লেবেল অ্যালার্ট I টেলস অব বাংলাদেশ
আন্তর্জাতিক ফ্যাশন বিশ্বে স্বদেশকে তুলে ধরার প্রত্যয়ে শুরুয়াত। আধুনিকায়নের প্রয়াসেও মিশে আছে শিকড়ের টান
টেলস অব বাংলাদেশের যাত্রা শুরুর নেপথ্য গল্পে জানা যায়, দেশপ্রেমই সেখানে মুখ্য। ডিজাইনার ও উদ্যোক্তা নুসরাত ফাতেমা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ফ্যাশন বাজারের অভিজ্ঞতায় দেশে তৈরি ডিজাইনার ওয়্যার নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। যেখানে বাংলাদেশের ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য মিশে থাকবে পুরোটায়। এর পরের পথে এগিয়েছেন একাগ্রতা নিয়ে। দেশি তো বটেই, মুগ্ধ হয়েছেন বিদেশি ক্রেতারাও।
প্রোডাক্ট লাইনে আছে শাড়ি। এ নিয়ে বিশদ ক্যানভাসে কাজ হচ্ছে নিরলস। হাত তাঁতের জয়জয়কার সেখানে। বহুমূল্য জামদানির বড় আয়োজনের পাশাপাশি রেশম বুননের সম্ভারও বেশ। আবার টাঙ্গাইল তাঁতও উপস্থিত। এর সঙ্গে সমকালীন চাহিদাকেও গুরুত্ব দিচ্ছে এই ব্র্যান্ড। যোগ হয়েছে ভিনদেশি নকশা। যেখানে তুর্কির কাফতান যেমন আছে, তেমনি উপমহাদেশের সালোয়ার-স্যুটও। সময়ের চাহিদায় আছে হালের কো-অর্ডিনেটেড সেট আর কুর্তি। অলংকরণে নুসরাত বরাবরই হাতের কাজকে গুরুত্ব দেন। হ্যান্ড পেইন্ট, হ্যান্ড ব্লক আর হ্যান্ড এমব্রয়ডারির ব্যবহার তাই চোখে পড়ে লেবেলটির পোশাকে।
বাংলাদেশি এই ফ্যাশন ব্র্যান্ড ডেটাবেইসে সংরক্ষণ করে ক্রেতার ইচ্ছা-অনিচ্ছা। সেখান থেকে জানা গেল, বর্তমানে টেলস অব বাংলাদেশের ডেইলি ওয়্যারের কাস্টমার ডিমান্ড সবচেয়ে বেশি। আরও জানা যায়, ক্রেতারা কোনোভাবে আপসে আগ্রহী নন। আরাম ও সুন্দরতা—দুই-ই তাদের চাই। টেলস অব বাংলাদেশও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কমফোর্টেবল স্টাইলিশ পোশাক তৈরি করছে। নুসরাত যেকোনো কালেকশন তৈরির আগে ক্রেতার চাহিদা নিয়ে যেমন ভাবেন, তেমনি নিজের শিল্পীসত্তার সৃজনশীলতারও ঘটান প্রকাশ। বারো হাত শাড়ির নকশায় ভীষণ মন টানে তার। প্রমাণ মেলে এই পোশাকের বিশাল কলেবরে। পাশাপাশি কো-অর্ডিনেটেড ড্রেস নকশাতেও দারুণ আগ্রহী তিনি। প্রতিটি ডিজাইনকে সাহসী, আরামদায়ক ও নান্দনিক দিক থেকে সমৃদ্ধ করে তোলার চেষ্টা জারি রেখেছেন। পোশাকের প্রতিটি অংশের কারিগরি নিখুঁততা এবং নকশার সৌন্দর্যকে দিচ্ছেন সমান গুরুত্ব।
ফিউশন স্টাইল, আধুনিক কাট ও দেশীয় মোটিফের সংমিশ্রণে সম্পন্ন হয় নতুন নকশা। প্রেরণার উৎসে মানুষের জীবনধারা, রঙের পছন্দ, বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। নুসরাত বলেন, ‘ফ্যাশন আমার ব্যক্তিত্ব প্রকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। রং, কাট ও নকশার মাধ্যমে পোশাকে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃজনশীলতা ফুটিয়ে তুলতে চাই। ফ্যাশন শুধু পোশাক নয়; এটি একটি ভাষা; যা ব্যক্তিত্ব, রুচি ও অভিজ্ঞতাকে প্রকাশের সুযোগ দেয়। প্রতিটি ডিজাইন যেন আমার নিজস্ব প্রতিকৃতি হয়ে ওঠে, সেদিকে খেয়াল রাখি।’
বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে ক্লোদিং অ্যান্ড টেক্সটাইল বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন নুসরাত। সেখানেই কারিগরি দক্ষতা, কাপড়বিষয়ক জ্ঞান ও নকশা গঠনের শিক্ষা পেয়েছেন। অলংকরণের মুনশিয়ানাও সেখান থেকে পাওয়া। নানা রকম অর্নামেন্টেশন টেকনিকের মাঝে হ্যান্ড এমব্রয়ডারির প্রতি তার আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। পুঙ্খানুপুঙ্খ ও সূক্ষ্ম নকশার গভীরতা যোগ করার ইচ্ছা এই ডিজাইনারের। সেখান থেকে হাতে তৈরি কারুকাজের প্রতি অগাধ আস্থা।
নুসরাত বিশ্বাস করেন, ফ্যাশন সবার জন্য। তাই তার ব্র্যান্ডের ডিজাইন তৈরি করা হয় শরীরের আকার, উচ্চতা ও গঠনের ভিন্নতা মাথায় রেখে। উদ্দেশ্য, প্রত্যেক ক্রেতার মনে আত্মবিশ্বাস ও আরামদায়ক বোধ তৈরি। ফ্যাশন কেবল স্টাইলিশ না হয়ে স্বাতন্ত্র্য ও আত্মমর্যাদার প্রতীকও হয়ে উঠুক, এই চেষ্টা টেলস অব বাংলাদেশ করে থাকে। যার প্রতিফলন পোশাকের বিনিময় মূল্যেও পাওয়া যায়। মূল্য ৩ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা। নিম্ন দামের প্রোডাক্টগুলোতে রয়েছে দৈনন্দিন কুর্তি ও মিনিমাল কাফতান। মধ্যম মূল্যের প্রোডাক্টে অন্তর্ভুক্ত হ্যান্ড এমব্রয়ডারি যুক্ত শাড়ি ও করসেট। উচ্চ দামের প্রোডাক্টগুলোতে ব্যবহৃত হয় প্রিমিয়াম ফ্যাব্রিক, পুঙ্খানুপুঙ্খ হ্যান্ডওয়ার্ক ও কাস্টমাইজড ডিজাইন। এই পরিসর নিশ্চিত করে, প্রত্যেক ক্রেতা যেন বাজেট অনুসারে মানসম্মত ও আকর্ষণীয় ডিজাইন পান।
ফ্যাশন ডেস্ক
ছবি: টেলস অব বাংলাদেশের সৌজন্যে
