ফিচার I পিনটারেস্টের পাঁচ
সিজনের সেরা সাজের সাজেশন। আন্তর্জাতিক র্যাম্প, রেড কার্পেট কিংবা বিশেষজ্ঞদের আলাপ নয়, উৎস একটি সামাজিক ওয়েবসাইট। ট্রেন্ড তৈরিতে সেরা
গর্জাস গ্লস
লিপস টু লিডস— সবেতেই এখন গ্লসের ছোঁয়া। পিনটারেস্টের সার্চ অপশনই এর প্রমাণ। কারণ, পুরো ২০১৯ জুড়ে প্রতি শয়ের মধ্যে নব্বই জনই এই ওয়েবসাইটে খুঁজে বেরিয়েছেন গ্লসি মেকআপের সাজকৌশল। গরম কিংবা ঠান্ডা— চেহারায় মন ভালো করে দেওয়া রঙের ছোঁয়া আনতে অতুলনীয় এ মেকআপ। আতিশয্য নেই কিন্তু যথাযথ ব্যবহারে লুকে আভিজাত্য নিশ্চিত। এই ট্রেন্ড মেনে বিউটি ব্র্যান্ডগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা বহু বছরের পুরোনো। এবার তাতে যোগ হয়েছে নতুন সব ফর্মুলা। ক্লিয়ার ছাড়াও কালারফুল আর মেটালিকের গ্লসি ভার্সন দেখা গেছে গেল বছরজুড়ে। তবে গ্লস ব্যবহারের আগে প্রস্তুতি প্রয়োজন। ঝকঝকে ম্যাট ত্বক ক্যানভাসের ওপর চমৎকার ফুটবে গ্লসের চাকচিক্য। আর চোখের পাতায় ব্যবহারের আগে প্রয়োজন প্রাইমার। তা-ও হতে হবে ক্রিম বেসড। এর উপর গ্লসি আইশ্যাডো বসে যায় অনায়াসে। উজ্জ্বল ভাব টিকেও থাকে দীর্ঘ সময়। আর হাতের কাছে যদি গ্লসি আইশ্যাডো না থাকে, তাতেও অসুবিধা নেই। সাধারণ শ্যাডোতেই গ্লসি লুক তৈরি সম্ভব। চোখের পাতায় লিপবাম অথবা পেট্রোলিয়াম জেলির প্রলেপে। সেই সঙ্গে ঠোঁটে গ্লসি লিপস্টিকের সংগত আরও আকর্ষণীয়। তবে নিখুঁত দেখাতে প্রয়োজন হবে কনসিলার পেন। কারণ, শুধু চকচক করলেই তো চলবে না, টিকেও থাকতে হবে দীর্ঘ সময়ের জন্য। চনমনে তরতাজা হয়ে।
চুলে যায় চেনা
২০১৯। বছরজুড়েই বেশ কয়টি ট্রেন্ড ঘুরেফিরে দেখা গেছে চুলে। পিনটারেস্টের রিপোর্ট মতে তালিকার শীর্ষস্থান ব্যাঙস-এর। ২০১৯ এ ফ্যাশনিস্তাদের চুলের সামনের অংশে আলো ছড়িয়েছে বেবি ব্যাঙস। একদম ছোট করে ছাঁটা ক্রপড স্টাইলই এর ইউএসপি। যাতে মজেছিলেন পিনটারেস্টে ঢুঁ মারা ৫০ শতাংশ মানুষ। নিয়মিত ট্রিম করা ছাড়া খুব বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না এই ব্যাঙসের। আর স্টাইলিংও সেরে নেওয়া যায় অনায়াসে। গেল বছরে রঙের খেলা ছিল চুলে। তবে হট কালার ছিল লাইলাক আর গ্রে। পার্পলে সামান্য সিলভারি টোন মিশিয়ে দিলে যে কোমল বেগুনি রঙ হয়, তাই লাইলাক। পেস্টেল ঘেঁষা এ রঙের খোঁজ করতে দেখা গেছে পিনটারেস্টে ঘুরেফিরে বেড়ানো ১০৭৭% (অ্যালগরিদম হিসাবে) মানুষকে। এরপরের স্থান ধূসর গ্রের। ৮৯৭% (অ্যালগরিদম হিসাবে) মানুষকে খুঁজতে দেখা গেছে এ কালারের হেয়ারস্টাইল। টেকনিকেও ছিল বিভিন্নতা। পুরো চুলে যেমন, তেমনি হাইলাইটস হিসেবেও এর ব্যবহার হয়েছে। ছিল ডিপ ডাই আর ওমব্রেও। লাইলাকের সঙ্গে ল্যাভেন্ডার, পিঙ্ক আর গ্রের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে স্মার্ট শিক লুক। তবে নতুন সংস্করণ হিসেবে দেখা গেছে স্মোক বালায়েজ আর মেটালিক লাইলাকের চমক।
লাভিং ল্যাশ
আইলিড থেকে ল্যাশ— চোখের সাজে গুরুত্বপুর্ণ প্রতিটি অংশই। একটা ছোট ডিটেইলে পাল্টে যেতে পারে চোখের ভাষা। তবে গেল বছর সবচেয়ে বেশি নজরে ছিল আইল্যাশ। সাজানোর ক্ষেত্রে এর বৈচিত্র্যের বিপুলতা এত বছর সম্ভবত কেউ চিন্তাও করেনি। আইল্যাশকে কখনো করা হয়েছে কার্ল, তো কখনো পার্মড। রঙের ক্ষেত্রে ছিল না বাঁধাধরা নিয়ম। রঙধনুর সাত রঙ ছাড়াও চোখে লেগেছিল সাদাসহ নিয়নের ছটা। এমনকি ফেদার, ডায়মন্ড, পার্ল দিয়ে তৈরি আইল্যাশ জুয়েলারির জনপ্রিয়তা বছরজুড়েই ছিল তুঙ্গে। ফেক আইল্যাশকে পাশ কাটিয়ে সৌন্দর্যসচেতনদের পছন্দের তালিকায় দেখা গেছে ম্যাগনেটিক, থ্রিডি আর হাইব্রিড ল্যাশের ছড়াছড়ি। তবে বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, সাজানোর চেয়ে আইল্যাশের যত্নেই বেশি মনোযোগী ছিলেন সৌন্দর্যমনস্করা। একদম প্রাকৃতিক উপায়ে ল্যাশকে কীভাবে সুন্দর রাখা যায়, তাই খুঁজে বেড়িয়েছেন পিনটারেস্টপ্রেমীরা; যার অনুপাত অর্ধেকের বেশি। তবে প্রাকৃতিক পন্থাই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে। ক্যাস্টর থেকে গ্রেপসিড অয়েল কিংবা অ্যালোভেরা— সার্চ হয়েছে সবই।
এক্সফোলিয়েটে একশ
দানাদার স্ক্রাব দিয়ে ঘষেমেজে ত্বক পরিষ্কারের দিন শেষ। ২০১৯ এ বাজার দখল করে ছিল লিকুইড এক্সফোলিয়েটর। সৌন্দর্যসচেতনদের সজাগ দৃষ্টি তাই পিনটারেস্টের পেজ খুঁজে ফিরেছে অত্যাধুনিক ফর্মুলার এসব ত্বক পরিষ্কারক। প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষের নজর ছিল এগুলোর ওপর। পানির সংস্পর্শে এলে সক্রিয় হয়ে ওঠা সনাতন ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর হিসেবে বহুল ব্যবহৃত ক্রিম, পাউডার আর মাস্কের প্রতিটিই ত্বককে স্পর্শকাতর করে তোলে। অন্যদিকে কেমিক্যাল বা লিকুইড এক্সফোলিয়েন্ট তৈরি হয় ত্বকবান্ধব সব এসিড; যেমন গ্লাইকোলিক, স্যালিসাইলিক বা ল্যাকটিকে। যা ত্বকের জন্য কোমল, কিন্তু কার্যকর। লোমকূপের একদম গভীরে গিয়ে পরিষ্কারের পাশাপাশি মৃত কোষ সারাতে শতভাগ সক্ষম। কোনোটা তো ত্বকের কোলাজেন উৎপাদনের হারকেও ত্বরান্বিত করে। ফলে অ্যান্টিএজিংয়ের দারুণ অস্ত্র হিসেবে কাজ করে এগুলো। তবে লিকুইড এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করলে সুরক্ষা অত্যাবশ্যক। ব্যবহার করতে হবে সানস্ক্রিন।
লালের বৈভব
গেল বছরগুলোর মতো ২০১৯ সালেও মিনিমাল মেকআপের ট্রেন্ড ছিল দৃশ্যমান। তবে ঠোঁটে আর চোখের সাজে বিশেষ প্রাধান্য রেখে। বেয়ারলি দেয়ার বেইজ আর চোখটা ন্যুড রেখে ঠোঁটকে মূল আকর্ষণের অংশ করে তোলার চেষ্টাই বেশি দেখা গেছে। আর যেনতেন রঙে নয়, টকটকে লাল চেরিরঙা লিপ লুকই খুঁজেছে বেশির ভাগ মানুষ। নিদেনপক্ষে যার পরিমাণ ৪৬৭ শতাংশ (অ্যালগরিদম হিসাবে)। কারণ, লালের আবেদন কখনো পুরোনো হওয়ার নয়। আর এর আকর্ষণ এড়ানোও বেশ কঠিন। এমন ঠোঁট পেতে জানা প্রয়োজন খুঁটিনাটি। প্রথমেই লাল লাইনার দিয়ে ঠোঁটের আউটলাইন এঁকে নেওয়া চাই। তারপর চেরিরঙা গ্লসের প্রয়োগে রাঙিয়ে তুলতে হবে পুরো ঠোঁট। বাড়তি চমক যোগ করতে এর উপর পরে নেওয়া যেতে পারে আরও এক পরত স্বচ্ছ গ্লস। রঙ ঠোঁটের বাইরে বেরিয়ে গেলে মোছার জন্য হাতের কাছে রেডি থাকা চাই কিউটিপ আর কনসিলার। ডিফিউজড টেকনিকও চলতে পারে। পুরো ঠোঁটে লিপস্টিক মাখিয়ে কোণের দিকটা স্মাজ করে দেওয়ার নিয়ম এ ক্ষেত্রে। ব্যস, তৈরি পারফেক্ট লুক।
জাহেরা শিরীন
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস