বছরের শুরুতেই প্রথমবারের মতো বাবা-মা হয়েছে তারকা দম্পতি ফারুকী-তিশা। এরইমধ্যে দীর্ঘ বিরতি শেষে কাজে ফিরেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। ‘মুজিব’ চলচ্চিত্রের ডাবিং শুরু করেছেন তিনি। গত রোববার (৮ মে ২০২২) কন্যা ইলহামকে কোলে নিয়ে কাজে ফেরার ছবি নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট করেন এই অভিনেত্রী।
তার স্বামী প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরের দিনই (৯ মে ২০২২) নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে এক আবেগঘন পোস্টে স্ত্রীর প্রতি প্রকাশ করেছেন ভালোবাসা। আর তাতে উঠে এসেছে একান্ত অনুভূতি।
ফারুকী লিখেন, ‘তিশা যেদিন জানতে পারে ও কনসিভ করেছে তার কয়দিন পরেই ওর কাছে কল আসে বিশাল ভরদ্বাজের কাস্টিং ডিরেক্টরের কাছ থেকে। ঐ ছবিটার জন্যে যেটা নিয়ে পরে তারা আরো বেশ কিছু বাংলাদেশি অভিনেত্রীর সাথে কথা বলেছে, এবং যেটা নিয়ে নানা নিউজও হয়েছে। যাই হোক উনি জানান যে তিশাকে কাস্ট করতে চান তারা। শুটিংয়ের সময় জানিয়ে দিয়ে তারা জানায় তিশা আগ্রহী হলে তারা পরবর্তী বিষয়গুলো ঠিক করবে।’
‘তিশা স্কুল জীবন থেকে কাজ করছে। আগাগোড়া কাজ অন্তপ্রাণ একজন মানুষ কিভাবে এই বিষয়টাকে ডিল করে সেটা নিয়ে আমি ভাবতেছিলাম। কিন্তু তিশার যে কোনো সিদ্ধান্ত যেহেতু ও স্বাধীনভাবেই নেয়, আমি ওর সাথে এটা নিয়ে আগ বাড়িয়ে কিছু বলছিলাম না। আমি দেখলাম ও বেশ শান্তভাবে দ্বিতীয় দিন কাস্টিং ডিরেক্টরকে বুঝিয়ে বলে যে, সে কাজটা করতে পারছে না কারণ এই মুহূর্তে ও কোথাও মুভ করতে চাচ্ছে না, এই মুহূর্তে সে একটু নিরিবিলি থাকতে চায়, কারণ সে কনসিভ করেছে। কোনো রকম দোটান ছাড়াই ও ছেড়ে দেয় ঐ সুযোগটা,’ যোগ করেন ফারুকী।
তিনি ওই পোস্টে আরও লিখেন, ‘ঐ যে শুরু, তারপর দেখে আসছি একের পর এক তিশাকে ছেড়ে দিতে হয়েছে ঘুম, পছন্দের খাওয়া, নিজের জন্য রাখা সময়। আমি মোটামুটি চেষ্টা করি সব সময়ই তিশার পাশে থাকতে, এক সাথে ইলহামকে বড় করতে। তবু সব সময় আমি ভুমিকা রাখার সুযোগ পাই না। কারণ তিশা কিছু কাজের ব্যাপারে এতোই স্পর্শকাতর যে আমার হাতেও ছাড়তে রাজি না। ডায়পার পরানো, বা অন্যান্য কাজ আমার হাতে মাঝে মধ্যে ছাড়লেও গোসল করানোটা আমার হাতে ছাড়তে চায় না। তবু আমি লেগেই থাকি। চেষ্টা করি যতোখানি সম্ভব দায়িত্ব ভাগ করে নিতে। ধরা যাক ও ডাবিংয়ে গেলো, আমি বেবি সিটার হিসাবে ওর সাথে গিয়ে বসে থাকলাম দুরে কোথাও। কিন্তু একজন মাকে সন্তানের জন্য যা যা করতে হয়, যা যা জীবন থেকে ছাড়তে হয়, বাবারা চব্বিশ ঘন্টা সময় দিলেও মায়ের যে স্ট্রেস, যে কন্ট্রিবিউশন তার ধারে কাছেও যাইতে পারবে না।’
তিনি লিখেন, ‘এই কথাগুলা আমরা সবাই জানি। আমিও জানতাম, থিওরেটিক্যালি। কথাগুলোর অর্থ কি সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি বাবা হওয়ার পর, বাবা হয়ে সন্তানের মায়ের পাশে থাকার পর। আমি কখনো এই সব নানাবিধ দিবস টিবস পালন করি না। কিন্তু এবারের মা দিবসের উসিলাটা কাজে লাগাইয়া আমি তিশাকে এই কথাগুলা বলতে চাইছি। ডুব ছবিতে একটা সিন আছে না, সাবেরি মাকে সামনাসামনি ধন্যবাদ দিতে পারে না তাই একটু আড়ালে গিয়ে ফোন দিয়ে বলে? আমার অবস্থাও সেইরকম। মধ্যবিত্ত আড়ষ্টতায় সামনাসামনি ধন্যবাদ দিতে না পারার কারনে ফেসবুকে লিখে দিচ্ছি। লিখতে গিয়ে হচ্ছে আরেক বিপদ। একটু পর পর তিশা এসে বসে পাশে, কখনো ইলহাম খেলা করতে চায়। ফলে গতকাল শুরু করা লেখাটা আজকে এসে শেষ হইলো। বিলম্বিত মা দিবসের শুভেচ্ছার এই হেতু।’
বলে রাখা ভালো, ভালোবেসে ফারুকী ও তিশা ঘর বাঁধেন ২০১০ সালের ১৬ জুলাই। এই নির্মাতা-অভিনেত্রী জুটি ইতোমধ্যেই ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’, ‘টেলিভিশন’, ‘ডুব’ চলচ্চিত্রসহ বেশ কিছু চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ড্রামায় একসঙ্গে কাজ করেছে।