মনোজাল I উইন্টার ফ্যাশন ডিলেমা
আমাদের দেশে শীত আসে অতিথি পাখি হয়ে। দুই থেকে আড়াই মাস এর স্থায়িত্ব। নতুন সোয়েটার, শাল, জ্যাকেট থাকে এ সময়ের শপিং বাকেটে। সবাই সময়টা আনন্দ নিয়ে উপভোগ করেন, তা কিন্তু নয়। কেউ কেউ পড়েন বিশেষ শৈত্যকালীন উভয়সংকটেও
উইন্টার ফ্যাশন ডিলেমা বলতে মনের সেই অবস্থাকে বোঝায়, যেখানে একজন মানুষ নিজের উইন্টার আউটফিট নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েন। ঠান্ডা পড়লে স্কিন, লেয়ারিং আর পুরো অ্যাপিয়ারেন্সই একটু বদলে যায়; সেই কারণে লুক নিয়ে সংশয় তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
বাংলাদেশে উইন্টার ফ্যাশন ডিলেমা একটু বেশি অনুভূত হওয়ার কারণ, এখানে ঠান্ডা হঠাৎ নেমে আসে, আর মৌসুমটা খুবই ছোট। ফলে অনেকের ঠিকমতো শীতের জন্য তৈরি থাকা হয় না। শীত তুলনামূলক স্বল্পকালীন বলে অনেকের সংগ্রহে উইন্টার আউটফিটও কম থাকে; একই জ্যাকেট, শাল বা সোয়েটার বারবার পরার কারণে লুককে নিজের কাছে নতুন লাগে না। আমাদের ফ্যাশন কালচার সামার-ফোকাসড; তাই ট্রেন্ডি লেয়ারিং বা স্টাইলিশ শীতের কালেকশন কম পাওয়া যায়। এর মধ্যে শীত হলো ইভেন্ট-সিজন, অর্থাৎ বিয়ে, পার্টি, অফিস পার্টি—সব মিলিয়ে স্টাইল আর উষ্ণতার মধ্যে ব্যালেন্স করা অনেকের পক্ষে বেশ বড় স্ট্রাগল। তবে কি শীত এলে ফ্যাশনের প্রতি যে আগ্রহ আমাদের তৈরি হয়, ঠিকঠাক না বুঝতে পারার কারণে তাতে গোড়াতেই গলদ ঘটে? কুয়াশায় যেন আত্মবিশ্বাস ঢেকে না যায়, সে জন্য ছোট কিছু বুদ্ধি মনে রাখা যেতে পারে। তাহলে শীতের সুন্দরতা বেশ জমে যাবে।
লেয়ারিং
ফ্যাশন চাই, আবার শীতকে কাবু করতেও? এ জন্য একটাই খুব ভারী বা মোটা কাপড়ের শীতের পোশাক পরতে হবে, এমনটা নয়। একাধিক পোশাকে লেয়ারিং করলে এই ডিলেমা থেকে অনেকটুকু মুক্তি পাওয়া সম্ভব। বেইজ লেয়ারে নিউট্রাল কালার যেমন কালো, সাদা, ন্যুডের লাইটওয়েট লং স্লিভ টি-শার্ট বা থিন টার্টলনেক পরতে পারেন। মিডল লেয়ারে থাকতে পারে মিডিয়াম ওয়েট কটন কিংবা নিট ব্লেন্ডের সোয়েটার বা কার্ডিগান, হুডি, ব্লেজার বা ডেনিম জ্যাকেট। আউটার লেয়ারে থাকতে পারে লাইট জ্যাকেট, শাল বা কটি, লাইট কোট। শালটা হাতেই রাখতে পারেন এ ক্ষেত্রে। নিউট্রাল কালারের কুর্তা পরলে সঙ্গের কোটটি বেছে নিন একই লেন্থের। এতে ব্যালেন্স ক্রিয়েট হবে।
স্টাইলিশ সেকেন্ড লেয়ার
বাইরে ঠান্ডা, অথচ ভেতরে গরম—এমন পরিবেশে লেয়ারিং কীভাবে করা যায়? আউটার লেয়ারে যা থাকে, তা যেন বেশি আরামদায়ক ও স্টাইলিশ হয়—এমন ভাবনা থাকতেই পারে। তবে জানেন তো, আউটার লেয়ারই আগে রিমুভ করতে হয়! তাই ফ্যাশন আপগ্রেড করার জন্য মিডল লেয়ার বেছে নেওয়া যেতে পারে। এ জন্য অবশ্যই কটন, খাদি বা লাইটওয়েট উল ব্লেন্ডের যেন ফ্যাব্রিক হয়, সেদিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। অন্যথায় সিনথেটিকে লুকটা হয়তো এনলাইটেন হবে; কিন্তু কমফোর্ট মিলবে না। তাই চুজ ওয়াইজলি!
বটম লেয়ারে কমফোর্ট
উইন্টার ওয়্যারের কথা যখন বলছি, শুধু আপার বা আউটার লেয়ার দিয়েই তো ফ্যাশন শেষ করা যায় না। বটম লেয়ারও সমান জরুরি। হিট রিটেইনিং ফ্যাব্রিকে তৈরি ইনার ওয়্যার পরলে বাল্কনেস বোঝার উপায় থাকে না। এ ক্ষেত্রে থার্মাল লেগিংস কাজ করে গেম চেঞ্জারের মতো! স্কার্ট, ড্রেস, জিনস বা সব ধরনের আউটফিটের সঙ্গে পরা যায়। হাই ওয়েস্টেড লেগিংস ওয়ার্ম রাখতে খুব ভালো কভারেজ দেয়।
স্মার্ট অ্যাকসেসরিজ
উইন্টারে অ্যাকসেসরিজ লাগবে—এটাও যেমন সত্যি, তেমনই কিছু সময় পার হয়ে গেলে বেশিক্ষণ পরতে ভালো লাগবে না, তা-ও বাস্তবতা। সেই সঙ্গে চুল এলোমেলো হয়ে যাওয়া কিংবা আউটার লেয়ারের সঙ্গে স্কার্ফের ওভারসাইজ হওয়ার ঝক্কি তো আছেই! এ ক্ষেত্রে স্টেটমেন্ট স্কার্ফ আপনার সময় ও ফ্যাশন—দুটোই বাঁচিয়ে দিতে পারে। সুন্দর প্যাটার্ন বা টেক্সচার্ড স্কার্ফ বা মাফলার বেছে নিলে নিউট্রাল কোটের সঙ্গে কালার বেশ ভালোভাবে পপআপ করবে। খুব টাইট করে না বাঁধলেও চলবে; আলতোভাবে বেঁধে নিলে লুক দেখাতে পারে এফোর্টলেস। আউটফিট এলিভেট করা যেতে পারে স্টাইলিশ বেল্ট বা স্টেটমেন্ট জুয়েলারি দিয়েও। ফ্যাশন স্টেটমেন্টকে ট্রান্সফর্ম করে দিতে পারে সিম্পল এই এডিশন। স্টাইলিশ লুকের জন্য উইন্টারে অ্যাংকেল বুটস বা হাই টপ স্নিকার্স হয়ে ওঠে ফ্যাশন স্টেটমেন্টের অংশ। মিনিমাল ফ্যাশনে স্টাড বা শর্ট ড্যাংলিং ইয়ার রিং সাজকে অপূর্ণ থাকতে দেবে না একদমই।
উইদ আ উইন্টার স্পিন
শীত তো কী হয়েছে, শাড়ি পরা বাদ? মোটেই না! শাড়ি পরা বাদ না দিয়ে বরং ফুলস্লিভ বা থ্রি কোয়ার্টার স্লিভ ব্লাউজ বেছে নেওয়া যেতে পারে। রিচ ফ্যাব্রিক যেমন ভেলভেট র সিল্ক এ ক্ষেত্রে এলিগেন্ট টাচ দেবে। সঙ্গে যদি শাল ড্রেপ করে নেওয়া যায়, উইন্টার লুকটা যে ক্ল্যাসি হয়ে উঠবে, সে আর নতুন কি! সালোয়ার-কামিজ গতানুগতিক পোশাক হলেও উইন্টারে এই জোড়ের আবেদন কমে না। কটন, খাদি বা লাইটওয়েট উলের ব্লেন্ড করা ফ্যাব্রিক বেছে নেওয়া শ্রেয়। সালোয়ার-কামিজ বা কুর্তির সঙ্গে লেয়ারড স্কার্ফ বা ওড়নাও বেশ উষ্ণতা দেবে।
ডোপামিন স্টেটমেন্ট
ঠান্ডা-ঠান্ডা সকালে ঘুম থেকে উঠে ডোপামিন ড্রেসিং করে ফেললে মন্দ হয় না। বাতাসের সঙ্গে মিলিয়ে উইন্টার প্যালেট খানিকটা বোরিং হয় সত্যি; তবে পারসোনালিটি অনুযায়ী একে পপআপ করা সম্ভব। নিউট্রাল আউটফিটকে মুহূর্তেই ভাইব্রেন্ট করে তুলতে কালার চয়েস খুব গুরুত্বপূর্ণ। চকলেট, মকা বা ক্যামেল শেড মিলিয়ে পরতে পারেন। নিউট্রাল কালারকে মুহূর্তেই ওয়ার্মার ও রিচ করে তুলতে পারে ব্ল্যাক বা গ্রে। চিলি রেড বা মেরিগোল্ড ইয়েলো শেড বেশ পাওয়ারফুল হট শেড হিসেবে পরিচিত। সোয়েটার বা অ্যাকসেসরিজ যদি এই রঙের হয়, তবে নজরকাড়া না হয়ে উপায় কী? এই সিজনে মিন্ট গ্রিনও মন্দ নয়। নিউট্রাল কোটের সঙ্গে মিন্ট গ্রিন নিট লেয়ার করলে লুক বেশ রিফ্রেশিং লাগবে। এমারেল্ড বা রয়্যাল ব্লু কালারের ভেলভেট বেছে নিলে ডিপ জুয়েল টোন পাবেন সহজে। যেকোনো উইন্টার ইভনিং ইভেন্টে কুর্তি, ব্লেজার বা শালের ক্ষেত্রে এই ফ্যাব্রিক বেছে নেওয়া যেতে পারে।
ওয়েস্টার্ন ব্লেন্ড
উইন্টারে ওমও থাকবে, সঙ্গে ফ্যাশনও। কিন্তু ফ্যাশনের ইতিহাস বলে, এ খুব একটা সহজ কর্ম নয়! তবে বাঁচোয়াটা হচ্ছে, বাংলাদেশি ক্র্যাফটসম্যানরা ওয়েস্টার্ন অ্যাসথেটিকসকে বেশ ভালোভাবেই ব্লেন্ড করেছেন। দেশে এখন পাওয়া যাচ্ছে জামদানি বুনন, বেনারসির নকশায় ও নানা মোটিফে তৈরি প্যাচওয়ার্ক লেদার জ্যাকেট। যেগুলো বানানো হচ্ছে বিভিন্ন উৎসব যেমন বিয়ে, বারবিকিউ পার্টি এবং নতুন বছরকে উদ্যাপন করতেও। শীতে এসবের সঙ্গ নিয়ে কাটাতে পারেন উইন্টার ফ্যাশন ডিলেমা।
আরফাতুন নাবিলা
মডেল: আনসা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: জিয়া উদ্দীন
