোগ এবং এসডিজি চর্চায় ব্র্যান্ডগুলোর সম্ভাব্য গতিপ্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ ছাড়াও, উদীয়মান এসডিজি প্রবণতা ও উদ্ভাবনের বিষয়েও আলোচনা হয়। অংশগ্রহণকারীরা টেকসইত্বকে ব্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজির ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করার এই সুযোগকে অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেন এবং এ বিষয়ে উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া জানান।
সাসটেইনাবিলিটি সামিট ও এসডিজি ব্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ডস ২০২৪ অনুষ্ঠিত হয় আকিজ বশির গ্রুপের পরিবেশনায়। এ ছাড়াও সহযোগিতায় ছিলো ইনটেলিয়ার ও দ্য ডেইলি স্টার। আয়োজনটির সহায়তায় আরও ছিল ইন্টারন্যাশনাল এডভারটাইজিং অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ, এশিয়া মার্কেটিং ফেডারেশন (এএমএফ) এবং মার্কেটিং সোসাইটি অব বাংলাদেশ। সাপোর্টেড বাই পার্টনার ছিল ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট; টেকনোলজি পার্টনার আমরা টেকনোলজিস লিমিটেড; হসপিটালিটি পার্টনার লো মেরিডিয়েন ঢাকা; পিআর পার্টনার ব্যাকপেজ পিআর। বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম ও সাসটেইনেবল ব্র্যান্ড ইনিশিয়েটিভের আয়োজনে এবং বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় এই বছরের সাসটেইনেবিলিটি সামিট ও এসডিজি ব্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ডস।
- ক্যানভাস অনলাইন
ছবি: আয়োজকদের সৌজন্যে