রসনাবিলাস I বড় পাতে বিচিত্র পদ
পছন্দের সব রেস্টুরেন্ট এক ছাদের নিচে। খাবারের দামটাও ফুডকোর্টের মতো। পকেটকে ভয় পাইয়ে দেয় না। এটি সম্ভব হয়েছে ওয়ান বিগ প্লেটের সৌজন্যে
ঢাকা শহরে এখন ফুডকোর্টের রমরমা। হালের সংযোজন ধানমন্ডির সাতমসজিদ সড়কের ওয়ান বিগ প্লেট। এখন ফুডকোর্টগুলো আর মৌসুমি বা শখের ব্যবসায়ীদের হাতে নেই; যা নিয়ে এত দিনের অভিযোগ ছিল ভোজনরসিকদের। ওয়ান বিগ প্লেটের অধিবাসীদের নামগুলো ওজনে বেশ ভারী। এর মধ্যে অনেকেরই গুলশান-বনানী এলাকায় নিজস্ব আউটলেট রয়েছে। তাই আশপাশের ফুডকোর্টগুলোর সামনে এক দক্ষ প্রতিযোগী হিসেবেই খুব অল্প সময়ে এটি দাঁড়িয়ে গিয়েছে। এমনকি যে ভবনের আকাশছোঁয়া উচ্চতায় এর অবস্থান, সেই ইম্পেরিয়াল আমিন আহমেদ সেন্টারেই রয়েছে আরও ১০টির বেশি রেস্টুরেন্ট।
জায়গা হিসেবে বেশ বড়—প্রায় ৯ হাজার ৩০০ বর্গফুট। একাদশ তলায় এর অবস্থান, আর সে কারণেই সারা দিন এখানে প্রাকৃতিক আলোর রোশনাই লেগে আছে। জায়গা থাকলেও অকারণ চেয়ার টেবিলের বাহুল্য নেই, তাই পরিসরটাকে আরও বড় দেখায়। আর এখানে দোকানের সংখ্যা মাত্র ১১, ভেতরে আবার একটি কোকা-কোলা কোম্পানির ব্র্যান্ড শপ। লিফট থেকে নেমেই হাতের বাঁ দিকে এমারেল্ড বেকারি। নাম দেখেই ধারণা করা যেতে পারে তাদের কারবার। এর ঠিক পাশেই মিতসুয়ো। জাপানি খাবারের ব্যাপারী। তালিকায় গিওজা, প্রন টেম্পুরা, ফ্রাইড কালামারি, চিকেন কারাগে রয়েছে অ্যাপেটাইজারে। এরপর স্যালাড রয়েছে ত্রিপদী। স্যামন আর প্রন নিগিরি রয়েছে তালিকায়। আর তিন ধরনের নুডলস। রোল রয়েছে ছয় পদের। আর রাইস বোল রয়েছে চার পদের। বলাই বাহুল্য, এরা অথেনটিক জাপানি খাবারই সার্ভ করে।
এরপরের দোকানটাই স্টেকপ্রেমীদের স্বর্গ। শ’স স্টেক এক্সপ্রেস। চারটি করে স্যুপ, স্যালাড, অ্যাপেটাইজার রয়েছে তাদের তালিকায়। স্টেকের তালিকাটা অবশ্য একটু বড়। পেপার স্টেক, বিফ ফিলে, ক্লাব ফিলে, ফিলে মিগনন, সিগনেচার রিব আই, আউট ল সারলোয়িন, বারবিকিউ বিফ শর্ট রিব, টি-বোন স্টেক। আর যাদের রেড মিটে সমস্যা, তাদের জন্য রয়েছে মাশরুম চিকেন, বারবিকিউ চিকেন, পেরি পেরি চিকেন, লেমন পেপার চিকেন স্টেক, চিকেন পারমিজান, আর চিকেন কর্ডন ব্লু। সি-ফুড তো রয়েছেই।
ডো অন দ্য গো। পিৎজার দোকান। অল্প কিন্তু মজার সব পিৎজা রয়েছে তাদের তালিকায়। সসেজ পার্টি, মিটগাজম, ফাংকি চিকেন, পেপেরনি, পেসতো, ট্রিপল চিজ, সিরিয়াল কিলার আর মারিনারা। সব পিৎজাই ১২ ইঞ্চি ব্যাসের। এরপর হালের ক্রেজ চা টাইমের টং! চল্লিশটির বেশি পানীয় রয়েছে তাদের তালিকায়। ফ্রোজেন, মিল্কি ও ফ্রুটির শ্রেণিবিভাজনে। তবে এখানকার সবচেয়ে বেশি চলে পার্লমিল্ক টি, চকলেট মুজ, স্ট্রবেরি চিজকেক স্লাশ, তাইওয়ান ম্যাংগো কিউকিউ, থাই মিল্ক টি, ম্যাংগো স্মুদি, ব্রাউন সুগার মিল্ক টি, হ্যাজেলনাট চকলেট মিল্ক টি, কোকো স্মুদি আর ম্যাংগো ইয়োগার্ট জুস। তবে নতুন আসা মিক্সড বেরি স্লাশও মন্দ নয়।
এই ফুডশপগুলোর উল্টো দিকে অর্থাৎ উত্তর দিকে থাই এমারেল্ড। এখানে খুব বাছাই করা কয়েকটি খাবারের পদ নিয়ে এসেছে তারা। স্টার্টারে ফ্রাইড অনথন, ফ্রাইড চিকেন উইংস, থাই ব্যাটার্ড প্রন। স্যালাডের মধ্যে রয়েছে মিন্সড চিকেন স্যালাড, থাই স্পাইসি সি-ফুড স্যালাড, সম টাম আর চিকেন ক্যাশোনাট স্যালাড। স্যুপের মধ্যে ক্রিমি কোকোনাট মিল্ক স্যুপ, টম ইয়াম স্যুপ আর থাই ক্লিয়ার স্যুপ। মেইন ডিশ- থাই ফিশ উইদ জিঞ্জার/সুইট অ্যান্ড সাওয়ার সস, প্রন/স্কুইড উইদ ব্যাসিল/চিলি পেস্ট, বিফ উইদ অয়েস্টার সস/রেড কারি/ব্যাসিল লিফ, চিকেন উইদ ক্যাশোনাট/গ্রিন কারি/ব্যাসিল লিফ। আ লা কার্তে মেনুতে রয়েছে ব্যাসিল লিফ চিকেন/বিফ, বিফ রেড কারি, চিকেন ক্যাশোনাট, ক্র্যাব ইয়েলো কারি, চিকেন গ্রিন কারি, ফ্রাইড ফিশ উইদ জিঞ্জার আর প্রন/স্কুইড চিলি পেস্ট। সাইডস হিসেবে রয়েছে মিক্সড ভেজিটেবল উইদ অয়েস্টার সস, পাড থাই, স্পাইসি নুডলস, ব্যাসিল লিফ ফ্রাইড রাইস উইদ চিকেন আর মর্নিং গ্লোরি। ডেজার্ট হিসেবে থাই এমারেল্ডের সিগনেচার কোকোনাট আইসক্রিম আর ম্যাংগো স্টিকি রাইস তো রয়েছেই।
পাশেই যাত্রা শুরু করতে চলেছে ডস লোকোস, মেক্সিকান খাবার নিয়ে। শুরু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে বাটার মিল্ক ব্যাটার দিয়ে করা মুরগির জন্য খ্যাত ক্র্যাক শ্যাকও। হাক্কা ঢাকা রয়েছে এরপরেই। এই ফুড ব্র্যান্ডেরও কোনো ভূমিকার প্রয়োজন নেই। ঢাকা শহরের নানা প্রান্তে রয়েছে এর আউটলেট। এখানে অবশ্য বেশ সিলেক্টিভ কিছু ডিশ সার্ভ করা হয়। স্টার্টারে রয়েছে ডাম্পলিং, র্যাপড প্রন, হাক্কা চিকেন উইংস, চিকেন চিজ অনথন, প্রন অন টোস্ট আর সতে করা মাশরুম। হাক্কা রাইস আর নুডলসের হরেক পদের পাশাপাশি আ লা কার্তে মেনুতে রয়েছে হুনান চিকেন, মাশরুম চিকেন, মঙ্গোলিয়ান বিফ, ড্রাই চিলি বিফ, প্রন ইন চিলি ব্ল্যাক পেপার সস আর চিলি গার্লিক প্রন। স্যুপও রয়েছে অনেক পদের। সেট মিলও রয়েছে। রাইস বা নুডলসের সঙ্গে ডাম্পলিং আর কারি দিয়ে একটি। আরেকটির সঙ্গে যোগ হয় র্যাপড প্রন। কারির অপশনে রয়েছে চিকেনে হুনান আর মাশরুম, বিফে মঙ্গোলিয়ান আর ড্রাই চিলি, প্রনে চিলি ব্ল্যাক পেপার সস আর চিলি গার্লিক।
আফটারস রয়েছে একদম সুইট টুথদের জন্য। চকলেট আর ভ্যানিলা দুই পদের সফট আইসক্রিম আর সপ্তপদী ওয়াফেল নিয়ে তারা হাজির রয়েছে বিগ ওয়ান প্লেটে। ক্ল্যাসিক বেলজিয়ান ওয়াফেলের পাশাপাশি চকোলিশাস, চকলেট ব্যানানা, কুকিজ অ্যান্ড ক্রিম, চকলেট স্ট্রবেরি, স্ট্রবেরি অ্যান্ড ক্রিম আর ফ্রুট ব্লাস্ট নিয়ে দোকানটির কারবার।
এই ফুডকোর্ট নিয়ে মিক্সড বেরি স্লাশের কাপে চুমুক দিতে দিতে কথা হলো বিএনএস ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সিইও আশিক কায়সারের সঙ্গে। তিনি জানালেন, এই ফুডকোর্টের মূল শক্তি এর ব্র্যান্ডগুলো। তিনি বলেন, ‘এখানকার প্রতিটি ব্র্যান্ডই প্রতিষ্ঠিত আর ফুডকোর্টটির প্রতিষ্ঠা ধানমন্ডির ভোজনরসিকদের কথা মাথায় রেখেই। এখানে মূলত আশপাশের কলেজ-ভার্সিটি পড়ুয়াদের আনাগোনাই বেশি, তাই প্রতিটি খাবারের দামই তাদের ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে। মেনুগুলোও সাজানো সেভাবেই।’
ঠিকানা: ইম্পেরিয়াল আমিন আহমেদ সেন্টার, লেভেল ১০, ধানমন্ডি ১০/এ (সাতমসজিদ রোড), ঢাকা ১২০৫।
ফেসবুক পেজ: OneBigPlateDhanmondi, ফোন: ০১৮৪৭-৩৩৩৬১৩।
আল মারুফ রাসেল
ছবি: ওয়ান বিগ প্লেট