টেকট্রেন্ড I ভাঁজযোগ্য ফোন
প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মোটোরোলার হাত ধরে যাত্রা শুরু করে মোবাইল ফোন। সময়ের পরিক্রমায় এতে যুক্ত হতে থাকে নতুন নতুন সুবিধা। প্রায় এক যুগ আগে অ্যাপলের আইফোনের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে স্মার্টফোন। এর মধ্যে আসে ফোল্ডিং বা ভাঁজযোগ্য ফোন। সেখানে ছিল ফিচার ফোন থেকে বাড়তি সুবিধা। তাই খুব দ্রুত গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফোল্ডিং ফোন। স্মার্টফোনের দাপটে তা-ও আবার হারিয়ে যায়। তবে সদ্য সমাপ্ত মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে স্মার্টফোনের মোড়কে ফিরে এসেছে ফোল্ডিং ফোন। ধারণা করা হচ্ছে, ভাঁজযোগ্য এই ডিভাইস মোবাইল ফোনের ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করবে। বিশ্বের দুই শীর্ষ স্মার্টফোন নির্মাতা স্যামসাং ও হুয়াওয়ে ফোল্ডিং ফোন উন্মোচনের বৃহত্তর মঞ্চ হিসেবে এমডবি উসিকেই বেছে নিয়েছে। দীর্ঘ জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে উভয় কোম্পানি প্রদর্শন করেছে বহুল কাক্সিক্ষত ভাঁজযোগ্য স্মার্টফোন। চলতি বছরে এলজি, টিসিএলসহ আরও কিছু কোম্পানি ফোল্ডিং ফোন বাজারজাত করতে পারে।
হুয়াওয়ে মেট এক্স
হুয়াওয়ে এনেছে ফাইভ-জি সমর্থিত ভাঁজযোগ্য স্মার্টফোন মেট এক্স। ডিভাইসটির স্ক্রিন, ক্যামেরা, প্রসেসর থেকে ব্যাটারি— সবকিছুতেই রয়েছে নতুনত্ব। এই ফোনের বিশেষত্ব হচ্ছে, একই সঙ্গে স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট হিসেবে এটি ব্যবহার করা যাবে। এতে রয়েছে নমনীয় ওএলইডি প্যানেল এবং একটি ফালকন উইং মেকানিক্যাল হিং। প্রযুক্তিগত নতুন এ সুবিধার ফলে ফোনটির ভাঁজ খুললে আস্ত একটি ডিসপ্লে আসবে। ভাঁজ করা হলে স্মার্টফোনটির ডিসপ্লের আকার হবে ৬ দশমিক ৬ ইঞ্চি। ভাঁজ খোলা হলে ৮ ইঞ্চি ডিসপ্লের ট্যাবলেট পিসিতে রূপান্তরিত হবে এটি। এর পুরুত্ব ৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার। এতে ব্যবহৃত হয়েছে ফাইভ-জি সমর্থিত ৭ ন্যানোমিটারের চিপসেট বেলং ৫০০০।
স্যামসাং গ্যালাক্সি ফোল্ড
স্যামসাং মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে উন্মোচন করে ভাঁজযোগ্য স্মার্টফোন গ্যালাক্সি ফোল্ড। হ্যান্ডসেটটিতে থাকছে দুটি ডিসপ্লে। বাইরে থাকছে ৪.৬ ইঞ্চি অ্যামোলেড ডিসপ্লে এবং ভেতরে ৭.৩ ইঞ্চি সংকোচনযোগ্য অ্যামোলেড ডিসপ্লে। একে বলা হচ্ছে ইনফিনিটি ফ্লেক্স ডিসপ্লে। হ্যান্ডসেটটির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে যুক্ত হয়েছে ছয়টি ক্যামেরা। পেছনে থাকছে তিনটি, ভেতরের দিকে থাকছে দুটি এবং বাইরের ডিসপ্লের ওপরে বসানো হয়েছে অন্য একটি ক্যামেরা।
রয়েল ফ্লেক্সপাই
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক স্টার্ট-আপ রয়ওলের দাবি, বিশ্বের প্রথম ভাঁজযোগ্য ফোন তারাই নিয়ে এসেছে। নমনীয় ডিসপ্লে তৈরিতে বিশেষজ্ঞ এই প্রতিষ্ঠান চীনের বেইজিংয়ে ফ্লেক্সপাই নামের নতুন একটি হ্যান্ডসেট উন্মোচন করেছে। এই ডিভাইসে ৭.৮ ইঞ্চির একটি অ্যামোলেড পর্দা রয়েছে। এর ডিসপ্লের রেজল্যুশন ১৯২০*১৪৪০। এটি দেখতে বাজারে প্রচলিত অনেক ট্যাবলেট স্ক্রিনের চেয়ে বড়। স্ক্রিনটি তিনটি ছোট পর্দায় ভাগ হয়ে যায়— সামনে, পেছনে ও ভাঁজের মাঝখানে একটি। ফলে পর্দাটি দাঁড়ায় ৭.৫*৫.৩*০.৩ ইঞ্চি। প্রথম ফোল্ডেবল স্মার্টফোন বাজারে আনার কৃতিত্বটা স্যামসাং বা হুয়াওয়ে নেবে বলেই ধারণা করা হচ্ছিল এত দিন। কিন্তু স্মার্টফোন জায়ান্টদের তাক লাগিয়ে প্রথম ফোল্ডেবল স্মার্টফোন আনার কৃতিত্ব নিলো এই স্টার্ট-আপ।
মোটোরোলা রেজার
ভাঁজযোগ্য (ফোল্ডেবল) স্মার্টফোনের তালিকায় যুক্ত হয়েছে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মোটোরোলা। ইতিমধ্যে এর কাজ শুরু হয়েছে এবং শিগগিরই এটি বাজারে ছাড়া হবে। কোম্পানিটির গ্লোবাল প্রোডাক্টসের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড্যান ডেইরি জানান, এই ফোল্ডেবল স্মার্টফোন হবে অন্য রকম। সব ব্র্যান্ডই ফোল্ডিং ফোনের ক্ষেত্রে স্ক্রিন বাইরের দিকে রাখছে। কিন্তু এটায় থাকছে ভেতরের দিকে।
এলজি ভি৫০ থিঙ্ক
ভাঁজযোগ্য স্মার্টফোন এনেছে এলজি। ‘ভি৫০ থিঙ্ক’ নামের ফোনটিতে পাশাপাশি দুটি পর্দা রাখা হয়েছে। তবে একটির সঙ্গে অন্যটি পুরোপুরিভাবে য্ক্তু নয়। একটি ৬.২ ইঞ্চির এফএইচডি রেজল্যুশন ২১৬০*১০৮০, আরেকটি পর্দার আকার ৬.৪ ইঞ্চি ওএলইডি, যার রেজল্যুশন ৩১২০*১৪৪০। এতে আছে একটা ১৬ মেগাপিক্সেল এবং দুটো ১২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা। সামনে ৮ মেগাপিক্সেল ও ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা।
অপোর স্মার্টফোন
এবারের মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে চীনের স্মার্টফোন ব্র্যান্ড অপো ভাঁজযোগ্য স্মার্টফোন উন্মোচন করেছে। ডিজাইনের দিক থেকে দেখলে মনে হবে যে এটি হুয়াওয়ে মেট এক্স স্মার্টফোন। অপোর এই স্মার্টফোনেও সাইডবার আছে, যেখানে কয়েকটি ক্যামেরা যুক্ত। তবে অপো কবে এই ভাঁজযোগ্য স্মার্টফোন বাজারে নিয়ে আসবে, সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। অপো জানিয়েছে, এতে আউটওয়ার্ড-র্যাপিড ফ্লেক্সিবল পর্দা ব্যবহার করা হয়েছে। ফোনটি ভাঁজ করা অবস্থায় দুটি পর্দা দেখা যাবে। যখনি ভাঁজ খোলা থাকবে, তখন তা এক পর্দায় রূপান্তরিত হবে। খোলা অবস্থায় এটির পর্দার আকার হবে ৮ ইঞ্চি। ভাঁজ করা ফোন হলেও এতে রাখা হয়েছে আগের মতোই এলইডি ফ্লাশযুক্ত ডুয়েল ক্যামেরা।
টিসিএল ড্রাগন হিঞ্জ
চীনের বহুজাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান টিসিএল এবারের মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে ভাঁজযোগ্য এএমওএলইডি ডিসপ্লে প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে। একে বলা হচ্ছে ড্রাগন হিঞ্জ। এটি বিভিন্ন আকারের ডিভাইসে এই ভাঁজযোগ্য ডিসপ্লে দিতে পারে। টিসিএলের লক্ষ্য হচ্ছে সাশ্রয়ী দামে ভাঁজযোগ্য ডিসপ্লে যুক্ত স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট পিসি বাজারে নিয়ে আসা। এ বছরের মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে যে কয়টি ফোল্ডেবল ফোন আনা হয়েছে, সবই উচ্চ মূল্যের। কিন্তু টিসিএল অনেক কম দামের ভাঁজযোগ্য ডিসপ্লে যুক্ত ডিভাইস বাজারে ছাড়বে।
তৌহিদুল ইসলাম তুষার
ছবি: ইন্টারনেট